যোগাসন আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। সুস্থ ও ফিট থাকতে যোগব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। এ জন্যই বিভিন্ন ব্যাধি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে মানুষ নানা রকমের যোগ ব্যায়াম করে থাকে। কিছু যোগাসন যেমন ১) ভুজুঙ্গাসন (Snake pose), ২) উষ্ট্রাসন (Camel Pose), ৩) পদহস্তাসন (Standing Forward Bend), ৪) পবনমুক্তাসন (Wind Relieving Pose), ৫) মার্জারাসন (Cow Cat Pose or Cat Pose) পেটের মেদ কমায়। গভীর ও শান্তির ঘুম নিশ্চিন্তে কিছু যোগাসন হলো- বদ্ধ কোণাসন, বিপরীত করণী, উপবিষ্ট কোণাসন ও জানু-শীর্ষাসন। যাই হোক, আজ আপনাদের জানাচ্ছি সর্বাঙ্গাসন ও পবনমুক্তাসন নিয়ে। এই আসন দুটি শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত…
সর্বাঙ্গাসন ও পবনমুক্তাসন
সর্বাঙ্গাসন ও পবনমুক্তাসন নিয়ে আলোচনার অংশ হিসেবে প্রথমে সর্বাঙ্গাসন এর উপকারিতা ও পরে এর কার্যপদ্ধতি নিয়ে আপনাদের জানাবো। এর পরে পবনমুক্তাসন নিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
১. সর্বাঙ্গাসন
এ আসন অভ্যাসে শরীরের সব অংশের উপর কম-বেশি প্রভাব পড়ে, তাই আসনটির নাম সর্বাঙ্গাসন (Sarvangasana)|
উপকারিতা
যোগশাস্ত্র মতে আসনটিতে সর্বরোগ দূর হয়। আসন অবস্থায় রক্তবাহী ধমনী, উপশিরা বিপরীতমুখী হয় বলে গলদেশ ও মস্তিষ্ক রক্তে প্লাবিত হয়। ফলে থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড, টনসিল, স্যালিভারী প্রভৃতি গ্রন্থিগুলো সতেজ ও সক্রিয় হয়ে উঠে। পিটুইটারি ও পিনিয়াল গ্রন্থিও বিশুদ্ধ রক্ত থেকে তাদের পুষ্টির জন্য উপাদান সংগ্রহ করতে পারে। এই গ্রন্থিগুলো দেহরক্ষার অতি প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে। থাইরয়েড গ্রন্থির অন্তঃস্রাবী রসের সঙ্গে অতি দরকারি আয়োডিন থাকে, যা রক্তের সঙ্গে মিশে দেহের সমস্ত স্নায়ু ও গ্রন্থিকে সুস্থ ও সক্রিয় রাখে।
থাইরয়েড গ্রন্থিকে যