ভালো ব্র্যান্ডের মেকআপ আইটেমস কিনতে গেলেই অনেকগুলো টাকা খরচ হয়ে যাবে! মেকআপ প্রোডাক্টস কিনতে গেলে এমন চিন্তাই প্রথমে মাথায় আসে, তাই না? সাধ্যের মধ্যে ভালো প্রোডাক্ট বেছে নিতে একটুতেই কনফিউসড হয়ে পড়ি আমরা। আজকে আমি সাজেস্ট করবো ফুল কভারেজ মেকআপের প্রোডাক্টস, যেগুলোর প্রতিটির প্রাইস ৭৫০ টাকার মধ্যেই! বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে কি? প্রাইমার থেকে শুরু করে সব কিছুই এই দামে পেয়ে যাবেন, আবার মনের মত কোয়ালিটিও হবে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
মেকআপের জন্য কী কী লাগবে?
যারা বাজেট ফ্রেন্ডলি মেকআপ আইটেম খুঁজছেন বা বিগেনার হিসাবে সব ধরনের মেকআপ প্রোডাক্ট কিনতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটি হেল্পফুল হবে। আমাদের চাই বাজেট ফ্রেন্ডলি বেস্ট কোয়ালিটির প্রোডাক্ট! ঠিক বললাম তো? তবে প্রথমেই বলে রাখি, আমার এক্সপেরিয়েন্স এবং পার্সোনাল চয়েজ অনুযায়ী আমি প্রোডাক্ট রেকমেন্ড করছি। প্রতিটিই আমার নিজের খুব পছন্দের, তাই ভাবলাম আপনাদের সাথেও শেয়ার করি! ফুল কভারেজ মেকআপের জন্য এ টু জেড প্রোডাক্ট সাজেশন থাকছে আপনাদের জন্য।
ফুল কভারেজ মেকআপের প্রোডাক্টস
১) প্রাইমার
মেকআপের শুরুতেই প্রাইমার অ্যাপ্লাই করতে হয়। বেইজ মেকআপ যাতে লং লাস্টিং হয় এবং ফাউন্ডেশন যেন ক্র্যাক না করে; এর জন্যই প্রাইমার ব্যবহার করতে বলা হয়। অনেকেই ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করার পর প্রাইমার স্কিপ করেন। কিন্তু মনে রাখবেন, দুইটার কিন্তু দুই রকমের কাজ! আমার পছন্দের বাজেট ফ্রেন্ডলি একটি প্রাইমার হচ্ছে Technic Dewy Glow Primer Oil, কেন এটা আমার এত পছন্দের সেটাই এখন জানাবো।
- এই প্রাইমারে ভিটামিন ই এবং সিড অয়েল ব্যবহার করা হয়েছে
- খুব সুন্দর হালকা সুবাস আছে, যেটা আমার বেশ ভালো লাগে
- স্কিনে ব্রাইট ইফেক্ট দেয়
- ডিউয়ি ও ইল্যুমিনেটেড লুক ক্রিয়েট করতে বেইজ তৈরি করে
- মেকআপকে স্মুথ এবং লং লাস্টিং করে
২) কনসিলার
চোখের নিচের কালো দাগ, ফেইসের ছোপ ছোপ দাগ বা ব্রণের দাগ ঢাকতে কিন্তু কালার কারেক্টর লাগবেই। কালার কারেক্টর ও কনসিলার হিসাবে আমার কাছে রিজেনেবল প্রাইসের মধ্যে LA Girl Concealer খুব পছন্দের। স্মুথলি স্কিনে মিশে যায়। পরিমাণেও কম লাগে। আর সবচেয়ে বড় কথা, দামটা একদমই হাতের নাগালে।
৩) ফাউন্ডেশন
পার্টি লুক ক্রিয়েট করতে বা রেগুলার ব্যবহারের জন্য বাজেট ফ্রেন্ডলি ফাউন্ডেশন খুঁজছেন? এমন বাজেটের মধ্যে বেস্ট কোয়ালিটির ফাউন্ডেশন পাবেন Wet n Wild ব্র্যান্ডে। ড্রাগস্টোরের মধ্যে এই ফাউন্ডেশনটি খুবই ভালো কভারেজ দেয়। এই ব্র্যান্ডের ফাউন্ডেশনে ড্রাই এবং অয়েলি স্কিনের জন্য আলাদা আলাদা ভ্যারিয়েন্ট আছে। যেমন অয়েলি স্কিনের ক্ষেত্রে ফটো ফোকাস এবং ড্রাই স্কিনের ক্ষেত্রে ডিউয়ি উল্লেখ করে দেয়া আছে।
- ফ্ললেস বেইজ ক্রিয়েট করতে পারবেন, ক্রিজ করবে না
- বেইজ মেকআপ লং লাস্টিং হবে
- শেইড মিলিয়ে নিলে হোয়াইট কাস্টিং দেয় না
- দুই কোটিং দিলে ফুল কভারেজ লুক পাবেন, সিম্পল ডেইলি লুকের জন্য একবার ব্যবহারেই মনের মত বেইজ পেয়ে যাবেন
৪) ফুল কভারেজ মেকআপের জন্য পাউডার
ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই করার পরের স্টেপই হচ্ছে পাউডার দিয়ে সেটাকে সেট করা। ফুল কভারেজ মেকআপের প্রোডাক্টের মধ্যে কমপ্যাক্ট পাউডার অথবা প্রেসড পাউডার অন্যতম। আমার হলিগ্রেইল পাউডার হচ্ছে Rimmel Stay Matte Pressed Powder। দামটা হাতের নাগালে, রেগুলার ইউজ করা যায়। লাইট ওয়েট ফর্মুলা, এটি ব্যবহার করলে ফেইস স্মুথ ও ন্যাচারাল দেখায়। এটি লং টাইম আপনার মেকআপকে সেট রাখবে।
৫) কনট্যুরিং
কনট্যুরিংয়ের জন্য আলাদা করে ইনভেস্ট করতে চায় না অনেকেই! আজকে যেই ফেইস প্যালেটটির কথা বলবো সেটা দিয়ে ব্লাশ, হাইলাইটার, কনট্যুর- এই তিনটি কাজই চালিয়ে নিতে পারবেন। নিরভানা ফেইস প্যালেট Windy monsoon এ কনট্যুর করার জন্য দুইটি কালার রয়েছে, Pistachio এবং Choco-Choco, দুইটাই বেশ পিগমেন্টেড।
৬) ব্লাশ
ব্লাশের মধ্যে অনেকেই পিংকিশ বা অরেঞ্জ কালার পছন্দ করেন। সব ধরনের স্কিনটোনে এই কালারের ব্লাশন বেশ ভালো মানিয়ে যায়। এই দুইটি কালার নিরভানার ফেইস প্যালেট Windy Monsoon এই পেয়ে যাবেন। আলাদা করে ব্লাশ কিনতে হচ্ছে না!
৭) হাইলাইটার
নিরভানার ফেইস প্যালেট Windy monsoon এ খুব সুন্দর দুইটি হাইলাইটার শেইডস রয়েছে। Candy Glow খুব লাইট কালারের হলেও পিগমেন্ট বেশ ভালো। আরেকটি কালার Golden Coins যা পার্টি মেকআপ লুকের জন্য পারফেক্ট। এই প্যালেটটি আপনার কাছে থাকলে যেকোনো লুক ক্রিয়েট করতে পারবেন ইজিলি। আর বাড়তি টাকা খরচ করে আলাদা করে ব্লাশ, হাইলাইটার, কনট্যুর এগুলো কিনতে হচ্ছে না।
আরেকটি হাইলাইটার প্যালেটের কথা না বললেই না, সেটা হচ্ছে Technic Colour Fix Highlighter Palette। এই প্যালেটে এক সাথে ৮টি হাইলাইটার রয়েছে। যারা ডিফারেন্ট কালারের হাইলাইটার ট্রাই করতে চান, একটু ভ্যারিয়েশন প্রিফার করেন; তাদের জন্য এটি বেশ ভালো অপশন। আর দামটাও হাতের নাগালে।
৮) আইশ্যাডো প্যালেট
আইশ্যাডো প্যালেট সিলেক্ট করতে প্রথমেই আমরা যেই জিনিসটা দেখি সেটা হল পিগমেন্ট কেমন! পিগমেন্টেড শ্যাডো প্যালেট খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় যে প্রাইস হাইরেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আজকে আমি যেই প্যালেটগুলো সাজেস্ট করবো, সেটার পিগমেন্ট ও কালার ভ্যারিয়েন্ট হাইএন্ডের প্যালেটকেও হার মানাবে! নিরভানা আইশ্যাডো প্যালেটগুলো এক কথায় “দামে কম, মানে ভালো”। প্রতিটি প্যালেটেই ১০টি ডিফারেন্ট কালার রয়েছে, সাথে শিমারি কালার তো আছেই।
৯) আইব্রো কিট
ফেইস মেকআপ কমপ্লিট করার পর একটা অ্যাসেনশিয়াল পার্টের কথা আমরা অনেকেই ভুলে যায়। সেটা হচ্ছে আইব্রো ঠিকমতো শেইপ করে নেওয়া। Wet n Wild Ultimate Brow Kit এ পাচ্ছেন এক পাশে পেন্সিল, অন্য দিকে ব্রো ব্রাশ। আপনাকে আলাদা করে ব্রাশ নিতে হবে না। এটি বাজেট ফ্রেন্ডলি প্রোডাক্ট, তাই আপনার কালেকশনে রাখতে পারেন।
১০) কাজল ও আই লাইনার
কাজল বা আই লাইনার না দিলে তো মনেই হবে না চোখের সাজ কমপ্লিট হয়েছে। কাজল বা লাইনারটাই যেন চোখের সাজকে আরও ফুটিয়ে তুলে। ডিপ কালারের সাথে অ্যাপ্লিকেটর কেমন সেটাও কিন্তু এখন প্রাধান্য পায়। এই দুইটি দিক বিবেচনা করে নিয়ে নিতে পারেন W7 liquid liner pot। দাম অনুযায়ী খুবই ভালো এই লাইনারটি। আর কাজল নিতে চাইলে এই রেঞ্জের মধ্যে Miss & Mrs Waterproof Eyeliner Auto Kajal Black কাজলটি আপনার জন্য বেস্ট অপশন।
১১) মাশকারা
আই মেকআপের লাস্ট স্টেপ হচ্ছে মাশকারা অ্যাপ্লাই করা। ফেইক ল্যাশ না পরতে চাইলে আপনার আইল্যাশকে ঘন দেখাবে এমন মাশকারা চ্যুজ করতে হবে। সব দিক থেকে বিবেচনা করলে W7 এর মাশকারার কোয়ালিটি অনেক ভালো এবং দামটাও হাতের নাগালে।
১২) লিপস্টিক
লিপস্টিক কিনতে চাইলে আমি সবসময় ফর্মুলা দেখে কিনি। এমন ফর্মুলা প্রিফার করি যেটা খুব লাইট ওয়েটের হবে, সেই সাথে ঠোঁটে ক্র্যাক করবে না। আমি দুইটি ব্র্যান্ড সাজেস্ট করছি যেগুলোর ফর্মুলা দাম অনুযায়ী বেশ ভালো, নিরভানা এবং জানাস। নিরভানার ৫টি এবং জানাসের ৮টি ডিফারেন্ট কালার শেইডস আছে। লিকুইড এই লিপস্টিকগুলো লাইট ওয়েট, স্ম্যাজপ্রুফ, লং লাস্টিং। রিঅ্যাপ্লাই করা হলেও লিপস হেভি ফিল হবে না।
১৩) সেটিং স্প্রে
পছন্দের সব কিছু দিয়ে তো মেকআপ কমপ্লিট করলেন, এবার মেকআপকে স্ম্যাজপ্রুফ ও লং লাস্টিং করতে সেটিং স্প্রে অ্যাপ্লাই করে নিন। wet n wild Photo Focus Natural Finish Setting Spray – Seal The Deal আমার খুবই পছন্দের একটি সেটিং স্প্রে! এই সেটিং স্প্রেতে অ্যালোভেরা ব্যবহার করা হয়েছে যা স্কিনকে হাইড্রেটেড রাখে। লাইট ওয়েট, স্কিনে কোনো রকম ইরিটেশন ফিল হয় না!
প্রতিটি প্রোডাক্টই পেয়ে যাবেন ৭৫০ টাকার মধ্যেই। আশা করি এখন মেকআপ প্রোডাক্টস কিনতে গেলে দাম নিয়ে এত বেশি ভাবতে হবে না! ফুল কভারেজ মেকআপের প্রোডাক্টস সম্পর্কেও আইডিয়া পেলেন। এছাড়াও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আরও নানা রকম মেকআপ প্রোডাক্ট আছে। সাজগোজের অ্যাপ বা ওয়েবসাইট থেকে একটু ঘুরে আসতে পারেন। প্রতিটি প্রোডাক্টই সাজগোজে পেয়ে যাবেন। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে আমার সবসময়ই ভরসা শপ.সাজগোজ.কম। তাছাড়া সাজগোজের দুইটা আউটলেট আছে, যেটা যমুনা ফিউচার পার্ক আর সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত। তাহলে আজ এই পর্যন্তই।
ছবি- সাজগোজ