গরম শেষে যখন আবহাওয়ার বদল হয় তখনই শিশুরা অসুস্থ হয়ে যায়। এরপর আসে শীত। বছরের এ সময়টায় শিশুদের মধ্যে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। হুটহাট ঠান্ডা লেগে যাওয়া, জ্বর আসা এগুলো খুব সাধারণ ব্যাপার। শীতের সময় ভেবে আমরাও শিশুদের পানি ধরতে দেই না, বাইরে খেলতে যাওয়া বন্ধ করে দেই, এমনকি খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারেও বেঁধে দেই অনেক নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু আসলেই কি শিশুদের সুস্থ থাকার জন্য এত নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন আছে? নাকি শীতকালেও সাধারণ কিছু নিয়ম মেনেই শিশুকে সুস্থ রাখা যায়? শীতে শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন, জেনে নিন তাহলে।
শীতে শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করবেন কীভাবে?
নিয়মিত হাত ধোয়া
শীতের বাতাস বইতে শুরু করলেই আমরা শিশুদের সুস্থ রাখার জন্য অস্থির হয়ে যাই। পানি ধরতে দেই না। শুধু গোসলের সময় গরম পানি করে অল্প সময়েই গোসল শেষ করে ফেলি। ভাবি, যেহেতু শরীর বা হাত ঘামছে না তাই শীতে এত পানি ধরার দরকার নেই। ঠান্ডা লেগে যাবে বা জ্বর আসবে। সচেতন বাবা-মা হিসেবে এমনটি আপনি ভাবতেই পারেন। কিন্তু শিশুকে সুস্থ রাখতে হলে তাকে অবশ্যই অন্যান্য সময়ের মতো নিয়মিত হাত ধোয়াতে হবে। কারণ এ সময় বাতাসে ধুলিকণা বেশি থাকে। নিয়মিত হাত না ধোয়ালে খাবার বা খেলনার সঙ্গে সেগুলো শরীরে প্রবেশের সম্ভাবনা বেশি। এক্ষেত্রে ঠান্ডা পানির বদলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন।
শিশুর মাঝে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের অভ্যাসও গড়ে তুলুন। আপনি সামনে না থাকলেও নিজে থেকেই যেন সে ব্যবহার করতে পারে সেটা শিখিয়ে দিন। শিশুরা যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করবে সেটি নন স্টিকি হলে ভালো হয়। এতে হাত আঠা আঠা মনে হবে না। মনে রাখবেন, তার মাঝে হাত ধোয়ার অভ্যাস যতটা গড়ে দিবেন, ততই ঠান্ডা, ফ্লু, নিউমোনিয়ার মতো সমস্যা তার থেকে দূরে থাকবে।
নিয়মিত গোসল করানো
শীতের ঠান্ডা আবহাওয়ায় শিশুদের গোসল করাতে চান না অনেকেই। কিন্তু গোসল না করলে শরীর আর চুলে ধুলো লেগে থাকবে যা শিশুর জন্য মোটেই ভালো নয়। এক্ষেত্রে গোসলের সময় কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। সঙ্গে রাখতে হবে বেবি সোপ। কারণ এ ধরনের সাবানে ক্ষারের পরিমাণ খুবই কম থাকে। অ্যালার্জির চিন্তা থেকে অনেকটাই নিশ্চিন্ত থাকা যায়। শিশুদের মাথার ত্বক খুবই সেনসিটিভ বলে ভালো মানের ও কম ক্ষারের বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। বেবি শ্যাম্পুগুলো বানানো হয় ‘No More Tears’ ফর্মুলা দিয়ে। এ ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহারে শিশুর চোখ জ্বালা করবে না, সঙ্গে মাথার ত্বক পরিষ্কার হবে এবং চুল ভালো থাকবে।
নিয়মিত সোয়েটার পরিষ্কার করা
শীতে শরীর ঘামে না বলে শিশুদের উলের সোয়েটার ধোয়ার কথা আমাদের ভাবনাতেই আসে না। কিন্তু উলে খুব দ্রুত ধুলোবালি আটকে যায়। এতে শিশুদের ডাস্ট এলার্জি বেড়ে যেতে পারে। তাই নিয়মিত উলের সোয়েটার ধুয়ে দিতে হবে। উলের সোয়েটার খুব নরম হয় বলে কখনোই ক্ষার জাতীয় সাবান দিয়ে সেগুলো ধোয়া যাবে না। এক্ষেত্রে ওয়াশিং লিকুইড ব্যবহার করলে সোয়েটার অনেকদিন ভালো থাকবে।
দরজা জানালা খুলে রাখা
