স্কিনকেয়ার শুরু করতে চাচ্ছেন? কিন্তু কীভাবে কোন প্রোডাক্ট ইউজ করতে হবে, কী কী স্টেপস ফলো করতে হবে, সেটা কিন্তু অনেকেই জানেন না। আবার স্টুডেন্টদের জন্য বাজেটও একটা ইস্যু। সাজগোজের ফেইসবুক পেইজের ইনবক্সে এই ধরনের প্রশ্ন অনেকেই করেন। কম খরচে কীভাবে একটা প্রোপার স্কিনকেয়ার রুটিন মেনটেইন করা যায়, সেই গাইনলাইন থাকছে আজ। বিগেইনারদের জন্য বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিন এবং বাজেট ফ্রেন্ডলি প্রোডাক্টস সাজেশন নিয়ে আজকের ফিচার।
বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিনের ধাপ
টিনেজ থেকেই ত্বকের যত্নে বেসিক স্টেপগুলো ফলো করা উচিত। আপনি যখন নতুন করে স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টস অ্যাড করবেন, তখন একবারে ৩/৪টা প্রোডাক্টস ট্রায়াল না দেওয়াই ভালো। প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে প্রথমেই। একটি প্রোডাক্ট অন্তত এক সপ্তাহ ইউজ করে সেটা স্যুট করে গেলে তারপর নেক্সট প্রোডাক্ট ইনক্লুড করে নিন। আর কোনো প্রোডাক্ট ইউজ করে যদি স্কিনে ইরিটেশন হয়, তাহলে সেটা আপাদত বাদ দিতে হবে। দেখে নিন ডেইলি, উইকলি ও মান্থলি স্কিনকেয়ার রুটিনের ধাপগুলো কী কী।
রেগুলার স্কিনকেয়ার
উইকলি স্কিনকেয়ার
মান্থলি স্কিনকেয়ার
বিগেইনারদের জন্য বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিন
ক্লেনজিং
প্রথমেই আপনাকে ত্বকের ধরন অনুযায়ী পারফেক্ট ক্লেনজার বেছে নিতে হবে। হেলদি স্কিনের জন্য প্রথম থেকেই ডাবল ক্লেনজিং মেথড ফলো করুন। সেজন্য একটি অয়েল বেইজড ক্লেনজার বা মাইসেলার ওয়াটার বা মেকআপ ক্লেনজিং অয়েল দিয়ে ফেইস ক্লিন করে তারপর ফোম বা জেল বেইজড ফেইস ওয়াশ বা ক্লেনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সকালে আপনি অনলি ফেইস ওয়াশ দিয়ে মুখ ক্লিন করতে পারেন, কিন্তু রাতের বেলা বা বাইরে থেকে এসে আপনাকে ডাবল ক্লেনজিং করতে হবে। এতে যেই বেনিফিটগুলো পাবেন-
- ডার্ট, পল্যুশন, মেকআপ, সানস্ক্রিন সবই প্রোপারলি ক্লিন হবে
- পোরস ক্লগড হয়ে স্কিনে বাম্পস বা একনে হওয়ার পসিবিলিটি থাকবে না
- স্কিনের এক্সেস অয়েল রিমুভ হবে, স্কিন ফ্রেশ ও হেলদি থাকবে
প্রোডাক্ট সাজেশন
ড্রাই ও অয়েলি স্কিনের জন্য আলাদা আলাদা ক্লেনজার পাওয়া যায়, যেটা প্রোডাক্টের প্যাকেজিংয়ে মেনশন করা থাকে। বিগেইনারদের জন্য বাজেট ফ্রেন্ডলি কিছু ফেইস ওয়াশ ও ক্লেনজারের সাজেশন থাকছে, স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী বেছে নিন আপনার পছন্দেরটি।
- অয়েল বেইজড ক্লেনজার Skin Cafe Makeup Cleansing Oil Advanced
- অল স্কিন টাইপের জন্য Panam Care Daily Face Wash Beetroot Extract
- অল স্কিন টাইপের জন্য Rajkonna Glow Booster Facial Wash With Jojoba Beads
- অয়েলি ও একনে প্রন স্কিনের জন্য Rajkonna Acne Fighting Facial Wash With Jojoba Beads
- একনে প্রন স্কিনের জন্য Panam Care Daily Face Wash Apple Cider Vinegar
- অয়েলি অ্যান্ড কম্বিনেশন স্কিনের জন্য LILAC Brightening Face Wash Oily And Combination Skin
- অল স্কিন টাইপের জন্য Groome Bird’s Nest Brightening Face Wash
টোনিং
স্কিনকেয়ারের যেই স্টেপটি নিয়ে কম বেশি আমরা সবাই কনফিউজড হই, সেটা হচ্ছে টোনিং। টোনার স্কিনের পি এইচ লেভেল ব্যালেন্স করে স্কিনের ব্যারিয়ার ও টেক্সচার ঠিক রাখে। অন্যান্য স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট যাতে ভালোভাবে ত্বকে অ্যাবজর্ব হতে পারে সেজন্য স্কিনকে প্রিপেয়ার করে। তাহলে বুঝতেই পারছেন টোনার অ্যাপ্লাই করা কতটা জরুরী।
প্রোডাক্ট সাজেশন
স্কিনের টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী স্যুইটেবল টোনার আপনাকে বেছে নিতে হবে। প্রতিবার ফেইস ওয়াশ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে কটন প্যাড বা হাতের সাহায্যে ড্যাব ড্যাব করে টোনার অ্যাপ্লাই করতে হবে। বাজেট ফ্রেন্ডলি টোনারের সাজেশন থাকছে আপনাদের জন্য, এগুলো সব ধরনের স্কিনেই ইজিলি স্যুট করবে।
- Rajkonna All Purpose Toner
- Skin Cafe 100% Natural Rose Water Face And Body Mist
- Boots Essentials Cucumber Facial Toner
ময়েশ্চারাইজিং
বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিনের ইম্পরট্যান্ট একটা ধাপ হচ্ছে ত্বকের ধরন অনুযায়ী ভালোমানের একটা ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করা। স্কিনের ময়েশ্চার ও হাইড্রেশন লক করে হেলদি গ্লো ফিরিয়ে আনতে এই স্টেপটি কোনোভাবেই মিস করা যাবে না। অনেকেই মনে করেন যে, অয়েলি স্কিনে কোনো ময়েশ্চারাইজার লাগে না! এই ধারণাটি একদম ভুল। টিনেজ থেকেই এই বেসিক স্টেপগুলো ফলো করলে বয়স বাড়লেও স্কিন থাকবে ফ্ললেস।
প্রোডাক্ট সাজেশন
অয়েলি স্কিনের জন্য জেল বেইজড লাইট ওয়েটেড ময়েশ্চারাইজার বেশ ভালো। আর এক্সট্রিম ড্রাই স্কিনের জন্য বাটারি ক্রিমি ফর্মুলার ময়েশ্চারাইজার সিলেক্ট করতে পারেন। একনে প্রন স্কিন হলে এমন প্রোডাক্ট সিলেক্ট করবেন যেটা পোরস ক্লগ করবে না। তাহলে দেখে নিন কিছু সাজেশন।
- ব্রাইটেনিংয়ের জন্য Dermalogika Miracle 5x Whitening Cream With Advanced Formula
- কম্বিনেশন স্কিনের জন্য Dermalogika T Zone Solution
- অয়েলি স্কিনের জন্য Pond’s Light Moisturiser Non-Oily Fresh Feel
- অয়েলি স্কিনের জন্য Simple Kind to Skin Hydrating Light Moisturiser
- ডিহাইড্রেটেড ও ড্রাই স্কিনের জন্য St. Ives Renewing Collagen Elastin Facial Moisturizer
সানস্ক্রিন
প্রথম দিকে আমরা স্কিনের সান প্রোটেকশন নিয়ে কেউই মাথা ঘামাই না! আর এটাই পরবর্তীতে বিভিন্ন স্কিন রিলেটেড ইস্যু তৈরি করে। যেমন সানবার্ন, পিগমেন্টেশন, ডার্ক স্পট আরও অনেক কিছু। তাই বাইরে বের হওয়ার আগে অন্তত এস পি এফ ৩০ যুক্ত প্রোডাক্ট অ্যাপ্লাই করে নিতে হবে। এস পি এফ ৫০ হলে আরও ভালো। আরেকটি জিনিস, ২/৩ ঘন্টা পর পর সানস্ক্রিন রিঅ্যাপ্লাই করে নিতে হয়। টিনেজ থেকেই এই অভ্যাসটি গড়ে তুলুন। আর হ্যাঁ, সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করলে বাসায় ফিরে অবশ্যই ডাবল ক্লেনজিং করতে হবে।
প্রোডাক্ট সাজেশন
সানস্ক্রিনের জন্য ইনভেস্ট করাটা ওয়াইজ ডিসিশন বলে আমার মনে হয়। তাই অন্য কোনো স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টের জন্য বাজেট কম রেখে হলেও সানস্ক্রিন সিলেকশনের সময় আপনাকে একটু খেয়াল রাখতে হবে যেন সেই প্রোডাক্টটি পারফেক্টলি আপনাকে প্রোটেকশন দিতে পারে!
- অল টাইপ স্কিনের জন্য Skin Cafe Sunscreen SPF 50 PA+++ Lightweight & Non-Greasy
- অয়েলি স্কিনের জন্য Neutrogena Ultra Sheer Dry-Touch Sunblock SPF50+
উইকলি স্কিনকেয়ার
বিগেইনারদের জন্য বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিন তো জানা হলো, এবার আসি সাপ্তাহিক স্কিনকেয়ারে। সপ্তাহে অন্তত ১দিন নিজেকে একটু সময় দিন, সেলফ কেয়ার করলে মনও ভালো থাকে! সুন্দর ত্বক আপনার কনফিডেন্স লেভেলকে আরও এনহ্যান্স করবে। তাই এইটুকু সেলফ প্যামপার তো করা যেতেই পারে, তাই না? চলুন তাহলে জেনে নেই।
১) স্ক্রাবিং
১২-১৩ বছর পর্যন্ত ন্যাচারাল ওয়েতেই এক্সফোলিয়েট হয়ে যায় মানে ফ্রি রেডিক্যাল নিউট্রিলাইজ (Free radical neutralize) হওয়ার ক্যাপাসিটি থাকায় নতুন কোষ পুনঃগঠিত হতে থাকে। কিন্তু এরপর থেকে মাইল্ড ফর্মুলার স্ক্রাব দিয়ে সপ্তাহে অন্তত একবার ডেড সেলস রিমুভ করতে হবে। যদি স্কিনে অ্যাকটিভ পিম্পল থাকে, তাহলে স্ক্রাবিং না করাই ভালো। রিজনেবল প্রাইসের মধ্যে Simple Kind to Skin Smoothing Facial Scrub, Beauty Formulas Charcoal Facial Scrub ট্রাই করতে পারেন।
২) ফেইস প্যাক/ মাস্ক অ্যাপ্লাই
ত্বকের যত্নে সপ্তাহে অন্তত একদিন ফেইস প্যাক বা শিট মাস্ক অ্যাপ্লাই করা উচিত। পিওর, ন্যাচারাল ও বাজেট ফ্রেন্ডলি প্রোডাক্টসের জন্য আমার ভরসার জায়গা ‘রাজকন্যা’। এই ব্র্যান্ডে পেয়ে যাবেন অরগানিক উপাদান দিয়ে তৈরি উপটান, মুলতানি মাটি, লিকোরিস পাউডার, হিবিসকাস পাউডার, রোজ পেটাল পাউডার ইত্যাদি। স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী বেছে নিন আপনার পছন্দেরটি।
এছাড়াও ইনস্ট্যান্ট গ্লোয়ি ও হাইড্রেটেড স্কিন পেতে শিটমাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। Dermalogika Glass Complexion Brightening and Rejuvenating Sheet Mask ও Dermalogika Instant Glow Glowing and Detoxifying Sheet Mask এই শিটমাস্ক দু’টো আমার খুবই পছন্দের। দামটাও সাধ্যের মধ্যে। টিনেজ থেকে শুরু করে সবাই ব্যবহার করতে পারবেন!
৩) নোজ পোরস স্ট্রিপস অ্যাপ্লাই
নাকের উপর কালো কালো ব্ল্যাকহেডস দেখতে একদমই ভালো লাগে না! মাত্র ১০ মিনিটেই নোজ পোরস স্ট্রিপস দিয়ে এই প্রবলেমের সল্যুশন হবে। Groome Charcoal Purifying & Deep Cleansing Nose Strip, Groome Tea Tree Purifying & Deep Cleansing Nose Strip এগুলো ইউজ করতে পারেন। নাক পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে এই স্ট্রিপটি লাগিয়ে নিবেন, এরপর ১০ মিনিট অপেক্ষা করে তুলে ফেলবেন। ব্যস, ব্ল্যাকহেডস গায়েব।
মান্থলি স্কিনকেয়ার
মাসে অন্তত একবার ঘরে বসেই ফেসিয়াল করতে পারেন। রিজনেবল প্রাইসে Panam Care Herbal Glow Facial Kit ট্রাই করতে পারেন, এতে ৪টি প্রোডাক্টস- ম্যাসাজ ক্রিম, স্ক্রাব, ফেইস প্যাক ও ময়েশ্চারাইজার একইসাথে পেয়ে যাবেন! যাদের এক্সেস ফেসিয়াল হেয়ার আছে, তারা মান্থলি একবার ক্লিন করতে পারেন Groome Eyebrow and Facial Razor দিয়ে। চাইলে স্ট্রিপস দিয়ে ওয়্যাক্সিংও করে নিতে পারেন।
তো এই ছিল বিগেইনারদের জন্য বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিন এবং বাজেট ফ্রেন্ডলি প্রোডাক্টস সাজেশন। অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার বা অ্যাডভান্স স্কিনকেয়ারে সিরাম, অ্যাম্পুল এগুলো ইউজ করা শুরু করতে পারেন ২০ বছরের পর। অ্যাডভান্স স্কিনকেয়ার নিয়ে নেক্সট কোনো পর্বে লিখবো। যেকোনো বিউটি টিপস ও সল্যুশন পেতে ইনবক্স করতে পারেন সাজগোজের ফেইসবুক পেইজে। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