সকাল থেকেই স্কুল বা কলেজে দৌড়, বিকেলে আবার প্রাইভেট টিউশন, একটার পর একটা এক্সাম আর তার পাশাপাশি কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজ তো আছেই। এই ব্যস্ততার মাঝে আয়নাতে তাকালেই মন খারাপ লাগছে কি? ইশ, স্কিনের কী অবস্থা! এতো পিম্পলস, ব্ল্যাকহেডস! গুগল ঘেটে হয়তো সল্যুশন বের করেছেন কিন্তু ভয় পাচ্ছেন এসব ব্যবহারে আবার স্কিনে প্রবলেম হবে না তো? আর চিন্তা করতে হবে না, টিনেজে স্কিন প্রবলেমের সল্যুশনে সিম্পল ও ইজি স্টেপস নিয়েই আমাদের আজকের ফিচার।
টিনেজারদের স্কিন প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে আলাদা কেন?
টিনেজ মানেই কনফিউশন, আর এই কনফিউশনটা ত্বকের ক্ষেত্রে তো আরও বেশি। আপনি যদি টিনেজার হন বা আপনার যদি এই বয়সের সন্তান থাকে, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। টিনেজারদের স্কিন প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে আলাদা, কেননা এই বয়সে ত্বকে কোলাজেন এর পরিমাণ বেশি থাকে, ফলে ত্বক টানটান ও অপেক্ষাকৃত মসৃণ দেখায়। টিনেজে স্কিনে ন্যাচারাল গ্লো থাকে, রিংকেলস বা পিগমেন্টেশন এই ধরনের প্রবলেম থাকে না। আর একটি বিষয়, টিনেজে হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে স্কিনে সেবাম নিঃসরণ বেড়ে যায়, তাই হুট করে একনে ও খোলা রোমকূপের সমস্যা দেখা দেয়।
এই বয়সে স্কিনকেয়ার কেন জরুরি?
আমাদের অনেকেরই ধারণা এই বয়সে স্কিনে কিছু ব্যবহার করতে হয় না, এতে স্কিন নষ্ট হয়ে যায়! কিন্তু ধারণাটি পুরোটাই ভুল। আমাদের সবার উচিত টিনেজ থেকেই একটা বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিন ফলো করা, যাতে পরবর্তীতে বড় বড় স্কিন প্রবলেমস থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়। এই সময়ের সঠিক স্কিনকেয়ার পরবর্তীতে মেছতা, বলিরেখা বা রিংকেলস, পিগমেন্টেশন এই স্কিন প্রবলেমগুলো প্রিভেন্ট করে। আর এই সময়ে হেলদি গ্লোয়িং স্কিন কিন্তু আপনার আত্মবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে দিবে। নিজেকে কনফিডেন্টলি প্রেজেন্ট করতে কে না চায়, বলুন তো? তাহলে জেনে নিন কীভাবে এই বয়সে ত্বকের পরিচর্যা করতে হবে।
টিনেজে স্কিন কেয়ার স্টেপস
১) ত্বকের ধরন বুঝে ক্লেনজিং
সারাদিন বাইরে থাকার ফলে ত্বকে জমে ধুলোময়লা। সারাদিনের এই ডার্ট, পল্যুশন আর ক্লান্তি দূর করতে দরকার ভালো মানের ক্লেনজার। ত্বকের ধরন বুঝে মাইন্ড ক্লেনজার ব্যবহার করুন, আলতো হাতে ম্যাসাজ করে পুরো মুখে পরিষ্কার করে নিন। রাতের বেলা প্রথমে অয়েল বেইজড ক্লেনজার দিয়ে ফুল ফেইস ক্লিন করুন, এরপর ফোম বা জেল বেইজড ফেইস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এটা হচ্ছে ডাবল ক্লেনজিং প্রসেস। এতে পোরস বন্ধ হয়ে পিম্পল হবার সম্ভাবনা কমে যাবে।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে
অয়েলি স্কিন হলে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড যুক্ত ক্লেনজার ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ কমায়। আর এটি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা ব্রণ বা ব্রেকআউটস কমাতে হেল্প করে। নিম, ক্লে, গ্রিন টি, টি ট্রি, অ্যালোভেরা এই উপাদানগুলো অয়েলি ও একনে প্রন স্কিনের জন্য ভালো কাজ করে।
ড্রাই স্কিনের যত্নে
ড্রাই স্কিনে ব্যবহার করতে পারেন হানি, মিল্ক বা ক্রিম বেইজড ক্লেনজার যা আপনার স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড করবে এবং শুষ্কভাব কমাবে। ফেইস ওয়াশ কেনার সময় খেয়াল করুন সেটা ড্রাই স্কিনের জন্য ফর্মুলেটেড কিনা। আর স্কিনটাইপ যা-ই হোক না কেন, ক্লেনজিং এর পর টোনার অ্যাপ্লাই করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
২) এক্সফোলিয়েটিং
এই বয়সে ন্যাচারাল ওয়েতেই স্কিনের এক্সফোলিয়েশন হয়ে থাকে, কিন্তু আজকাল পল্যুশন ও স্ট্রেস এত বেড়েছে যে অল্প বয়সেই স্কিনে বয়সের ছাপ পড়ে যায়। হরমোনাল কারণেও এই সময়ে পোরস বড় হয়ে যায়। ক্লগড পোরসজনিত সমস্যার সমাধানে সপ্তাহে একবার মাইল্ড এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপাদানযুক্ত প্রোডাক্ট সিলেক্ট করতে পারেন। তবে মুখে ব্রণ থাকলে স্ক্রাবিং করা যাবে না।
৩) ময়েশ্চারাইজিং
আমাদের সবার একটা ভুল ধারণা আছে যে ড্রাই স্কিন কিংবা শীতকাল ছাড়া ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। কথাটি কিন্তু সম্পূর্ণ ভুল। ময়েশ্চারাইজার আমাদের স্কিনকে হাইড্রেটেড রাখে, অকালে বয়সের ছাপ পড়া রোধ করে, স্কিন স্মুথ রাখে। অয়েলি বা কম্বিনেশন স্কিনের জন্য ব্যবহার করতে পারেন লাইটওয়েট জেল বেইজড ময়েশ্চারাইজার। শুষ্ক ত্বকে বেছে নিতে পারেন ক্রিম বেইজড প্রোডাক্ট। স্কিনের ধরন যেমনই হোক না কেন, ময়েশ্চারাইজিং কিন্তু মাস্ট!
৪) একনে ট্রিটমেন্ট
টিনেজে একনে-ই হচ্ছে সবচেয়ে কমন স্কিন প্রবলেম। একনে ব্রেকআউটস হলে ব্যবহার করতে পারেন বেনজোয়েল পার অক্সাইড বা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ ক্লেনজার বা স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট বা একনে কেয়ার জেল। তবে অবশ্যই সেটা যেন রেগুলার রুটিনের অংশ না হয়। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে একনে ট্রিটমেন্ট শুরু করতে পারেন। একনে প্যাচও ইউজ করা যেতে পারে। একটা বিষয় হচ্ছে, টিনেজে যে একনে হয় সেটা হরমোনাল ইস্যুর জন্য, এটা কিছুদিন পরই ঠিক হয়ে যায়। তাই টিনেজ একনে নিয়ে টেনশনের কিছু নেই।
৫) সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করা
সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি আমাদের ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করে, এমনকি স্কিন ক্যান্সারও হতে পারে। তাই ডেইলি স্কিনকেয়ার রুটিনে সানস্ক্রিন রাখা মাস্ট। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় SPF 50 যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। রোদ, মেঘ, বৃষ্টি যা-ই থাকুক না কেন, দিনের বেলায় সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করা কিন্তু মাস্ট। টিনেজে স্কিন প্রবলেমের সল্যুশনে এই স্টেপটি অনেক বেশি ইফেক্টিভ।
