আজ যে প্রোডাক্ট নিয়ে কথা বলব তার সাথে আমার সম্পর্ক প্রায় ৮-৯ বছরের পুরনো। আমার জীবনে প্রথম ব্যবহার করা টোনার এটি। একচুয়ালি টোনার নয়… অ্যাসট্রিনজেন্ট। মানে, অনেক হাই অ্যালকোহল যুক্ত শক্তিশালী টোনার যা ত্বকে ক্লিঞ্জিং-এর পরে রয়ে যাওয়া ময়লা দূর করে এবং সেবাম/ত্বকের তেলের প্রডাকশন কমায়।
[picture]
অ্যাসট্রিনজেন্টের সংজ্ঞা জানার পর পরই আমি এই প্রোডাক্টটি প্রথম ট্রাই করি। কারণ মনে হয়েছিল, আমার তৈলাক্ত এবং রাফ ত্বকের জন্য বোধহয় এটা ভালই হবে। এবং আমার স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট সম্পর্কে জ্ঞান এবং স্কিনকেয়ারের পেছনে invest করার ইচ্ছা দুটোই কম থাকার কারণে আমি এই প্রোডাক্টটি বেশ কয়েক বছর একটানা ব্যবহার করি। আর আজ আমার সেই অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন:
আয়ুর বলে- তাদের এই প্রোডাক্ট সব ধরনের স্কিনের জন্য সুইটেবল। স্পেসালি প্রব্লেমেটিক স্কিনকে টার্গেট করেই প্রধানত তারা এই প্রোডাক্ট বাজারজাত করে। সাথে সাথে খুবই হাই অ্যালকোহল থাকার কারণে এতে আছে হাল্কা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলি যা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূরে রাখতে সাহায্য করে বলে আয়ুরের দাবি।
দাম এবং প্রাপ্তিস্থান:
এটা বিভিন্ন সাইজে পাওয়া যায়। আমি বেশ কয়েকটা ২০০ মিলির বোতল ব্যবহার করেছি। দাম পড়েছিল প্রায় ২৫০ টাকার মত (প্রতি বোতলে)। আর এই টোনারটি বাংলাদেশে বেশ পপুলার সুতরাং যেকোনো বড় বিশ্বস্ত কস্মেটিকের দোকানে খুব সহজে পেয়ে যাবেন। শুধু নকল থেকে সাবধান থাকবেন।
প্যাকেজিং:
খুব সিম্পল ‘নো ফাস’ বোতলে করে আসে এই টোনার। এতে আছে স্ক্রু ক্যাপ, যাতে করে হাতে অথবা কটন বলে নিয়ে যেকোনো উপায়ে ইজিলি ইউজ করা যায়। কতটুকু প্রোডাক্ট বের হবে এটা আপনি খুবই ইজিলি কন্ট্রোল করতে পারবেন। আপনি টাইট শাট লিডে কতো বড় ফুটো করবেন তার উপরে প্রোডাক্ট কতটুকু বেরবে তা নির্ভর করবে।
আমার অভিজ্ঞতা:
প্রোডাক্টের রঙ মিনটি গ্রিন, বোঝাই যায় আর্টিফিশিয়াল কালার অ্যাড করা। যা এখন আমি স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টে একেবারেই পছন্দ করি না। তার সাথে আছে প্রোডাক্টের ঘ্রান। খুবই চড়া অ্যালকোহলিক ঘ্রান এটার। আমি সিওর যাদের ঘ্রানে মাথা ধরার সমস্যা আছে তাদের এই চড়া গন্ধ পছন্দ হবে না।
আমার স্কিন অয়েলি তাই সাধারনত সামারে আমি প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর এটা হাতের তালুতে নিয়ে মুখে লাগাতাম। কয়েক ফোঁটাই পুরো মুখের জন্য যথেষ্ট। তাই এক বোতলে আমার ৩-৪ মাস অনায়াসে পার হত। কিন্তু সমস্যা হত স্কিনে লাগানোর পড়ে। প্রোডাক্টটা স্কিন টাচ করার সাথে সাথেই আমার ত্বকে একটা তীব্র টিংলিং সেনসেশন হত। অনেকে বলে তাদের মুখে জ্বালাপোড়া করছে। আমার মনে হত আমি যেন কোন পাওয়ারফুল রাবিং আলকোহল মুখে লাগাচ্ছি!! আমার স্কিন এত সেনসিটিভ না বলে এই জ্বালাপোড়ায় আমার ত্বকে তেমন সমস্যা হয় নি কিন্তু যাদের স্কিন অনেক সেনসিটিভ তাদের আমি রিকোয়েস্ট করব যেন তারা এত শক্তিশালী অ্যালকোহলিক প্রোডাক্ট মুখের ত্বকে ইউজ না করেন।
আমি যখন স্কিনকেয়ার সম্পর্কে কম জানতাম তখন এই প্রোডাক্টটি এত অস্বাভাবিক বিহেভ করার পরেও এটা ইউজ করতাম কারণ আমার মনে হত এই হাই অ্যালকোহল কনটেন্ট আমার স্কিনের অয়েল প্রডাকশন কমাচ্ছে! যেমন- গরমে এই টোনার আমার ত্বক প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা তেল মুক্ত রাখত। আর শুরুর দিকে স্কিনে কোন রিয়েকশন দেখিনি। তাই মনের আনন্দে বেশ কয়েক বোতল পর পর ইউজ করেছি।
কিন্তু দেখলাম আমার মুখের স্কিন আস্তে আস্তে ডাল হচ্ছে!! কারণ খুঁজতে গিয়ে বুঝলাম যে, এই টোনার আমার স্কিনের সেবাম প্রোডাকশন জোর করে কমিয়ে স্কিনের ব্যালান্স নষ্ট করে দিচ্ছে। ফলে আমার স্কিন আগের থেকে অনেক ড্রাই হয়ে গেছে যেটা আমার জন্য অকল্পনীয়। সেবামের অভাবে স্কিনের গ্লো কমে স্কিন ডাল এবং আরও রাফ লাগছে!!
