চন্দন তো আমরা সবাই চিনি, তাই না? আর রূপচর্চায় তো চন্দন বহুকাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নারীদের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে এর গুণাগুণের কারণে। তবে সাধারণত আমরা স্যান্ডেলউড হিসেবে কিন্তু সাদা চন্দনকেই চিনে থাকি। এটাকে ইন্ডিয়ান স্যান্ডেলউডও বলা হয়। সাদা চন্দন পৃথিবীজুড়ে খুবই জনপ্রিয় এর স্কিন বেনিফিটস এবং সুন্দর স্মেলের কারণে। তবে চন্দনের যে আরেকটি দারুণ ভ্যারিয়েশন আছে সেটা কি আমরা জানি? হ্যাঁ, বলছিলাম রেড স্যান্ডেলউড এর কথা। লাল চন্দন বা রেড স্যান্ডেলউড, দুষ্প্রাপ্য ভেষজ উপাদানটি ত্বকের যত্নে অতুলনীয়। যারা রেড স্যান্ডেলউড এর স্কিন বেনিফিটস এবং ব্যবহার সম্পর্কে জানেন না তাদের জন্যই আজকের আর্টিকেল। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই, রক্তচন্দন বা রেড স্যান্ডেলউড ত্বকের যত্নে কতটা কার্যকর।
রক্তচন্দন বা রেড স্যান্ডেলউড নিয়ে কিছু কথা
প্রথমেই প্রশ্ন আসে যে, রেড স্যান্ডেলউড জিনিসটা আসলে কী? এটাকে রক্তচন্দনও বলা হয়। তবে সাদা চন্দন এর সাথে এর বেশ কিছু ভিন্নতা রয়েছে। এটি মূলত একটি গাছের কাঠ, যেটি গাছের একদম ভেতরের অংশে থাকে এবং এর রঙ লাল হয়। সবথেকে বড় তফাৎ হচ্ছে স্মেলে, রেড স্যান্ডেলউডে সাদা চন্দনের মতো সুগন্ধ থাকে না। লাল চন্দন বা রেড স্যান্ডেলউডে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটোরি প্রোপার্টি এবং আরও অনেক গুণাগুণ, তাই এটি আমাদের স্কিন কেয়ারের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
স্কিন কেয়ারে এর উপকারিতা ও ব্যবহারসমূহ
১) হেলদি লুকিং স্কিন পেতে
নরমালি আমরা হেলদি লুকিং স্কিন বলতে কী বুঝি? যে স্কিন বাইরে থেকে দেখতে হেলদি লাগে এবং ভেতর থেকেও নারিশড হয়, তাই না? আর লাল চন্দন বা রেড স্যান্ডেলউড পাউডার আমাদের স্কিনে সেই নারিশমেন্টটা দিতে সাহায্য করে। এজন্য, ১ থেকে ২ চামচ রেড স্যান্ডেলউড পাউডার নিয়ে এর সাথে আপনার পছন্দের যেকোনো ফেইস অয়েল (অলিভ অয়েল, জোজোবা অয়েল বা আমন্ড অয়েল নিতে পারেন) মিলিয়ে স্মুথ পেস্ট তৈরি করুন। এটি সপ্তাহে তিন দিন অ্যাপ্লাই করুন এবং ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
২) গ্লোয়িং স্কিন পেতে
অনেক সময় প্রোপার স্কিন কেয়ার না করার ফলে আমাদের স্কিন দেখতে ড্রাই, ডাল ও লাইফলেস লাগে। এই সমস্যা থেকে সমাধান দিতে পারে রেড স্যান্ডেলউড। এজন্য একটি বাটিতে ২ টেবিল চামচ টকদই, ১ টেবিল চামচ রেড স্যান্ডেলউড পাউডার এবং এক চিমটি চামচ হলুদ গুঁড়ো নিয়ে একসাথে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি ফেইস ক্লিন করে ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপরে নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে নিন এবং ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করুন। দেখবেন স্কিন কত সুন্দর গ্লো করছে!
৩) স্কিনকে ইভেন টোনড করতে
অনেক সময় আমাদের স্কিনে ছোপ ছোপ দাগ পড়তে দেখা যায়। এছাড়াও ব্লেমিশ, ব্রেকআউট এগুলোর জন্য স্কিন দেখতে আনইভেন লাগে। আর এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে লাল চন্দন বা রেড স্যান্ডেলউড। এজন্য ২ টেবিল চামচ কোকোনাট মিল্ক, ১ টেবিল চামচ আমন্ড অয়েল এবং ২ টেবিল চামচ রেড স্যান্ডেলউড পাউডার নিয়ে মিক্স করে নিন এবং এই মাস্কটি সপ্তাহে ২ দিন ফেইসে অ্যাপ্লাই করুন। কিছুক্ষণ পর ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এভাবে খুব কম সময়ে আনইভেন স্কিনটোনের সমস্যা দূর হবে।
৪) স্কিন এক্সফোলিয়েশনে
রেড স্যান্ডেলউড পাউডার আমাদের স্কিনকে এক্সফোলিয়েট করতে এবং ডেড স্কিন সেলস রিমুভ করতে খুব ভালো কাজ করে। ফেইস ও বডির স্কিন এক্সফোলিয়েশনের জন্য একটি এক্সফোলিয়েটিং মাস্ক বানিয়ে নিতে পারেন।
মধু ও ম্যাশ করা পাকা পেঁপের সাথে এক টেবিল চামচ রেড স্যান্ডেলউড পাউডার দিয়ে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি স্কিনে জেন্টলি ম্যাসাজ করুন দুই থেকে তিন মিনিটের জন্য। এরপরে নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ঘরোয়া এই মাস্কে ত্বক হবে সতেজ, প্রাণবন্ত ও উজ্জ্বল। মধু ও পেঁপে স্কিনের রুক্ষতা দূর করে ময়েশ্চারাইজড করবে।
৫) স্কিনের এক্সট্রা অয়েলিনেস দূর করতে
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের স্কিন খুবই তৈলাক্ত ধরনের। যার ফলে তাদের স্কিনে অনেক বেশি ব্রেকআউটস এবং ওপেন পোরসের সমস্যা দেখা যায়। রেড স্যান্ডেলউডে কিন্তু স্কিনের এই এক্সট্রা অয়েলিনেস দূর করার গুণাগুণ রয়েছে। এটি স্কিন থেকে এক্সট্রা অয়েল দূর করে এবং ফ্রেশনেস ফিরিয়ে আনে।
এজন্য ১ টেবিল চামচ রেড স্যান্ডেলউড পাউডার, গ্রেড করা শশা এবং সামান্য লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে নিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে নিন এবং ১৫ মিনিট ওয়েট করুন। এই ফেইস মাস্কটি ত্বকের এক্সেস অয়েল দূর করার সাথে সাথে আপনাকে ওপেন পোরসের সমস্যা থেকেও মুক্তি দেবে।
৬) সানট্যান দূর করতে
শীত হোক বা গরমকাল, স্কিনে সানট্যান তো সবসময়ই পড়ে। অনেক সময় সানস্ক্রিন বা সান প্রোটেকশন না নেয়ার ফলে স্কিনে বাজেভাবে সানট্যান পড়ে যায়। তখন বডির কালার এবং ফেইসের কালার দেখতে ভিন্ন লাগে। আর এই ক্ষেত্রে রেড স্যান্ডেলউড কার্যকরী উপাদান হিসেবে কাজ করে।
এজন্য ১ টেবিল চামচ রেড স্যান্ডেলউড পাউডার এর সাথে কিছুটা শসার রস ও অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে নিয়ে একটি প্যাক বানিয়ে নিন। এটি আপনার ত্বকের এফেক্টেড এরিয়াতে অ্যাপ্লাই করুন। কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন। রেগুলার ব্যবহারে স্কিনের সানট্যান কমে যাবে।
৭) পিগমেন্টেশন দূর করতে
যতই স্কিন দেখতে সুন্দর হোক না কেন, স্কিনে যদি পিগমেন্টেশন থাকে তাহলে নিজের কনফিডেন্স লেভেলটা অনেক কমে যায়। তবে এখন আর চিন্তা নেই! রেড স্যান্ডেলউড পাউডার এই ধরনের পিগমেন্টেশন দূর করতে খুবই ভালো কাজ করে।
এজন্য ২ চা চামচ রেড স্যান্ডেলউড পাউডার এর সাথে ফ্রেশ কাঁচা দুধ মিশিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে নিন এবং প্রতিদিন এটা পিগমেন্টেড এরিয়াতে অ্যাপ্লাই করুন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ওয়াশ করে ফেলতে হবে। তবে হ্যাঁ, এটা কোনো ম্যাজিকাল মাস্ক না, তাই ধৈর্য ধরে বেশ কিছুদিন এটা ব্যবহার করে যেতে হবে। তবেই ভালো ফল পাওয়া যাবে। প্রাকৃতিক উপাদান ধীরে ধীরে হলেও আপনাকে বেনিফিট দিবে, কোনো সাইড ইফেক্ট ছাড়াই!
৮) পিম্পল দূর করতে
পিম্পল বা ব্রণের সমস্যায় ভোগেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে রেড স্যান্ডেলউড কিন্তু পিম্পল দূর করতে জাদুর মত কাজ করে। রেড স্যান্ডেলউডের অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং সুদিং প্রোপার্টিজ পিম্পল ও ইরিটেশন দূর করতে দারুণ কাজে দেয়।
এজন্য যে ফেইস মাস্কটি ব্যবহার করতে হবে সেটাও কিন্তু খুবই সিম্পল। ১ টেবিল চামচ রেড স্যান্ডেলউড পাউডার এর সাথে পরিমাণমতো রোজ ওয়াটার মিলিয়ে একটি মাস্ক বানিয়ে নিন। এই মাস্কটি সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন অ্যাপ্লাই করুন। আশা করছি পিম্পলস আস্তে আস্তে শুকিয়ে আসবে এবং ইরিটেশনও দূর হবে।
৯) স্কিনের প্রিম্যাচিউর এজিং রোধ করতে
অনেক সময় দেখা যায় যে অনেকের বয়সের আগেই ত্বকের চামড়া ঝুলে যাওয়া, পোরস বড় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি শুরু হয়ে যায়। এখনকার লাইফস্টাইলের কারণে স্কিনে আগে আগেই বয়সের ছাপ চলে আসে।
প্রিম্যাচিউর এজিং রোধ করতে চাইলে, ১ চা চামচ দুধের সর ব্লেন্ড করে নিয়ে এর সাথে ১ টেবিল চামচ রেড স্যান্ডেলউড পাউডার মিশিয়ে নিন। রাতে ঘুমানোর আগে স্কিন ক্লিন করে এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। কয়েকদিন ব্যবহারের পর স্কিন ইম্প্রুভমেন্টটা আপনি নিজের চোখেই দেখতে পাবেন!
১০) শরীরের ত্বকের ইরিটেশন দূর করতে
স্কিনের ইরিটেশন দূর করতে রেড স্যান্ডেলউড পাউডার ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এজন্যে, যেকোনো বডি অয়েল এর সাথে রেড স্যান্ডেলউড পাউডার মিলিয়ে বডির স্কিনে ম্যাসাজ করুন। গোসলের আগে এই কাজটি করতে পারেন। এতে স্কিনের ইরিটেশন, রেডনেস ইত্যাদি সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
সাইড ইফেক্ট আছে কি?
লাল চন্দন বা রেড স্যান্ডেলউড পাউডার এর কোনো সাইড ইফেক্ট নেই! এটি সব ধরনের স্কিনের জন্যই স্যুইটেবল। ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট হওয়ার কারণে এটি একদমই সেইফ। ভেষজ উপাদান হলেও সংবেদনশীল ত্বকে এটি ব্যবহার করা আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে। সব উপাদান সবাইকে স্যুট নাও করতে পারে।
এইতো জেনে নিলেন, রক্তচন্দন বা রেড স্যান্ডেলউড পাউডার এর বেশ কিছু বেনিফিটস ও ব্যবহারবিধি সম্পর্কে। Rajkonna 100% Natural & Organic Red Sandalwood Powder আমি পেয়েছি সাজগোজ থেকে। লাল চন্দন সচরাচর পাওয়া যায় না, বেশ দুষ্প্রাপ্য ভেষজ উপাদান এটি। অনেকের কাছে দামটা একটু বেশি মনে হলেও পয়সা উসুল একটি প্রোডাক্ট এটি! আপনি চাইলে অনলাইনে অথেনটিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে। তাছাড়া, সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক