শ্যাম্পু বাছাই করতে যেয়ে উপাদান তালিকায় সালফেট দেখে অনেকেই ভয় পেয়ে যান, কারণ বর্তমানে একটি বেশ প্রচলিত তথ্য হলো সালফেট চুল ও স্ক্যাল্পের জন্য ক্ষতিকর। শ্যাম্পুতে সালফেট থাকা মানেই কি ক্ষতিকর, নাকি এটা আমাদের ভুল ধারণা? এই উপাদান দেখলে আমরা সেই শ্যাম্পু এড়িয়ে যাবো? এই উত্তরগুলো জানার জন্য প্রথমেই জানা দরকার সালফেট আসলে কী এবং এর কাজই বা কী।
সব মেয়েদের কাছে সুন্দর চুল যেন আরাধ্য বস্তু! চুল ছোট হোক কিংবা বড়, আমাদের সবারই চাই সুন্দর ঝলমলে চুল। আর সুন্দর চুলের জন্য প্রয়োজন সঠিক যত্ন। চুলের যত্নে প্রথমেই যা দরকার তা হলো শ্যাম্পু। কারণ শ্যাম্পু একদম বেসিক প্রোডাক্ট যা আমাদের চুল ও স্ক্যাল্পকে ক্লিন রাখতে সাহায্য করে। তবে স্ক্যাল্পের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু বাছাই করাটাও জরুরি। এই শ্যাম্পু সিলেকশন নিয়ে বেশ কিছু কনফিউশন ক্লিয়ার করবো আজ।
শ্যাম্পুতে সালফেট এর কাজ কি?
সালফেট মূলত একটি সারফেকট্যান্ট যার অর্থ এটি তেল ও পানি উভয়কেই আকর্ষণ করে। এটি সাবান, শ্যাম্পু, ক্লেনজার, যেকোনো প্রোডাক্টের ফোমিং বা লেদারিং বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী। সালফেট খুবই কার্যকরী একটি ক্লেনজিং ইনগ্রেডিয়েন্ট যা সব ধরনের ইমপিওরিটিস প্রোপারলি দূর করে। শ্যাম্পুতে সালফেট ব্যবহারের প্রধান কারণই হলো যাতে এটি স্ক্যাল্পে জমে থাকা ময়লা, সেবাম খুব সুন্দর ও সহজভাবে পরিষ্কার করতে পারে।
কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার অনেক সময় মাথার ত্বককে অতিরিক্ত পরিষ্কার করে ফেলে, যার ফলে মাথার ত্বকের ন্যাচারাল অয়েলও রিমুভ হয়ে যায়! তবে সালফেটের এই বৈশিষ্ট্য যাতে চুল ও স্ক্যাল্পকে ওভারড্রাই না করে ফেলে তাই সালফেট যুক্ত শ্যাম্পুগুলোতে বেশ কিছু ময়েশ্চারাইজিং বা emollient উপাদানও ব্যবহার করা হয় এবং শ্যাম্পুগুলোকে এমনভাবেই ফর্মুলেট করা হয় যাতে তা চুলকে অতিরিক্ত শুষ্ক না করে ফেলে। এই কারণেই শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই করার কথা বলা হয়, যাতে চুলের ন্যাচারাল ময়েশ্চার লেভেল রিস্টোর হতে পারে।
ক্ল্যারিফাইং শ্যাম্পু vs মাইল্ড শ্যাম্পু
অনেকেই শ্যাম্পুতে সালফেট আছে শুনে ভয় পায় এবং মনে করে সালফেট চুলের ক্ষতি করতে পারে। এই ধারণা থেকেই অনেকে সালফেট যুক্ত শ্যাম্পু এড়িয়ে যায়। কিন্তু সালফেট যুক্ত শ্যাম্পু মানেই যে সেটা চুলের ক্ষতি করবে অথবা সালফেট মানে যে ক্ষতিকর বিষয়টা কিন্তু এমন নয়। শ্যাম্পুতে দুই ধরনের সালফেটের যৌগ ব্যবহার করা হয় সব থেকে বেশি, সেগুলো হলো-
- সোডিয়াম লরাইল সালফেট বা এস এল এস (Sodium Lauryl Sulfate SLS)
- সোডিয়াম লরেথ সালফেট বা এস এল ই এস (Sodium laureth sulfate SLES)
এছাড়াও আরেকটি সালফেটের যৌগ ব্যবহার হয়ে থাকে তা হলো অ্যামোনিয়াম লরাইল সালফেট। SLES বেশ কিছুটা মাইল্ড SLS এর তুলনায়। এ দু’টোর তুলনায় আবার অ্যামোনিয়াম লরাইল সালফেট বেশি মাইল্ড। যেহেতু সালফেট যুক্ত শ্যাম্পু ডিপলি ক্লিন করে, তাই একে ক্ল্যারিফাইং শ্যাম্পুও বলা হয়।
আর মাইল্ড শ্যাম্পুতে এই ধরনের স্ট্রং সারফেকট্যান্ট থাকে না, তাই ফেনা কম হয়। চুল ও স্ক্যাল্পের জন্য একদমই হার্শ হয় না। চুল ও স্ক্যাল্পের ন্যাচারাল অয়েল লেভেলও ঠিক থাকে। তাই কালারড বা কেমিক্যালি ট্রিটেড হেয়ার, রাফ ও ড্যামেজ হেয়ারে রেগুলার ব্যবহারের জন্য মাইল্ড শ্যাম্পু সাজেস্ট করা হয়। রেগুলার সালফেট যুক্ত শ্যাম্পুর ব্যবহার হেয়ার কালার ফেইড করে দিতে পারে। তবে সপ্তাহে অন্তত একদিন হলেও ক্ল্যারিফাইং শ্যাম্পু ব্যবহার করা প্রয়োজন। কারণ ক্ল্যারিফাইং শ্যাম্পু ব্যবহার না করার ফলে দেখা দিতে পারে চুল ও স্ক্যাল্পের বিভিন্ন সমস্যা।
সালফেট যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহারের উপকারিতা
সালফেট যুক্ত শ্যাম্পু (বিশেষত SLES যুক্ত শ্যাম্পু যা SLS থেকে কিছুটা মাইল্ড) খুব সুন্দরভাবে স্ক্যাল্পের অতিরিক্ত তেল/সেবাম বা ময়লাকে অল্প পরিমাণ শ্যাম্পুতেই ক্লিন করতে পারে এবং মাথার ত্বকের বিল্ড আপও রিমুভ করে। যার ফলে চুল ও স্ক্যাল্প ভালোভাবে পরিষ্কার হয় এবং মাথার ত্বকের সুস্থতা বজায় থাকে। সপ্তাহে অন্তত একবার সালফেট যুক্ত শ্যাম্পুর ব্যবহার স্ক্যাল্প ও চুলের বিল্ড আপ ক্লিন করতে খুবই জরুরি। এছাড়াও সিলিকন যুক্ত কন্ডিশনার ব্যবহার করলে অবশ্যই সপ্তাহে অন্তত একদিন সালফেট যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত, কারণ এটা খুব সহজেই সিলিকন ধুয়ে ফেলতে পারে। যার ফলে সিলিকন বিল্ড আপ হয় না, মানে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
এর ক্ষতিকর দিকগুলো কী তাহলে?
১) চোখে লাগলে চোখ কিছুটা জ্বালাপোড়া করা ছাড়া সালফেটের আর তেমন কোনো ক্ষতিকর প্রভাব প্রাণীদেহের উপর পাওয়া যায়নি।
২) সালফেট যুক্ত শ্যাম্পুর অতিরিক্ত ব্যবহার অনেক সময় মাথার ত্বকের ন্যাচারাল অয়েলকেও ধুয়ে ফেলে, আগেই বলেছি। এই ন্যাচারাল অয়েল দূর করে ফেলার কারণেই যাদের ড্রাই স্ক্যাল্প, তারা বেশ সমস্যায় পড়ে যান। তাই অয়েলি, ড্রাই অথবা সেনসিটিভ, স্ক্যাল্প টাইপ যেমনই হোক না কেন, সালফেট যুক্ত শ্যাম্পু বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত না।
৩) চুলের ধরন বুঝে সপ্তাহে এক থেকে দু’বার সালফেট যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা চুলের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং তা চুলকে হেলদি রাখতে এবং স্ক্যাল্পকে অতিরিক্ত প্রোডাক্ট বিল্ড আপ আর ডার্ট থেকে সুরক্ষা প্রদান করতে সক্ষম।
সালফেট যুক্ত শ্যাম্পু নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই!
এদেশের আবহাওয়াতে স্ক্যাল্প বেশি ঘামে। আমাদের দেশে যে পরিমাণ পল্যুশন আর ডার্ট, তাতে ক্ল্যারিফাইং শ্যাম্পুর কোনো বিকল্প নেই। আশা করি এবার বুঝতে পেরেছেন। সালফেট যুক্ত শ্যাম্পু দেখলেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই! বুঝতেই পারলেন, শ্যাম্পুতে সালফেট থাকা মানেই সেটা ক্ষতিকর, এমন ভুল ধারণা রাখা উচিত নয়। অয়েলি হেয়ারের অধিকারীরা তো চিন্তা ছাড়াই এটি ব্যবহার করতে পারবেন। চুল ও স্ক্যাল্পের ধরন বুঝে ক্ল্যারিফাইং শ্যাম্পু ও মাইল্ড শ্যাম্পু আপনার হেয়ার কেয়ার রুটিনে অ্যাড করুন। আর শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনিং স্কিপ করবেন না যেন!
অনলাইনে অথেনটিক বিউটি প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
লিখেছেন- জাফরিন জাহান, শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক