স্কিন কেয়ারের পাশাপাশি এখন আমরা হেয়ার কেয়ার নিয়েও বেশ সচেতন। সাজগোজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে আমরা আপনাদের থেকে চুলের নানান রকম সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন পাই। অনেকেই আছেন যারা হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট সিলেকশন নিয়ে কনফিউসড থাকেন বা বুঝে উঠতে পারছেন না যে চুলের যত্নে কোন কোন প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে। বিউটি রিলেটেড যেকোনো বিষয়ে আপনাদের কনফিউশন ক্লিয়ার করতে এবং স্কিন ও হেয়ার প্রবলেমের সল্যুশন দিতে সাজগোজ সবসময়ই আছে আপনার পাশে। FAQ বেসিক স্কিন কেয়ার এর পর এবার আমরা চলে এসেছি FAQ বেসিক হেয়ার কেয়ার নিয়ে। এই প্রশ্ন-উত্তর পর্ব থেকে হেয়ার কেয়ারের বেসিক কিছু বিষয় আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো। দেরি না করে FAQ বেসিক হেয়ার কেয়ার এপিসোড ১ শুরু করা যাক!
FAQ বেসিক হেয়ার কেয়ার
সাজগোজের ২টি ফেইসবুক পেইজ shop.shajgoj.com এবং shajgoj.com, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব, ইনসাইডার গ্রুপ এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে অনেকেই কমেন্ট বক্স এবং ইনবক্সে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করে থাকেন। সেখান থেকেই বাছাইকৃত কিছু প্রশ্নের ব্যাখ্যাসহ উত্তর আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। এগুলো খুবই কমন প্রবলেম, যেগুলো আমরা রেগুলার লাইফে কম বেশি সবাই কিন্তু ফেইস করে থাকি। চুলের সমস্যার তো কোনো শেষ নেই! তবে সমস্যা যা-ই হোক, এর সল্যুশনও কিন্তু আছে।
প্রশ্ন ১
সাদিয়া তাবাসসুম সাজগোজ ইনসাইডার গ্রুপে জানতে চেয়েছেন- ‘প্রায়ই হেয়ার স্ট্রেইটনার দিয়ে চুল সোজা করি, চুলের জন্য আলাদা করে যত্ন নেওয়া লাগবে কি? এখন চুল কেমন যেন ফ্যাকাসে দেখায়। ‘
উত্তর- চুলে হিট দেওয়ার আগে অবশ্যই আপনাকে হেয়ার প্রোটেক্টর ব্যবহার করতে হবে। উচ্চমাত্রার তাপ সরাসরি চুলে লাগানো হলে চুলের আর্দ্রতা কমে গিয়ে চুল হয়ে যায় শুষ্ক ও প্রাণহীন। কিন্তু হেয়ার প্রোটেক্টর ইউজ করলে চুলের ড্যামেজভাব অনেকটাই কন্ট্রোল করা যাবে। VO5 Heat Protect Serum এবং TRESemmé Keratin Smooth Heat Protection Shine Spray এই দু’টি প্রোডাক্ট আমি নিজে ইউজ করে বেনিফিট পেয়েছি। এগুলো সরাসরি হিট ড্যামেজ থেকে চুলকে রক্ষা করে এবং চুলের ফ্রিজিনেস কাটিয়ে ময়েশ্চার লক করে।
প্রশ্ন ২
তুলি দাস সাজগোজের ফেইসবুক পেইজে কমেন্ট সেকশনে জানতে চেয়েছেন- ‘আমার চুলের আগা ফেটে যাচ্ছে, চুল অনেক রুক্ষ দেখায়, কীভাবে চুলের যত্ন নিবো?’
উত্তর- রেগুলার লাইফের কোন ভুলগুলো চুলের আগা ফাটার জন্য দায়ী, সেটা আগে খুঁজে বের করতে হবে। কিছু বিষয় এর সাথে সরাসরি জড়িত, আমাদেরও বুঝতে হবে যে কোন ভুলটার জন্য এই প্রবলেমটি হচ্ছে!
১) হিট প্রটেকটর স্প্রে ছাড়া স্ট্রেইটনার ইউজ করা হয় কি?
২) শ্যাম্পু করার পর হেয়ার কন্ডিশনার স্কিপ করছেন না তো?
৩) তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল পেচিয়ে বাঁধার অভ্যাস আছে?
৪) হেয়ার ট্রিমিং করা হয় কি?
৫) হেলদি ডায়েট চার্ট ফলো করা হয় তো?
