ঝলমলে সুন্দর একটা দিন। ঘুম থেকে উঠলেন, পর্দা সরিয়ে মুখে রোদের আলোটুকু স্পর্শ করালেন, ওয়াশরুমে গেলেন ফ্রেশ হতে। আয়নার দিকে তাকাতেই মন খারাপ হয়ে গেলো! কারণ মুখে ফুটে উঠেছে ব্রণ! মুহূর্তেই সুন্দর সকালটা মন খারাপে ছেয়ে গেলো। এদিকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ডেইলি স্কিন কেয়ারে সবকিছু ঠিকমতো করলেও কীভাবে এই ব্রণের সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছেন না কিছুতেই। স্কিন কেয়ার ঠিকমতো করলেও প্রতিদিনের কিছু কাজ আছে যেগুলো একনে ব্রেকআউট হওয়ার জন্য দায়ী। চলুন জেনে নেই কোন সে কাজগুলো।
প্রতিদিনের কোন কাজগুলোর কারণে ব্রণের সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে?
১) চুল ভালো করে না ধোয়া
চুল ভালো রাখার জন্য নিয়মিত শ্যাম্পু করা জরুরি। যদি তা না হয়, তাহলে যে শুধু চুলের ক্ষতি হচ্ছে তা কিন্তু নয়। অপরিষ্কার আর আনহেলদি স্ক্যাল্পের কারণে ব্যাকটেরিয়া ও জার্ম জমতে থাকে স্ক্যাল্পে। আর এগুলো থেকেই কপাল থেকে পুরো মুখে একনে ব্রেকআউট হয়।
এছাড়া বিভিন্ন হেয়ার প্রোডাক্ট থেকেও একনে প্রবলেম হতে পারে। বিশেষ করে যেসব প্রোডাক্ট চুলে তেলতেলে ভাব ধরে রাখে সেগুলোর কারণে স্ক্যাল্পের পোরস ক্লগ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যদি হেয়ার লাইন, ঘাড়ে, গলায় এমনকি পিঠেও একনে প্রবলেম দেখা যায়, তাহলে হতে পারে সেটি আপনার প্রতিদিনের ব্যবহার করা প্রোডাক্টের কারণে হচ্ছে। এমন হলে হেয়ার প্রোডাক্ট বদলে ফেলাটাই ভালো।
২) অপরিচ্ছন্ন বালিশের কভার ব্যবহার করা
ব্রণের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার জন্য স্কিন কেয়ারের অন্যসব সমস্যা হয়তো সহজে মানা যায়, তাই বলে বালিশের কভার? অথচ জানেন, আপনার একনে ব্রেক আউটের জন্য প্রতিদিন যে বিছানার বালিশে আপনি মাথা রেখে ঘুমাচ্ছেন সেটি সমানভাবে দায়ী? ঘরে থাকা ধুলোবালি, জার্ম, চুলের তেল, শরীরের ঘাম, হেয়ার প্রোডাক্টে থাকা কেমিক্যালের অবশিষ্ট অংশ, এমনকি মেকআপ রিমুভ করে না ঘুমালে সেগুলো সব বালিশের কভারে লেগে যায়। পরিষ্কার করা না হলে এগুলো থেকেই শুরু হয় একনে প্রবলেম। রাতে ঘুমিয়ে সুইট ড্রিমসকে রাতারাতি স্কিন নাইটমেয়ারে পরিণত করতে না চাইলে সপ্তাহে অন্তত একবার বালিশের কভার বদলে ফেলুন অথবা ধুয়ে নিন।
৩) স্ট্রেস লেভেল বাড়তে থাকা
স্ট্রেসকে পয়জন বললেও খুব একটা ভুল হয় না। স্ট্রেস যে আপনার স্কিনের ক্ষতি করে এতে কিন্তু কোনো লুকোছাপা নেই। একনে ব্রেকআউটের অন্যতম একটি কারণ এই স্ট্রেস। বিভিন্ন স্কিন কনসার্ন যেমন, প্রি ম্যাচিউর এজিং, রিংকেল, সিবাম তৈরি হয় স্ট্রেসের কারণে। আর অতিরিক্ত সিবাম থেকেই একনের উৎপত্তি।
আপনি যখন স্ট্রেসে থাকেন, তখন আপনার শরীরে কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) উৎপাদন হয়। এতে অয়েল প্রোডাকশন আগের চেয়েও দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে। আর এ থেকে চেহারায় ফুটে ওঠে একনে। এই সমস্যাকে কমাতে চাইলে স্ট্রেস লেভেল যেভাবেই হোক কমিয়ে আনতে হবে। ঘুম, ব্যায়ামসহ নিজের জন্য যতটুকু সেলফ কেয়ার করা দরকার তার সবই করতে হবে। এতে শুধু যে একনে প্রবলেম দূরে থাকবে তাই নয়, ভালো থাকবে মানসিক স্বাস্থ্যও।
৪) মোবাইলের স্ক্রিনে বার বার টাচ করা
দিনের মধ্যে ঠিক কতবার আপনি আপনার মোবাইলটা হাতে নিচ্ছেন বলুন তো? সংখ্যা সঠিক বলতে না পারলেও নিশ্চয়ই সেটি কমও হবে না, তাই না? আপনি যতবার হাত দিয়ে মোবাইলের স্ক্রিন টাচ করছেন, ঠিক ততবার হাতের আঙুল থেকে ব্যাকটেরিয়া ও ডার্ট স্ক্রিনে চলে যাচ্ছে। আর এগুলো চলে যাচ্ছে গালে, মুখে। এবার বলুন, যেখানে ব্যাকটেরিয়া আপনার প্রতিদিনের লাইফস্টাইলে জড়িয়ে আছে, সেখানে কীভাবে আপনি ব্রেকআউট থেকে সেইফ থাকবেন? এ সমস্যা থেকে বাঁচতে মোবাইলের স্ক্রিন অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ওয়াইপ দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। সরাসরি কানে লাগিয়ে কথা না বলে হেডফোন ব্যবহার করতে পারেন। এতে মোবাইলের স্ক্রিনে টাচ কম লাগবে।
৫) মেকআপ টুলস ক্লিন না করা
মেকআপ টুলসগুলোতে ব্যাকটেরিয়া, ডার্ট, অয়েল ইত্যাদি জমে থাকে। নিয়মিত পরিষ্কার না করা হলে ব্রেকআউটের জন্য অন্যতম মাধ্যম হতে পারে এগুলোই। মেকআপ টুলসের মধ্যে মূলত ব্রাশ আর স্পঞ্জ থাকে। জেনে নিন টুলসগুলো ক্লিন করার পদ্ধতিঃ
স্পঞ্জ ক্লিন করার পদ্ধতি
কুসুম গরম পানিতে শ্যাম্পু বা মাইল্ড সোপ মিশিয়ে তাতে স্পঞ্জ কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। পানি থেকে উঠিয়ে স্পঞ্জ ভালো করে চিপে পানি বের করে শুকিয়ে নিন। এবার মেকআপ ব্যাগ বা ড্রয়ারে শুকনো জায়গায় স্টোর করুন।
ব্রাশ ক্লিন করার পদ্ধতি
একটি বাটিতে কুসুম গরম পানির সাথে মাইল্ড ক্লেনজার অথবা শ্যাম্পু এবং অল্প পরিমাণে অলিভ অয়েল নিয়ে ব্রাশগুলো কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। এবার ব্রাশ ক্লিনারের সাহায্যে ব্রাশগুলো পরিষ্কার করে পানিতে একবার ধুয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে স্টোর করুন।
ব্যাকটেরিয়ামুক্ত রাখতে সপ্তাহে অন্তত একবার মেকআপ টুলসগুলো ভালো করে ক্লিন করে নিতে হবে। এতে একনে হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।
৬) ফেইসে ওভার স্ক্রাবিং করা
একবার স্ক্রাব করার পর ভালো রেজাল্ট পেলে অনেকেই সপ্তাহে কয়েকবার, এমনকি দিনে দুইবার করেও স্ক্রাব করতে থাকেন। স্কিনের জন্য এটি খুবই ক্ষতিকারক। অতিরিক্ত এক্সফোলিয়েশনের জন্য ইনফ্ল্যামেশন বা পোরস ক্লগের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ থেকেই হয়তো ব্রণের সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে! তাই স্কিনের যত্নে স্কিনের ধরন বুঝে এক্সফোলিয়েশন করা জরুরি।
৭) বেশি পরিমাণে ফাস্ট ফুড খাওয়া
ফাস্ট ফুড যে আমাদের জন্য ভালো নয়, তা আমরা সবাই জানি। হেলথ কনসার্নের কথা আসলে তো বটেই, স্কিন ভালো রাখার জন্যও ফাস্ট ফুড থেকে দূরে থাকা ভালো। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বার্গার, পিজ্জার মতো ফাস্ট ফুডগুলোতে হাই স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এসব খাবারে থাকা ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো হরমোনাল ব্যালেন্সে ব্যাঘাত ঘটায়, সাথে সুগার লেভেল বাড়ায়। আর হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে ফেইসের স্কিনে ডিপ সিস্টিক একনে দেখা দিতে পারে। এ ধরনের একনে হলে বেশ ব্যথা হয়। যদি ফাস্ট ফুড খাওয়ার খুব বেশি ক্রেভিং হয় তাহলে চেষ্টা করুন বাড়িতেই নিজের মতো করে বানিয়ে নিতে। এতে অন্তত একনে প্রবলেমের সম্ভাবনা কমে যাবে। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এতে ত্বক আর্দ্র থাকবে, দূরে থাকবে একনে প্রবলেম।
এই তো জেনে নিলেন, প্রতিদিনের কোন কাজগুলোর কারণে ব্রণের সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। এসব কাজ থেকে দূরে থাকলে স্কিন ফ্রেশ থাকবে। এছাড়া একনে প্রন স্কিনের জন্য প্রয়োজন নিয়মিত যত্ন। চেষ্টা করবেন স্কিন কেয়ার রুটিনটা ঠিকমতো মেনে চলতে। এছাড়া স্কিন কেয়ারের অথেনটিক বিভিন্ন পণ্য অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম অথবা যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) এ অবস্থিত চারটি ফিজিক্যাল শপ থেকেও নিতে পারেন।
ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক