প্রচলিত আছে, “রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন”! কথাটি অনেকাংশেই সত্য। রাগ দিয়ে কোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়ই বরং সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে রাগ। তবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অনেক কিছু করা সম্ভব। রাগ শুধুমাত্র আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, এটি সম্পর্কের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। শুধুমাত্র রাগের জন্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে আপনার প্রিয় সম্পর্কটি! এই সবকিছুই মীরার জানা। কিন্তু তারপরও রাগটাকে বাগে আনতে পারে কোনোভাবে। অনেক চেষ্টা করেছে রাগকে নিয়ন্ত্রণ করার, কিন্তু কিছুতে কিছু করতে পারে নি। এই রাগের জন্য কতোই না বকা খায় মায়ের হাতে। বকা খেয়ে বরং রাগ আরো বেড়ে যায় মীরার। তখন মনে হয়- “মাও আমাকে বুঝলো না“! রাগ করে তো একবার তার প্রিয় কফি মগটাই ভেঙ্গে ফেললো। একদিন ওর রাগ দেখে নীলা বলে ফেললো- “তোর রাগ যদি কমাতে না পারিস আমার সাথে কথা বলবি না!” বেস্ট ফ্রেন্ডের এইরকম হুমকি শুনে মীরা সিদ্ধান্ত নিলো যেভাবে হোক রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এই রাগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মীরা কিছু কাজ করা শুরু করলো এবং এই কাজগুলো ওর রাগ কমাতে বেশ সাহায্য করলো। জানতে চান কোন উপায়ে মীরা তার রাগ নিয়ন্ত্রণ করলো? আসুন একনজরে দেখে নেই সেই উপায়গুলো!
রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়সমূহ
১) গণনা করুন
রেগে গিয়েছেন অনেক? তাহলে গণনা শুরু করে দিন। রেগে গেলে ১০ থেকে উল্টা গণনা শুরু করুন। এটি আপনার হার্টবিট কমিয়ে দিবে তার সাথে সাথে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে। আপনার রাগ যদি অনেক বেশি হয় তাহলে ১০০ থেকে গণনা শুরু করতে পারেন।
২) নিঃশ্বাস নিন
অনেকে রেগে গেলে ঘন ঘন শ্বাস নিতে থাকে। এতে রাগ কিন্তু কমে না বরং বেড়ে যায়। গভীরভাবে শ্বাস গ্রহণ করুন, তারপর সেটি মুখ দিয়ে ছেড়ে দিন। এটি আপনার ভিতরে জমে থাকা রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।
৩) হেঁটে আসুন
শারীরিক কসরত আপনার স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করবে, যার কারণে আপনি রেগে গেছেন সেটিও দূর করতে সাহায্য করবে। যখন রেগে যাবেন তখনই হাঁটতে বেরিয়ে পরুন। হাঁটা কিংবা দৌড়ানো আপনার স্ট্রেস কমিয়ে আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করবে।
৪) বলার আগে ভাবুন
রাগের মাথায় কোনো কিছু বলা অথবা করার আগে ভাবুন। একবার কোনো কিছু বলে ফেললে সেটি আর পরিবর্তন করা যায় না। তাই রেগে কিছু বলার আগে কয়েকবার ভাবুন। বলে ফেলার পর আবার যেনো অনুতপ্ত করতে না হয়।
৫) বার বার বলুন
নিজেকে শান্ত করার মতো কোনো একটি শব্দ খুঁজে বের করুন। যা আপনার মনকে শান্ত করতে সাহায্য করবে। যেমন- রিল্যাক্স, কাম ডাউন, টেক ইট ইজি, চিন্তার কিছু নাই, মাথা ঠাণ্ডা কর কিংবা গেট ওয়েল সুন যেকোনো বাক্য হতে পারে। যা আপনার মনকে শান্ত করতে পারে। সেই বাক্যটি নিজেকে বলুন কয়েকবার। দেখবেন আপনার মন শান্ত হয়ে গেছে!
