যুগের সাথে তাল মিলিয়ে স্কিন কেয়ার ট্রেন্ডে এসেছে পরিবর্তন। ত্বকের যত্নে সিরাম ব্যবহার করা এখন বেশ পপুলার। তবুও স্কিন কেয়ারের স্টেপগুলোর মধ্যে এই ধাপটি নিয়ে আমাদের অনেকেরই কনফিউশন আছে। অনেকেই হয়তো এখনও জানেন না যে সিরামের কাজটা ঠিক কী এবং স্কিন কেয়ারে এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু। আবার অনেকেই কনফিউশনে থাকেন যে, ত্বকের ধরন ও চাহিদা অনুযায়ী কোন সিরামটি হবে রাইট চয়েজ! এমনও প্রশ্ন শুনেছি, সিরামের দামটা এত বেশি কেন! সিরাম নিয়ে এমন অনেক জিজ্ঞাসা ও দ্বিধা আছে আপনাদেরও, তাই না? চলুন আজ আমরা এই সব প্রশ্নের উত্তরগুলো জেনে নিবো। হাইড্রেটেড, ব্রাইট ও ইয়াংগার লুক পেতে স্কিন কেয়ারে কোন সিরাম অ্যাড করতে হবে সেটাও জানতে পারবো আজকের আর্টিকেল থেকে।
‘সিরাম’ জিনিসটা আসলে কী?
ফেসিয়াল সিরাম বেসিক্যালি স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট। হাইলি কনসেনট্রেটেড পাওয়ারফুল উপাদান খুব লাইট এবং থিন ফর্মুলার সাহায্যে ত্বকের কোষে পৌঁছে দেওয়াটাই এর কাজ। সিরাম এমনভাবেই তৈরি করা হয় যাতে স্টার ইনগ্রেডিয়েন্ট খুব সহজেই স্কিনের ডিপ লেয়ারে যেয়ে প্রবলেমটাকে ফিক্স করতে পারে। সোজা ভাষায় বললে, সিরাম ত্বকের সমস্যাগুলোকে পিন পয়েন্ট করে সল্ভ করতেই কাজ করে। এটি অয়েল বা ওয়াটার বেইজড হতে পারে। অনেক ধরনের সিরাম আছে, একেকটার কাজ একেক রকম। ত্বকের ধরন ও সমস্যা অনুযায়ী আপনাকে বেছে নিতে হবে রাইট প্রোডাক্টটি!
সিরাম অ্যাপ্লাই করা কেন প্রয়োজন?
রেগুলার লাইফের স্ট্রেস, বাইরের দূষণ, রোদের তাপ সবকিছুই আমাদের ত্বকে নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট ফেলছে। আনহেলদি লাইফস্টাইলের জন্য খুব দ্রুতই স্কিনে প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস চলে আসে, স্কিন রাফ ও ড্রাই হয়ে যায়, সেই সাথে স্কিনের হাইড্রেশন ব্যালেন্সেও এটি প্রভাব ফেলে। এই ব্যস্ত জীবনে হাইড্রেটেড, ব্রাইট ও ইয়াংগার লুক পেতে আমাদের চাই চটজলদি সল্যুশন, তাই না? আপনার স্কিনের দিকে একটু লক্ষ্য করুন, কী ধরনের প্রবলেম আছে বা স্কিনের চাহিদাটা কী, সেটা বোঝার ট্রাই করুন। এবার আপনিই সিদ্ধান্ত নিন যে আপনার স্কিনের জন্য আসলেই সিরামের প্রয়োজন আছে কিনা! সিরাম যেহেতু স্পেসিফিক স্কিন প্রবলেমকে টার্গেট করে কাজ করে দ্রুত সমাধান দেয়, আবার ব্যবহার করাও খুবই ইজি, তাই এটাকে এখন অ্যাসেনশিয়াল স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টই বলা যায়।
আচ্ছা, এটার দাম বেশি হওয়ার কারণ কী?
‘ফেসিয়াল সিরামগুলোর বাজেট ফ্রেন্ডলি না’, ‘এইটুকু বোতলের এত দাম কেন?!’ এই অভিযোগগুলো অনেকের কাছেই শুনেছি। আসল ব্যাপারটা হচ্ছে স্কিন কেয়ারে এই স্টেপটি নতুন এবং এর ফর্মুলেশন নিয়ে আমাদের অনেকেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই। বেসিক নলেজ কম থাকার কারণেই এই ধরনের কনফিউশন হয়। সিরামে স্পেসিফিক পাওয়ারফুল উপাদান এমন পরিমাণে দেয়া থাকে, যেটা মাত্র কয়েক ড্রপেই আপনার স্কিনের চাহিদা ফুলফিল করতে সক্ষম। একই রেঞ্জের ক্রিমে বা অন্য স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে সেইম পারসেন্টেজে আপনি সেই উপাদানটি পাবেন না। এজন্যই সিরাম এতটা কার্যকরী, রেগুলার ইউজের জন্য ২-৩ ফোঁটাই এনাফ। উপাদানের দামের কারণেই কিন্তু সিরামের দামটা বেড়ে যায়।
ব্রাইট ও ইয়াংগার লুক পেতে সিরাম
সিরাম সম্পর্কে বেসিক ইনফরমেশনগুলো কিছুটা হলেও জানতে পারলেন। এখন শেয়ার করবো রিসেন্ট হাইপড একটি ব্র্যান্ডের ৩টি সিরামের খুঁটিনাটি নিয়ে, যাতে আপনারা নিজেদের ত্বকের প্রয়োজন অনুসারে পারফেক্ট সিরামটি চ্যুজ করতে পারেন। আমার খুবই পছন্দের একটি ব্র্যান্ড হচ্ছে Lafz! হালাল সার্টিফাইড এই ব্র্যান্ডটির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত, তাই না? Lafz এর স্কিনকেয়ার রেঞ্জে ৩টি সিরাম আছে, যেগুলো ডিফারেন্ট স্কিন কন্ডিশনকে ফোকাস করে ক্যাটাগরাইজড করা হয়েছে।
Lafz ব্র্যান্ডের ক্লেইম
ছোট কাঁচের বোতলে ৩০ মিলি পরিমাণে সিরাম থাকে। মেইড ইন ইটালি। এই ব্র্যান্ডটি ক্লেইম করে, তাদের ফেইস সিরামগুলো-
- ১০০% ভেগান
- ক্ষতিকর প্যারাবেন, সিলিকন ও সালফেট ফ্রি
- সব ধরনের ত্বকে মানানসই
- অ্যালকোহল ফ্রি
- দিনে ও রাতে যেকোনো সময় ব্যবহার করা যায়
- অ্যানিমেল ক্রুয়েলিটি (animal cruelty) ফ্রি
চলুন তাহলে এই ব্র্যান্ডের ৩টি সিরামের উপাদান, বেনিফিটস ও কাদের জন্য কোনটা স্যুইটেবল সেগুলো সম্পর্কে এখন জেনে নেই।
১) LAFZ Halal Hydra-Lock Face Serum
প্রথমেই আমার পছন্দের হাইড্রেটিং সিরাম দিয়ে শুরু করি। Hydra-Lock Face Serum এ আছে প্ল্যান্ট বেইজড স্কোলেইন (Squalene), যেটা অলিভ থেকে প্রাপ্ত। আমাদের স্কিনে সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে ন্যাচারালি স্কোলেইন উৎপাদন হয়, এটা এক ধরনের লিপিড বা ফ্যাট। এর কাজ হচ্ছে ত্বককে ময়েশ্চারাইজড রাখা এবং ত্বকের প্রাণবন্তভাব ধরে রাখা। স্কিনে হাইড্রেশন প্রোভাইড করার সাথে সাথে ত্বকের যত্নে আরও অনেক বেনিফিট দেয় এই সিরামটি। দেরি না করে সিরামটির বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতাগুলো দেখে নিন।
- অয়েল বেইজড সিরাম
- লাইট ওয়েট, স্কিনে একদমই হেভি ফিল হয় না
- সুন্দর মিষ্টি সুবাসযুক্ত
- পোরস ক্লগড করে না
- ড্রাই ও ডিহাইড্রেটেড স্কিনে কোমলতা ফিরিয়ে আনে
- অ্যান্টি অক্সিডেন্টযুক্ত, ফ্রি র্যাডিকেলস থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখে
- ময়েশ্চার লক করে ত্বককে হেলদি রাখে
- স্কিনের ডালনেস, সান ড্যামেজ, ফাইন লাইনস কমিয়ে আনে
কাদের জন্য স্যুইটেবল?
সব ধরনের ত্বকেই এটি স্যুট করবে। যদি আপনার স্কিন ডিহাইড্রেটেড, ড্যামেজড ও এক্সেস ড্রাই হয়ে থাকে, তাহলে এই সিরামটি আপনার জন্য পারফেক্ট চয়েজ! অনেক সময় দেখা যায়, অয়েলি স্কিনেও হাইড্রেশনের ঘাটতি থাকে, খুবই মলিন ও নিষ্প্রাণ দেখায়। সেক্ষেত্রেও এই সিরামটি দারুণ কার্যকরী।
২) LAFZ Halal Skin Renewal Face Serum
এই সিরামটিতে আছে নিয়াসিনামাইড ও জিংকের পাওয়ারফুল কম্বিনেশন, ১০% নিয়াসিনামাইড ও ১% জিংক। স্কিনের টেক্সচার ইম্পুভ করতে ও স্কিনের ব্যারিয়ার লেয়ার রিপেয়ার করতে খুবই ভালো কাজ করে এই উপাদানগুলো। সিরামের গুণাগুণ জানার আগে এই উপাদানগুলোর বেনিফিটগুলো আগে জেনে নেই চলুন।
ত্বকের যত্নে নিয়াসিনামাইডের উপকারিতা
- ওপেন পোরসের সমস্যা দূর করে
- স্কিনের ফার্মনেস ও হেলদি লুক ধরে রাখে
- ব্রেকআউটস কমিয়ে আনে
- পিগমেন্টেশনের সল্যুশন দেয়
- ত্বকের অতিরিক্ত সেবাম প্রোডাকশন কন্ট্রোল করে
ত্বকের যত্নে লো পার্সেন্টেজে জিংকের উপকারিতা
- একনে ও র্যাশ কমাতে হেল্প করে
- অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টি থাকায় ত্বকের রেডনেস কমায়
- ড্যামেজ স্কিন সেলস রিপেয়ার করে
এই ফেইস সিরামটির ফিচারগুলো দেখে নিন এখন-
(১) ওয়াটার বেইজড সিরাম
(২) স্কিনে সুন্দরভাবে মিশে যায়, স্টিকি ফিল হয় না
(৩) খুবই অল্প পরিমাণে লাগে, ২/৩ ড্রপ দিয়েই ফুল ফেইসে অ্যাপ্লাই করা যায়
(৪) কোনো ধরনের ইরিটেশন হয় না
কাদের জন্য স্যুইটেবল?
ব্লেমিশড ও অয়েলি স্কিনের জন্য এই সিরামটি খুবই ভালো কাজ করবে। আপনার স্কিনে যদি অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব থাকে, পিগমেন্টেশন ও এনলার্জ পোরসের প্রবলেম থাকে, তাহলে এই সমস্যাগুলোর সমাধান পেতে নিশ্চিন্তে LAFZ Halal Skin Renewal Face Serum ইউজ করতে পারবেন।
৩) LAFZ Halal Luminous Face Serum
আলফা আরবুটিন এবং হায়ালুরনিক এসিড যুক্ত এই সিরামটি ত্বকের দাগছোপ কমাতে ও ত্বককে উজ্জ্বল করতে বেশ ভালো কাজ করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্কিনের ন্যাচারাল গ্লো হারিয়ে যেতে থাকে। স্কিন রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ দেখায়। এই উপাদানগুলো স্কিনের হেলদি গ্লো ফিরিয়ে আনতে দারুণ কার্যকরী। উপাদানগুলোর বেনিফিটগুলো আগে জেনে নেই চলুন।
ত্বকের যত্নে আলফা আরবুটিনের উপকারিতা
- এজিং সাইন কমিয়ে আনে
- সেইফ ও প্রুভেন স্কিন ব্রাইটেনিং ইনগ্রেডিয়েন্ট
- স্পট ও পিগমেন্টেশন কমাতে হেল্প করে
ত্বকের যত্নে হায়ালুরনিক এসিডের উপকারিতা
- স্কিনের হাইড্রেশন লেভেল ঠিক রাখে
- ময়েশ্চার যুগিয়ে ত্বকের ড্যামেজ রিপেয়ার করে
- স্মুথ ও ইয়াংগার লুকিং স্কিন পেতে ভূমিকা রাখে
এই ফেইস সিরামটির ফিচারগুলো দেখে নেই চলুন-
(১) ওয়াটার বেইজড সিরাম
(২) ত্বকে কোনো রকম চিটচিটে অনুভূতি হয় না
(৩) খুব দ্রুত স্কিনের সাথে মিশে যায়
(৪) প্রথমবার ব্যবহার থেকেই স্কিন ফ্রেশ ও ব্রাইট দেখায়
কাদের জন্য স্যুইটেবল?
