ত্বকে বেশির ভাগ সমস্যা-ই সৃষ্টি করে সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি। এর জন্য বেসিক স্কিন কেয়ারে সব সময় বলা হয় ‘দিনের বেলা স্কিন কেয়ারে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করা মাস্ট’। আমার নিজের এক্সপেরিয়েন্স থেকেই বলি, আমি হঠাৎ একদিন খেয়াল করে দেখলাম শরীরের ভিতরের অংশ এবং মুখের রঙের মধ্যে একটি তারতম্য রয়েছে। সাথে গালে ছোপ ছোপ দাগ ভিজিবল হচ্ছে! মাত্র ২৪ বছর বয়সে ফেইসে এমন দাগ দেখে নিজের কাছেই খারাপ লাগছিলো। তখনই ফিল করলাম, সান ড্যামেজ থেকে ত্বককে প্রোটেক্ট করতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতেই হবে! আমি আমার স্কিন টাইপ অনুযায়ী মানানসই সানস্ক্রিনটি বেছে নিয়েছি। সান ড্যামেজ থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে বেস্ট সানস্ক্রিনটি বেছে নিয়েছেন তো?
প্রথমে সানস্ক্রিন বাছাই করতে যেয়ে আমাকে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। কারণ সানস্ক্রিন সম্পর্কে আমার তেমন একটা ধারণা ছিল না। কোনো সানস্ক্রিনে এস.পি.এফ ৩০ বা ৫০ থাকে, কোনটায় বা পিএ+++ লেখা থাকে। টিনেজারদের জন্য তো প্রোডাক্ট বাছাই করতে আরও বেশি কনফিউশন হয়। তাই আজকের আর্টিকেলটি সানস্ক্রিন নিয়েই। কীভাবে নিজের জন্য পারফেক্ট সানস্ক্রিন বাছাই করবেন, সান ড্যামেজ থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে আমার হলিগ্রেইল প্রোডাক্টের রিভিউ সবই জানতে পারবেন এই আর্টিকেল থেকে।
কোন বয়স থেকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত?
টিনেজ থেকেই ছেলে-মেয়ে সবারই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা দরকার। কেননা সূর্যের ইউ ভি রে সবার স্কিনকেই ড্যামেজ করে থাকে। তাই ছেলেদের জন্য এটার দরকার হয় না, এমনটা ভাববেন না। আর টিনেজ বয়সে সূর্যের আলোতেই বেশি থাকা হয়। এই সময় খেলাধুলার পাশাপাশি কিন্তু স্কুল, কলেজ বা কোচিংয়ের জন্যও বাইরে বের হতে হয়। ফলে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করা না থাকলে ড্যামেজটাও বেশি হবে। এতে স্কিনে বয়সের আগেই তাড়াতাড়ি এজিং সাইন চলে আসে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, টিনেজ থেকেই নিয়ম মেনে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।
কীভাবে বুঝবেন কোন সানস্ক্রিনটি আপনার জন্য উপযুক্ত?
এই যে সানস্ক্রিনে এস.পি.এফ ৩০ বা ৫০ লেখা থাকে, কেন লেখা থাকে জানেন কি? এস.পি.এফ মানে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর (Sun Protection Factor)। SPF এর উপরেই নির্ভর করে সানস্ক্রিন সান ড্যামেজ থেকে স্কিনকে কত পারসেন্ট সুরক্ষা দিতে পারবে। এজন্যেই সানস্ক্রিন বাছাই করার সময় একটু দেখে নিতে হবে, এস.পি.এফ ৩০ থেকে ৫০ থাকা ভালো। তবে নির্দিষ্ট সময় পর পর রিঅ্যাপ্লাই করা কিন্তু মাস্ট।
