আপনার স্কিন কেয়ার রুটিনে আপনি হয়তো একটি সঠিক ইনগ্রেডিয়েন্ট খুঁজছেন যেটা স্কিনের উজ্জ্বলতা বাড়াবে, ডার্ক স্পটস ফেইড করবে, হাইপার পিগমেন্টেশন কমাবে। কিন্তু ট্রাই অ্যান্ড টেস্টেড করতে করতে অনেকগুলো প্রোডাক্ট নিয়ে হয়তো হিমশিম খেতে হচ্ছে! চিন্তা নেই, আজ এমন একটা ম্যাজিকাল ইনগ্রেডিয়েন্ট নিয়ে কথা বলবো যেটা এই সবগুলো সমস্যা ফোকাস করে কাজ করবে। আর সেই উপাদানটি হচ্ছে আলফা আরবুটিন। বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহৃত সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ইনগ্রেডিয়েন্ট এটি। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
আলফা আরবুটিন কী?
আরবুটিন তৈরি হয় হাইড্রোকুইনোন ও ডি-গ্লুকোজ থেকে, এটা কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যেতে পারে আবার বিভিন্নরকম উদ্ভিদ যেমন- ক্র্যানবেরি, ব্লুবেরি ইত্যাদি থেকেও পাওয়া যায়। এটা ন্যাচারাল স্কিন ব্রাইটেনিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে যা মেলানিন নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। দুই ধরনের আরবুটিন পাওয়া যায়- আলফা আরবুটিন (এটা মূলত কেমিক্যালি প্রসেসড) আর বেটা আরবুটিন (এটা বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ থেকে সংগ্রহ করা হয়)। কেমিক্যালি প্রসেসড আলফা আরবুটিন-ই মূলত বিভিন্ন স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, কারণ ন্যাচারালি পাওয়া বেটা আরবুটিন থেকে কেমিক্যালি প্রসেসড আলফা আরবুটিন প্রায় ১০ গুণ বেশি কার্যকর।
কীভাবে কাজ করে?
আরবুটিন ন্যাচারাল ব্রাইটেনিং এজেন্ট হিসেবে অনেক বেশি কার্যকর। এটা স্কিনকে ব্রাইট করতে এবং ডার্ক স্পটস ফেইড করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ডার্ক স্পটস তৈরি হয় মেলানোসাইট নামক স্কিন সেলস থেকে। এই সেলগুলোতে থাকে টাইরোসাইনাস নামক এক ধরনের এনজাইম। সূর্য রশ্মির কারণে আমাদের ত্বকের এপিডার্মিস লেয়ারে মেলানোসাইট সেলস ট্রিগার হয়ে যায়। যার ফলে স্কিনে এক্সেস মেলানিন তৈরি হয়ে সানট্যান ও স্পটস তৈরি করে। অন্যদিকে আলফা আরবুটিন ত্বকের উপরে হাইড্রোকুইনোন রিলিজ করে যেটা কিনা টাইরোসাইনাসকে প্রতিরোধ করে। অর্থাৎ মেলানিন নিঃসরণ প্রতিহত করে। আরবুটিন মেলানিনের ওভার প্রোডাকশন বন্ধ করে, সেই সাথে টাইরোসাইনাস তৈরি হওয়াকেও বন্ধ করে দেয়। যার কারণে কোনো রকম ক্ষতিকর প্রভাব ছাড়াই পিগমেন্টেশন ও কালো দাগ থেকে আপনি একশো হাত দূরে থাকতে পারছেন।
স্কিন কেয়ার বেনিফিটস
১) ডার্ক স্পট ও সানট্যান কমাতে
আলফা আরবুটিন স্কিনটোন ব্রাইট করে ও স্কিন টেক্সচার ইম্প্রুভ করে। সারাদিন রোদে থাকার ফলে স্কিনে যে ডিসকালারেশন হয়, সেটা কমিয়ে স্কিনকে গ্লোয়ি করে এই উপাদানটি। রেগুলার ব্যবহারের ফলে সানট্যান, এজিং স্পটস, মেলাজমা অর্থাৎ কালো দাগ অনেকাংশে কমে যায়।
২) ব্রণের দাগ দূর করতে
অনেক সময় ব্রণ চলে গেলেও স্কিনে থেকে যায় জেদি দাগ। একনে স্পটস দূরে করে স্কিনকে হেলদি রাখতে ট্রাই করতে পারেন আলফা আরবুটিন যুক্ত স্কিন কেয়ার রেঞ্জ।
৩) স্কিনটোন ব্রাইট করতে
এটি স্কিনের টাইরোসাইনাস প্রোডাকশন কমিয়ে আনে বলে স্কিনের আনইভেন কমপ্লেকশন অনেকটাই দূর হয়। সেই সাথে ডার্ক স্পটস কমিয়ে আনে বলে ফেইস অনেক বেশি ক্লিয়ার ও হেলদি মনে হয়।
৪) হাইপার পিগমেন্টেশন কমাতে
আগেই বলেছি, এটি মেলানিন নিঃসরণ কমায়। তাই হাইপার পিগমেন্টেশন এর একটি নিরাপদ ও কার্যকর ট্রিটমেন্ট হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়। সূর্যের প্রখর রোদে স্কিনের যে ড্যামেজ হয়, তা রিপেয়ার করতেও আলফা আরবুটিন কার্যকর ভূমিকা রাখে।
কারা আলফা আরবুটিন ব্যবহার করতে পারবেন?
