কিছু দিন বাদেই আসছে শীত। এ সময়টায় লক্ষণীয় স্বাস্থ্য সমস্যা গুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা গুলোই। শীতে অনেক অসুখের মধ্যে অ্যাজমা বেশি হয়। এটি একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ, তবে একেবারে দূর করা সম্ভব নয়। অ্যাজমা রোগীর শ্বাসতন্ত্র বেশি সংবেদনশীল হয়ে থাকে। ফলে কোন উত্তেজক পদার্থ যেমন ঠান্ডা আবহাওয়া, ধুলোবালি, ঘরের ঝুল, ফুলের রেণু, শীতের ভারী কাপড় ও কার্পেটে থাকা জীবাণু ইত্যাদির প্রভাবে হঠাৎ শ্বাসনালী সংবেদনশীলতার কারণে সংকুচিত হয়ে পড়ে।
অ্যাজমার লক্ষণ সমূহঃ
অ্যাজমা শ্বাসনালীর প্রদাহজনিত রোগ। প্রদাহের ফলে সংবেদনশীলতা বেড়ে নানা উপসর্গ দেখা দেয়।
উপসর্গঃ
– শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
– বুকের ভেতর বাঁশির মতো আওয়াজ হওয়া
– বুক ভরে শ্বাস নিতে না পারা
– দম বন্ধ ভাব
– ঘন ঘন কাশিতে আক্রান্ত হওয়া
– অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা
অ্যাজমার কারণ গুলো কী?
– ধুলোবালি
– ফুলের রেণু
– পশু-পাখির লোম
– ধূমপান
– দুশ্চিন্তা
– কার্পেটে জমে থাকা পোকামাকড়
– ঠাণ্ডা আবহাওয়া
– কিছু খাবার দাবার যেমন বেগুন, পুঁইশাক, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ
– কিছু ব্যথানাশক ওষুধ
যাদের আগে থেকেই অ্যাজমা বা হাঁপানি অথবা কাশির সমস্যা আছে, শীত এলে তাদের এ কষ্টগুলো বেড়ে যায় অনেকখানি। এ ধরনের সমস্যা থাকলে কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে। ঠাণ্ডা পানি, ঠাণ্ডা খাবার পরিহার করা, বাইরে বের হওয়ার সময় স্কার্ফ বা মাফলার দিয়ে মাথা, কান ও নাক ঢেকে রাখা, হাতে ও পায়ে মোজা ব্যবহার করা প্রয়োজন। কোনো খাবারে যদি অ্যালার্জি থাকে, তবে সেটি এড়িয়ে চলতে হবে। বাড়িতে বা কর্মক্ষেত্রে আপনার ঘরটিকে যতটা সম্ভব উষ্ণ রাখতে চেষ্টা করুন। এছাড়া যদি ইনহেলারে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন, তবে সেটি সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না। ইনহেলার ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে। সঠিক নিয়মে ব্যবহার না করলে কাজে দেবে না। আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে ইনহেলার ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জেনে নিন। স্টেরয়েড সমৃদ্ধ ইনহেলার ব্যবহারের পর অবশ্যই কুলি করুন, নাহলে মুখে ঘা হতে পারে। ইনহেলারের পাশাপাশি মন্টিলুকাষ্ট জাতীয় ওষুধ অ্যাজমায় উপকারী। অ্যালার্জি ও শুকনো কাশির জন্য সাথে রাখতে পারেন অ্যান্টি-হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ (ফেক্সো, ফেনেডিন, ওরাডিন নামে পাওয়া যায়)। তবে কোন ওষুধই একজন রেজিষ্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়। অনেকেই শ্বাসকষ্টের জন্য ওষুধের দোকান থেকে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দীর্ঘদিন খেয়ে থাকেন। যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
বিশেষ করে শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। কারণ তাদের ইমিউনিটি আমাদের বড়দের তুলনায় কম। যেসব শিশু মায়ের বুকের দুধ খাচ্ছে, তাদের মায়েদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন যাতে তাদের ঠান্ডা না লাগে। শিশুকে পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরিধান করানো, গরম পরিবেশে রাখা ও ধুলোবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। বড়দের জন্য ব্যবহৃত ইনহেলার অনেক শিশুই টানতে পারে না। শিশুদের জন্য বিশেষ ভাবে প্রস্তুতকৃত ইনহেলার বা স্পেসার রয়েছে। অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট হলে শিশুকে পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে নিয়ে নেবুলাইজেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
এই শীতে অ্যাজমা এবং শাসকষ্ট রোগীদের নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা, নতুবা যেকোনো মুহুর্তে তীব্র এ্যাটাক হতে পারে। পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরিধান করুন, কুয়াশা থেকে দূরে থাকুন, কুয়াশা বা ধুলোবালির মধ্যে বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করুন। যারা ইনহেলার ব্যবহার করেন, সব সময় সাথে রাখুন। তারপরেও সমস্যা হলে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
লিখেছেনঃ মৌসুমী তানিয়া
ছবিঃ সিম্পলউইকিপিডিয়া.অর্গ