উজ্জ্বল ও তারুণ্যদীপ্ত ত্বক আমরা সবাই চাই। এজন্য কত ধরনের স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টই আমরা ইউজ করি! ‘আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড বা Alpha Hydroxy Acid (AHA)’ নামটা পরিচিত লাগছে কি? অ্যাডভান্স স্কিনকেয়ারে এই এলিমেন্ট বা উপাদানটির উপস্থিতি দেখা যায়। কিন্তু অনেকেই এটি ব্যবহার করতে একটু কনফিউজড থাকেন। কারণ অ্যাসিড শুনলেই কেমন যেন ভয় লাগে, তাই না? কিন্তু ভয়ের কোনো কারণ নেই! এই আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড যে ত্বকের যত্নে কতটা কার্যকরী, সেটা অনেকেই জানেন না। চলুন তাহলে আজ জেনে নেওয়া যাক আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড এর বিউটি বেনিফিটস নিয়ে।
আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড কী?
এটি হচ্ছে কেমিক্যাল যৌগের একটি সংমিশ্রণ, যেখানে এই যৌগগুলো আসে মূলত বিভিন্ন রকম উদ্ভিদ ও প্রাণীজ উপাদান থেকে; যেমন দুধ, লেবুর রস, আঙুর ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি এজিং প্রোডাক্টস যেমন টোনার, সিরাম, ক্রিম, কেমিক্যাল পিল ইত্যাদিতে এই উপাদানটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে কোরিয়ান স্কিন কেয়ার রেঞ্জে এই ইনগ্রেডিয়েন্টটি বেশ ব্যবহৃত হয়। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড এগুলো আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিডের কিছু পপুলার ফর্ম।
AHA-এর অ্যামেজিং স্কিন বেনিফিটস
১) স্কিন এক্সফোলিয়েশনে
আমাদের ত্বকে প্রতিনিয়ত ডেড সেলস জমা হয়। এই জমে যাওয়া ডেড সেলস এর কারণে ত্বক নিষ্প্রাণ দেখায়। আবার বয়স বাড়ার সাথে সাথে নতুন কোষ তৈরি হয়ে এই মৃত কোষগুলো রিমুভ হওয়ার যে প্রক্রিয়া সেটা স্লো হয়ে যায়। তাই স্কিনে দেখা দেয় ফাইন লাইনস, রিংকেলস ও ড্রাইনেস। আর এখানেই AHA তার ম্যাজিক দেখায়! এটি এক্সফোলিয়েশনে সাহায্য করে, যার ফলে ভেতর থেকে উজ্জ্বল নতুন স্কিন সেলস জেনারেট হয়।
২) স্কিন ব্রাইটেনিংয়ে
গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ডেড স্কিন সেলসের বন্ডিং ব্রেক ডাউন করে আর সাইট্রিক অ্যাসিড স্কিনটোন ব্রাইট করে। হেলদি গ্লো ফিরিয়ে আনতে এই উপাদানগুলো ম্যাজিকের মতো কাজ করে। তাই বিভিন্ন স্কিন ব্রাইটেনিং প্রোডাক্টসে এই উপাদানগুলো দেখা যায়।
৩) কোলাজেন প্রোডাকশনে
কোলাজেন হচ্ছে একটি প্রোটিন রিচ ফাইবার। এটি স্কিনকে প্লাম্পি ও সফট রাখতে সাহায্য করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই ফাইবারগুলো ভাঙতে শুরু করে। এছাড়াও অধিক পরিমাণে সান এক্সপোজারও ত্বকের কোলাজেন নষ্ট করে দেয়। ফলে স্কিন লুজ হয়ে যায়, সব সময় ফেইস ডাল ও টায়ার্ড দেখায়। আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড কোলাজেন প্রোডাকশন বুস্ট করতে হেল্প করে।
৪) রিংকেলস প্রিভেনশনে
আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড ব্যবহারে ত্বকের উপরের লেয়ারের বলিরেখা অনেকাংশে কমে যায়। যদিও এটি ত্বকের ডিপ লেয়ারে পৌঁছে বলিরেখা বা ফাইন লাইনস রিমুভ করে না, তবে ত্বকের প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস প্রিভেন্ট করতে বেশ হেল্পফুল।
৫) হাইপারপিগমেন্টেশনের সল্যুশনে
গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ও ল্যাকটিক অ্যাসিড হাইপারপিগমেন্টেশন, একনের দাগ, মেলাজমা ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে। এই দু;টো অ্যাসিড কেমিক্যাল পিল ও মেডিকেটেড স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টসে বেশ দেখা যায়। বিশেষ করে কোরিয়ান স্কিনকেয়ার কিট-এ এই উপাদানগুলোর উপস্থিতি দেখতে পাবেন।
৬) একনে ট্রিটমেন্টে
AHA ব্যবহারের ফলে একনে ব্রেকআউটস কমে যায়। কারণ একনে হওয়ার অন্যতম রিজন হচ্ছে পোরস ক্লগ হয়ে যাওয়া। AHA ব্যবহার করলে ক্লগড পোরস ক্লিন হয়ে যায়, যার কারণে ত্বকের কোষ নিঃশ্বাস নিতে পারে। এটি স্কিনের ইমপিওরিটিস দূর করে স্কিনকে হেলদি রাখতে দারুণ কার্যকরী।
৭) সান ড্যামেজ কমাতে
সান এক্সপোজারের কারণে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন সানট্যান, ডার্ক প্যাচ, পিগমেন্টেশন ইত্যাদি হতে পারে। আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড ব্যবহারে এই ধরনের সান ড্যামেজগুলো ধীরে ধীরে কমে আসে।
৮) অন্য প্রোডাক্টের কার্যকারিতা বাড়াতে
এটি যেহেতু ত্বকের ডেড সেলস রিমুভ করে ভেতর থেকে নিউ সেলস জেনারেট করে, তাই যেকোনো স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট বেশ ভালোভাবে ত্বকে কাজ করতে পারে। এক কথায়, স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টের ইফেক্টিভনেস বেড়ে যায়। অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার রুটিনকে কমপ্লিট করতে আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিডযুক্ত প্রোডাক্ট বেছে নিন।
কোনো সাইড ইফেক্ট আছে কি?
নরমালি আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (AHA) ব্যবহারের ফলে ত্বকের তেমন কোনো সাইড ইফেক্ট দেখা যায় না। তবে প্রথমবার ব্যবহার করলে ত্বকে লালচেভাব, সামান্য চুলকানি, হালকা জ্বালাপোড়া অনুভুত হতে পারে। স্কিনকেয়ার রুটিন প্রোপারলি মেনটেইন করতে না পারলে এই ধরনের ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যবহার করা শুরু করবেন না। আগে প্যাচ টেস্ট করুন অবশ্যই। সিভিয়ার প্রবলেম হলে বা স্কিনে স্যুট না করলে ব্যবহার করা বন্ধ করে দিন। ২০ বছর বয়সের আগে অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট ইউজ করা উচিত নয়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে AHA ব্যবহার করলে ত্বক অনেকটাই ফটো সেনসিটিভ হয়ে যায়, যে কারণে এটি ব্যবহার করলে ডে টাইমে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, ইস্টার্ন মল্লিকা, বসুন্ধরা সিটি, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), সীমান্ত সম্ভার, চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