চুলকে সিল্কি করতে আমরা কতো কিছুই না করি। কখনো হেয়ার স্ট্রেইটনার দিয়ে চুল সোজা করি, আবার কখনো চুলে বিভিন্ন কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হয় শাইনি ও স্ট্রেইট করতে। এসকল প্রোডাক্ট চুলকে সাময়িকভাবে সিল্কি করে তুললেও কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে প্রোপারলি টেক কেয়ার না করলে কিছু দিন যেতে না যেতেই এগুলো খুব সহজেই চুল ড্যামেজ করে ফেলে! এটি চুলের ময়েশ্চার লেভেল নষ্ট করে ফেলে। চুলকে করে তোলে রুক্ষ এবং প্রাণহীন। ড্যামেজ চুলকে পুনরায় কোমল করে তোলা বেশ কঠিন! একটু চেষ্টা করলে ঘরোয়া উপায়ে কেমিক্যালি ড্যামেজড হেয়ার সিল্কি ও শাইনি করে তোলা সম্ভব। আজকের ফিচার সাজানো হয়েছে ড্যামেজ চুলকে সিল্কি করে তোলার উপায় নিয়ে। আগে জেনে নেওয়া যাক ড্যামেজ চুলের লক্ষণগুলো কী কী।
ড্যামেজ চুলের লক্ষণ
- অতিরিক্ত চুল পড়া
- চুল রুক্ষ এবং ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া
- চুলের আগা ফাটা
- মাথা তালুতে চুলকানি হওয়া
- চুল নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়া
- ময়েশ্চার হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি
আপনার চুল যদি কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ব্যবহারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে তাহলে এই নিয়মগুলো মেনে চলুন। খুব সহজেই আপনি ফিরে পাবেন সিল্কি ও শাইনি চুল।
কেমিক্যালি ড্যামেজড হেয়ার রিপেয়ার করবেন কীভাবে?
১) ভালো মানের শ্যাম্পু বেছে নেওয়া
ক্ষতিগ্রস্ত চুলকে মজবুত করার সহজ উপায় হলো ভালো মানের মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করা। সালফেট ফ্রি, প্যারাবেন ফ্রি, সিলিকন ফ্রি শ্যাম্পু চুলের জন্য খুবই ভালো, একদমই হার্শ হয় না এগুলো। সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু ব্যবহারে মাথার ত্বকে কোনো জ্বালাপোড়া হবে না। এছাড়া এতে কেমিক্যাল কম ব্যবহার করার কারণে এটি চুলের ক্ষতি করে না, রেগুলার বেসিসে ইউজ করা যায়। এই ধরনের শ্যাম্পু চুল পড়া কমাতে, চুলের রুক্ষতা দূর করতে, এমনকি আগা ফাটা রোধ করতেও অনেকটা হেল্প করে। কেমিক্যালি ড্যামেজড হেয়ার এর যত্ন নিতে শ্যাম্পু সিলেকশনের ব্যাপারটি খেয়াল রাখবেন।
২) সঠিক কন্ডিশনারের ব্যবহার
অনেকেই চুলে শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করতে চায় না, কিন্তু এটা করা উচিত নয়। শ্যাম্পুতে থাকা কেমিক্যাল উপাদান চুল থেকে ন্যাচারাল অয়েল দূর করে চুলকে রুক্ষ-শুষ্ক করে তোলে। কন্ডিশনার চুলের হারিয়ে যাওয়া ময়েশ্চার রিস্টোর করে। অলিভ অয়েল, কোকোনাট অয়েল অথবা আরগান অয়েলের উপাদান রয়েছে এমন কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন। ন্যাচারাল এক্সট্র্যাক্ট সমৃদ্ধ কন্ডিশনার ড্যামেজ চুলকে শাইনি ও সিল্কি করে তুলতে সাহায্য করে।
৩) হট অয়েল ট্রিটমেন্ট
কেমিক্যালি ড্যামেজড হেয়ার এর জন্য হট অয়েল ট্রিটমেন্ট অনেক বেশি কার্যকরী। নারকেল তেল, বাদাম তেল, অলিভ অয়েল অথবা অ্যাভোকাডো অয়েল হালকা গরম করে নিন। তেলে সরাসরি হিট না দিয়ে গরম পানির বোলে ছোট একটি বাটিতে তেল রেখে গরম করতে পারেন। যেকোনো ক্যারিয়ার অয়েলের সাথে কয়েক ফোঁটা আরগান অয়েল কিংবা আপনার পছন্দের অ্যাসেনশিয়াল অয়েল মিক্স করে নিতে পারেন। এটি মাথার তালু থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ চুলে ব্যবহার করুন। এটি চুলের আগা ফাটা ও চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করে। এছাড়া হট হেয়ার অয়েল ট্রিটমেন্ট চুলের ফ্রিজিনেস দূর করে, মাথার তালুর রুক্ষতা দূর করে স্ক্যাল্পে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে থাকে।
