শিশু জন্মগ্রহণের পরে প্রথম ৬ মাস শুধুই মায়ের বুকের দুধই তার জন্য আদর্শ ও একমাত্র খাবার। এ সময় অন্য কোনও খাবার এমনকি পানিও তার প্রয়োজন হয় না। মায়ের বুকের দুধেই প্রয়োজনীয় সব উপাদান রয়েছে। কিন্তু ৬ মাস বয়সের পরে বাচ্চার সঠিক বিকাশের জন্য বাড়তি খাবারের প্রয়োজন পড়ে। এ সময় মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি বিভিন্ন ফলের পিউরি, নরম খিচুড়ি, চালের গুঁড়ার সুজি ইত্যাদি দেয়া যায়।
বাচ্চাকে আস্তে আস্তে নিজের হাতের খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করাও জরুরি, এতে সে খাবার খাওয়ার প্রতি আকৃষ্ট হবে। আজকাল আমারা প্রায়ই একটা কথা শুনে থাকি বাচ্চার ফিঙ্গার ফুড। এই ফিঙ্গার ফুড আসলে কি???
[picture]
শিশুর ফিঙ্গার ফুড কি?
শিশুর এক কামড়ে খাওয়ার মতো (one bite size), সহজে ধরতে ও নিজে মুখে দিতে পারবে এমন খাবারগুলোই ফিঙ্গার ফুড। এই ফিঙ্গার ফুড শিশুর জন্য খুব মজার এবং তার মানসিক বিকাশে অনেকটাই ভূমিকা রাখে। বাচ্চা যখন নিজে নিজে একটা কাজ করতে পারছে সে স্বভাবতই খুশি হয়ে যাবে। তার মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতাও বাড়বে। বিভিন্ন খাবারের স্বাদও বুঝতে পারবে।
কখন থেকে এই ফিঙ্গার ফুড দেয়া যাবে? শিশুর বয়স যখন ৮-৯ মাস হবে তখন দেয়াই ভালো। অনেকে ৬ মাস বয়সের পরেই ফিঙ্গার ফুড দিয়ে থাকে। সব বাচ্চা এক রকম আচরণ করে না, আপনি নিজেই বুঝবেন আপনার বাচ্চাকে কখন কোন খাবার দিতে হবে।
ফিঙ্গার ফুডের জন্য কি আলাদা করে রান্না করতে হবে? এখন কথা হচ্ছে ফিঙ্গার ফুড কি আলাদা করে তৈরি করতে হবে এমন কিছু? না, এই ফিঙ্গার ফুড হতে পারে যেকোন ফলের টুকরা, আলু সেদ্ধ, মটরশুঁটি সেদ্ধ ইত্যাদি। আমি আজ বেশ কিছু ফিঙ্গার ফুড এর উল্লেখ করছি এবং কীভাবে খাওয়ার উপযোগী করে তুলবেন তাও জানিয়ে দিচ্ছি।
প্রথম অবস্থায় শিশুর হাতে খাবার দেয়ার সময় খুব সতর্ক থাকতে হবে যাতে গলায় না আটকে যায়। শিশুর জন্য প্রথম ফিঙ্গার ফুড হিসেবে ১৫টি নিরাপদ খাবারের তালিকা আপনাদের সুবিদার্থে দেয়া হল-
(১) আপেল: ভালো করে ধুয়ে ও অবশ্যই ছিলে পাতলা ও ছোট পিস করে দেয়া যাবে।
(২) কলা: ছোট কিউব করে কেটে।
(৩) মটরশুঁটি: সিদ্ধ করে, যাতে নরম হয়।
(৪) পাস্তা: ছোট সাইজের পাস্তা সিদ্ধ করে (প্যাকেটের নির্দেশনার চেয়ে ২/৩ মিনিট বেশি সিদ্ধ )
(৫) নাসপতি: খোসা ছিলে, পাতলা টুকরা বা কিউব করে কেটে।
(৬) আলু: ফ্রেঞ্চ ফ্রাইর মতো করে কেটে বা কিউব কেটে নরম করে সিদ্ধ করে।
(৭) টমেটো: খোসা ছিলে কিউব বা লম্বা পাতলা পিস করে।
(৮) বরবটি: হাতের আঙ্গুলের সমান সাইজের কেটে সিদ্ধ করে।
(৯) চীজ / টফু: কিউব বা ফিঙ্গার সাইজের লম্বা করে কেটে।
(১০) তরমুজ: কিউব করে কেটে তবে খুব সাবধান একটাও বিচি যাতে না থাকে সেদিকে খুব খেয়াল রাখতে হবে।
(১১) মিষ্টি আলু: কিউব বা লম্বা কেটে।
(১২) গাজর: পাতলা করে পিস কেটে সিদ্ধ করে দিতে হবে।
(১৩) মাছ: মাছ অল্প মশলা দিয়ে সেদ্ধ করে দেয়া যায়। সে ক্ষেত্রে সিদ্ধের পরে মাছের কাটা বেছে অল্প অল্প করে দিতে হবে।
(১৪) মুরগির মাংস: ৮/৯ মাস বয়সে বাচ্চাকে অল্প মশলা দিয়ে সেদ্ধ করে দেয়া যায়। আর মুরগির মাংসের পিসকে হাত দিয়ে ছিঁড়ে ছাড়িয়ে দেয়া যায়।
(১৫) বেবি ক্রাকার: বাচ্চাদের জন্য কিছু বিস্কিট পাওয়া যায় সেগুলো বা নরমাল টোষ্ট বিস্কুটও দেয়া যায়।
বিঃ দ্রঃ শিশুকে প্রথম ফিঙ্গার ফুড হিসেবে যেটাই দিন না কেন, বাচ্চা যখন খাবে খুব সতর্ক থাকবেন গলায় যাতে আটকে না যায়।
ছবি – বেবিসেন্টার ডট কম, ফিডিংমাইকিড ডট কম
লিখেছেন – ফাতেমা সিকদার