প্রচণ্ড মন খারাপ মিতির (কাল্পনিক)। তার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবীর আজ বিয়ে । পছন্দের পোশাক টাও কেনা হয়েছে অনেক আগে । কিন্তু ত্বক এর কালো ছোপ বিশাল বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে । ডাক্তার বলেছেন ভারী মেকআপ আর রোদ এ দুটো এড়িয়ে চলতে । তাহলে কি এভাবেই যেতে হবে ? কোন সুন্দর ছবি কি তার থাকবেনা ?
[picture]
এ ধরণের অসংখ্য সমস্যার সমাধানে মেকআপ জগতের খোলস টাই পালটে দিয়েছে আধুনিক এয়ার ব্রাশ মেকআপ । স্বাস্থ্য সম্মত এবং বিশ্বের নামীদামী ব্র্যান্ডের ব্যবহারে অত্যন্ত কম সময়ে এয়ার ব্রাশ মেকআপ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । আসুন জেনে নেই এয়ার ব্রাশ মেকআপ এর খুঁটি নাটি ।
এয়ার ব্রাশ মেকআপ হচ্ছে এমন ধরণের মেকআপ যেখানে মেকআপ ত্বকের উপর আঙুল, স্পঞ্জ অথবা ব্রাশের পরিবর্তে একটি স্প্রে র সাহায্যে ব্যবহার করা হয় । ফাউন্ডেশন থেকে শুরু করে চোখের মেকআপ, ব্লাশ, হাইলাইট এমন কি ক্রিয়েটিভ মেকআপ এর জগতেও পৌঁছে গিয়েছে এয়ার ব্রাশ মেকআপ।
ডাইনেয়ার বেসিক কিট
বর্তমানে বাজারে প্রচলিত কয়েকটি জনপ্রিয় এয়ার ব্রাশ কোম্পানি হচ্ছে টেম্পটূ, ডাইনেয়ার, লুমীনেছ ইত্যাদি। কোম্পানি ভেদে এই সব মেশিনের দামও ভিন্ন ভিন্ন।
সাধারণত একটি এয়ার ব্রাশ কিট এর তিন থেকে চারটি অংশ থাকে, যেগুলো হচ্ছে এয়ার কমপ্রেসর, ৩-৪ শেডের ফাউন্ডেশন, এয়ার ব্রাশ, ব্যবহারবিধি সম্বলিত সিডি এবং পরিষ্কার করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস। এয়ার কমপ্রেসর হচ্ছে ছোটখাটো একটি মোটর যা বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে চলে এবং এটি একটি মোটা রাবার টিউবের সাহায্যে এয়ার ব্রাশ এর সাথে যুক্ত থাকে যেখান থেকে ব্রাশ এর বাতাসের চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এয়ার ব্রাশে একটি ফানেলের মত অংশ থাকে যাতে মেকআপ প্রডাক্ট ঢালতে হয় এবং ব্রাশের লিভারের সাহায্যে প্রডাক্ট এবং বাতাস দুটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ফাউন্ডেশন, আই মেকআপ, ব্লাশ সব কিছুতেই আছে শেডের বিপুল সমাহার। আপনার ত্বক যে বর্ণের, যে ধরনেরই হোক না কেন, শুষ্ক অথবা তৈলাক্ত, ত্বকের ধরন বুঝে বেছে নিতে পারবেন আপনার জন্য উপযুক্ত ফাউন্ডেশন শেডটি। শুধু তাই নয়, যারা বিভিন্ন ত্বকের সমস্যায় ভুগছেন, যেমন- ব্রণ, রোদে পড়া অথবা হাইপার পিগমেণ্টেশন এমনকি পোড়া দাগ, তাদের কথা মাথায় রেখে আছে স্পেশাল ধরনের ফাউন্ডেশন।
এয়ার ব্রাশ এর ফাউন্ডেশন সাধারণত ওয়াটার বেজড হয়, যার কারণে এটি ত্বকের সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে নিমেষেই শুকিয়ে যায় এবং ত্বকের সাথে মিশে যায়। আর মেকআপের পরও ত্বক দেখায় একদম ন্যাচারাল। এর সাহায্যে প্রতিদিনের মেকআপ থেকে শুরু করে ফুল কভারেজ পার্টী মেকআপ সবই করা যায়, ঢেকে দেয়া যায় নাছোড় বাঁধা দাগ অথবা ব্রণ। যেহেতু এর প্রয়োগে আঙুল অথবা ব্রাশের প্রয়োজন হয়না, তাই এটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত এবং জীবাণূ সংক্রমণের সুযোগও কম। এটি হাইপো এলার্জিক এবং ত্বকের লোমকূপ বন্ধ করেনা। আর একবার এই ফাউন্ডেশন ব্যবহার করলে কোন টাচ আপ ছাড়াই চলে ১০-১২ ঘণ্টা, সম্পূর্ণরূপে ঘাম এবং পানি প্রতিরোধী। এতে সাধারণত ক্ষতিকারক প্যারাবেন এবং সিলিকন না থাকায় স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সম্ভাবনাও কমে যায়। এতোসব গুণের কারণেই বিশ্বব্যাপী মেকআপ আর্টিস্টরা পার্টী মেকআপ থেকে বিয়ের মেকআপ এর জন্য বেছে নিয়েছেন এই এয়ার ব্রাশ টেকনোলজি।
ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি ব্লাশ, চোখের মেকআপ সবই সম্ভব এয়ার ব্রাশের সাহায্যে, শুধু প্রয়োজন অনুশীলন আর টেকনিক আয়ত্ত করা। পুরা কিট ছাড়াও প্রতিটি জিনিষ আলাদা আলাদাও কেনা যায়, আর অনেক ব্র্যান্ডই আছে যারা দিচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল শিপিং এর সুবিধা।
এয়ার ব্রাশ ফাউন্ডেশন ব্যবহার এর আগে অন্য সাধারণ ফাউন্ডেশনের মতই ময়শ্চারাইজার, প্রাইমার এবং কনসিলার ব্যবহার করে নিতে হবে। এরপর বেছে নিন আপনার শেডের ফাউন্ডেশন। একটি শেডে ম্যাচ না করলে ২-৩ শেড এক্ সাথে মিক্স করে এয়ার ব্রাশের সাহায্যে ত্বকে ব্যবহার প্রয়োগ করতে পারেন। নিখুঁত ও ছোপবিহীন ফিনিশিং পাওয়ার জন্য ত্বক থেকে কমপক্ষে ৬ ইঞ্চি দূর থেকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ব্যবহার করতে হবে। এতে মেকআপ বিন্দু বিন্দু কণার আকারে ত্বকে লাগবে এবং সাথে সাথেই শুকিয়ে যাবে। একবারে ঘন করে প্রয়োগ না করে স্তরে স্তরে প্রয়োগ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় আর খেয়াল রাখতে হবে যেন ব্রাশের লিভার অতিরিক্ত না টানা হয়। প্রথমে প্র্যাকটিসের জন্য প্রডাক্ট ব্যবহার না করে পানি ব্যবহার করা ভালো, এতে প্রডাক্টের অপচয় হবেনা।
অবশ্যই প্রতিবার ব্যবহার করার পর ব্রাশ পরিষ্কার করে রাখতে হবে, না হলে ব্রাশের নোজলে ময়লা জমে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর ত্বকের মেকআপ উঠানোর নিয়ম আর দশটা মেকআপ উঠানোর মতই।
নিয়মিত অনুশীলনে ধীরে ধীরে মেকআপ প্রয়োগের সময় কমে আসে এবং চোখের মত সূক্ষ্ম মেকআপেও পারদর্শিতা বাড়ে। মেশিন ও ত্বকের দূরত্ব এবং বাতাসের চাপ নিয়ন্ত্রণ আর ধৈর্যের সমন্বয়ে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়।
এয়ার ব্রাশের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে এটি খুবই ফটোফ্রেন্ডলি। যেখানে সাধারণ ফাউন্ডেশন ব্যবহার করলে HD ফটোগ্রাফি অথবা ফ্ল্যাশ ফটোগ্রাফিতে অস্বাভাবিক সাদা দেখা যায়, সেখানে ন্যাচারাল লুক এর জন্য এয়ার ব্রাশ মেকআপ উপযুক্ত।
এয়ার ব্রাশ মেকআপ যুগোপযোগী হলেও এখনও সাশ্রয়ী নয়। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য উপযোগী নয়, কারণ প্রতিবার সম্পূর্ণ আয়োজন নিয়ে বসার সময় থাকেনা যেমন, তেমনি পরিষ্কারের। কিন্তু যখন আপনার স্পেশাল দিন এবং আপনিও চান নিজেকে স্পেশাল দেখাতে, তখন এই এয়ার ব্রাশের কোন জুড়ি নেই। তাই এয়ার ব্রাশকে দৈনন্দিন সঙ্গী না বানাতে পারলেও বিশেষ দিনের বন্ধু ভাবতে ক্ষতি কি!! সবশেষে এটাই বলতে চাই, অবশ্যই ব্যবহারের আগে মেশিনের সাথে যুক্ত সিডি দেখে নিলে ব্যবহার আরও সহজতর এবং নির্ঝঞ্ঝাট হবে। এছাড়া যদি আরও কোন প্রশ্ন থাকে আপনাদের মনে, নির্দ্বিধায় আমাকে লিখতে পারেন।
লিখেছেনঃ শিরি ফারহানা
মডেলঃ শিরি ফারহান