আমরা সবাই আমাদের স্কিন নিয়ে বেশ কনসার্নড থাকি, তাই না? স্কিনে কোন প্রবলেম হলে তার সল্যুশন পাওয়ার জন্য মরিয়া হই, এছাড়াও আমাদের স্কিন টাইপ অনুযায়ী প্রোডাক্ট সাজেশন খুঁজে থাকি। কিন্তু সঠিক সাজেশনের অভাবে অনেক সময় প্রবলেমগুলোর সঠিক সল্যুশন পাওয়া কষ্টদায়ক হয়ে যায়। এছাড়াও স্কিন কেয়ার নিয়ে আপনাদের মনে প্রায়ই টুকটাক প্রশ্ন উঁকি দেয়। যার প্রতিফলন আমরা সাজগোজের ইনবক্স এবং বিভিন্ন পোস্টের কমেন্ট সেকশনে পাই। আপনাদের সেই সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়ার জন্য সাজগোজ সবসময়ই প্রস্তুত। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের সাজগোজ FAQ বেসিক স্কিন কেয়ার এপিসোড-৩ তে আরও কিছু প্রশ্নের উত্তর থাকছে। এই প্রশ্ন-উত্তর পর্ব থেকে স্কিন কেয়ারের বেসিক কিছু বিষয় আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো।
FAQ বেসিক স্কিন কেয়ার
সাজগোজের ২টি ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজ আছে, একটি হচ্ছে shop.shajgoj.com, আরেকটি হচ্ছে shajgoj.com। এছাড়াও ইন্সটাগ্রাম এবং ইউটিউবেও আছে সরব উপস্থিতি। সাজগোজ যাতে আপনাদের আরও কাছাকাছি আসতে পারে সেজন্য ফেইসবুকে একটি গ্রুপ আছে, সাজগোজ ইনসাইডার নামে। এসকল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে আমরা প্রতিনিয়তই আপনাদের অনেক প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা পাই। সেখান থেকেই বাছাইকৃত কিছু প্রশ্নের ব্যাখ্যাসহ উত্তর আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। পূর্বের দুইটি এপিসোডেও আমরা স্কিন কেয়ারের বেসিক কিছু বিষয় সম্পর্কে জেনেছি। আপনাদের সুবিধার্থে লিংকটি শেয়ার করছি- FAQ বেসিক স্কিন কেয়ার।
চলুন দেরি না করে শুরু করে দেয়া যাক আজকের এপিসোডটি!
FAQ বেসিক স্কিন কেয়ার এপিসোড-৩
প্রশ্ন ১
দ্বিপিতা নূর আপু জানতে চেয়েছেন, “আমার কপালে প্রচুর বাম্পস হয়, কী করলে রিমুভ হবে বা প্রকোপ কমবে? বয়স ১৫ বছর। স্কিন টাইপ- কম্বিনেশন টু অয়েলি।” সাজগোজ ইনসাইডার গ্রুপ থেকে সংগৃহীত।
উত্তরঃ কপালে বাম্পস হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে মাথায় খুশকি হওয়া। তাই মাথায় যাতে খুশকি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এছাড়াও আপনি যখন চুলে তেল দিবেন; খেয়াল রাখবেন যে কপালে যেন তেল ছড়িয়ে না পড়ে। আরও কিছু করণীয় হচ্ছে-
১/ ফেইস ক্লিন করার পর ফেইসে থাকা পানি মুছতে চাইলে টিস্যু কিংবা আলাদা তোয়ালে ব্যবহার করুন।
২/ বালিশের কাভার ২-৩ দিন পর পর চেইঞ্জ করবেন।
৩/ পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করবেন এবং সবুজ সবজি, ভিটামিন সি জাতীয় ফল খাবেন। কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমাবেন।
৪/ পোরস ক্লিন রাখার জন্য সপ্তাহে ১-২ দিন স্ক্রাব ব্যবহার করুন। এক্ষেত্রে, লাইলাক ব্রাইটেনিং স্ক্রাব (Lilac Brightening Scrub) সাজেস্ট করবো। কারণ এই স্ক্রাবের দানাগুলো খুবই ছোট তাই স্কিনে মোটেও হার্শ ফিল হয়না। কোনধরনের অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হয়না!
৫/ রাতে ঘুমানোর পূর্বে আপনার স্কিনে স্যুইটেবল ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করে নিন। স্কিন যথেষ্ট ময়েশ্চারাইজড থাকলে; অতিরিক্ত সিবাম প্রোডাকশন হবে না ফলে, স্কিনের অয়েলিনেস কমবে এছাড়াও পোরস ক্লগ হয়ে বাম্পস হওয়ার প্রকোপ কমে যাবে অনেকটাই!
৬/ টি ট্রি অয়েলে অ্যালার্জি না থাকলে একটি কটন প্যাডে ৩-৪ ড্রপ টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল নিয়ে কপালে ড্যাব করে অ্যাপ্লাই করবেন।
প্রশ্ন ২
মালেকা আক্তার আপু জানতে চেয়েছন “সানস্ক্রিন লাগানোর পর ময়েশ্চারাইজার লাগাবো? আর কতটুক পরিমাণে সানস্ক্রিন লাগাবো? একবার লাগালেই চলবে? ” সাজগোজ ইউটিউব চ্যানেল থেকে সংগৃহীত।
উত্তরঃ সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করলেও ময়েশ্চারাইজার অবশ্যই অ্যাপ্লাই করতে হবে। তবে ময়েশ্চারাইজার সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাইয়ের পূর্বে অ্যাপ্লাই করতে হবে। পরে নয়! সানস্ক্রিন আপনাকে সানবার্ন এবং সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে প্রোটেকশন দিবে। অপরদিকে, ময়েশ্চারাইজার আপনার স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড করতে হেল্প করে।
সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাইয়ের নিয়মাবলি-
১/ বাইরে বের হওয়া কিংবা চুলার কাছে যাওয়ার ৩০ মিনিট পূর্বে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করে নিন। এতে করে সানস্ক্রিন আপনার ত্বকে পরিপূর্ণভাবে প্রোটেক্টিভ লেয়ার তৈরি করার সুযোগ পাবে।
২/ হাতের তালুতে সানস্ক্রিন নিয়ে মুখে ঘষে ঘষে অ্যাপ্লাই করবেন না। আঙ্গুলের ডগায় সানস্ক্রিন নিয়ে ফেইসে ছোট ছোট ডট ক্রিয়েট করে অ্যাপ্লাই করে আঙ্গুল দিয়ে চেপে চেপে নিবেন। এতে করে হোয়াইট কাস্ট দিবে না।
৩/ আপনার পুরো ফেইস কভার করার জন্য যতটুকু সানস্ক্রিন প্রয়োজন ঠিক ততটুক পরিমাণে সানস্ক্রিন নিবেন। সাধারণত, আঙ্গুলের সেকেন্ড জয়েন্ট থেকে আগা পর্যন্ত সানস্ক্রিন নিলেই পুরো ফেইস কভার হয়ে যায়।
৪/ সানস্ক্রিন অবশ্যই রি-অ্যাপ্লাই করবেন। কারণ; গরমে ত্বক প্রচুর ঘামে এতে করে পূর্বে অ্যাপ্লাই করা সানস্ক্রিন প্রোপার প্রোটেকশন দিতে পারে না। তাই রি-অ্যাপ্লাই অবশ্যই করতে হবে। আপনি কত সময় পর পর সানস্ক্রিন রি-অ্যাপ্লাই করবেন তা নির্ভর করবে সানস্ক্রিনের SPF এর উপর। যখন কেউ এসপিএফ (SPF) ১৫ এর একটি সানস্ক্রিন ইউজ করে সেক্ষত্রে সে এসপিএফ (SPF) ১৫ কে ১০ দিয়ে গুণ করবে। গুণ করে যত মিনিট পাওয়া যাবে, সে ততো সময়ের জন্যে সূর্যরশ্মি থেকে প্রোটেকটেড থাকবে। ফলাফল আসে ১৫০ মিনিট। অর্থাৎ ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের জন্যে আপনি নিশ্চিন্ত! ঠিক এভাবেই যে এসপিএফ (SPF) ব্যবহার করছেন তাকে ১০ দিয়ে গুণ দিলেই পেয়ে যাবেন আপনি কতক্ষণ ইউভি বি সূর্যরশ্মি থেকে সুরক্ষিত আছেন।
৫/ সারাদিন পর বাসায় এসে অবশ্যই ডাবল ক্লেনজিং করে নিবেন।
প্রশ্ন ৩
তানজিন নিপু আপু জানতে চেয়েছেন, “অয়েলি স্কিনের জন্য ভালো টোনার কোনটি হবে? বয়স ২১ বছর।” সাজগোজ ইনসাইডার গ্রুপ থেকে সংগৃহীত।
উত্তরঃ টোনার স্কিনের অয়েলি ভাব দূর করে স্কিনকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এছাড়াও স্কিনের পিএইচ ব্যালেন্স করে। অয়েলি স্কিনের জন্য টোনার কিনতে গেলে যেসকল বিষয় খেয়াল করবেন সেটি হল টোনারটি যেন অ্যালকোহল ফ্রি ও প্যারাবেন ফ্রি হয়।
অয়েলি স্কিনের জন্য আমি যে ৫টি টোনার সাজেস্ট করব-
১/ সিম্পল কাইন্ড টু স্কিন সুদিং ফেসিয়াল টোনার (Simple Kind To Skin Soothing Facial Toner)
২/ অ্যাকওয়েল লিকোরিস পিএইচ ব্যালেন্সিং ক্লেনজিং টোনার (Acwell Licorice pH Balancing Cleansing Toner)
৩/ রাজকন্যা অল পারপাস টোনার (Rajkonna All Purpose Toner)
৪/ দা বডিশপ সি উইড অয়েল ব্যালেন্সিং টোনার (The Body Shop Seaweed Oil Balancing Toner)
৫/ বায়োটিক বায়ো কিউকাম্বার পোর টাইটেনিং টোনার উইথ হিমালায়ান ওয়াটারস ফর নরমাল টু অয়েলি স্কিন (Biotique Bio Cucumber Pore Tightening Toner With Himalayan Waters For Normal To Oily Skin)
আপনার বাজেট অনুযায়ী যেকোনো একটি নিয়ে নিবেন।
প্রশ্ন ৪
নাজনিন আরা আপু জানতে চেয়েছন “রেটিনয়েড ইউজ করলে সানস্ক্রিন ইউজ না করলে কি স্কিনের ক্ষতি হবে? বাড়ির বাইরে খুব একটা যাওয়া হয় না।” সাজগোজ.কম ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত।
উত্তরঃ অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। রেটিনয়েড আপনার স্কিনের কোলাজেন প্রোডাকশন কমিয়ে স্কিনের রিংকেল ও ফাইন লাইন কমিয়ে আনে। এছাড়াও স্কিনে রাফ প্যাচেস ও দাগ ছোপ এবং ডালনেস দূর করে স্কিনকে করে তোলে ব্রাইট ও হেলদি।
তবে, এই ইনগ্রেডিয়েন্টটি আপনার স্কিনকে সূর্যের আলো ও তাপের প্রতি সংবেদনশীল করে তোলে। যেহেতু, দিনের বেলা সূর্যের আলো আপনার বাসায় প্রবেশ করে এবং আপনি যদি রান্নার কাজে চুলার কাছে যান। তাহলে, সানস্ক্রিন ব্যবহার না করলে, আপনার স্কিন বার্ন হয়ে কালো হয়ে যেতে পারে। তাই বাইরে খুব একটা বের না হলেও আপনাকে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
প্রশ্ন ৫
জিনিয়া রহমান আপু জানতে চেয়েছেন “আমার অয়েলি স্কিন মাঝে মাঝে কয়েকটা একনে দেখা যায়। তাই আমার স্কিন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার এবং সিরাম সাজেস্ট করুন যাতে অয়েল কন্ট্রোল হয়।” সাজগোজ.কম ফেইসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত।
উত্তরঃ অয়েলি একনে প্রন স্কিনের জন্য ময়েশ্চারাইজার কিনতে গেলে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যে, ময়েশ্চারাইজারটির টেক্সচার যেন ঘন না হয়, লাইটওয়েট হয় এবং জেল বেইজড হলে খুবই ভালো হয় ।
অয়েলি একনে প্রন স্কিনের জন্য ময়েশ্চারাইজারগুলো সাজেস্ট করব সেগুলো হচ্ছে-
১/ লাইলাক ব্রাইটেনিং ময়েশ্চারাইজার (Lilac Brightening Moisturiser)
২/ পন্ডস সুপার লাইট জেল ময়েশ্চারাইজার (Pond’s Super Light Gel Moisturiser)
৩/ নিউট্রোজেনা হাইড্রো বুস্ট ওয়াটার জেল (Neutrogena Hydro Boost Water Gel)
৪/ সিম্পল হাইড্রেটিং লাইট ময়েশ্চারাইজার (Simple Kind to Skin Hydrating Light Moisturiser)
আপনার স্কিনের অয়েল কন্ট্রোলের জন্য নিচের ফেইস সিরাম গুলো ব্যবহার করতে পারেন-
১/ লাইলাক নিয়াসিনামাইড সিরাম (Lilac Niacinamide Serum 5%)
২/ তিয়াম- ভিটা বি থ্রি সোর্স (TIA’M – Vita B3 Source)
৩/ জায়ান ও মায়জা টি ট্রি অ্যান্ড স্যালিসাইলিক এসিড ফেইস সিরাম (Zayn & Myza Tea Tree & Salicylic Acid Face Serum)
আপনি আপনার বাজেট অনুযায়ী যেকোনোটি বেছে নিতে পারবেন।
স্কিন রিলেটেড যেকোনো প্রবলেমের সল্যুশন দিতে সাজগোজ আপনার পাশে আছে সবসময়। নেক্সট এপিসোডে আমরা আরও কিছু প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে চলে আসবো। সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ আছে, যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত। ঘরে বসে অনলাইনেও অর্ডার করে নিতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে। সবাই ভালো থাকবেন।
ছবি- সাজগোজ