সারাদিনের ব্যস্ততা, রেগুলার লাইফের স্ট্রেস, কড়া রোদে বের হওয়া, বাতাসের আর্দ্রতা, পল্যুশন এই সবকিছুই আমাদের ত্বক ও চুলের উপর কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলে। ত্বক আর চুলের সমস্যার কি কোনো শেষ আছে? আমাদের দেশের আবহাওয়াতে এবং চারদিকের এত পল্যুশনে অল্প বয়সেই ত্বকে চলে আসে এজিং সাইন, একটু অযত্নেই চুল হয়ে যায় রুক্ষ, ঠোঁট দেখায় কালচে আর খসখসে! ত্বক ও চুলের রুক্ষ-শুষ্কভাব দূর করে ময়েশ্চার ধরে রাখতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে অলিভ অয়েল।
অলিভ অয়েল তো মোটামুটি সবাই-ই ব্যবহার করেন। কিন্তু খাঁটি অলিভ অয়েল খুঁজে পাওয়াটা তো একটু কঠিন! আমি রিসেন্টলি বাংলাদেশী একটি ব্র্যান্ডের অলিভ অয়েল ট্রাই করেছি। আমার মনে হলো যে রিভিউটা শেয়ার করে ফেলি যাতে আপনারাও নিজের জন্য বেস্ট প্রোডাক্টটি বেছে নিতে পারেন। আজকে আমরা জানবো এই অলরাউন্ডার অয়েলের বেনিফিটস নিয়ে, সেই সাথে কোথায় পাবেন পিওর অলিভ অয়েল, সেটাও জানা হয়ে যাবে।
ত্বক ও চুলের যত্নে অলিভ অয়েল
যুগ যুগ ধরেই রূপচর্চায় জলপাই তেলের ব্যবহার হয়ে আসছে। একটি তেল থেকেই যদি অনেকগুলো বিউটি বেনিফিট পাওয়া যায়, তাহলে তো বেশ ভালোই হয়। অলিভ অয়েলকে এক কথায় বলা যায় ‘অলরাউন্ডার অয়েল’ কেননা শুধুমাত্র একটি তেল দিয়ে কত রকমের সমস্যার সমাধান যে আপনি পাবেন! অনেকে তো ভেবেই বসেন যে অলিভ অয়েল শুধুমাত্র শীতকালে হাতে-পায়ে লাগাতে হয়! কিন্তু এই তেলটি কিন্তু সারাবছরই ব্যবহার করা যায় এবং হাতে-পায়ে অয়েল ম্যাসাজ করা ছাড়াও এটি আরও অনেকভাবেই ব্যবহার করতে পারবেন। আবার অনেকেই জানেন না যে এই অলিভ অয়েলের গুণাগুণই বা কী! এই ইনফরমেশন গ্যাপ দূর করতে বা কনফিউশনগুলো ক্লিয়ার করতেই আজকের লেখা।
ত্বক ও চুলের রুক্ষ-শুষ্কভাব দূর করতে হলিগ্রেইল অলিভ অয়েল
আমি বেশ কয়েকদিন ধরে ইউজ করছি ‘রাজকন্যা অলিভ অয়েল’। আমার বডির স্কিন বেশ ড্রাই, এসিতে দীর্ঘ সময় ধরে থাকার জন্য স্কিন অনেক বেশি ডিহাইড্রেটেড লাগে। আবার বিজি সিডিউলের জন্য চুলের যত্ন নেওয়া হচ্ছিলো না, যার ফলে চুল রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ হয়ে যাচ্ছিলো। আমি স্কিন ও হেয়ার কেয়ারে ন্যাচারাল ও অর্গানিক প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পছন্দ করি। রাজকন্যা বাংলাদেশী অর্গানিক ব্র্যান্ড, ইতিমধ্যে এটা আমরা অনেকেই জানি। সোশ্যাল মিডিয়াতে পজেটিভ রিভিউ দেখে রাজকন্যা অলিভ অয়েলটি ট্রাই করলাম। সেই এক্সপেরিয়েন্সটাই আজ শেয়ার করবো আপনাদের সাথে।
প্রথমেই রাজকন্যা ব্র্যান্ড নিয়ে কিছু কথা
দেশীয় ব্র্যান্ড হওয়াতে বাজেটের মধ্যেই বেস্ট কোয়ালিটি এনশিওর করে রাজকন্যা। অনেক ক্ষেত্রে কাঁচামালগুলো দেশের বাইরে থেকে সংগ্রহ করা হয়। কোয়ালিটির সাথে তারা কোনো কম্প্রোমাইজ করে না। এই ব্র্যান্ডের প্রোডাক্টগুলোতে ক্ষতিকর উপাদান যেমন প্যারাবেন, অ্যালকোহল বা কোনো নন-হালাল উপাদান নেই।
এই অলিভ অয়েলের বিশেষত্ব কী?
- কোনো আর্টিফিশিয়াল রঙ বা সুগন্ধ ব্যবহার করা হয়নি
- স্কিন ও হেয়ারের জন্য বেনিফিসিয়াল ভিটামিন আছে (vitamin A, D, E & K)
- অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল প্রোপার্টিজযুক্ত
- নন-স্টিকি, কোনো ধরনের চিটচিটে ভাব হয় না
- খাঁটি জলপাইয়ের মাইল্ড স্মেল পাবেন
- এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল আর রিফাইন্ড অলিভ অয়েলের সংমিশ্রণ আছে এতে
- প্যাকেজিংটাও বেশ সুন্দর
ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল
ত্বকের শুষ্কতা দূর করে ময়েশ্চার ধরে রাখতে ন্যাচারাল সল্যুশন হিসাবে অলিভ অয়েলের জুড়ি নেই। অনেকেই আছেন যাদের সারা বছরই হাত-পায়ের স্কিন ড্রাই থাকে। অনেকের দেখা যায় যে চোখের চারপাশের ত্বকে ড্রাই প্যাচেস পড়েছে ও আন্ডার আই ডার্ক সার্কেল নিয়ে ভুগছেন। চলুন জেনে নেই ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল কেন ব্যবহার করবেন সেই সম্পর্কে।
১) ত্বকের কোমলতা ফিরে পেতে
ড্রাই ও ডিহাইড্রেটেড স্কিন নিয়ে চিন্তিত? অনেক সময় আমাদের বডির স্কিন মুখের তুলনায় অনেক বেশি রুক্ষ-শুষ্ক হয়ে যায়, তাই না? ত্বকের কোমলতা ফিরিয়ে আনতে আপনার রেগুলার স্কিন কেয়ার রুটিনে অ্যাড করুন অলিভ অয়েল। গোসলের পর সারা শরীরে অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে নিন, দিনভর ত্বক থাকবে ময়েশ্চারাইজড। এটি অ্যান্টি এজিংয়ের কাজও করবে।
২) আন্ডার আই এরিয়ার ড্রাইনেস আর ডার্ক সার্কেল দূর করতে
অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর এই অয়েলটি চোখের চারপাশে ব্যবহার করতে পারেন নিশ্চিন্তে। তবে খুব সাবধানে যেন চোখে না যায়! ড্রাই প্যাচেস, রিংকেলস এর সল্যুশনে এই তেল দারুণ কাজ করে। তবে রাতারাতি যে ফলাফল পাবেন, এমনটা কিন্তু নয়। প্রাকৃতিক জিনিস কোনো সাইড ইফেক্ট ছাড়াই ধীরে ধীরে হলেও আপনাকে বেনিফিট দিবে।
৩) ঠোঁট ও পায়ের গোড়ালি ফাটা কমাতে
নরম ও গোলাপি ঠোঁট পেতে অলিভ অয়েল সরাসরি ঠোঁটে লাগানো যায়। আবার লিপ স্ক্রাবিং করতে চিনি, মধু ও অলিভ অয়েল একসাথে মিক্স করেও ম্যাসাজ করতে পারেন। যারা দীর্ঘসময় এসিতে থাকেন, ঠোঁট অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে যায়, তাদের জন্য অলিভ অয়েল হতে পারে কুইক ফিক্স সল্যুশন। পায়ের গোড়ালি ফাটা কমাতেও রেগুলার এই তেলটি ব্যবহার করতে পারেন।
৪) স্ট্রেচ মার্কস দূর করতে
প্রেগনেন্সিতে কম বেশি সবারই পেটে স্ট্রেচ মার্কস পড়ে যায়। শুরু থেকেই যদি প্রতিদিন অলিভ অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করা যায়, তাহলে ত্বক ফেটে ফেটে যাওয়ার চান্স অনেকটাই কম থাকবে। প্রেগনেন্সিতে অনেকেরই পেটে ইচিং বা চুলকানি হতে পারে, সেক্ষেত্রে অলিভ অয়েল দিয়ে মালিশ করলে বেশ আরাম পাবেন।
চুলের যত্নে অলিভ অয়েল
ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল কীভাবে আপনাকে বেনিফিট দেয়, সেগুলো তো জানলাম। চলুন এখন তাহলে জেনে নেই চুলের যত্নে এই ম্যাজিকাল অয়েলের দারুণ কিছু ব্যবহার সম্পর্কে।
১) চুলের আগা ফাটা রোধ করতে
চুল একটু বড় হলেই আগা ফেটে যায়, কিছুতেই চুল লম্বা রাখতে পারছেন না? অলিভ অয়েল দিয়ে চুলের যত্ন নিলে হেয়ার কিউটিকল স্মুথ থাকবে, রাফনেস দূর হবে আর চুলের আগা ফাটাও রোধ হবে। নারকেল তেলের সাথে অলিভ অয়েল মিক্স করে সমস্ত চুলে লাগিয়ে রেখে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলবেন, এভাবে সপ্তাহে ২/৩ দিন অয়েল ট্রিটমেন্ট করুন, পার্থক্যটা নিজেই বুঝতে পারবেন।
২) চুলের শাইনিভাব ধরে রাখতে
সিল্কি ও শাইনি চুল পেতে হেয়ার কেয়ারে ইনক্লুড করুন অলিভ অয়েল। এতে থাকা ভিটামিনস আর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট চুলের ন্যাচারাল শাইন ধরে রাখে, ড্যামেজ রিপেয়ার করে আর চুলকে রাখে হেলদি।
৩) DIY প্যাকের সাথে
রাজকন্যা অলিভ অয়েল যেকোনো হোমমেড হেয়ার প্যাক বা মাস্কের সাথে মিক্স করে চুলে লাগাতে পারেন। এতে ঐ হেয়ার প্যাকের গুণাগুণ আরও বেড়ে যাবে। অনেক সময় প্যাক ইউজ করলে চুল ড্রাই হয়ে যায়, অলিভ অয়েল মিক্স করে নিলে এই সমস্যাটি আর হবে না। ওয়াশের পরও চুল থাকবে সফট।
রাজকন্যা অলিভ অয়েল কেন কিনবেন?
অলিভ অয়েলের নানা রকম ব্যবহার নিয়ে এতক্ষণ আমরা জানলাম। আচ্ছা বাজারে তো কত অলিভ অয়েল-ই আছে, তাহলে রাজকন্যা অলিভ অয়েল কেন রেকমেন্ড করছি আমি, সেটা নিশ্চয়ই জানতে চান! কারণটি হচ্ছে এই অলিভ অয়েলটি একদম পিওর এবং বাজেট ফ্রেন্ডলি। বাচ্চাদের জন্যও একদম সেইফ, কেননা এতে হার্মফুল কোনো ইনগ্রেডিয়েন্ট নেই। নিচিন্তে আপনার ছোট সোনামণির ত্বকে ও চুলে এই তেল ব্যবহার করতে পারবেন।
প্যাকেজিং এবং দাম
আগেই বলেছি যে দামটা একদমই হাতের নাগালে। ১২০ মিলি পরিমাণে তেল থাকে বোতলে। ছোট থেকে বড় পরিবারের সব সদস্যরাই ইউজ করতে পারবেন।
তাহলে দেখলেন তো, এই একটি অয়েল দিয়ে কত ধরনের বেনিফিট আপনি পেয়ে যাচ্ছেন! অলিভ অয়েলকে এই জন্যই মাল্টি পারপাস অয়েল বলা হয়। আমার নিজস্ব এক্সপেরিয়েন্স থেকেই আজকে রিভিউ শেয়ার করলাম। ত্বক ও চুলের রুক্ষ-শুষ্কভাব এখন দূর হবে নিমিষেই। আশা করি আপনাদের কনফিউশনগুলো ক্লিয়ার করতে পেরেছি। অথেনটিক প্রোডাক্টস কিনতে আপনারা চাইলে সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ ভিজিট করতে পারেন। যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, ইস্টার্ন মল্লিকা, বসুন্ধরা সিটি, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), সীমান্ত সম্ভার, চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি। আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক