প্রতিটি মেয়ের জীবনেই বিশেষ একটি সময় হচ্ছে প্রেগনেন্সি এবং মা হওয়া। যেদিন থেকে সে বুঝতে পারে যে তার মধ্যে নতুন একটি প্রাণ বেড়ে উঠছে, নিজের প্রতি খেয়াল রাখার বিষয়টা আপনাআপনি তৈরি হয়ে যায়। এই সময়ে ওজন বেড়ে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কেননা গর্ভের সন্তানের গ্রোথের জন্য হবু মাকে এক্সট্রা ক্যালোরি ইনটেক করতে হয়, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হয়, হেভি ওয়ার্কআউট করাও বারণ থাকে। ডেলিভারির পরে অনেকেই বাড়তি ওজন নিয়ে চিন্তিত হয়ে যান। সন্তানের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি নিজেও তো ফিট থাকতে হবে, নিজের খেয়াল রাখতে হবে। প্রেগনেন্সি পরবর্তী ফিটনেস নিয়ে কমন কিছু প্রশ্নের উত্তর আজ থাকছে আপনাদের জন্য।
বেবি ডেলিভারির পর ফিটনেস
অনেকসময় দেখা যায়, প্রেগনেন্সিতে যে ওয়েট গেইন হয়, সেটা বেবি ডেলিভারির পর সময়ের সাথে সাথে না কমে উল্টো বেড়ে যায়। যারা ব্রেস্ট ফিড করান, তাদের জন্য ডায়েট করাতেও কিছু বিধি নিষেধ থাকে। এই সময়ে মায়েরা নিজের বাড়তি ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন, অনেকে বেল্ট পরেও পেট কমাতে পারেন না। বিশেষ করে সিজারিয়ান ডেলিভারির ক্ষেত্রে মায়েরা তলপেটের মেদ কমাতে প্রবলেম ফেইস করে থাকেন। এই সময়ে কী এক্সারসাইজ করা যায়, কবে থেকে ব্যায়াম শুরু করা যায়, এই ধরনের নানা প্রশ্ন মনে ঘুরতে থাকে।
প্রেগনেন্সি পরবর্তী মহিলাদের মুটিয়ে যাওয়া থেকে কীভাবে ফিট হওয়া যায় এবং কতদিন পর এক্সারসাইজ শুরু করা উচিত, সেই সম্বন্ধে বেসিক কিছু তথ্য আজ আমাদের জানাবেন ন্যাশনাল জিমন্যাস্টিক অ্যাথলেট অ্যান্ড বেটারলাইফ ইয়োগা অ্যান্ড অ্যারোবিক্স সেন্টার এর ফিটনেস ইন্সট্রাকটর মুশফিকা আক্তার বিথি।
প্রেগনেন্সি পরবর্তী ফিটনেস নিয়ে এক্সপার্টের পরামর্শ
১) ডেলিভেরির কতদিন পর এক্সারসাইজ শুরু করা যাবে?
উত্তর- এক্সারসাইজ শুরু করার ব্যাপারটা মূলত ডেলিভেরির প্যাটার্ন এর উপর ডিপেন্ড করে।
১. নরমাল ডেলিভারি এবং আনকম্প্লিকেটেড প্রেগনেন্সি হয়ে থাকলে ১০-১৫ দিন পরেই হালকা এক্সারসাইজ শুরু করা সম্ভব। কিন্তু , নরমাল ডেলিভেরি এর সময় যদি Laceration, Episiotomy / মিনি সার্জারি হয়ে থাকে , তাহলে ৪ – ৫ সপ্তাহ বিশ্রামের পরে লো ইমপ্যাক্ট এক্সারসাইজ করা যাবে।
২. সিজার ও কম্প্লিকেটেড প্রেগনেন্সির ক্ষেত্রে এটা ডিপেন্ড করে পেট এর ৬টি লেয়ারের রিকোভারের উপর। ৯-১০ সপ্তাহ সময় লাগবে লো ইমপ্যাক্ট এক্সারসাইজ এবং ১৪-১৮ সপ্তাহ সময় দিতে হবে হাই ইমপ্যাক্ট এক্সারসাইজ শুরু করতে।
২) এই সময় না মেনে এক্সারসাইজ শুরু করলে কী কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তর- রক্তক্ষরণ, Incisional Hernia, ইনফেকশন, ব্যাক পেইন, মাসেল ইনজুরি হওয়ার চান্স থাকতে পারে।
৩) প্রেগনেন্সি পরবর্তীতে এক্সারসাইজ এর উপকারিতাগুলো কী কী?
- ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করবে
- ওয়েট লস করতে সাহায্য করবে
- মুড সুয়িং কমাবে
- ইস্টামিনা বাড়াবে
- বডি টোনড রাখবে
- কনফিডেন্স বাড়াবে
- স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করবে
- ইনসমনিয়া দূর করে ভালো ঘুম নিশ্চিত করবে
৪) কী কী ধরনের এক্সারসাইজ করা যেতে পারে?
- লো ইমপ্যাক্ট এরোবিক এক্সারসাইজ
- ওয়াকিং বা হাঁটা
- লাইট ওয়েট ট্রেইনিং
- ইয়োগা
- বডি ওয়েট এক্সারসাইজ
কীভাবে এক্সারসাইজ করা যেতে পারে সেই বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য আমরা পরবর্তীতে জেনে নিবো। প্রেগনেন্সি পরবর্তী ফিটনেস নিয়ে আপনাদের কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন। নতুন মায়েরা নিজেদের যত্ন নিন, পুষ্টিকর খাবার খাবেন, চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করবেন। আপনার ও আপনার ছোট্ট সোনামণির জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক
লিখেছেন-
মুশফিকা আক্তার বিথি, ন্যাশনাল জিমন্যাস্টিক অ্যাথলেট অ্যান্ড বেটারলাইফ ইয়োগা অ্যান্ড অ্যারোবিক্স সেন্টার