রূপ সচেতন নারী রা কম বেশি সবাই প্রতিদিন ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে, নিয়ম মাফিক ত্বকের ধরন অনুযায়ী ক্রিম লাগাতে ভুলেন না। কিন্তু মাঝখানে তারা একটি কাজ করতে ভুলে যায়, সেটা হলো মুখের টোনিং করা। তাছাড়া টোনার নির্বাচনেও রূপ সচেতন নারীদের মধ্যে দ্বিধা কাজ করে। বাজারে দুই ধরনের টোনার পাওয়া যায়।
০১। নরমাল টোনার ( খুব মাইল্ড হয় এই টোনার)
০২। এস্ট্রিঞ্জেন্ট টোনার ( এলকোহল দিয়ে তৈরি)
আসুন জেনে নিই এই দুই ধরনের টোনার কোন ত্বকে সুট করবে, এর কার্যকারিতা এবং ব্যাবহার বিধি।
অনেকেই জিজ্ঞাস করে, মুখে টোনার ব্যবহার করার উপকারিতা কি? মুখে টোনার ব্যবহার করার প্রধান দুটা উপকারিতা হলো
০১। ফেস ওয়াশ দিয়ে ভালো করে মুখ ধোবার পরেও, অনেক সময় মুখে মেক-আপ, ময়লা থেকে যায়। মুখ কে ডিপ ক্লিন করে টোনার। এতে করে লোমকূপে ময়লা জমতে পারে না এবং ব্রণ, যেকোনো ধরনের ত্বকের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। টোনার তুলার প্যাডে নিয়ে পুরো মুখে লাগাবেন। টোনার দেয়া শেষে নিজেই খেয়াল করবেন তুলার প্যাডে জমে থাকা অবশিষ্ট ময়লা।
০২। মুখের পোর সাইজ (লোমকূপ) টাইট করে।
মোটকথা প্রতিদিন টোনার লাগালে, নিজেই খেয়াল করবেন সাধারণের চেয়ে ২ গুণ ত্বক উজ্জ্বল হয়েছে এবং ব্রেক আউট থেকে মুক্ত থাকবেন।
এস্ট্রিঞ্জেন্ট টোনার বনাম নরমাল টনারঃ
এস্ট্রিঞ্জেন্ট টোনার এবং নরমাল টোনার এর মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। দুই টোনার এর এক কাজ, ত্বকের ডিপ ক্লিন করা। কিন্তু একটাই পার্থক্য যে এস্ট্রিঞ্জেন্ট টোনার এর মধ্যে অ্যালকোহল আছে, যেটা তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অনেক কার্যকরী।
নরমাল টোনার এর কাজঃ
০১। নরমাল টোনার অনেক মাইল্ড হয়।
০২। নরমাল টোনার ব্যবহার করার পর ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় না। তাই এই টোনার শুষ্ক ত্বকের অধিকারী অথবা যাদের মুখে বলিরেখা র প্রকোপ বেশি তাদের জন্য সব চেয়ে ভালো।
০৩। ত্বকের অবশিষ্ট ময়লা, মেক-আপ, ক্লিঞ্জার পরিষ্কার করে ফেলে।
০৪। নরমাল টোনার সকল ত্বকে ব্যবহার করা যায়।
০৫। মিশ্র ত্বকের জন্য এই টোনার অনেক ভালো। মিশ্র ত্বকের তৈলাক্ত স্থানের লোমকূপের ময়লা পরিষ্কার করে ত্বক কে যেকোনো ত্বকের চর্ম রোগ থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের শুষ্ক স্থান কে হাইড্রেট করে।
এস্ট্রিঞ্জেন্ট টোনার এর কাজঃ
০১। এটা নরমাল টোনার এর থেকে অনেক বেশি কার্যকরী।
০২। এতে যেহেতু অ্যালকোহল থাকে, তাই এই টোনার আন্টি-বেক্টেরিয়াল উপাদান আছে।
০৩। এটা ত্বকের অতিরিক্ত তেলের ব্যাল্যান্স করে। তাই এটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অনেক ভালো।
০৪। এতে যেহেতু অ্যালকোহল থাকে, তাই শুষ্ক ত্বকের মেয়েদের এস্ট্রিঞ্জেন্ট টোনার ব্যবহার না করাই ভালো। অ্যালকোহল ত্বক কে আরও শুষ্ক করে ফেলে।
০৫। এস্ট্রিঞ্জেন্ট টোনারে অনেক বেশি কেমিকেল থাকে, তার মধ্যে salicylic acid ও আছে। এই টোনার যেকোনো ব্রেক আউট, ব্ল্যাক হেডস, মুখের ব্রণ দূর করে। ব্রণ যুক্ত মুখে এস্ট্রিঞ্জেন্ট টোনার লাগালে একটু জ্বলে।
০৬। এস্ট্রিঞ্জেন্ট টোনার যেকোনো কাঁটা জায়গায়, অথবা শরীরে কোন জায়গায় ফোঁড়া হলে সেই জায়গায় লাগালে তাড়াতাড়ি উপকার পাওয়া যায়।
তাছাড়া এই দুই ধরনের টোনার ত্বকের PH এর সমতা রাখে এবং ত্বকের লোমকূপ কে টাইট করে। মুখের বলিরেখা দূর করতে সহায়তা করে।
কোন ত্বকের জন্য কোন টোনার ?
সাধারণত মানুষের ত্বক ৪ রকমের হয়। তৈলাক্ত, নরমাল, শুষ্ক এবং সেন্সেটিভ। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অবশ্যই এস্ট্রিঞ্জেন্ট টোনার ভালো। এস্ট্রিঞ্জেন্ট টোনার ত্বকের অতিরিক্ত তেলের ব্যালেন্স রাখবে। মুখের লোমকূপ ছোট করবে। যেহেতু এস্ট্রিঞ্জেন্ট টোনার এর মধ্যে retinols, glycolics, or benzoyl peroxide উপাদান সমূহ থাকে, তাই এস্ট্রিঞ্জেন্ট টোনার শুষ্ক এবং সেন্সেটিভ ত্বকে না ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা এসব উপাদান ত্বক কে আরও শুষ্ক করে দেয়।
টোনার ব্যবহার এর আগে কিছু জিনিস মনে রাখা প্রয়োজনঃ
০১। মুখে টোনার ব্যবহার করার আগে অবশ্যই হাত ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। কেননা আমরা সবাই জানি প্রায় সব সংক্রামক জীবাণু হাত দিয়ে ত্বকে যায়। তাছাড়া টোনার আমরা মুখের ডিপ ক্লিন এর জন্য ব্যবহার করি। তাই পরিষ্কার হাত দিয়েই টোনার ব্যবহার করতে হবে।
০২। টোনার তুলার প্যাড দিয়ে পুরো মুখে দিতে পারেন। বাজারে কিনতে পাওয়া যায় এসব প্যাড দাম ৫০-২০০ টাকার ভেতরে পাবেন।
০৩। মনে রাখতে হবে টোনার অবশ্যই মুখ ধোবার পর এবং মুখ ধোয়ার আগে দিতে হবে। টোনার দেয়ার পর মুখে ক্রিম না দিলে ত্বকে শুষ্ক ভাব হতে পারে। তাছাড়া টোনার দেয়ার পর মুখে ক্রিম দিলে ত্বকের ফারমিং এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
বাজারে পাওয়া যায় এমন কিছু টোনার এর নামঃ
০১। Cucumber Toner ( দাম ৩০০-৫০০)
০২। Clean&Clear Toner (দাম ৪৫০-৯০০)
০৩। Ayur toner (দাম ১৫০-৩০০)
তাছাড়া Clinique ব্র্যান্ড এর টোনার অনেক ভালো। দাম ৩০০০ এর মত।
মোটকথা মুখ পরিষ্কার, ক্রিম লাগানো যেমন গুরুত্বপূর্ণ , ঠিক তেমনি মুখে টোনার ব্যবহার করা সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন ত্বকে দুই বেলা ৩ স্টেপ উপায়ে রূপচর্চা করে, ১ মাসের মধ্যে ত্বকে পজিটিভ পরিবর্তন লক্ষ্য করুন। আশা করি পোস্ট টি ভালো লাগবে। ভালো থাকুন সবাই।
লিখেছেনঃ তাপসী
ছবিঃ ফেমিনিয়া.কম