‘টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল’ এই শব্দটার মধ্যেই ন্যাচারাল একটা ভাইব আছে, তাই না? এটা এমন একটা ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট যেটা স্কিন ও হেয়ার কেয়ারে বহুল ব্যবহৃত, সেই সাথে কার্যকরীও বটে। আর টি ট্রি অয়েল বেইজড প্রোডাক্টস আমরা নিজেরাও অনেকে ইউজ করেছি। তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন আজকের টপিক কী। সেলফ কেয়ারে টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল কেন ও কীভাবে ইউজ করবেন, এর গুণাগুণ কী, সেগুলোই আজ আমরা জানবো।
টি ট্রি আসলে কী?
মেইন লেখা শুরুর আগে আপনাদের কিছু তথ্য না দিলেই নয়। মাঝেমধ্যে এটা মাথায় আসে কি, আমরা যে চা পান করি আর এই টি ট্রি এক কিনা? নাম একই শোনালেও দুইটি প্ল্যান্ট একদম ভিন্ন। আমরা যে চা পান করি তা Camellia sinensis প্ল্যান্টের পাতা। আর যেটি টি ট্রি অয়েল নামে পরিচিত আমাদের কাছে, সেটা আসে স্টিম ডিস্টিলেশন এর মাধ্যমে Melaleuca alternifolia প্ল্যান্টের পাতা থেকে। এটা সর্বপ্রথম অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীরা ব্যবহার করেছিলো জার্ম কিলার ও হারবাল মেডিসিন হিসাবে।
সেলফ কেয়ারে টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল এর বেনিফিট
চলুন জেনে নেই এই ম্যাজিকাল ইনগ্রেডিয়েন্টটি কতভাবে আপনাকে বেনিফিট দিতে পারে সেই সম্পর্কে।
১) একনে ট্রিটমেন্টে
অয়েলি স্কিনের একটি বড় সমস্যা হলো একনে বা ব্রণ। টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল স্কিনের ক্লগড পোরস থেকে ডার্ট, ইমপিওরিটিস রিমুভ করে। এছাড়া একনে কজিং ব্যাকটেরিয়া কিল করে এবং পুনরায় যাতে না হয় সেটা প্রিভেন্ট করে। বাজারে টি ট্রি অয়েল বেইজড প্রোডাক্টসও পাওয়া যায়। একনে প্রন স্কিনের জন্য ফর্মুলেটেড ফেইস ওয়াশ, সিরাম, টোনার, ময়েশ্চারাইজার ইত্যাদিতে এই এলিমেন্ট থাকে।
২) ডার্ক স্পট রিমুভ করতে
যেহেতু টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল এর হিলিং প্রোপার্টিজ আছে তাই এটি দ্রুত ফেইসের একনে স্কারস, ডার্ক স্পট, ডিসকালারেশন, হাইপারপিগমেন্টেশন ইত্যাদি দূর করে।
৩) ন্যাচারালি গ্লোয়িং স্কিন পেতে
অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রোপারটি সমৃদ্ধ টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল স্কিনে অনেকভাবে বেনিফিট দেয়। ক্লিয়ার, হেলদি ও ন্যাচারালি গ্লোয়িং স্কিন পেতে এই উপাদানটি খুবই হেল্পফুল।
৪) স্কিনের ইনফ্ল্যামেশন প্রিভেন্ট করতে
টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল এর অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপারটি স্কিনের রেডনেস, ইচিং, ইরিটেশন, ইনফ্ল্যামেশন কমিয়ে দেয়। যার ফলে ড্যামেজ স্কিন ব্যারিয়ার রিপেয়ার হয়।
৫) ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস রিমুভালে
যেহেতু টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল এর ডিসইনফেকটিং, সুদিং ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টিজ আছে, তাই এটি স্কিনকে ড্রাই আউট না করে বেশ ভালোভাবে ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস রিমুভ করে। কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল পানিতে দিয়ে ফেসিয়াল স্টিম নিলে স্কিনের পোরসগুলো সংকুচিত হয়।
৬) রেজর বার্ন হিলিংয়ে
আমরা অনেকেই আনওয়ান্টেড হেয়ার রিমুভ করতে ওয়্যাক্সিং বা শেভিং করি ফেইস, হাত, পা, পিউবিক এরিয়াতে। সেনসিটিভ স্কিন হলে অনেক সময় একটু ইরিটেশন হয়। রেজর বার্নে জ্বলুনি বা ইনফেকশন হলে তা হিল করতে টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল বেশ ভালো কাজ করে। অ্যালোভেরা জেলের সাথে ২ ফোঁটা টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করলে দ্রুত ফল পাবেন।
৭) একজিমা ও সোরিয়াসিস ট্রিটমেন্টে
সেলফ কেয়ারে টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল এতটাই কার্যকর যে এটা শুধু একনে কন্ট্রোল পর্যন্ত লিমিটেড না বরং বিভিন্ন স্কিন কন্ডিশন যেমন একজিমা ও সোরিয়াসিসেও খুবই ভালো কাজ করে।
দেখলেন তো, ছোট্ট এই জিনিসটি কত কাজের! খুবই অল্প পরিমাণে লাগে, ২/৩ ফোঁটাই এনাফ, কারণ অ্যাসেনশিয়াল অয়েল হাইলি কনসেন্ট্রেটেড। তাহলে এখন জেনে নেওয়া যাক এর ব্যবহারবিধি সম্পর্কে।
সেলফ কেয়ারে টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল কীভাবে ইউজ করবেন?
বডির স্কিনে একজিমা ও সোরিয়াসিস থাকলে
২/৩ ড্রপস টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল সাথে ২ টেবিল চামচ এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে এফেক্টেড এরিয়াতে লাগিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। স্কিনে নারকেল তেল অনেকে ইউজ করতে চান না, পোরস ক্লগড হওয়ার চান্স থাকে। সেক্ষেত্রে আপনি জোজোবা অয়েল ইউজ করতে পারেন।
অ্যান্টি একনে ফেইস প্যাক তৈরিতে
১ টেবিল চামচ মধু ও ২ ড্রপস টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল ভালোভাবে মিক্স করে ব্রণের উপর লাগিয়ে ১৫ মিনিটের জন্য রেখে জেন্টল ক্লেনজার দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তারপরে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এতে একনে কমবে, স্কিন হেলদি হয়ে উঠবে অল্প কিছু দিনেই।
স্কিনের এক্সেস অয়েলিনেস কমাতে ঘরোয়া টোটকা
যা যা লাগবে-
- ২ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি
- ২ টেবিল চামচ প্লেইন ইয়োগার্ট (টকদই)
- ২/৩ ড্রপস টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
স্কিনের তেলতেলেভাব কমাতে ক্লে বেশ হেল্পফুল। আর ইয়োগার্ট স্কিনে নারিশমেন্ট যোগায়। উপাদানগুলো এমনভাবে মিক্স করুন যাতে কোনো লাম্পস না থাকে। এবার ফেইসে অ্যাপ্লাই করে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। অয়েলি স্কিনের জন্য এই প্যাকটি দারুণ কার্যকর।
কুইক ফিক্স সল্যুশন
রাতে ঘুমানোর আগে ব্রণের উপর সামান্য টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল লাগিয়ে রাখুন, সকালে ফেইস ধুয়ে ফেলুন। ব্রণ অনেকটাই কমে যাবে রাতারাতি! এছাড়া মশা ও অন্যান্য ইনসেক্ট এর কামড়ে দাগ, জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে এই অয়েল।
কিছু কমন প্রশ্ন টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল নিয়ে
১. এই অয়েল কি ডিরেক্টলি ফেইসে লাগানো যায়?
অ্যাসেনশিয়াল অয়েল একদম ডিরেক্ট ফুল ফেইসে ইউজ করবেন না, কোনো কিছুর সাথে মিক্স করে ইউজ করা সেইফ। অ্যাসেনশিয়াল অয়েল কয়েক ফোঁটা ইউজ করলেই এনাফ। ব্রণের উপর সামান্য টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল লাগানো যায়। পুরো ফেইসে ডিরেক্ট অ্যাপ্লাই করলে স্কিনে ইরিটেশন বা জ্বালাপোড়া হতে পারে।
২. আই এরিয়াতে কি ব্যবহার উপযোগী?
না, এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রোডাক্টের লেবেল দেখে নিন আগেই, সেখানে ডিটেইলসে লেখা থাকে।
৩. প্রেগনেন্ট মহিলারা কি ইউজ করতে পারবে?
এভোয়েড করা উচিত। এই বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
খেয়াল রাখুন কিছু বিষয়
অন্যান্য প্রোডাক্টসের মতো এটাও আগে প্যাচ টেস্ট করে নিবেন। বাচ্চাদের নাগালে এই অয়েলটি রাখবেন না। কারণ ভুলবশত এটি খেয়ে নিলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। কেননা এটি কেবলমাত্র বাহ্যিক ব্যবহারের জন্য উপযোগী।
সেলফ কেয়ারে টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল কেন ও কীভাবে ইউজ করবেন, সেটা এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি হেল্পফুল ছিল। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক