পাহাড় ও জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে খুব ভালোবাসেন? সময় পেলেই ছুটে যান পাহাড়ের কোলে? তাহলে আর দেরি না করে সময় পেলেই যেতে পারেন আলীর গুহা বা আলীর সুড়ঙ্গে। এই রহস্যময় আলীর গুহা প্রাকৃতিকভাবেই সৃষ্টি হয়েছে। আজকে আমরা আপনাদের জানাবো রহস্যে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আলীর গুহা সম্পর্কে। তো চলুন জেনে নেই কি এই রহস্যময় আলী গুহা।
আলী গুহা পরিচিতি
রহস্যময় আলী গুহা বা আলীর সুড়ঙ্গ বান্দরবন জেলার আলীকদম উপজেলায় অবস্থিত। এই গুহা নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। আলীকদম নাম নিয়ে যেমন নানা ধরনের কথা উপকথা চালু রয়েছে, রহস্যময় এই গুহা নিয়েও তেমন গল্পকথা চালু রয়েছে।
আলীকদম সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে মাতামুহুরী-টোয়াইন খাল ঘেঁষে দুই পাহাড়ের চুড়ায় এই গুহা সৃষ্ট। এলাকাবাসীর কাছে এই গুহা আলীর সুরম নামে পরিচিত। সরকার এই গুহাকে পুরাকীর্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
কিভাবে ঘুরবেন আলী গুহা
এখানে মূলত ৩টি গুহা রয়েছে। সবগুলা গুহা যদি ঘুরে দেখতে চান তাহলে আপনার ২ ঘন্টা সময় লেগে যাবে। গুহা ঘুরতে আপনাকে ঝিরি পথ দিয়ে চলতে হবে। ঝিরি থেকে গুহার মুখ উপরে অবস্থিত। প্রথম গুহা ঘুরতে আপনার বেশি সমস্যা হবেনা কারণ প্রথম গুহায় সিঁড়ির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বাকি গুহাগুলোতে পাহাড় বেয়ে আপনাকে উঠতে হবে।
গুহার কিছু অংশে হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হবে কারণ এর কিছু অংশ বেশ সরু। গুহার ভেতরে গেলেই যেন এক অজানা রহস্য আপনাকে ঘিরে রাখবে। নতুন এক জগতের সাথে পরিচয় হবে আপনার। ভিতরে যেতে অবশ্যই টর্চ কিংবা মশাল নিতে হবে। একেবারেই ঘুটঘুটা অন্ধকার এই গুহার ভেতরটা। গা ছমছম করা পরিবেশ এবং একেবারেই স্যাঁতস্যাঁতে এই গুহাগুলো।
গাইড
আলী গুহা বা আলীর সুড়ঙ্গে আগে গিয়ে না থাকলে একা না যাওয়াই ভালো। সাথে গাইড নিয়ে নিবেন। আলীকদম থেকে কাওকে নিয়ে নিতে পারেন গাইড হিসেবে। তাছাড়া ঝিরি পথের শুরুতেই বেশ কিছু ছেলে দাড়িয়ে থাকে, তাদের মধ্য থেকেও কাওকে নিতে পারেন। তবে আগে থেকেই কথা বলে নিবেন সবগুলা গুহা যেন ঘুরে দেখায়।
থাকার ব্যবস্থা
আলী গুহায় একদিনে গিয়েই ঘুরে আসতে পারবেন। রাতে ঢাকা থেকে বাস করে গিয়ে সারাদিন ঘুরে আবার রাতের বাসে ঢাকা ফিরে আসতে পারেন। চট্টগ্রাম থেকে খুব সকালে গেলে ঘুরে আবার একদিনেই ফিরে আসতে পারবেন। তারপরও যদি থাকার প্রয়োজন হয় তাহলে আলীকদমে উপজেলা রোডে দ্যা দামতুয়া ইন অথবা জেলা পরিষদের ডাক বাংলোতে থাকতে পারেন। অথবা পান বাজারে একটি বোর্ডিং আছে যার মান তেমন ভালো না, চাইলে এই বোর্ডিং এ থাকতে পারেন।
খাওয়ার ব্যবস্থা
আলীকদমে বেশকিছু খাবারের হোটেল আছে এছাড়া পান বাজারেও বেশকিছু হোটেল রয়েছে। খুব ভালো মানের খাবার না থাকলেও মোটামুটি মানের খাবার পাবেন এসব হোটেলগুলোতে।
কিভাবে যাবেন
আলী গুহায় যেতে প্রথমেই আপনাকে বান্দরবন যেতে হবে। বান্দরবন জেলার আলীকদম পৌঁছে তারপর আলী গুহায় যেতে হবে। বান্দরবন শহর থেকে থানচি-আলীকদমরোড দিয়ে কিংবা কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা হয়ে আলীকদম আসতে হবে।
ঢাকা থেকে কিভাবে যাবেন আলীকদম
ঢাকা থেকে সরাসরি আলীকদম যেতে পারবেন। ঢাকাতে শ্যামলি ও হানিফ বাস সরাসরি আলীকদম যায়। ঢাকা থেকে সরাসরি যাওয়াই ভালো। এতে সময় অনেক কমে যায়। এক্ষেত্রে ভাড়া হবে ৮৫০ টাকা। এছাড়া কক্সবাজারগামী যেকোন বাসে করে চকরিয়া গিয়ে যেতে পারেন আলীকদম। ঢাকা থেকে চকরিয়া বাস ভাড়া নিবে ৮৫০-১৪০০ টাকা। চকরিয়াতে আলীকদম যাওয়ার লোকাল বাস রয়েছে। এইসব বাস প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিট পর্যন্ত আলীকদমের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
তাছাড়াও লোকাল জীপ অথবা চাঁদের গাড়িতে করে চকরিয়া থেকে আলীকদম যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে লোকাল ভাড়া নিবে ৬০-৬৫ টাকা। পুরা রিজার্ভ নিলে ১২০০-১৫০০ টাকা নিবে ভাড়া।
আলীকদম থেকে আলীর গুহা কিভাবে যাবেন
প্রথমে আলীকদম থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে মংচপ্রু পাড়ায় যেতে হবে। হেঁটে কিংবা ইজিবাইকে করে যেতে পারেন। মংচপ্রু পাড়ার পাশ দিয়েই রয়েছে টোয়াইন খাল। এই খাল পার হয়ে কিছুক্ষণ পাহাড় ও ঝিরিপথে হেঁটে আলীর সুরঙ্গে যেতে হবে। সময় লাগবে ২০-৩০ মিনিট। সবগুলো গুহা দেখা ও আসা যাওয়ায় মোট সময় লাগবে ৩ ঘণ্টার মতো।
ব্যস্ত জীবনে একটু অ্যাডভেঞ্চার (Adventure) হয়ে গেলে কিন্তু মন্দ হয় না। তাই একদিনের মধ্যে গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন আলীর গুহায়।
ছবি- সংগৃহীত: এম হক বাপ্পি