“মেকওভার”- শব্দটি দিনে দিনে আমাদের তথাকথিত ফ্যাশনপ্রেমীদের মাঝে পরিচিত হয়ে উঠছে। পরিচিতই নয়, এই শব্দটি বেশ ট্রেন্ডি হয়ে এসেছে এখন। একটা খোঁপা বা কোঁকড়ানো কেশসজ্জা করে, অথবা কখনো মুখে কিছুটা মেকআপ চড়িয়েই “মেকওভার করলাম” বলাটা ইদানিং বাতিকে রূপ নিয়েছে। কিন্তু আসলেই কি যেকোন অনুষ্ঠানের জন্য একটু গুছিয়ে তৈরি হওয়া এবং সাজাটাই মেকওভার? ভুলটা ভেঙ্গে নিন তবে। আপনার চিরায়ত সাজগোজের আয়োজনকে মেকওভার ভেবে নেবেন না। মেকওভার প্রচলিত অর্থে সেই ধারণা, যা কিনা আপনার একটি পরিবর্তিত অবস্থা নির্দেশ করবে। সবসময় যেভাবে সাজতে ভালোবাসেন, আপনার কেশবিন্যাসে সাধারণত যেমন ধারা অনুসরণ করেন বা যেমন পোশাক পরা হয় সাধারণত, তার বাইরে গিয়ে ভিন্ন কিছু যাচাই করে দেখাটাই হচ্ছে মেকওভার।
মেকওভার বা এই রূপবদল আপনি যেকোন সময়ে করতে পারেন। আপনার ইচ্ছা অথবা কোন উৎসবের প্রয়োজনে নিজেকে সাজাতে পারেন সম্পূর্ণ নতুন কোন ভঙ্গিমায়। নিজের চিরচেনা ধারাটা ভেঙ্গে বেরিয়ে এসে নিজেকেই নতুন করে দেখার বিষয়টা সত্যিই মজাদার হবে।
মেকওভার এমন একটা বিষয় যা আপনি একদিনের জন্যেও ধারণ করতে পারেন, আবার চাইলে বেশ অনেকদিনের জন্যেও সেটা তুলে আনতে পারেন নিজের মধ্যে। সেটাও পুরোপুরি আপনার ইচ্ছা বা দরকার মতন হতে পারবে।
ধরে নিন, আপনার খুব বিশেষ একটি উপলক্ষ আছে সামনেই। অথবা কোন উৎসবের দিন ঘনিয়ে আসছে। সেইদিনে নিজেকে নতুন রূপে নতুন সাজে দেখবেন বলে ভাবছেন। তবে এবার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে দিন রূপবদলের জন্য!
চিরচেনা ছবি পাল্টে দেয়ার মানে কেবল এই নয় যে ভারী সাজপোষাকের আড়ালে আপনার এতোদিনের নিজের প্রতি অযত্নের ছাপ ঢেকে দিলেন। যদি অযত্ন করেই থাকেন এতোদিন, তবে এবার খানিক যত্ন নিন নিজের, সেটাও কিন্তু এক অর্থে মেকওভার হবে! খেয়াল রাখুন, সবাই আপনাকে অনেকগুলো দিন ধরে যা দেখেছে, যেমনটা তাদের কাছে আপনার চিত্র তৈরি হয়ে গেছে, সেটাকেই বদলে দিতে চলেছেন আপনি।
নিজের ছোটখাটো সব বিষয়েই বদল আনুন, যতোটা সম্ভব আপনার পক্ষে। মানুষের চেহারার ধরন অনেক বেশি করে তার কেশবিন্যাসের সাথে সম্পর্কযুক্ত। যদি নিজের মেকওভারটা বেশ কয়েকদিন ধরে রাখবেন বলেই ভেবে থাকেন তবে পাল্টে ফেলুন আপনার চুলের বিন্যাস। একেবারে ভিন্ন কিছু বেছে নিন নতুন হেয়ার স্টাইলে, তবে অবশ্যই যেন তা আপনাকে মানিয়ে যায়।
এতোদিনের সাজগোজেও বৈচিত্র আনতে হবে এইবার। চড়া সাজে স্বস্তি পাওয়া মানুষেরা সাজের বহরে একটু রাশ টানুন। হালকা, প্রাকৃতিক ধাঁচের মেকআপে মনযোগী হতে পারেন। মনে রাখুন, এই বদলটাই কিন্তু আপনার উদ্দেশ্য ছিলো। যারা নিত্যদিনের আয়োজনে কখনোই ঠোঁটে রঙের কাঁঠি ছোঁয়ানো পছন্দ করেন না, তারা এবার মাঝে মাঝে লিপস্টিক ব্যবহারের অভ্যাস করে নিতে পারেন। বা গাঢ় কাজল যাদের সবসময়ের অনিবার্য সাজের অংশ হয়ে থেকেছে তারা কাজলের কারবার তুলে দিন কিছু সময়ের জন্য।
গয়নার ব্যাপারেও সেই এক কথা চলবে। যেমনটা আপনার ধরন ছিলো আগে, বদলাতে হবে সেটাই। নতুন ধরনের জিনিস বেছে নিন। যে গয়নাটি কখনো পরা হয়নি, সেটি এবার পরেই দেখুন না কেমন লাগে নিজেকে।
পোশাকের ক্ষেত্রে একটু বেশিই সতর্কতা প্রয়োজন হয়। কারণ এই জিনিষটা স্পর্শকাতর হয় বেশি। আপনার রুচি বা ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহনকারী হিসেবে অন্য যেকোন জিনিস থেকে পোশাক অনেক এগিয়ে। এই জায়গাতে পরিবর্তন আনুন রয়েসয়ে, অনেক ভেবেচিন্তে তবেই ভিন্ন পথে হাঁটুন। শাড়ি থেকে সালোয়ার-কামিজ বা সালোয়ার-কামিজ থেকে জিন্স-কুর্তায় নিজেকে গুছিয়ে নেয়াটা হয়তো অতো কঠিন নয়, তা আপনি সহজেই সামলে নিতে পারবেন। কিন্তু খুব বেশি ভিন্নতা আনতে যেয়ে এমন কিছু করে বসবেন না যাতে আপনারই কখনো অস্বস্তি হয়, বা সবার সামনে আপনার ব্যক্তিত্ব ম্লান হয়ে যায়। আপনিই ভালো বুঝবেন কোন কোন পোশাকে আপনার রুচি, ব্যক্তিত্ব এবং সৌন্দর্য ফুটতে পারে, নতুন পোশাকটাও বেছে নিন তার মধ্যে থেকেই।
মেকআপ এবং মেকওভারের পার্থক্য তো জানা হলো। এবার তবে চাইলেই করে নিন নিজের রূপবদল। চলতি ধারায় মন হারিয়ে নিজেকেই হারিয়ে ফেলবেন না যেনো, নিজেকে তেমনটাই সাজান যেমন আপনাকে মানিয়ে যাবে। তাহলে বহুদিনের পুরনো হোক বা আনকোরা নতুন, সব রূপসজ্জায় আপনি অসাধারণ হবেন, বিশ্বাস রাখুন!
লিখেছেনঃ মুমতাহীনা মাহবুব
ছবিঃ সেভেনথিমস.কম