৪) টকদই এবং তেলের মাস্ক
টকদই এবং তেল উভয়-ই ক্ষতিগ্রস্ত চুলকে শাইনি করতে সাহায্য করে। আধা কাপ টকদই, দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল এবং কয়েক ড্রপ টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল একসাথে মিশিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করুন। প্যাকটি চুলে ব্যবহার করে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন।
৫) অ্যাভোকাডো প্যাক
অ্যাভোকাডোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, এ, মিনারেলস এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে। এই উপাদানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত এবং রুক্ষ চুলকে কোমল করে তোলে। অ্যাভোকাডো পেস্টের সাথে একটি ডিম মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকটি চুলে ব্যবহার করে ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করুন।
৬) এগ হেয়ার মাস্ক
ডিম তো কতোভাবেই চুলের যত্নে ব্যবহার করা যায়। টকদইয়ের সাথে ডিম মিক্স করে চুলে লাগাতে পারেন। আরেকটি ট্রিকস শেয়ার করি, শ্যাম্পুর সাথে একটি ডিম ভেঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই ডিম শ্যাম্পু চুলে ব্যবহার করুন। পাঁচ মিনিট রেখে চুলে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। ডিম চুলের প্রোটিন লেভেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ব্যস, চুল হবে সফট ও শাইনি।
৭) বানানা হেয়ার মাস্ক
কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যা চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, কলা চুলের আগা ফাটা রোধ করে, চুলকে নরম করে তোলে। একটি পাকা কলা ভালো করে ম্যাশ করে নিন। চাইলে এতে অ্যালোভেরা জেল, মধু, খাঁটি নারকেল তেল মিক্স করে নিতে পারেন। এভাবে খুব সহজেই ডিপ নারিশিং হেয়ার মাস্ক বাসাতেই বানিয়ে নেওয়া যায়। এবার সমস্ত চুলে লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ভালোভাবে চুল কভার করে নিন। ১ ঘন্টা পর কুসুম গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। চুল ধোয়ার জন্য মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। সপ্তাহে ১/২ দিন এই প্রসেসটি ফলো করে কেমিক্যালি ড্যামেজড হেয়ার এর যত্ন নিতে পারেন।
বোনাস টিপস
১। ক্ষতিগ্রস্ত চুলের যত্নে হার্শ কেমিক্যালযুক্ত এড়িয়ে চলুন।
২। সুইমিং পুলে চুল না ভেজানোই ভালো, কেননা এতে ক্লোরিনের পরিমাণ বেশি থাকে।
৩। দরকার না হলে প্রতিদিন শ্যাম্পু করা থেকে বিরত থাকুন। আর রেগুলার শ্যাম্পু করতে হলে সালফেট ফ্রি মাইল্ড শ্যাম্পু বেছে নিন।
৪। আগা ফাটা রোধে ২ মাস পর পর চুল ট্রিম করুন।
৫। ড্যামেজ রিপেয়ারের জন্য ডিপ কন্ডিশনিং হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অনেকেই চুলে কালার করছেন বা রিবন্ডিং করে চুল স্ট্রেইট করছেন। এসব কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টে চুল যাতে ড্যামেজ না হয়, সেজন্য প্রোপারলি টেক কেয়ার করা কিন্তু মাস্ট! কেমিক্যালি ড্যামেজড হেয়ার কীভাবে খুব সহজেই সুন্দর ও প্রাণবন্ত করে তোলা যায়, সেটার জন্য দরকারি কিছু টিপস আমরা পেয়ে গেলাম। অথেনটিক হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টস কিনতে আপনারা চাইলে সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত, সেখান থেকে কিনতে পারেন আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন।
ছবি- সাজগোজ