৬) ঠোঁটের যত্ন
আমাদের ঠোঁটের ত্বক খুবই নাজুক হয়, তাই ঠোঁটের সুরক্ষায় প্রতিদিন হাইড্রেটিং লিপবাম ব্যবহার করা উচিত। আর এটাও খেয়াল রাখবেন যে লিপবাম যেন SPF যুক্ত হয়। তাছাড়া ঠোঁটের মরা চামড়া তুলতে মাঝে মধ্যে চিনি-মধু দিয়ে স্ক্রাব করতে পারেন।
৭) মুখে ঘন ঘন হাত না দেওয়া
আমাদের হাতে সারাদিন অজান্তেই কত জীবাণু লেগে যায়। তাই আপনি যদি ঘন ঘন মুখে হাত দেন, তবে সেটা থেকে জীবাণু সংক্রমণ ঘটতে পারে। তাছাড়াও ফেইসে অলরেডি একনে থাকলে বারবার স্পর্শ করার ফলে তা মুখের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই সাবান বা হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত না ধুয়ে মুখের ত্বক স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
৮) মেকআপে সতর্কতা
টিনেজাররাও এখন কম বেশি মেকআপ ব্যবহার করে। বিশেষ করে কোনো অকেশনে একটু মেকআপ তো করতেই হয়। তবে মেকআপ যেহেতু সরাসরি ত্বকে অ্যাপ্লাই করা হয়, তাই ভুলভাল ব্যবহারে ত্বকে হতে পারে নানা সমস্যা। মেকআপ নিয়ে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত-
- অবশ্যই ভালো মানের প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে
- নকল এড়াতে বিশ্বস্ত শপ থেকে মেকআপ আইটেম কেনা উচিত
- মেকআপ অ্যাপ্লিকেটর যেমন- ব্রাশ, বিউটি ব্লেন্ডার নিয়মিত পরিষ্কার করা
- অবশ্যই ঘুমানোর আগে মাইসেলার ওয়াটার কিংবা অন্য কোনো অয়েল ক্লেনজার দিয়ে ভালোভাবে মেকআপ রিমুভ করা
৯) স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন
শরীর ও মনের সুস্বাস্থ্যের উপর ত্বকের স্বাস্থ্য নির্ভর করে। এজন্য এই বিষয়টি কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-
- পুষ্টিকর সুষম খাবার খেতে হবে
- দৈনিক অন্তত ২ লিটার পানি পান করতে হবে
- ভাজাপোড়া বা অয়েলি ফুড এড়িয়ে চলতে হবে
- দৈনিক আট ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে, ঘুম ভালো হলে ত্বক প্রাণবন্ত থাকে
- হাইজিন মেনটেইন করা (যেমন- নিয়মিত গোসল করা, চুলে শ্যাম্পু করা, পরিষ্কার পোশাক ও বিছানার চাদর ব্যবহার করা)
- দুশ্চিন্তা ও চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে
এই বয়সে সিরাম, এসেন্স এগুলো অ্যাপ্লাই করার প্রয়োজন নেই। ২০ বছরের পর সিরাম ইউজ করা যেতে পারে, তবে স্কিন কনসার্ন ও স্কিনের ধরন বুঝে। স্কিনকেয়ার এক দুই দিনের বিষয় নয়। বরং এটি সারাজীবনের অভ্যাস। স্কিনকেয়ার করে রাতারাতি সুন্দর ত্বক পাওয়ার আশা করাটা বোকামি। তাই ধৈর্য ধরতে হবে, তাহলেই বেনিফিট পাবেন।
স্কিনকেয়ার হাইজিন ও সেলফ কেয়ারেরই একটি অংশ। নিজের জন্য এই ভালোবাসাটুকু খুবই দরকার। রেগুলার লাইফে এই প্র্যাকটিস আপনাকে রাখবে প্রাণবন্ত। টিনেজে স্কিন প্রবলেমের সল্যুশনে ৯টি সিম্পল ও ইজি স্টেপস জেনে নিলাম আমরা। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