৬) মনকে নিয়ন্ত্রণ
একটি নির্জন ঘরে চলে যান, চোখ বন্ধ রাখুন এবং নিজেকে কল্পনা করুন। ভাবতে পারেন বিশাল সমুদ্রের পাড়ে আপনি শুয়ে আছেন কিংবা খোলা আকাশের নিচে ঘাসের উপর শুয়ে বই পড়ছেন। এই কল্পনার প্রতিটি বিষয়ে খুঁটিনাটি লক্ষ্য করুন। যেমন- সাগরের পানির রঙ কেমন? পাহাড়টি কত উঁচু? পাখির কিচিরমিচির শব্দটি কেমন ইত্যাদি। এটি আপনার রাগকে ভুলতে সাহায্য করবে।
৭) সমাধান খুঁজে বের করুন
যে বিষয়টি আপনাকে রাগান্বিত করেছে, সে বিষয়টি নিয়ে রাগারাগি না করে, সেই সমস্যাটির সমাধান খুঁজে বের করুন। আপনার সন্তান ঘর বার বার নোংরা করে ফেলছে? দরজাটা বন্ধ রাখুন। আপনার সঙ্গীর ব্যবহারে কষ্ট পাচ্ছেন। তার সাথে কথা বলুন। মনে রাখবেন, রাগ কোনো কিছুর সমাধান হতে পারে না, বরং এটি সবকিছুকে আরো খারাপ করে দেয়।
৮) গান শোনা শুরু করুন
গান আপনাকে আপনার চারপাশের পরিবেশ ভুলতে সাহায্য করবে। রেগে যাওয়ার সাথে সাথে গান শোনা শুরু করুন। গান এমন একটি জিনিস যা আমাদের মস্তিষ্ককে রিল্যাক্স করার ক্ষমতা রাখে এবং সেই সাথে মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়ার কাজটি করে। যার ফলে রাগটি আপনা-আপনিই কমে যেতে শুরু করে। যদি সম্ভব হয় তো গানের তালে একটু হাত-পা ও ছুঁড়ে নিতে পারেন। এতে আরও দ্রুত ভালো ফলাফল পাবেন।
৯) অসন্তোষ জমা রাখা
ক্ষমা অনেক শক্তিশালী একটি ইমোশন। যার উপর রেগে আছেন তাকে ক্ষমা করে দিন, দেখবেন আপনার মন অনেকটা শান্ত হয়ে গেছে। আপনি যদি রাগ ধরে রাখেন, তবে সেটি আপনার মানসিক শান্তি নষ্ট করবে, শুধু তাই নয়, সেটি আপনার ভিতরে থাকা ইতিবাচক দিকগুলোকে প্রভাবিত করবে। অসন্তোষকে ভুলে ক্ষমা করুন। দেখবেন আপনাদের সম্পর্কটি অনেক সুন্দর হয়ে উঠেছে।
১০) লিখুন
আপনার কী বলতে ইচ্ছা করছে, সেটি লিখে ফেলুন। আপনার খারাপ লাগাও লিখতে পারেন। মনের সব আবেগ নোট বন্দি করে ফেলুন। মনের ভাব লেখা প্রকাশ করলে আপনার রাগ কিছুটা হলেও প্রকাশ পাবে। যা আপনার রাগ কমাতে সাহায্য করবে।
রাগ মানুষের খুব স্বাভাবিক একটি আবেগ। হাসি, কান্না, ঈর্ষার মতোই রাগ মানুষের একটি আবেগ। রাগ হতেই পারে, কিন্তু সেটি নিয়ন্ত্রণ করাটা আপনার হাতে। কিছু কৌশল অবলম্বন করে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব রাগকে। আসুন রাগকে নিজের হাতের মুঠে বন্দি করি, সম্পর্কগুলোকে সুস্থ রাখি!
ছবি- সাজগোজ