আরবুটিন সব ধরনের ত্বকের জন্যই নিরাপদ। বিশেষ করে যাদের পিগমেন্টেশন ও আনইভেন স্কিনটোন আছে, তাদের জন্য বেস্ট রেজাল্ট দেয়। সেনসিটিভ স্কিন হলেও আপনি আলফা আরবুটিন ব্যবহার করতে পারবেন। অনেক স্কিন ব্রাইটেনিং এজেন্ট থেকে স্কিনে ইরিটেশন হয়, কিন্তু এই ইনগ্রেডিয়েন্টটি অ্যাপ্লাই করলে কোনো সমস্যা হবে না।
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
বিভিন্ন ধরনের স্কিন ব্রাইটেনিং প্রোডাক্টস যেমন- সিরাম, ক্রিম, ফেইস মাস্ক, ক্লেনজার বা লোশনে আলফা আরবুটিন প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও নাইট ক্রিমে এই উপাদানটি ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। কোন প্রোডাক্ট কীভাবে ইউজ করতে হবে, কী কী সতর্কতা মেনে চলতে হবে, সেগুলো আগেই দেখে নিন প্রোডাক্টের লেবেল থেকে। যেকোনো বিউটি প্রোডাক্ট ব্যবহারের আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে।
আলফা আরবুটিন যুক্ত সিরাম ব্যবহারের নিয়ম
ক্লেনজার দিয়ে ফেইস ভালোভাবে ক্লিন করে টোনার অ্যাপ্লাই করে নিন। এবার আলফা আরবুটিন যুক্ত সিরাম ড্যাব ড্যাব করে ফেইসে অ্যাপ্লাই করুন। সাথে সাথেই স্কিনে অ্যাবসর্ব হয়ে যাবে। এরপর ভালোমানের ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করে নিন। দিনের বেলায় সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না। যাদের স্কিনে ভিটামিন সি স্যুট করে না, তাদের জন্য আলফা আরবুটিন হচ্ছে অল্টারনেটিভ অপশন। সিরাম আপনি পুরো ফেইসেই ব্যবহার করতে পারবেন (অবশ্যই ঠোঁট, চোখ বাদে) আবার চাইলে শুধু পিগমেন্টেড এরিয়াতেও ব্যবহার করতে পারেন।
বিগেইনারদের জন্য সাজেশন
ত্বকে ব্যবহারের জন্য আলফা আরবুটিন এর ২% কনসেন্ট্রেশন এবং বেটা আরবুটিন এর ৭% কনসেন্ট্রেশন নিরাপদ বলে ধরা হয়। তাই বিগেইনার হিসেবে যখন এই সিরাম ব্যবহার করা শুরু করবেন আগে কনসেন্ট্রেশন চেক করে নিন। স্কিন কেয়ার রুটিনে সানস্ক্রিন ইনক্লুড করতে ভুলবেন না।
সাইড ইফেক্ট
আরবুটিন যুক্ত স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে তেমন কোনো সাইড ইফেক্ট দেখা যায় না। উচ্চতাপ এই উপাদানের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, তাই নির্দেশনা থাকে যে এটাকে আলো থেকে দূরে ঠান্ডা ও শুকনো জায়গায় সংরক্ষণ করার।
তাহলে আমরা জেনে নিলাম ব্রাইট ও ইয়ুথফুল স্কিনের জন্য আলফা আরবুটিন কতটা হেল্পফুল। এখন অনেক ভালো ভালো ব্র্যান্ডের স্কিন কেয়ার রেঞ্জে এই উপাদানটি থাকে। স্কিন টাইপ বুঝে ত্বকের জন্য বেছে নিন সঠিক প্রোডাক্টটি। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, ইস্টার্ন মল্লিকা, বসুন্ধরা সিটি, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), সীমান্ত সম্ভার, চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন।
ছবি- সাজগোজ