আর তাই অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকের হাত থেকে বাঁচতে পেড়ে আমার যা আনন্দ হচ্ছিল সব নিমেষে চলে গেল!! আমি আরও পড়াশোনা করে বুঝলাম অতিরিক্ত অ্যালকোহল স্কিনের ব্যালেন্স নষ্ট করায় কত ভূমিকা রাখে এবং দীর্ঘদিন ব্যবহারে স্কিনের কী কী ক্ষতি হতে পারে। আর তাই এরপর থেকে আমি এই আয়ুর হারবাল অ্যালোভেরা অ্যাসট্রিনজেন্ট আর ব্যবহার করিনি!!
এই প্রোডাক্টের যে দিকগুলো আমার ভালো লেগেছে-
নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন এই প্রোডাক্ট সম্পর্কে আমার ধারনা খুব একটা সুবিধার না!! কিন্তু তারপরেও কিছু ভালো দিকের কথা বলব-
– খুবই অল্প দামে অত্যন্ত সহজলভ্য একটি প্রোডাক্ট এটি!
– পরিমানে অল্প লাগে বিধায় সাশ্রয়ী।
– তৈলাক্ত ত্বকের তেল নিঃসরণ নিশ্চিতভাবে কমাতে পারে।
– গরমের দিনে ত্বকে ঠাণ্ডা একটা ফিলিং তৈরি করে যা অনেকের পছন্দ হবে।
এই প্রোডাক্টের যে দিকগুলো আমার ভালো লাগে নি –
– আয়ুর দাবি করে এটা একটা হারবাল প্রোডাক্ট!! কিন্তু আর্টিফিশিয়াল রঙ, গন্ধ আর অ্যালকোহলের ভীড়ে আমি কোন ‘হারবাল’ কিছু খুজে পেলাম না!!
– প্রোডাক্ট আপ্লাই করার পর অতিরিক্ত অ্যালকোহলের ফলে স্কিনে প্রচুর জ্বালাপোড়া শুরু হয় এবং স্কিন প্রচুর ড্রাই হয়ে যায়!! অনেক দিনের ইউজে আমার অয়েলি স্কিন পর্যন্ত ব্যালেন্স হারিয়ে ড্রাই হয়ে গিয়েছিল!!
– আয়ুর বলে এটা সব স্কিনের জন্য পারফেক্ট! কিন্তু আমি বলব – ভুলেও যাদের স্কিন ড্রাই/নরমাল/ সেনসিটিভ তারা এই প্রোডাক্ট ইউজ করবেন না!! বিশেষ করে সেনসিটিভ স্কিনের জন্য অ্যালকোহল যুক্ত প্রোডাক্ট খুবই খারাপ!
– শুধু অ্যালকোহলের জোরে ত্বকের সেবাম প্রোডাকশন কমানো ছাড়া আর কোন কাজ করে না। এটা ব্যবহার বন্ধ করার পড়ে আমি তাই এটাকে এক বিন্দু মিস করিনি।
খুব অল্প দাম এবং অনেক সহজলভ্য হওয়ার কারণে অনেকেই ডেইলি টোনার হিসেবে আয়ুরকে বেছে নেন। কিন্তু আমার দীর্ঘ ব্যবহারের পরেও আমি এটার এমন কোন ভালো দিক পাইনি, যা এটাকে আমার ‘হলি গ্রেইল’ প্রোডাক্ট বানাবে!! এর চেয়ে বরং মাইলড টোনার এবং গোলাপজল ব্যবহারেও আমি ভালো ফল পেয়েছি। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে আয়ুর হারবাল(!) অ্যালোভেরা অ্যাসট্রিনজেন্টকে একটা ভালো স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট বলতে পারব না।
আমার রেটিং:
৫/১০
কারণ বাজারের সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী টোনারগুলোর মধ্যে এটা এক নম্বরে,নয়ত রেটিং আরও কমিয়ে দিতাম । আমি কখনই আর পার্সোনাল ইউজের জন্য এটা বেছে নেব না। কারণ যদিও এই টোনার ব্যবহারে আমার ত্বকে কোন রিয়েকশন দেখা দেয়নি এবং স্থায়ী ক্ষতি হয় নি কিন্তু আমি আমার স্কিনকেয়ার সম্পর্কে সচেতন হবার পর বুঝেছি দীর্ঘদিন ইউজের ফলে আমার স্কিনে কী ইফেক্ট পড়ছিল! আর এখন আমি জানি যে এর চেয়ে আরও অনেক ভালো প্রোডাক্ট মার্কেটে পাওয়া যায় এবং ঘরেও তৈরি করা যায়!!
লিখেছেন – তাবাসসুম মুস্তারি মিম