ওপেন পোরস, এনলার্জ পোরস অথবা ক্লগড পোরস, এই ধরনের সমস্যার সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। আমাদের স্কিনের উপর শ্বাস নেওয়ার জন্য ছোট ছোট কিছু ছিদ্র রয়েছে, এই ছিদ্রকে ‘পোরস বা রোমকূপ’ বলে। সাধারণত এই পোরসগুলো খালি চোখে ধরা পড়ে না। কিন্তু যখন এই পোরসগুলো বড় হয়ে যায়, তখন স্কিনের উপর দেখা যায়। তখন স্কিনটা দেখতে অনেকটা কমলালেবুর খোসার মতে লাগে। শুরু দিকে এটি কেউ গুরুত্ব না দিলেও যত্নের অভাবে ত্বকের পোরসগুলো আরও বাড়তে পারে।
সাধারণত যাদের ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত এবং প্রচুর সিবাম উৎপন্ন হয়, তাদের পোরস বাইরে থেকে দেখা যায়। খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম, যত্নের অভাব সহ বিভিন্ন কারণেই এই সমস্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। স্কিনে এনলার্জ পোরস দেখতে ভালো দেখায় না! এছাড়া এতে কিন্তু ত্বক অমৃসণ হয়ে যায়। শুষ্ক ত্বকের অধিকারীদের চেয়ে তৈলাক্ত ত্বকের মানুষদের এই সমস্যায় বেশি ভুগতে হয়। এনলার্জ পোরস নিয়ে দুশ্চিন্তা আর নয়! ৫টি ঘরোয়া উপায়ে এই প্রবলেম থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। চলুন আগে জেনে নেই পোরস বড় হয়ে যাওয়ার পেছনে কোন কোন ফ্যাক্টরগুলো দায়ী।
পোরস বড় হয়ে যাওয়ার কারণ
সাধারণত যাদের ত্বকে অতিরিক্ত তেল বা সিবাম উৎপন্ন হয়, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি বেশি দেখা দেয়। কিছু কারণে পোরস এর সাইজ বড় হয়ে যেতে পারে, আর তখনই স্কিনে এগুলো ভিজিবল হয়। চলুন দেখে নেই সেই কারণগুলো কী কী।
১। অতিরিক্ত পরিমাণে সিবাম উৎপন্ন
২। ত্বকের নমনীয়তা কমে যাওয়া
৩। বংশগত কারণে
৪। ত্বকে কোলাজেন প্রোডাকশন কমে যাওয়া
৫। বয়স বৃদ্ধি
৬। অতিরিক্ত সূর্যের আলোতে থাকা বা সান ড্যামেজ
৭। হরমোনাল ইমব্যালেন্স
নাকের চারপাশে রোমকূপ বেশি থাকায় এখানে বেশি পরিমাণে তেল উৎপন্ন হয়। এজন্য নাকের চারপাশ পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। ঠিকমতো ত্বক পরিষ্কার করা না হলে ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডসের সৃষ্টি হয় এবং এতে মুখের পোরস বড় হয়ে যায়। টিনেজে হরমোনাল কারণে অনেকেরই পোরস ভিজিবল হয়। কারণ যেটাই হোক না কেন, সুন্দর ত্বক পেতে হলে বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করতে হবে।
বড় রোমকূপের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করার সাথে সাথে ঘরোয়াভাবে কিছু উপাদান ব্যবহার করতে পারেন। ৫টি ঘরোয়া উপায়ে কীভাবে এই স্কিন প্রবলেমের সল্যুশন হবে, সেটাই এখন আমরা জানবো।
এনলার্জ পোরস কমিয়ে আনতে ঘরোয়া উপায়
১) অ্যালোভেরা জেল
ত্বকের পোরস মিনিমাইজ করতে এই উপাদানটির কোনো তুলনা হয় না। প্রতিদিন ত্বকে অ্যালোভেরা জেল ম্যাসাজ করুন। কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে। তারপর ১০ মিনিট রেখে দিন। ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি পোরগুলোকে সংকুচিত করে পোরসের সাইজ ছোট করে। শুধু তাই নয়, অ্যালোভেরা জেল স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড করে। অ্যালোভেরা জেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে এটি ত্বকের ভেতরে থাকা অতিরিক্ত তেল ও ময়লা দূর করে।
২) ডিমের সাদা অংশ
১টি ডিমের সাদা অংশ, ২ টেবিল চামচ ওটসমিল, ২ টেবিল চামচ গোলাপ জল এই সবগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকটি সম্পূর্ণে ত্বকে ব্যবহার করুন। ৩০ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করুন। ডিমের সাদা অংশ স্কিন টাইট করতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি এনলার্জ পোরসকে সংকুচিত করে থাকে। শুধু তাই নয় ডিমের সাদা অংশ পিম্পল রোধ করতেও বেশ কার্যকরী। গোলাপ জল ত্বকের পি এইচ লেভেল ব্যালেন্স করে, ওপেন পোরসের সমস্যা দূর করে ত্বককে মসৃণ ও কোমল রাখে।
৩) আপেল সিডার ভিনেগার
১ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এবং ১ টেবিল চামচ পানি একসাথে মিশিয়ে নিন। একটি তুলোর বলে এই মিশ্রণটি ভিজিয়ে সম্পূর্ণ স্কিনে ম্যাসাজ করুন। স্কিন সম্পূর্ণ ড্রাই হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন। আপেল সিডার ভিনেগার স্কিনের পোরগুলো মিনিমাইজ করতে সাহায্য করে।
৪) ক্লে বেইজড মাস্ক
ত্বক পরিচর্চায় ক্লে জাতীয় মাস্ক অনেক আগের থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। এনলার্জ পোরস মিনিমাইজ করতে এই প্যাকগুলো দারুণ কার্যকরী। ১ টেবিল চামচ ডিটক্স হিলিং ক্লে, ১ টেবিল চামচ টকদই এবং কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকটি ত্বকে ব্যবহার করুন। ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে আসলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দ্রুত ফল পেতে এই প্যাকটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করুন।
ক্লে মাস্ক এবং টকদই ত্বককে ভেতর থেকে ক্লিন করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে এবং ফ্রেশ লুক দেয়। এই প্যাকটি স্কিন ব্রাইট করার সাথে সাথে ত্বকের তৈলাক্তভাব কমিয়ে আনে এবং স্কিনের ভিজিবল পোরগুলো ছোট করতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েট হিসাবেও কাজ করে।
৫) শসার রস
৪-৫ টুকরো শসার টুকরোর সাথে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই প্যাকটি স্কিনে ব্যবহার করুন। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। লেবু সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করা ঠিক না, কোনো কিছুর সাথে মিক্স করে লাগানো যেতে পারে। শসা লেবুর মিশ্রণ ফ্রিজে রেখে বরফ করে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এবার এটি দিয়ে আইস ম্যাসাজ করে নিলেই পাবেন সতেজ ও কোমল ত্বক। সপ্তাহে দুই বা তিনবার ব্যবহার করতে পারেন। এনলার্জ পোরস এর ভিজিবিলিটি কমাতে এই ছোট্ট ঘরোয়া উপায়টি দারুণ কাজ করে!
টিপস
১। নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করুন। প্রতিদিন সকালে এবং রাতে ফেইস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়ার অভ্যাস করুন।
২। এক্সফোলিয়েট করুন সপ্তাহে ১/২ দিন।
৩। স্কিন ক্লিন করার পর টোনার ব্যবহার করুন।
৪। মুখ ধোয়ার পর অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন।
৫। ক্লে মাস্ক অথবা ঘরোয়া কোনো প্যাক ব্যবহার করুন। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়, সেই সাথে পোরস ক্লিন রাখে।
৬। দিনের বেলায় সানস্ক্রিন ইউজ করতে ভুলবেন না।
৭। আপনি যদি বেসিক স্কিন কেয়ার করেন এবং ২০ বছরের বেশি বয়স হয়ে থাকে, তাহলে নিয়াসিনামাইড-যুক্ত সিরাম ব্যবহার করতে পারেন।
ঘরোয়া উপায়ে কীভাবে এনলার্জ পোরস এর সাইজ কমিয়ে আনা যায় সেগুলো জেনে নিলাম! পোরস কিন্তু আপনার শরীরেরই অংশ, এটা দিয়েই তো ত্বক শ্বাস নেয়, ঘাম বা টক্সিক পদার্থ বের করে দেয়। তাই পোরস কিন্তু ভ্যানিশ হবে না, এর সাইজ মিনিমাইজ করতে পারি আমরা যাতে ত্বক অমসৃণ না দেখায়! সুন্দর ত্বক আপনার আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। একটু সময় বের করে ত্বকের যত্ন তো নেওয়া-ই যায়।
সেলফ কেয়ারের জন্য অথেনটিক প্রোডাক্টস খুঁজছেন? আপনারা চাইলে সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত, সেখান থেকে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। সবাই ভালো থাকবেন।
ছবি- সাটারস্টক, সাজগোজ