দাওয়াত বা আউটিং এ যাওয়ার আগে আউটফিটের সাথে মিলিয়ে মেকআপ করলেন। কিছু সময় পর স্কিন বেশি গ্রিজি অথবা ড্রাই লাগা শুরু হলো। ভাবছেন, ‘সব প্রোডাক্টই তো ঠিকঠাক ইউজ করলাম, তাহলে এমন কেন হলো?’ এমন হতে পারে যদি আপনি সেটিং পাউডার বা সেটিং স্প্রে সঠিকভাবে ব্যবহার না করে থাকেন। এই প্রোডাক্ট দুটো মেকআপ লং লাস্টিং রাখতে হেল্প করে। তার মানে কি দুটো একই কাজ করে? এর উত্তর হচ্ছে, না। ইউজ পারপাস এক হলেও এই দুটো প্রোডাক্টের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে। কেন দুটো প্রোডাক্ট আলাদা এবং কী কী কারণে এগুলো ইউজ করা হয় সেটাই জানাবো আজকের আর্টিকেলে।
সেটিং পাউডার কী?
মেকআপ রুটিনে সেটিং পাউডার অ্যাপ্লাই ইম্পরট্যান্ট একটি স্টেপ। মেকআপ ‘সেটিং’ এর অর্থ হচ্ছে স্কিনকে ফ্ললেস দেখানো। এই পাউডারে ইনগ্রেডিয়েন্টস হিসেবে থাকে talc ও silica। লিকুইড ফাউন্ডেশনের মতো ওয়েট মেকআপ প্রোডাক্টগুলো সেট রাখার জন্য এই ইনগ্রেডিয়েন্টস ইউজ করা হয়। আর এগুলো থাকার কারণেই স্কিনের অয়েলি ভাব কমিয়ে স্কিনকে স্মুথ একটি লুক দেয় এবং মেকআপকে লং লাস্টিং করে সেটিং পাউডার।
ধরন ও উপাদান
সেটিং পাউডার সাধারণত দুটি ফর্মে হয়- লুজ ও প্রেসড পাউডার। ধরন আলাদা হলেও এগুলোর উপাদানে মিল আছে। দুটো ফর্মই মেকআপকে লং লাস্টিং রাখতে হেল্প করে।
১) লুজ পাউডার
লুজ পাউডার গুঁড়ো গুঁড়ো হয়। এগুলো খুবই লাইট কভারেজ দেয় এবং এক্সেস অয়েল অ্যাবজর্ব করে নেয়। যাদের অয়েলি ও কম্বিনেশন স্কিন এবং যারা লিকুইড ফাউন্ডেশন ইউজ করেন তাদের জন্য এটি বেস্ট অপশন।
২) প্রেসড পাউডার
প্রেসড পাউডার সেমি সলিড হয় এবং ইউজ করা খুব সহজ। ফাউন্ডেশন যেন মেল্ট হয়ে ছড়িয়ে না যায় সেজন্য এই পাউডার হেল্প করে। শাইনিভাব দূর করে ম্যাট ফিনিশ দেয়।
মেকআপ লং লাস্টিং রাখতে সেটিং পাউডারের বেনিফিটস
মেকআপ করার পর মেল্ট হয়ে যাবে, এমনটা কিন্তু আমরা কেউই চাই না! আর তাই তো মেকআপ সেট রাখা জরুরি। শাইনি ভাব কমাতে এবং ব্লেমিশ হাইড করতে কনসিলার ও ফাউন্ডেশন দেওয়ার পর সেটিং পাউডার অ্যাপ্লাই করতে পারেন। এই বিউটি প্রোডাক্টের বেশ কিছু বেনিফিট আছে। যেমন-
- মেকআপ শেষে বেশ স্মুথ একটি ফিনিশিং দেয়
- শাইন কন্ট্রোল করে এবং ফেইসের অয়েল রিডিউস করে স্কিনে ম্যাটিফায়িং ফিনিশ দেয়
- স্কিনের পোরস, ফাইন লাইনস ও ব্লেমিশ মিনিমাইজ করে ফেইসে স্মুথ লুক দেয়
যেভাবে অ্যাপ্লাই করবেন
সেটিং পাউডার এমন একটি বিউটি প্রোডাক্ট যেটি চাইলেই আঙুল দিয়ে অ্যাপ্লাই করা যায় না। এর জন্য অবশ্যই ভালো মানের ব্রাশ ইউজ করতে হবে। যেভাবে সেটিং পাউডার অ্যাপ্লাই করবেন-
