কোনো কিছুই ফেলনা নয়। বাজার থেকে কিনে আনা খাবারের ফেলে দেওয়া অংশ দিয়েও রূপচর্চা করা সম্ভব। বিচি ও খোসা ময়লার ঝুড়িতে দেওয়ার আগে একবার ভেবে নিন এটাকে কোনো কাজে লাগানো যায় কি না। এই জিনিসগুলো দিয়ে ত্বক আরও আকর্ষণীয় করা সম্ভব। সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য সব সময়ই যে দামী জিনিস প্রয়োজন, তা কিন্তু নয়। কিছু জিনিস একটু নিয়ম মেনে ব্যবহার করলেই আপনার ত্বক হয়ে উঠবে আরও সুন্দর ও আকর্ষণীয়। রূপচর্চার জন্য অনেক টাকা খরচ করে। কিন্তু অনেক সময় কাজের কাজ কিছুই হয় না। তবে আমাদের নিত্যদিনের ব্যবহৃত কিছু ফেলনা জিনিস দিয়ে রূপচর্চা করলে বেশি দামী জিনিসের থেকেও ভালো কাজ করতে পারে। চলুন জেনে নিই ফেলনা জিনিস দিয়ে কীভাবে রূপচর্চা করা যায়।
কমলার খোসা শুষ্ক ও কুঁচকে যাওয়া ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এ জন্য কমলার খোসার সঙ্গে মসুর ডাল ও হলুদ বাটা মিশিয়ে নিয়ে মুখে লাগাতে হবে। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে হালকা ম্যাসাজ করে তুলে ফেলুন। এতে এক ধরনের ঔজ্জ্বল্য চলে আসবে ত্বকে। পাশাপাশি ত্বক টানটান হবে অনেকটা।
লেবুর খোসাও কিন্তু একইভাবে কাজ করবে। ব্রণ দূর করবে। তৈলাক্ত ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর করবে লেবুর খোসা। এ জন্য লেবুর খোসা ও শশা একসঙ্গে ব্লেন্ড করে মুখে লাগাতে পারেন। শুকিয়ে গেলে হালকাভাবে ধুয়ে ফেলুন।
ব্যবহার করার পর লেবুর খোসা ফেলে না দিয়ে এর মধ্যে একটুখানি মধু নিয়ে কনুইয়ে ঘষুন। দেখবেন, কনুইয়ের কালো ছোপ চলে যাবে নিমেষেই।
ব্যবহৃত টি ব্যাগ হোয়াইটহেডস নিরাময়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি টি ব্যাগের ভেতরে থাকা উপাদান গুলো নিন তারপর আক্রান্ত অংশে ৪-৫ মিনিট রাব করুন। সপ্তাহে ২বার করলেই অনেকখানি উপকার পাবেন।
তরমুজ খাওয়ার পর এর খোসা ফেলে না দিয়ে সাদা অংশটুকু নিন। এবার এটুকু ব্লেন্ড করে ত্বকে লাগান। দেখবেন, ত্বকের পানিশূন্যতা দূর হবে এবং আপনি একটা ঠান্ডা অনুভূতি পাবেন।
মুখে দাগ থাকলে পাকা কলার খোসার সঙ্গে একটু মুলতানি মাটি, কয়েক ফোঁটা কমলার রস ও শশার রস মিশিয়ে মুখে লাগান। দাগ গায়েব হয়ে যাবে।
ত্বকের ভাঁজ পড়া কমাতে ও কালচে ভাব দূর করতে বাঙ্গির খোসা, মটর ডাল বাটা, ডিমের কুসুম, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত মুখে লাগিয়ে রাখুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ক্লিঞ্জিং, স্ক্রাবিং এর পর নিয়মিত এই মাস্ক ব্যবহারে আস্তে আস্তে ত্বকের ভাঁজ পড়া ভাব কমে ত্বক হয়ে উঠবে সতেজ।
ত্বকে বাড়তি উজ্জ্বলতা আনতে চাইলে বাড়িতে থাকা পুরনো এক পিস পাউরুটি দুধে ভিজিয়ে চটকে নিন। এতে মেশান দু’চামচ পেঁপে বাটা, এক চামচ আপেল বাটা, এক চামচ গোলাপজল, এক চামচ মধু। মিশ্রণটি মুখে লাগান। শুকিয়ে যাবার পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।
শশার বিচি ত্বককে খুব গভীরভাবে পরিষ্কার করে। আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়, তাহলে শশার বিচি হালকা ভেঙে নিয়ে তার সঙ্গে ওটমিল মিলিয়ে নিলে ভালো স্ক্র্যাবারের কাজ করবে। আর যদি আপনার ত্বক হয় শুষ্ক, সে ক্ষেত্রে শশার বিচির সঙ্গে দুধের সর ও ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
চালের গুঁড়া চেলে নেওয়ার পর চালনা টুকু তো ফেলেই দেন। এবার এটাকেও কাজে লাগাতে পারেন। চালের গুঁড়ার এই অংশটুকু ভালো কাজ করে স্ক্র্যাবার হিসেবে। এর সঙ্গে একটু টকদই, কাঁচা হলুদ, দুধের সর ও গাজরের রস মিশিয়ে নিন। দেখবেন, ত্বক পরিষ্কারের পাশাপাশি আরও উজ্জ্বল হবে।
বাসায় গুঁড়ো দুধ অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। সেটি ফেলে দেয়ার বদলে এটার সঙ্গে একটু কমলার রস ও একটুখানি মধু মিশিয়ে নিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করুন। মিশ্র ত্বকের জন্য খুব ভালো কাজ করবে এই মিশ্রণ।
একটি ছোট শশার খোসা ছোট ছোট টুকরো করে নিন।। তারপর ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করুন। এই পিউরিটি কে একটি পরিষ্কার কাপড়ে নিয়ে ঝুলিয়ে দিন যেন অতিরিক্ত পানি ঝরে যায়। এবার এর সাথে এলোভেরা জেল, গ্রিন টি আর জেলাটিন মেশান। শশা এবং এলোভেরাতে আছে প্রাকৃতিক এস্ট্রিনজেণ্ট, যা ব্যাকটেরিয়ার বংশ ধ্বংস করে। এবার মিশ্রণটি একটি সস প্যানে ঢেলে নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না জেলাটিন গলে মিশে যায়। মিশ্রণটিকে ফ্রিজে রাখুন ৩০ মিনিট। এখন অ্যাপ্লাই করার পালা। মিশ্রণটি মুখে এবং গলায় লাগিয়ে ২৫ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ক্লান্ত শ্রান্ত চেহারায় নিমিষেই চমক চলে আসবে।
টিপসগুলো পছন্দ হলে অবশ্যই অ্যাপলাই করবেন আর ফলাফল আমাদের জানাতে ভুলবেন না যেন। আপনারা উপকৃত হলে আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সার্থক হবে।
লিখছেনঃ রোজেন
ছবিঃ মেকআপএন্ডবিউটি.কম