আর পিএ+++ লেখা কেন? সানস্ক্রিনের প্যাকেজিংয়ে পিএ প্লাস (PA+) থেকে পিএ প্লাস প্লাস (PA++) এবং পিএ প্লাস প্লাস প্লাস (PA+++) পর্যন্ত দেখা যায়। যত বেশি প্লাস, তত বেশি ইউ ভি এ (UV A) রশ্মি থেকে প্রোটেকশন পাওয়া যায়, মানে ডিপ লেয়ারে যেয়ে কাজ করে।
স্কিন ক্যাফে সানস্ক্রিন এসপিএফ ৫০ পিএ+++
প্রথমে আমি যেই সানস্ক্রিনটি কিনেছিলাম, সেটা ব্যবহার করার পর দেখলাম আমার ফেইস অনেক চিটচিটে লাগছে। কিছুক্ষণ পরেই মুখটা অনেক কালো লাগছিলো। কিছুদিন ব্যবহারের করে আমি ঐ সানস্ক্রিন ব্যবহার বন্ধ করে দেই। যেহেতু তখন সানস্ক্রিন সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা ছিল না আমার, আমি সিলেক্ট করেছিলাম কম SPF যুক্ত সানস্ক্রিন। আবার আমার স্কিনটাইপের সাথেও ঐ সানস্ক্রিনটা অ্যাডজাস্ট করেনি! অনেক রিসার্চ করে এবং রিভিউ দেখে শেষমেষ পছন্দমতো একটি সানস্ক্রিন পাই, যেটা আমার স্কিনকে ফুল প্রোটেকশন দিচ্ছে এবং রেগুলার ইউজ করেও স্কিনে কোনো সমস্যা হচ্ছে না! সেটা হচ্ছে স্কিন ক্যাফে সানস্ক্রিন এসপিএফ ৫০ পিএ+++। স্কিন ক্যাফে সানস্ক্রিন ব্যবহার করে যেই বেনিফিটগুলো পেয়েছি তা এক এক করে তুলে ধরি, তাহলে আপনাদের বুঝতে সুবিধা হবে।
স্কিন ক্যাফে সানস্ক্রিন কেন আমি সিলেক্ট করেছি?
(১) প্রথমেই একটি প্রবলেমের কথা বলেছিলাম “চিটচিটে ভাব”, যেটা আমার একদমই পছন্দ না! এই সানস্ক্রিনের একদমই চিটচিটে ভাব নেই। আমার যেহেতু অয়েলি স্কিন, আমার জন্য এমন সানস্ক্রিনই প্রয়োজন ছিল যেটা ত্বককে তৈলাক্ত করে দেয় না! শুধু অয়েলি স্কিনের ক্ষেত্রেই না, সব টাইপের স্কিনের জন্যই এই সানস্ক্রিনটি উপযুক্ত।
(২) আর্টিকেলের শুরুতেই আমি কিছু সমস্যার কথা বলেছিলাম। সূর্যরশ্মি থেকে ইউ ভি রে (UV Ray) আমাদের স্কিনের ভেতরে পোঁছায়। আর ইউ ভি রে- এর মধ্যে দুইধরনের রশ্মি রয়েছে, একটি ইউ ভি এ (UVA), অপরটি ইউ ভি বি (UVB)। ইউ ভি এ ত্বকের কোলাজেন প্রোডাকশন কমিয়ে দেয়, ফলে বয়সের ছাপ দেখা দেয়। আর ইউ ভি বি রশ্মির ফলে ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেয়, যাকে আমরা বলি সানবার্ন। এই সানস্ক্রিনের বেস্ট পার্ট হচ্ছে এই সানস্ক্রিন ইউ ভি এ এবং ইউ ভি বি – দুই ধরনের রশ্মি থেকেই স্কিনকে প্রোটেক্ট করে থাকে।
(৩) এই সানস্ক্রিনটি তে আছে SPF 50, মানে ইউ ভি রে থেকে আপনার ত্বককে অনেকটাই প্রোটেকশন দিতে পারবে।
(৪) পিএ+++ থাকায় ডিপ লেয়ার পর্যন্ত স্কিনকে সুরক্ষিত করবে।
(৫) সানস্ক্রিনটি নন-কমেডোজেনিক মানে পোরস ক্লগ করবে না। অনেকের সানস্ক্রিন ব্যবহারে একনে দেখা দেয়। আর আমার মতো অয়েলি স্কিন হলে তো কথায় নেই! এই সানস্ক্রিনটি পোরস ক্লগ করে না, ফলে একনের সমস্যা ফেইস করিনি আমি। যাদের সেনসিটিভ স্কিন, তারা অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে ইউজ করবেন।
(৬) এই সানস্ক্রিনের স্মেল খুব মাইল্ড। আর লাইটওয়েট হওয়ার কারণে রিঅ্যাপ্লাই দরকার পড়লেও কোনো প্রবলেম হয় না। হোয়াইট কাস্ট দেয় না, তাই স্কিনে স্মুথলি মিশে যায়।
বাইরে না বের হলেও সানস্ক্রিন লাগবে কি?
আরেকটি কারণে সানস্ক্রিনকে আমি এখন আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি, তা হলো মেসতা প্রিভেনশন। বাহিরে রোদে গেলে আমাদের স্কিনে ন্যাচারালি মেলানিন প্রোডিউস হয়, স্কিনকে সূর্যের ইউ ভি রে থেকে সুরক্ষিত করার জন্য যা অনেকটা ছাতার মতো কাজ করে। সানস্ক্রিন ব্যবহার না করলে সূর্যের রশ্মির সংস্পর্শে মেলানিন আরও বেশি প্রোডিউস হয়, ফলে ছোপ ছোপ দাগ একসময় মেসতাতে পরিণত হয়। বাইরে না বের হলেও কিন্তু সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না! আরেকটি বিষয়ে এখন খেয়াল রাখি, অনেক সময় চুলার হিটের সামনে কাজ করতে হয়। ঐ হিটের ফলেও কিন্তু মুখে ছোপ ছোপ দাগ হয়, সেটা থেকেও কিন্তু মেসতা হতে পারে। আপনি ছাদে যাচ্ছেন, বারান্দাতে যাচ্ছেন, কোনো না কোনোভাবে কিন্তু সান রে আপনার ত্বকে লাগতে পারে। তাই বাসাতে থাকলেও দিনের বেলা সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করা মাস্ট!
এই সানস্ক্রিনটির বিশেষত্ব
স্কিন ক্যাফে সানস্ক্রিনে ক্যামিকেল ও ফিজিক্যাল দুই ধরনের ইনগ্রেডিয়েন্ট রয়েছে। ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন ইউ ভি রে প্রবেশ করার আগেই তা ব্লক করে দেয়। আর ক্যামিকেল সানস্ক্রিন ইউ ভি রে স্কিনকে ড্যামেজ করার আগেই তা শুষে নেয় এবং হিটের মাধ্যমে তা রিলিজ করে দেয়! তাই অনেক সময় স্কিনে একটু ইরিটেট ফিল হতে পারে এবং এর জন্য ঘামটাও বেশি হয়। আমি বাহিরে গেলে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করে পাউডার দিয়ে টাচআপ করে ফেলি। এতে ফেইসে ম্যাট ফিনিশিং আসে এবং ঘেমে মুখ কালো কালো লাগে না।
কখন ও কীভাবে ব্যবহার করতে হয়?
দিনের বেলা অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে, এমন কী বাসায় থাকলেও। শুধু মুখে লাগালেই হবে না, গলা, ঘাড়, হাত, পায়ের তালু সব উন্মুক্ত অংশেই সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিবেন। মেঘলা দিনে বা বৃষ্টি হলেও দিনের বেলা সানস্ক্রিন মিস দেওয়া যাবে না। ৩-৪ ঘন্টা পর পর রিঅ্যাপ্লাই করলেই হবে।
মনে রাখুন ডাবল ক্লেনজিং করা কিন্তু মাস্ট
রাতের বেলা ডাবল ক্লেনজিং করে ফেলবেন। প্রথমে অয়েল ক্লেনজার দিয়ে ফেইস ক্লিন করে রেগুলার ফোম ক্লেনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিবেন। এতে স্কিন পুরোপুরি পরিস্কার হবে, ব্রণ হওয়ার প্রবণতাও কমে যাবে।
প্যাকেজিং ও দাম
সানস্ক্রিনটির প্যাকেজিং আমার ভালোই লেগেছে। ব্যাগে ইজিলি ক্যারি করা যায়। একটি সাদা টিউবের মধ্যে ৬০ গ্রামের এই সানস্ক্রিনটি বাজেট ফ্রেন্ডলি প্রাইজে পেয়ে যাবেন।
দাম ও মানের দিক থেকে একটি সানস্ক্রিন পছন্দের তালিকায় আনা অনেক টাফ মনে করি। আর দাম এবং মান দুই দিকেই আমার ডিমান্ড ফুলফিল করেছে স্কিন ক্যাফে সানস্ক্রিন। সান ড্যামেজ থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে আপনারাও বেস্ট প্রোডাক্টিটি বেছে নিন। আশা করি বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না আপনাদেরও, কেন এই সানস্ক্রিনটি আমার এত পছন্দের! আর স্কিন ক্যাফে সানস্ক্রিন পেয়ে যাবেন সাজগোজে।
অথেনটিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে আমার সবসময়ই ভরসা শপ.সাজগোজ.কম। অনলাইনে অর্ডার করে ঘরে বসেই প্রোডাক্ট হাতে পেয়ে যাই। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