১) ফেইস ক্লিন করে নিয়ে ময়েশ্চারাইজার দিয়ে স্কিন হাইড্রেট করে নিতে হবে। এবার পুরো ফেইসে ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই করে এবং পরে কনসিলার দিয়ে স্পট কারেক্ট করে নিন।
২) ফ্লাফি ব্রাশে অথবা ছোট কোনো মেকআপ পাফে অল্প পাউডার লাগিয়ে নিতে হবে।
৩) ব্রাশ থেকে এক্সেস পাউডার সরিয়ে নিন। এবার ধীরে ধীরে সার্কুলার মোশনে চোখের নিচে, টি-জোনে, গালে পাউডার লাগিয়ে নিন।
৪) জোরে ব্লেন্ডিং বা রাবিং করা যাবে না।
৫) ইনডিভিজ্যুয়ালি মেকআপ প্রোডাক্ট সেট করার জন্যও সেটিং পাউডার বেশ হেল্পফুল। আন্ডার আই কনসিলার সেট করার জন্য ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাইয়ের আগে পাউডারের একটি লেয়ার দিয়ে নিলে স্কিন বেশ ব্রাইট লাগে, সাথে ক্রিজিংও প্রিভেন্ট হয়। সেটিং পাউডার সফট ফিনিশ দেয় এবং টেক্সচার স্মুথ করে।
৬) এবার পুরো মেকআপ করা হয়ে গেলে ফ্লাফি ব্রাশ দিয়ে আরও একবার পুরো ফেইসে হালকা করে পাউডার লাগিয়ে নিন। পাউডার সেট হওয়ার জন্য ৩-৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। ব্যস! মেকআপ লং লাস্টিং নিয়ে এবার আপনাকে একদম ভাবতে হবে না!
সেটিং স্প্রে কী?
মেকআপ সেটিং স্প্রে মূলত লিকুইড একটি মিস্ট। মেকআপ লং লাস্টিং রাখতে এটি হেল্প করে। এটি ফিনিশিং স্প্রে, ফিক্সিং স্প্রে অথবা ফিনিশিং মিস্ট নামে পরিচিত। হেয়ার স্টাইল করার সময় হেয়ার স্প্রে কী কাজ করে সেটা তো আমরা জানি, তাই না? আপনি যেভাবেই চুল সাজাতে চান না কেন, হেয়ার স্প্রে ঠিক সেভাবেই চুল ফিক্সড রাখতে হেল্প করে। ঠিক একইভাবে সেটিং স্প্রে কাজ করে মেকআপের ফাইনাল স্টেপ হিসেবে। মেকআপ যেন মেল্ট, ক্রিজ বা ক্র্যাক না হয় সেজন্য এটি ইউজ করা হয়।
স্কিনে অ্যাপ্লাই করার আগে অবশ্যই সেটিং স্প্রে’র ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো জেনে নিতে হবে। এতে যদি কোনো ধরনের অ্যালকোহল, হার্শ কেমিক্যাল থাকে তাহলে সেটি অ্যাভয়েড করতে হবে। সেটিং স্প্রে তে পলিমার বা বন্ডিং এজেন্ট থাকে বলে ফেইসে অ্যাপ্লাই করলে মেকআপ স্কিনের সাথে স্টিক হয়ে থাকে। সেটিং স্প্রে ডিউয়ি অথবা ম্যাট- দুই ধরনেরই হতে পারে। স্কিন টাইপ অনুযায়ী বেছে নিতে হবে আপনারটি।
মেকআপ লং লাস্টিং রাখতে সেটিং স্প্রে যতভাবে ব্যবহার করা যায়
১) ফেইসে মেকআপ শুরু করার আগে প্রাইমার হিসেবে সেটিং স্প্রে পুরো মুখে স্প্রে করে নিন। এতে মেকআপ ভালোভাবে বসবে। যদি অয়েলি স্কিন হয় তবে ম্যাটিফায়িং এবং ড্রাই স্কিন হলে ডিউয়ি সেটিং স্প্রে ইউজ করুন। এই প্রসেস ফলো করলে মেকআপ বেশ লং লাস্টিং হবে।
২) চোখের নিচে কনসিলার অ্যাপ্লাই করার সময় ব্রাশে সেটিং স্প্রে দিয়ে নিলে আই মেকআপ ক্রিজ হবে না।
৩) আই ব্রাশে সেটিং স্প্রে অ্যাপ্লাই করে নিয়ে আইশ্যাডো ইউজ করুন। আই লুক হবে একদম পারফেক্ট!
