চুলের যত্ন নেওয়ার কথা বলতে গেলে আমি প্রথমেই বলবো চুলে তেল দেয়ার কথা। হ্যাঁ, এটা প্রথমেই বলার কারণ হলো অয়েল ম্যাসাজ করার ফলে চুল পরিপূর্ণ পুষ্টি পায় এবং চুল হয় কোমল। আমরা চুলের যে ট্রিটমেন্ট-ই করাই না কেন, অয়েল ম্যাসাজ কিন্তু অপরিহার্য। যাই হোক, চুলের যত্নে তেলের ভূমিকা তো আপনারা সবাই জানেন। কিন্তু অনেকেই অভিযোগ করেন যে তেল দেওয়ার পর চুল পড়া বেড়ে যাচ্ছে! কেন এমনটা হয়? আজকে জানাবো, চুলে তেল দেওয়ার সময় আমরা যে কমন ভুলগুলো করে থাকি এবং যার জন্য চুলের উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হয়ে যায় সে বিষয়ে। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক এমন ৫টি বিষয় যা অয়েল ম্যাসাজের সময় করা উচিত নয়।
চুলে তেল দেওয়ার সময় যে ভুল করবেন না
১. তেল অতিরিক্ত গরম করা
হালকা গরম তেল চুলের জন্যে উপকারী এটা ঠিক, কিন্তু অয়েল ম্যাসাজ করার আগে সেই তেল সরাসরি চুলার উপর বসিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। এতে তেলের গুণাগুণ পুরোপুরিভাবে বজায় থাকে না। বিশেষ করে কোল্ড প্রেসড কোকোনাট অয়েল বয়েল করা ঠিক না, এতে সেই তেলের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। আপনি চাইলে একটি বাটিতে তেল নিয়ে সেটি গরম পানির উপর বসিয়ে গরম করে নিতে পারেন অথবা মাইক্রোওয়েভ ওভেনে মাত্র ২০ সেকেন্ড এর মতো রেখে গরম করে নিতে পারেন। এতে তেল কুসুম গরম হয়ে যাবে আর তেলের পুষ্টিগুণও পুরোপুরি বজায় থাকবে।
২. প্রেশার দিয়ে ম্যাসাজ করা
স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করলে ব্লাড সার্কুলেশন ইম্প্রুভ হয় এবং এটি স্ক্যাল্প ও চুলের জন্য উপকারী। এটি চুলের বৃদ্ধি তরান্বিত করে। কিন্তু তেল দেওয়ার সময় আমরা অনেকেই জোরে জোরে ম্যাসাজ করে ফেলি যা ঠিক নয়। এতে চুলে জট লাগার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। স্ক্যাল্পে প্রেশার পড়লে চুল পড়ার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। হেয়ার ফলিকলস ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে, চুলের গোড়া নরম হয়ে যায় জোরে জোরে ম্যাসেজ করার ফলে। তাই তেল দেওয়ার সময় আলতো হাতে ম্যাসাজ করা উচিত।
৩. চুল না আঁচড়ে তেল দেওয়া
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, চুলে তেল দেওয়ার আগে আমরা চুল আঁচড়ে নেই না। জট লাগা চুল নিয়েই আমরা তেল দিতে বসে যাই এবং তেল দেওয়া শেষে একবারে আঁচড়ানোর কথা ভাবি। এভাবে তেল দেওয়ার ফলে জট লাগানো বা জড়ানো চুলে আরো বেশি করে প্যাচ লেগে যায় এবং তেল দেওয়ার পরে বেশি পরিমাণে চুল পড়তে দেখা যায়। এটা করা কিন্তু মোটেও ঠিক নয়!
৪. খুব টাইট করে চুল বাধা
আমরা অনেকে এই কাজটা করি, দেখা যায় তেল দেওয়ার পর চুল আঁচড়ে খুব টাইট করে বেধে রাখি বা উঁচু করে চুল বেধে ঘুমাতে যাই যা একদমই ঠিক নয়। অতিরিক্ত টাইট করে চুল বাধার ফলে চুলের গোড়া খুব সহজেই নরম হয়ে যায় এবং হেয়ার ফল ও হেয়ার ব্রেকেজের প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই অয়েল ম্যাসাজ করার পর অতিরিক্ত টাইট করে চুল বাধা ঠিক নয়। লুজ ব্রেইড বা বান করতে পারেন।
৫. লং টাইম চুলে তেল দিয়ে রাখা
চুলের জন্য তেল অপরিহার্য এটা যেমন ঠিক, তেমনি চুলে অতিরিক্ত সময় ধরে তেল দিয়ে রাখা কিন্তু চুলের জন্য ক্ষতিকর। হ্যাঁ, ঠিকই বলছি, সপ্তাহে ২/৩ বারের বেশি তেল দেওয়ার প্রয়োজন নেই। লং টাইম হেয়ারে অয়েল থাকলে তা স্ক্যাল্পের পোরস ক্লগড করে দেয়। তেল দিয়ে ১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলাই বেটার। চুলে অতিরিক্ত তেল দেওয়ার ফলে শ্যাম্পুও বেশি দরকার হয়, যার ফলে ওভার ওয়াশ করতে হয়। মাইল্ড শ্যাম্পুগুলোতে এই এক্সেস অয়েল ক্লিন হতে চায় না। আর হার্শ শ্যাম্পু ডেইলি ইউজের ফলে চুল তার স্বাভাবিক ময়েশ্চার ও বাউন্সিনেস হারিয়ে ফেলে। এছাড়াও অতিরিক্ত তৈলাক্ত চুলে ধুলাবালি দ্রুত জমে, তাই চুলের ক্ষতিও হয় বেশি। এই জন্য আমাদের উচিত পরিমিত পরিমাণে তেল ও শ্যাম্পু ইউজ করা। এতে চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য বজায় থাকবে।
উপরে উল্লেখিত ভুলগুলো আমরা কম বেশি সবাই এতদিন করে এসেছি বা আসছি। তাই আজ থেকেই ভুলগুলো শুধরে ফেলুন আর যত্ন নিন আপনার চুলের। খুব বেশি কিছু না, সপ্তাহে ২/৩ দিন তেল ম্যাসাজ করুন তারপর ১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করুন। যারা অভিযোগ করেন যে অয়েলিং চুল পড়া বাড়িয়ে দেয়, তারা আশা করি আজ ফ্যাক্টগুলো বুঝতে পেরেছেন! আপনি চাইলে আপনার পছন্দমতো হেয়ার অয়েল কিনতে পারেন অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে। সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, ইস্টার্ন মল্লিকা, বসুন্ধরা সিটি, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), সীমান্ত সম্ভার, চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