একজন মুসলিমের জন্য রোজা ফরয। তবে অনেক সময় শারীরিক অক্ষমতার জন্য রোজা রাখা সম্ভব হয় না। তবে কিছু রোগের ক্ষেত্রে খেয়াল করলেই কি আমরা পারি না সুস্থভাবে রোজা রাখতে? পারি, আজ তাই এই রকম কিছু সমস্যায় কীভাবে রোগীদের রোজা রাখা যাবে তার উপায় নিয়েই এই আর্টিকেল-এ আলোচনা করা হলো। চলুন তবে, দেখে নেই!
রোগীদের রোজা রাখার ৬টি উপায়
১.অ্যাসিডিটি সমস্যা
রোজা রাখলে অ্যাসিডিটি বাড়বে কথাটা ভুল। নিয়মিত খাবার গ্রহণ, নিয়মিত ঘুমানো ও ঔষধ গ্রহণ করলে অ্যাসিডিটি-এর সমস্যা হয় না। যারা এমন সমস্যায় ভুগছেন তারা অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণ করতে সেহেরি ও ইফতারের সময় একটা করে ওমিপ্রাজল/রেনিটিডিন গ্রুপের ঔষধ খেতে পারেন। সাথে অবশ্যই ইফতারে ভাজা পোড়া খাবার পরিহার করবেন। অনেক্ষণ না খেয়ে থাকতে হয় তাই সেহেরিতে খাবারের পর দুইটি খেঁজুর খেতে পারেন। দেখবেন অ্যাসিডিটি-এর সমস্যা হবে না।
২.ডায়াবেটিস
রোজা আসলেই ডায়াবেটিস রোগীরা দুশ্চিন্তায় পড়েন। মোট ১৫ ঘণ্টা না খেয়ে থাকার কারণে রোগীদের রক্তে সুগার-এর মাত্রা কমে বা বেড়ে যেতে পারে, আবার পানিশূন্যতাও দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা রাখার আগে চিকিৎসকের/ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে পারেন। সেহেরির সময় ডায়াবেটিস রোগীর জন্য রুটি খাওয়া বেশ ভালো। কারণ, তা দীর্ঘ সময় পেটে থাকায় রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। রোজা থাকা অবস্থায় রোগী যদি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান তাহলে রোজার কথা চিন্তা না করে দ্রুত ৭/৮ চামচ চিনি মিশিয়ে এক গ্লাস শরবত খাইয়ে দিন। ইফতারের পর থেকে সেহেরি পর্যন্ত কিছুক্ষণ পর পর পানি পান করুন। মনে রাখবেন, জীবন বাঁচাতে রোজা রেখে ইনসুলিন নেয়া বা রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করার জন্য রক্ত দেয়ায় কোন বাঁধা নেই।
৩. হার্টের রোগ
হার্টের রোগীর ক্ষেত্রে রোজায় তেমন কোনো নিয়ম নেই। তবে এসময় ভাজা পোড়া খাবার, চর্বিজাতীয় খাবার এগুলো পরিহার করাই ভালো। এসময় ব্যায়াম ঠিকমত না করতে পারায় ওজন বেড়ে যেতে পারে। তাই ইফতারের ২ ঘণ্টা পর হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। যারা ঔষধ সেবন করেন, তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঔষধের সময় নির্ধারণ করবেন। যারা নিয়মিত তারাবির নামাজ আদায় করেন তাদের ব্যায়াম না করলেও চলবে।
৪. কিডনি রোগ
কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে রোজা রাখতে হলে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। সুনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, নিয়মিত ঔষধ গ্রহণ, এমনকি পানি খাওয়ার ক্ষেত্রেও বিধি নিষেধ প্রয়োগ করা হয়। কিডনি ফেইলার-এর রোগীদের পক্ষে রোজা রাখা সম্ভব নয়। যারা ডায়ালাইসিস-এর রোগী, ঘড়ির কাঁটা দেখে তাদের ঔষধ খেতে হয় তাই তাদের পক্ষে রোজা রাখা প্রায় অসম্ভব। শারীরিক অবস্থা যাই হোক না কেন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই রোজা রাখা ভালো।
৫. গর্ভবতী ও প্রসূতি মা
গর্ভকালীন জটিলতা না থাকলে গর্ভবতী মায়েদের রোজা রাখতে কোন অসুবিধা নেই। তবে চিকিৎসকের সাথে কাউন্সেলিং করেই তবে রোজা রাখতে পারেন। প্রসূতি মায়েরা রোজা রাখলে বাচ্চারা দুধ কম পায় এই কথা ঠিক না। তবে প্রসূতি মায়েদের সেহেরি ও ইফতারে প্রচুর তরল খাবার ও পানি খেতে হবে।
৬. চোখের সমস্যা
চোখে ড্রপ দিলে তা মুখে যেতে পারে। চোখের সাথে নাকের যোগাযোগকারী একটি নালী আছে। কেউ কাঁদলে চোখের পানি নাকে আসে। তাই চোখে ড্রপ দেয়ার সময় চোখের ভিতরের কোনায় চেপে ধরলে নালীটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঔষধ নাকে বা গলায় যাওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। প্রয়োজনে পদ্ধতিটি রপ্ত করতে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মনে রাখবেন জীবন বাঁচানো রোজার মতোই একটি ফরয কাজ। তাই সুস্থ দেহ নিয়ে রোজা রাখুন। জীবনকে বিপন্ন করে রোজা রাখা ফরয নয়।
ছবি- সংগৃহীত: gvwire.com