৪) ফাউন্ডেশন ব্লেন্ড করার আগে ব্লেন্ডারে একটু সেটিং স্প্রে করে নিতে পারেন। এতে মেকআপ প্রোডাক্টগুলো ভালোভাবে স্কিনে বসবে।
৫) ফেইসে মেকআপ করা শেষ? এবার ফাইনাল টাচ হিসেবে অ্যাপ্লাই করে নিন সেটিং স্প্রে।
খেয়াল রাখতে হবে কিছু বিষয়ে
- স্প্রে যেন চোখে না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, তাই স্প্রে করার আগে চোখ বন্ধ রাখুন
- ফেইস থেকে অন্তত ৮ ইঞ্চি দূরে স্প্রে’র বোতল ধরে স্প্রে করুন
- অল্প কিছু সময় শুকাতে দিন
মেকআপ ছাড়া কি সেটিং স্প্রে ইউজ করা যায়?
আপনি যদি কোনো ধরনের মেকআপ নাও করেন, তবু সেটিং স্প্রে ইউজ করতে পারবেন। বিশেষ করে যদি ড্রাই স্কিন হয়, তাহলে এটি ব্যবহারে স্কিন হাইড্রেটেড থাকবে। তবে স্প্রে তে যদি অ্যালকোহল থাকে তাহলে প্রতিদিন এটি ব্যবহার করা যাবে না। অ্যালকোহল বা হার্মফুল ইনগ্রেডিয়েন্ট না থাকলে রেগুলার ইউজ করতে পারবেন।
এক নজরে সেটিং পাউডার ও সেটিং স্প্রে’র পার্থক্য
সেটিং পাউডার ও সেটিং স্প্রে সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে রাখা দরকার। কারণ জানা থাকলে স্কিন টাইপ অনুযায়ী প্রোডাক্ট চুজ করা ইজি হবে। সেটিং পাউডার এক্সেস অয়েল অ্যাবজর্ব করে নেয়, যার কারণে এটি অয়েলি বা কম্বিনেশন স্কিনের জন্য ভালো। অন্যদিকে, স্কিন হাইড্রেটেড রাখার জন্য সেটিং স্প্রে বেশ হেল্পফুল। সেটিং স্প্রে যেখানে পুরো ফেইসে অ্যাপ্লাই করা হয়, সেখানে সেটিং পাউডার ইউজ করা হয় অয়েলি এরিয়াগুলোকে কভার করার জন্য।
এই তো জেনে নিলেন, মেকআপ লং লাস্টিং রাখতে সেটিং পাউডার ও সেটিং স্প্র কীভাবে কাজ করে। এবার স্কিন টাইপ অনুযায়ী বেছে নিন আপনারটি। মেকআপ, স্কিন ও হেয়ার কেয়ারের বিভিন্ন প্রোডাক্ট কিনতে পারেন সাজগোজ থেকে। সাজগোজের চারটি আউটলেট যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) থেকে অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে আপনার পছন্দের পণ্যটি কিনে নিতে পারেন খুব সহজে।
ছবিঃ সাজগোজ, দ্য বিউটি লুক বুক, বিউটি ব্রেইন ব্লাশ