একটা সময় ছিল যখন স্কিন কেয়ার মানেই সিম্পল ক্লেনজিং, টোনিং আর ময়েশ্চারাইজিং; এই স্টেপসগুলো সম্পর্কে আমাদের বেশ ভালো ধারণা আছে ফলে মেইনটেইন করাও বেশ সহজ ছিল। কিন্তু কোরিয়ান বিউটি ট্রেন্ড তথা গ্লাস স্কিন কেয়ার ট্রেন্ড এর কল্যাণে এখন এসেছে স্টেপ ওয়াইজ স্কিন কেয়ার রুটিন। এই স্টেপগুলো সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট কোন ধারণা এখনো গড়ে উঠে নি! এমনকি আমিও আগে ভালোভাবে বুঝে উঠতাম না; আমার ক্ষেত্রে এই রুটিন ঠিক কোন উপায়ে মেইনটেইন করলে বেস্ট আউটপুট পাবো। ফেইস অয়েল, সিরাম ও এসেন্সের মধ্যে পার্থক্য জানেন কি? আজকে আমি আলোচনা করবো কোরিয়ান বিউটি ট্রেন্ডের এই ৩টি প্রোডাক্ট নিয়ে। সেই সাথে জানবো এগুলো ব্যবহারে উপকারিতা, কোন স্কিনের জন্য কোনটা উপযোগী এসব নিয়ে।
ফেইস অয়েল, সিরাম ও এসেন্সের মধ্যে পার্থক্য
ফেইস সিরাম, এসেন্স ও অয়েলের মধ্যে পার্থক্য জানার জন্য প্রথমেই জানতে হবে এগুলোর কাজ সম্পর্কে। জেনে নিন, ত্বকের যত্নে কীভাবে কাজ করে এই ৩ ধরনের বিউটি প্রোডাক্ট।
ফেইস অয়েল
এই ধরনের অয়েল মূলত আপনার স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড করে এবং হাইড্রেশন লক করে। সাধারনত এতে ভিন্ন ধরনের প্ল্যান্ট অয়েল বা সিড অয়েল অথবা অ্যাসেনশিয়াল অয়েল থাকে; যা আপনার স্কিনকে সফট করার পাশাপাশি একটা হেলদি গ্লো দিবে। ফেইসে যেই তেল ব্যবহার করবেন, সেটা যেন হয় নন-কমেডোজেনিক, অর্থাৎ আপনার স্কিনের পোরস ক্লগড করবে না।
কেন ব্যবহার করবেন?
১/ ড্রাই স্কিন এর ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি কাজে দেয়। ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করার পরে ফেইস অয়েল অ্যাপ্লাই করতে হয়। এতে করে এক দিকে অয়েল তার নিজস্ব উপাদানের মাধ্যমে স্কিনকে নারিশ করবে; সেই সাথে স্কিনের ময়েশ্চার এবং হাইড্রেশনকে লক করে রাখবে। তবে যাদের স্কিন তৈলাক্ত; তারা ব্যবহারের আগে এর উপাদানগুলো জেনে নিবেন এবং সম্ভব হলে একজন ডার্মাটোলজিস্টের সাথে আলোচনা করে নিবেন।
২/ এজিং, নিদ্রাহীনতা বা ত্বকে ঠিকঠাকভাবে এক্সফোলিয়েশন না করার কারণে স্কিন দেখতে খুবই মলিন লাগে। তাই নিয়মিত ফেইস অয়েল ব্যবহারে ত্বকের মলিনতা একেবারেই দূর করে স্কিনে ভেতর থেকে একটা হেলদি গ্লো দিবে।
৩/ ফাউন্ডেশন ব্যবহারের আগে, বিশেষত যাদের ড্রাই স্কিন; এক ফোঁটা অয়েল আপনার ফাউন্ডেশন বেইজকে একদম ফ্ললেস একটা লুক দেবে। এক্ষেত্রে আপনি ফাউন্ডেশন ব্যবহার এর আগেও লাগিয়ে নিতে পারেন, আবার চাইলে কন্সিলার বা ফাউন্ডেশন এর সাথে মিশিয়ে নিতে পারেন।
ফেইস সিরাম
ফেইস সিরামে অনেক বেশি অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট থাকে; যেমন, হায়ালুরনিক এসিড, ভিটামিন সি, গ্লাইকলিক এসিড এবং; এরকম আরও অনেক উপাদান যেগুলো সরাসরি স্কিনের নির্দিষ্ট কিছু সমস্যার সমাধান করে। আপনার ত্বকে যে সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন তা অনুযায়ী ফেইস সিরাম চুজ করতে হবে। যেমন; অ্যান্টি এজিং বা স্কিন ব্রাইটেনিং অথবা ইলাস্টিসিটি ইম্প্রুভ করার জন্য সঠিক উপাদান বুঝে ফেইস সিরাম চুজ করতে হবে। অবশ্যই এসেন্স ব্যবহারের পরে এবং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের আগে ব্যবহার করতে হবে। এবং ফেইস সিরাম ব্যবহারের পর অন্য কোন প্রোডাক্ট ব্যবহারের আগে কমপক্ষে ১০ মিনিট সময় দিতে হবে; যাতে সিরাম ভালোভাবে আপানার ত্বক শোষণ করতে পারে।
কেন ব্যবহার করবেন?
- অন্য যেকোনো স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট এর তুলনায় সিরামের ফরমুলেশন অনেক বেশি পাতলা হয়ে থাকে। ফলে; ফেইস সিরাম খুব দ্রুত স্কিন শোষণ করতে পারে এবং অনেক দ্রুত এর ফলাফল চোখে পড়ে।
- তৈলাক্ত স্কিন, একনে-প্রন বা সেনসিটিভ স্কিন এর জন্য ফেইস সিরাম অনেক বেশি কার্যকরী হয়ে থাকে।
- নিয়াসিনামাইডের মতন উপাদান থাকে যা দাগমুক্ত গ্লোয়িং স্কিন পেতে সাহায্য করে।
- ফেইস সিরামে যেহেতু ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ফেরুলিক এসিড এবং গ্রিন টির মত উপাদান থাকায় এটি ইউভি রশ্মি এবং অন্যান্য পলিউশন থেকে স্কিনকে প্রটেক্ট করে।
ফেইস এসেন্স
কোরিয়ান বিউটি ট্রেন্ডের অন্যতম জনপ্রিয় প্রোডাক্ট হচ্ছে এসেন্স। ফেইস এসেন্স হচ্ছে একটি ওয়াটার বেসড স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট যাতে অনেক বেশি পরিমাণে অ্যাক্টিভ ইনগ্রিডিয়েন্টস থাকায়-
- এটি ত্বকের ওভারঅল হেলথকে বুস্ট করতে অনেক বেশি সাহায্য করে।
- ক্লেঞ্জার এবং টোনার ব্যবহারের পরে এসেন্সের ব্যবহার স্কিনের হাইড্রেশন রিস্টোর করে। পরবর্তীতে সিরাম ও ময়েশ্চারাইজার শোষণে অনেক বেশি হেল্প করে।
আপনি কেন ব্যবহার করবেন?
ফেইস এসেন্সের একদম প্রাইমারী রোল হচ্ছে; স্কিনে সিরাম, ময়েশ্চারাইজার যেটাই ব্যবহার করুন না কেন; সেটা যাতে খুব ভালোভাবে স্কিন শুষে নিতে পারে; সেভাবে স্কিনকে রেডি করে দেয়। ময়েশ্চারাইজড করার পাশাপাশি যেহেতু এসেন্সে অনেক বেশি পরিমাণে অ্যাকটিভ ইনগ্রিডিয়েন্টস থাকে; তাই এটি-
- স্কিন সেলকে রিহাইড্রেট করে।
- স্কিন ব্যারিয়ারকে প্রোটেক্ট করে।
- ত্বকের পি এইচের ভারসাম্য বজায় রাখে।
- এপিডারমিস লেয়ারকে সফট এবং স্মুথ করে।
তাহলে ফেইস অয়েল, সিরাম ও এসেন্সের মধ্যে পার্থক্য জানলেন। সেই সাথে কোনটা কীভাবে আপনার ত্বকে কাজ করে সেটাও জেনে নিলেন। আশা করছি, এখন থেকে ত্বকের প্রয়োজন অনুযায়ী পছন্দের প্রোডাক্টটি খুঁজে নিতে পারবেন। অথেনটিক সিরাম, এসেন্স ও অয়েল কিনতে সাজগোজের দুইটি ফিজিক্যাল স্টোর, ফেইসবুক পেজ ও ই-কমার্স ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারতে ভুলবেন না! ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন।
ছবি- সাজগোজ