বয়সন্ধিকালে স্কিন কেয়ার নিয়ে খুব একটা ধারণা থাকে না। তবে এই বয়সে একনে, সান ড্যামেজ, ড্রাইনেস, ডিহাইড্রেটেড স্কিন এই ধরনের স্কিন প্রবলেমগুলো দেখা দেয়। টিনেজ বয়স থেকেই স্কিনের যত্ন নিলে বা বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করলে, বয়স বাড়লেও স্কিন থাকবে ফ্ললেস ও গ্লোয়িং। এই বয়সে স্কিনে এমনিতেও ন্যাচারাল গ্লো থাকে। খুব বেশি প্রোডাক্ট বা হার্শ কেমিক্যালের ব্যবহার স্কিনকে সহজেই ড্যামেজ করে দিতে পারে। সিম্পল স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করার পাশাপাশি স্কিন প্রবলেমের সল্যুশনে ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেই, টিনেজারদের জন্য কার্যকরী ৪টি হোমমেড ফেইসপ্যাক সম্পর্কে!
টিনেজে স্কিন কেয়ার করা কেন জরুরী?
টিনেজে স্কিনে কমন কিছু প্রবলেম দেখা দেয়, যেমন- ব্রণ, অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব, ডার্ক প্যাচ, সানট্যান ইত্যাদি। ঠিকমতো ত্বক পরিষ্কার না করলে ত্বকের সেবামের সাথে ধুলোময়লা জমে খুব সহজেই পোরস বন্ধ হয়ে যায়। আবার সান প্রোটেকশন ছাড়া রোদে বের হলে ত্বকে কালো কালো ছোপ বা সানট্যান পরে খুব দ্রুতই! বেসিক স্কিন কেয়ার স্টেপগুলো মিস করে গেলে এই ধরনের স্কিন প্রবলেম আরও বাড়তে পারে। এই বয়স থেকেই প্রোপারলি ফেইস ক্লিন করা, ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করা, সান প্রোটেক্টর ব্যবহার করা মানে বেসিক স্কিন কেয়ার শুরু করা উচিত। সেই সাথে প্রাকৃতিক উপাদানের ঘরোয়া প্যাক সপ্তাহে ১/২ দিন ব্যবহার করলে স্কিন থাকবে উজ্জ্বল ও কোমল। টিনেজারদের স্কিন প্রবলেমের সল্যুশনে ঘরোয়া ফেইসপ্যাক এর বিকল্প নেই।
এই বয়সে স্কিনের সমস্যা হুট করে বেড়ে যাওয়ার কারণ কী?
প্রাকৃতিকভাবেই টিনেজে শরীরে বেশকিছু পরিবর্তন আসে। এ সময়ে হরমোনাল চেঞ্জ এর কারণেও স্কিনে অনেক রকম সমস্যা দেখা যায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ১২-১৪ বছর বয়সে পিরিয়ড শুরু হয়। অনেকেরই ফেইসের পোরস বড় হয়ে যায়, সেবাম নিঃসরণের হার বেড়ে যায়, স্কিন অনেক বেশি তেলতেলে লাগে, ব্ল্যাকহেডস বেড়ে যায়। এছাড়া পড়াশুনার চাপ ও স্ট্রেস তো আছেই। রাত জাগা, পানি কম খাওয়া, পুষ্টির ঘাটতি, জাঙ্কফুড বেশি পরিমাণে খাওয়া, রোদে ঘুরে বেড়ানো, বাইরের পল্যুশন- এসব কারণেও স্কিনে ইমপ্যাক্ট পরে। স্কিনের সমস্যা হুট করে বেড়ে যাওয়ার পেছনে এই কারণগুলোই দায়ী!