সাধারণত পুষ্টির ঘাটতি, তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল ঘষাঘষি করা, হিট প্রটেকটর স্প্রে ছাড়া চুলে হিট দেওয়া, হার্শ কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু ইউজ করা, চুল ওভারওয়াশ করা, ২/৩ মাস অন্তর আগা না ছাটা, হেয়ার কন্ডিশনার না লাগানো, যত্নের অভাব এই ফ্যাক্টরগুলো চুলের আগা ফাটার জন্য দায়ী। এই অভ্যাসগুলোতে চেঞ্জ এনে বেসিক হেয়ার কেয়ার ফলো করুন, চুলের রুক্ষতা কমে আসবে! আর হ্যাঁ, ফাটা চুল কেটে ফেলা ছাড়া তো কোনো উপায় নেই।
রুক্ষ চুলের যত্ন
- সপ্তাহে ২/৩ দিন অয়েল ম্যাসাজ করুন। নারকেলের তেলের সাথে অলিভ অয়েল বা আমন্ড অয়েল মিক্স করে ম্যাসাজ করুন এবং ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
- মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনিং করতে ভুলবেন না।
- সপ্তাহে ১/২ দিন ঘরোয়া হেয়ার মাস্ক অ্যাপ্লাই করতে পারেন।
ব্রাহ্মী, রিঠা, আমলা, হেনা এগুলো ড্যামেজ চুল ঠিক করতে খুবই ভালো কাজ করে। রাজকন্যা হেয়ার রিপেয়ার মাস্কে এই উপাদানগুলো আছে। এই মাস্কের সাথে টকদই আর অ্যালোভেরা জেল মিক্স করে চুলে লাগিয়ে রাখবেন ৩০ মিনিট। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলবেন।
প্রশ্ন ৩
নুরুন নাহার শপ.সাজগোজ.কম এর ফেইসবুক পেইজে কমেন্ট করে জানতে চেয়েছেন- ‘প্রতিবার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালে একগাদা চুল উঠে আসে! এত হেয়ার ফল হচ্ছে, কোনোভাবেই কন্ট্রোলে আনতে পারছি না। কোন শ্যাম্পু ব্যবহার করবো?’
উত্তর- প্রতিদিন গড়ে ১০০টা চুল পড়া স্বাভাবিক। খুব বেশি হেয়ার ফল হলে আগে বোঝার চেষ্টা করুন যে এর পেছনে কী কী কারণ দায়ী। পর্যাপ্ত পরিমানে প্রোটিন ডায়েটে না রাখলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চুল পড়ে। স্ট্রেস, আনহেলদি লাইফ স্টাইল, রাত জাগা, পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া- এগুলো এক্সেস হেয়ার ফলের অন্যতম কারণ! চুলের গোড়ায় ঘাম জমে থাকলে এবং মাথা অপরিষ্কার রাখলেও চুল পড়া বেড়ে যায়। হেয়ার ফল কন্ট্রোলে কোন শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে সেটা দেখে নিন।
Sebamed Anti-Hair loss Shampoo
Herbal Essences Bee Strong Shampoo
এছাড়াও বিভিন্ন ব্যান্ড্রের হেয়ার ফল কন্ট্রোল শ্যাম্পু আছে। আপনার বাজেট অনুযায়ী যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন। স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখলে ও ঠিকমতো চুলের যত্ন নিলে হেয়ার ফলের সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে।
প্রশ্ন ৪
তাসলিমা জিনাত শপ.সাজগোজ.কম এর ফেইসবুক পেইজে কমেন্ট করে জানতে চেয়েছেন- ‘চুল পেকে যাচ্ছে, পাকা চুল ঢাকতে কী ব্যবহার করবো? হেয়ার কালার করানো ছাড়া আর কোনো উপায় আছে কী? ক্যামিকেল জাতীয় কোনো প্রোডাক্ট চাচ্ছি না।‘
উত্তর- পাকা চুল ঢাকতে হেনা ব্যবহার করতে পারেন। কোনো সাইড ইফেক্ট নেই, প্রাকৃতিকভাবেই পাকা চুলে হালকা লালচে রঙ চলে আসবে। রাজকন্যা হেনা পাউডারের সাথে চায়ের লিকার বা কফি মিক্স করে স্মুথ পেস্ট বানিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন। শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল ভালোভাবে ঢেকে নিন। দুই থেকে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
প্রশ্ন ৫
নীল নয়না সাজগোজ ইনসাইডার গ্রুপে জানতে চেয়েছেন- ‘আমার চুল সামনের দিকে একদম ফাঁকা, চুলের গ্রোথও নেই। কপাল অনেক বেশি চওড়া দেখায়। এখন আমি কী করতে পারি?’
উত্তর- মাথার সামনের অংশে চুল গজাতে নারকেল তেলের সাথে ক্যাস্টর অয়েল ও কয়েক ফোঁটা রোজমেরি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং হেয়ার ফলিকলস উদ্দীপিত হয়। চুলের গ্রোথের জন্য ক্যাস্টর অয়েল খুবই ভালো কাজ করে। রোজমেরি অ্যাসেনশিয়াল অয়েলও চুলের হেলদি গ্রোথ প্রমোট করে স্ক্যাল্পে পুষ্টি যোগায়। অতিরিক্ত চুল পড়লে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আর বড় কপাল ছোট দেখাতে কিছু ট্রিকস ফলো করতে পারেন। সামনের চুলে ব্যাংগস কাট দিতে পারে অথবা সাইডে সিঁথি করে কপালে কিছু চুল দিয়ে রাখতে পারেন।
তাহলে আজ আমরা চুলের যত্ন নিয়ে বেশ কিছু তথ্য জানতে পারলাম। আশা করছি, FAQ বেসিক হেয়ার কেয়ার এর প্রথম এপিসোডের প্রশ্ন-উত্তর পর্ব থেকে আপনারা কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন। খুব তাড়াতাড়ি দ্বিতীয় এপিসোড নিয়ে চলে আসবো, তাই আমাদের সাথেই থাকুন। অথেনটিক হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট পেয়ে যাবেন শপ.সাজগোজ.কম এ। অনলাইনে অর্ডার করে ঘরে বসেই প্রোডাক্ট হাতে পেয়ে যাবেন। তাছাড়া সাজগোজের দুইটা আউটলেট আছে, যেটা যমুনা ফিউচার পার্ক আর সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত। তাহলে আজ এই পর্যন্তই।
ছবি- সাজগোজ