যাদের আনইভেন স্কিনটোন, স্পট, ডার্ক প্যাচ ও পিগমেন্টেশন আছে, তাদের জন্য এটি খুবই ভালো কাজ করবে। অনেকেই আছেন যারা স্কিনটোন একটু ব্রাইট করতে চান, তাদের জন্যও LAFZ Halal Luminous Face Serum রেকমেন্ডেড।
সিরাম ব্যবহারের নিয়ম
প্রথমে ক্লেনজার দিয়ে ফেইস খুব ভালোভাবে ক্লিন করে নিন। এরপর টোনার অ্যাপ্লাই করুন (অপশোনাল)। হাতে কয়েকফোঁটা সিরাম নিন। এবার হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে ফেইসে ড্যাব ড্যাব করে অ্যাপ্লাই করে নিন। ব্যস, হয়ে গেল! দিনের বেলায় অবশ্যই সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করুন। নাইট টাইম স্কিন কেয়ারে সিরাম লাগানোর পর ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার বা নাইট ক্রিম অ্যাপ্লাই করতে পারেন।
বিশেষ সতর্কতা
১/ টিনেজে জাস্ট বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করবেন। ২০ বছরের পর স্কিন কেয়ারে সিরাম অ্যাড করতে পারেন। তবে দিনের বেলাতে সানস্ক্রিন স্কিপ করা যাবে না!
২/ একই সময়ে দুই বা ততোধিক অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট একসাথে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। সবগুলো সিরাম কিন্তু একবারে ইউজ করবেন না! এই ব্যাপারে সতর্ক থাকুন এবং কেনার আগে অবশ্যই লেবেল পড়ে নিন। আপনার ত্বকের চাহিদা বুঝে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করুন।
৩/ ব্যবহার করার আগে প্যাচ টেস্ট করে নিন। এক্ষেত্রে প্রোডাক্টটি অল্প পরিমাণে নিয়ে কানের নিচে বা গলার সাইডে ২৪ ঘণ্টা লাগিয়ে রেখে পর্যবেক্ষণ করবেন। কোনো ধরনের ইরিটেশন বা অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হলে, সেটা ইউজ না করাই বেটার।
৪/ ঠাণ্ডা ও শুষ্ক স্থানে সিরাম সংরক্ষণ করুন যাতে সরাসরি সান লাইট বা হিট না লাগে।
সিরাম নিয়ে আজ অনেককিছুই জানতে পারলাম, তাই না? আশা করছি, আপনাদের কনফিউশনগুলো কিছুটা হলেও দূর করতে পেরেছি। যারা অ্যাডভান্স স্কিন কেয়ার করতে চান এবং ব্রাইট ও ইয়াংগার লুক পেতে পারফেক্ট সল্যুশন খুঁজছেন, তারা স্কিন কেয়ার রুটিনে সিরাম যোগ করে নিন! তবে স্কিনের কন্ডিশন, টাইপ ও কনসার্ন সবকিছু বিবেচনা করে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করুন। সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ আছে, যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত। ঘরে বসে অনলাইনেও অর্ডার করে নিতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে। সবাই ভালো থাকবেন।
ছবি- সাজগোজ