ভাবছেন, শীতের সময় কেন দরজা জানালা খুলে রাখার কথা বলছি? বলছি আপনার সন্তানের সুস্থতার জন্যই। বদ্ধ রুমে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে না বলে ঘরে জীবাণুর সংক্রমণ বাড়তে থাকে। তাই সূর্যের আলো ঘরে প্রবেশ করা পর্যন্ত দরজা জানালা কিছু সময়ের জন্য খুলে রাখুন। দুপুরের পর আবার সব লাগিয়ে দিন যেন মশা প্রবেশ না করতে পারে। শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে সন্ধ্যার পর তার শরীরে Mosquito Repellent Spray ব্যবহার করতে পারেন।
গরম খাবার খাওয়ানো
শীতের সময় শিশুদের ঠান্ডা খাবার পরিবেশন থেকে বিরত থাকুন। ফ্রিজে থাকা যে কোনো খাবার দেওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে গরম করে নিতে হবে। সম্ভব হলে দিনে অন্তত একবার স্যুপ, গরম পানি, গরম দুধ, খাওয়াতে হবে। এতে শিশুর শ্বাসকষ্ট বা ঠান্ডার সমস্যা থাকলে আরাম মিলবে। সঙ্গে ভিটামিন সি যুক্ত ফল অবশ্যই খাওয়াতে হবে।
ত্বকের যত্ন নেয়া
শিশুদের রোগের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে অনেক কিছু করার পাশাপাশি নজর রাখতে হবে শিশুর ত্বকের দিকেও। ত্বক শুষ্ক, ঠোঁট ফাটা বা হাতে-পায়ে-আঙুলের ফাঁকে চুলকানির মতো সমস্যা হচ্ছে কিনা এসব দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের ত্বক কোমল রাখার জন্য দুধ, অলিভ অয়েল ও ভিটামিন ই সমৃদ্ধ বেবি লোশন ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো। এতে তাদের ত্বকে কোনো অ্যালার্জিও হবে না।
খেলাধুলা করা
অসুস্থ হয়ে যাবে এই চিন্তায় শীতের সময় শিশুদের খেলাধুলার বদলে কম্বলের নিচে থাকার পরামর্শই বেশি দেন বড়রা। কিন্তু এটা তাদের জন্য মোটেই উপকারী নয়। এ সময় খেলাধুলা কমিয়ে দিলে শরীরের ভেতর যে কোষগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় সেগুলো দুর্বল হতে থাকবে। তাই পর্যাপ্ত খেলাধুলা করা এ সময় অবশ্যই জরুরি।
পর্যাপ্ত ঘুম
বয়স অনুযায়ী শিশুদের ঘুমের পরিমাণ বিভিন্ন রকম হয়। যেমন- জন্মের পর ১৪/ ১৬ ঘণ্টা, ৬ মাস থেকে ১ বছর বয়সে ১৩/১৪ ঘণ্টা, ২-৫ বছর বয়সে ১১/১২ ঘণ্টা এবং ৬-১৬ বছর বয়সে ৯ থেকে সাড়ে ১০ ঘণ্টা। খেয়াল রাখতে হবে, এ বয়স অনুযায়ী শিশুরা নির্দিষ্ট পরিমাণে ঘুমাচ্ছে কিনা। কারণ ভালো ঘুম শরীরে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমায়।
পানি পান করা
শীতে পানির পিপাসা কম লাগে। তাই শিশুদেরও পানি পানে বেশ অবহেলা দেখা যায়। কিন্তু অভিভাবক হিসেবে আপনার মনে রাখতে হবে, এ সময়েও শিশুর শরীরে পর্যাপ্ত পানি প্রবেশের প্রয়োজন আছে। তাই সময়মতো শিশুকে পানি পান করাতে একদম ভুলবেন না।
রাতে ওয়াইপসের ব্যবহার
অন্যান্য সময়ের চেয়ে শীতে নবজাতক শিশুদের জন্য আলাদা যত্নের প্রয়োজন হয়। শিশুদের রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই পাশে বেবি ওয়াইপস রাখুন। যখনই প্রয়োজন হবে তখনই যেন ওয়াইপস দিয়ে শরীর মুছে পোশাক বদলে দেওয়া যায়। নইলে ভেজা পোশাকে শিশুর ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। ওয়াইপস ব্যবহারে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ নিয়ে কোনো চিন্তা থাকে না। শিশুর জন্য অবশ্যই অ্যালকোহল ফ্রি ওয়াইপস বাছাই করুন।
প্রতি বছর মৌসুমের বদলে শীত আসবেই। শিশুকেও তাই চাইলেই ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে দূরে রাখা যাবে না। কিন্তু উপরের নিয়মগুলো মেনে চললেই শীতে শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব। শিশুর জন্য অথেনটিক বিভিন্ন প্রোডাক্টসসহ স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপ রিলেটেড প্রোডাক্টস কিনতে পারেন সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ থেকে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।
ছবি- সাটারস্টক