৪টি হোমমেড ফেইসপ্যাক দিয়ে হবে ত্বকের যত্ন
১) একনে প্রন স্কিনের জন্য কার্যকরী প্যাক
এই বয়সে কমন স্কিন প্রবলেমের একটি হচ্ছে ব্রণ বা র্যাশ হওয়া! টিনেজে হরমোনাল কারনে ব্রণ হলে সেটা সময়ের সাথে সাথে চলে যাবে, তাই চিন্তার কোনো কারণ নেই। বেসিক স্কিন কেয়ারের পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানের ফেইস মাস্ক ব্যবহারে ফেইসে একনের প্রাদুর্ভাব অনেকটাই কমে আসবে। একনে প্রন স্কিনের জন্য ফেইসপ্যাক তৈরিতে লাগবে-
- স্কিন ক্যাফে একনে কেয়ার মাস্ক
- রোজ ওয়াটার
- অ্যালোভেরা জেল
এই উপাদানগুলো ভালোভাবে মিক্স করে ফেইসে লাগিয়ে নিন। ১০-১৫ মিনিট পর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। ফেইসে ব্রণ থাকলে জাস্ট সেই জায়গাতে সামান্য টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল লাগিয়ে রাখুন। ব্যস, ব্রণ দ্রুত শুকিয়ে যাবে। স্কিন ক্যাফে একনে কেয়ার মাস্কে আছে মুলতানি মাটি, নিম, অরেঞ্জ পিল পাউডার, কওলিন ক্লে ও হলুদ। একনে প্রন ত্বকের যত্নে এই উপাদানগুলো দারুণ কার্যকরী।
২) ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব কমাতে ফেইসপ্যাক
অয়েলি স্কিন ভালো রাখার জন্য যতগুলো প্রাকৃতিক উপাদান আছে, তার মধ্যে মুলতানি মাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই বয়সে ত্বকের সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে সেবাম উৎপাদন কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। তাই ফেইস চিটচিটে বা তেলতেলে দেখায়। ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব কমাতে ফেইসপ্যাক বানাতে যা যা লাগবে-
- মুলতানি মাটি
- শসার রস
- ডিমের সাদা অংশ
খুব ভালোভাবে উপাদানগুলো মিশিয়ে স্মুথ পেস্ট বানিয়ে নিন। এবার ফেইসে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। পানির ঝাপটা দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। তারপর ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করুন। টিনেজারদের স্কিন প্রবলেমের সমাধানে সপ্তাহে ২/৩ দিন প্যাকটি ব্যবহার করা যেতে পারে। ফেইসে অয়েল কন্ট্রোলের পাশাপাশি দাগ, সানট্যান এগুলোও কমে আসবে।
৩) উজ্জ্বল ত্বক পেতে ফেইসপ্যাক
স্কিনটোন উজ্জ্বল করতে উপটান ব্যবহার হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। টিনেজে ফেইসে এমনিতেই গ্লো থাকে। তারপরও কোনো কারণে যদি ফেইসটা মলিন আর অনুজ্জ্বল লাগে, তাহলে উপটান ব্যবহারে পাবেন গ্লোয়িং স্কিন। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ফেইসপ্যাক তৈরিতে যা যা লাগবে-
- রাজকন্যা গ্লোয়িং ফেইস উপটান
- দুধ/ টকদই
- রোজ ওয়াটার
উপাদানগুলো মিক্স করে ত্বকে লাগিয়ে নিন। ফেইসের সাথে সাথে গলা, হাত-পায়েও ব্যবহার করতে পারেন। ১৫ মিনিট রেখে ভালো করে ধুয়ে নিন। রাজকন্যা গ্লোয়িং ফেইস উপটানে আছে বেসন, হলুদ, চন্দন গুঁড়োসহ স্কিন ব্রাইটেনিংয়ের কার্যকরী উপাদান। স্কিনের হারিয়ে যাওয়া গ্লো ফিরিয়ে আনতে খুব ভালো কাজ করে এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলো। সপ্তাহে ২/৩ দিন এই প্যাকটি অ্যাপ্লাই করতে পারেন।
৪) ব্ল্যাকহেডস দূর করতে ন্যাচারাল ফেইসপ্যাক
টিনেজে ন্যাচারালি স্কিন এক্সফোলিয়েট হয়ে যায়। ফ্রি রেডিক্যাল নিউট্রিলাইজ হওয়ার ক্যাপাসিটি থাকায় নতুন কোষ পুনঃগঠিত হতে থাকে। ১২-১৪ বছরের পর থেকে স্কিন এক্সফোলিয়েট করা প্রয়োজন যাতে ডেড সেলস, ব্ল্যাকহেডস স্কিনে না জমতে পারে। প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েই ব্ল্যাকহেডস দূর করতে পারেন খুব সহজেই। প্যাক বানাতে যা যা লাগবে-
- বেদানার খোসার গুঁড়ো ( Pomegranate Peel Powder )
- দুধ ও মধু
সব উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। ফেইসে লাগিয়ে ৫ মিনিট অপেক্ষা করে শেষে আলতো হাতে ম্যাসাজ করে নিন। ১৫ সেকেন্ড ম্যাসাজ করে ভালোভাবে ফেইস ধুয়ে নিন। দুধ প্রাকৃতিক ক্লেনজার হিসাবে কাজ করে। বেদানার খোসার গুঁড়ো মাইল্ড ও ন্যাচারাল এক্সফোলিয়েটর হিসাবে কাজ করে। ত্বকে জমে থাকা ব্ল্যাকহেডস, ময়লা, ডেড সেলস কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। আর মধুতে আছে ময়েশ্চারাইজিং ও অ্যান্টি এজিং প্রোপার্টিজ। ব্ল্যাকহেডস দূর করার সাথে সাথে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতেও এই প্যাকটি দারুণ কাজ করে।
তাহলে জেনে নিলেন, টিনেজারদের স্কিন প্রবলেমের সল্যুশনে ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট দিয়ে তৈরি ৪টি ফেইসপ্যাকের রেসিপি! বাসায় বসে খুব সহজেই ত্বকের যত্ন নিতে পারেন। বেসিক স্কিনকেয়ার তো অবশ্যই করতে হবে। সেই সাথে এই প্যাকগুলো ইউজ করলে সুফল পাবেন খুব দ্রুত! অথেনটিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে আমার সবসময়ই ভরসা শপ.সাজগোজ.কম। সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
তাহলে আজ এই পর্যন্তই। নিজের যত্ন নিন, ভালো থাকুন।
ছবি- সাজগোজ