চার বছরের বাচ্চার মুখে হঠাৎ একদিন শোনেন, চুপ কারো তুম! কপাল কুঁচকে তাকালেন তার দিকে। বলার জন্য কথা খুঁজছেন, তাকে বোঝাতে হবে যে হিন্দি ভাষাটা তার জন্য নয়। কিছু বলার আগেই তার ভাবলেশহীন মুখ আর আপনাকে কথা বলার উৎসাহ দিলো না, আপনি চুপ থাকলেন। ভাবছেন এমন অবস্থাটা হুট করে তৈরি হয়েছে? মোটেও তা নয়! তৈরি হয়েছে বহুদিন ধরে, আপনার চোখের সামনেই, কিন্তু আপনার খেয়াল ছিলো না সেদিকে। বাচ্চা মানুষ যখন যা দেখবে, শুনবে, সেটা তাকে আকর্ষণ করলে সে সেদিকেই ঝুঁকে যাবে এটা স্বাভাবিক। কাজেই আপনার বাচ্চা যখন হিন্দি কার্টুন দেখছে খুব বেশি, বাসায় আর কেউ হিন্দি সিনেমা বা টিভি সিরিজ দেখতে নিলে সেখানেও সে বসে থাকছে নিয়মিত, আপনাকে সতর্ক হতে হবে তখন। তাকে সহজ ভাষায়, গল্পের ছলে বলে যান যে ওসব হিন্দি শব্দ তার মুখের ভাষা হবে না। তাকে তার উপযোগী অনুষ্ঠান দেখতে দিন সেটা হিন্দি হলেও, কিন্তু সেসব অনুষ্ঠান তাকে কতোটা প্রভাবিত করছে বা তার কথা এবং অন্যান্য আচরণে পরিবর্তন আসছে কিনা, তা খেয়াল রাখুন। এসব সমস্যা অবশ্যই দ্রুত সমাধান করা উচিত। তা নাহলে পরে অবস্থা আপনার হাতের বাইরে চলে যাবে, শিশুর লেখার মাঝে ইংরেজি বা বাংলা হরফে হিন্দি কথা ঢুকে পড়বে, আর আপনি পড়বেন মহা বিপদে! সময় থাকতে সামলে নিন তাই।
অতি আধুনিক অভিভাবক হিসেবে ইংরেজিকে শিশুর মূল ভাষা করে দেয়ার ইচ্ছে আপনাদের নেই। বরং নিজের মাতৃভাষায় তার সঠিক জ্ঞান থাকুক, দক্ষতা হোক সেটাই চান। বাংলায় দক্ষতা আনতে রোজ বসে তাকে ভাষা শেখাতে হবে, ছোট থেকেই ব্যাকরণের ভারী ভারী নিয়ম মুখস্ত করাতে হবে, তা অবশ্যই নয়। যা শেখার তা সে আপনা থেকেই শিখবে। সেই একটাই কথা, কেবল খেয়াল রাখুন বাচ্চা নিজে থেকে যা শিখছে তা ঠিক হচ্ছে কিনা। কখনো কোন শব্দের অর্থ আপনার কাছে জানতে এলে শুদ্ধটা বলুন, সাথে চলতি অন্য সমার্থক শব্দও জানিয়ে রাখুন। যখন যা জানবে, যেনো সঠিকটা এবং সঠিক ভাবে জানা হয় তার।
ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী হলে ছোটবেলা থেকেই শিশুরা বাংলায় দুর্বল হতে থাকে। এটা যেনো এক অলিখিত নিয়ম। কিন্তু যদি এমনটা হতে দিতে আপত্তি থাকে, তবে স্কুলের বাইরে তাকে বাংলা ভাষার কাছাকাছি রাখুন যতোটা সম্ভব হয়। ইংরেজিতে দক্ষ বানাতে ইংরেজি ভাষার চর্চা অবশ্যই করবেন, কিন্তু সেটার সময় নির্দিষ্ট করে নেবেন। বা কোন কোন ক্ষেত্রে তার সাথে ইংরেজিতে কথাবার্তা চালাবেন, যেমন তার হোমওয়ার্ক করানোর সময় বা পড়ালেখা নিয়ে কথা বলার সময় আপনারা ইংরেজিতেই আলাপচারিতা করবেন, এমন কোন নিয়মে ফেলুন বাচ্চাকে। সারাক্ষণ সে ইংরেজি বলে চলেছে আর আপনি তাতে বেশ খুশি হয়ে হাততালি দিচ্ছেন, পরে যখন জানবেন তার বাংলা ভাষার ঝোলাটা শূন্য, তখন যেনো আকাশ থেকে পড়বেন না।
শিশুর কোন দোষ নেই, সে যেমন পরিস্থিতে বেশি সময় কাটাবে সেটাই তার মনে আর মগজে বাসা বাঁধবে। ভাষা নিয়েও একই জিনিষ ঘটবে, যে ভাষায় সে সবচেয়ে বেশি ভাব প্রকাশ করবে নিয়মিত সেটাই তার কাছে নিজের ভাষা হয়ে উঠবে। শেখার শুরুতেই তাকে চিনিয়ে দিন, কোন ভাষাটা তার নিজের।
ছবি – ফটোগ্রাফারস ডট ক্যানভেরা ডট কম
লিখেছেন – মুমতাহীনা মাহবুব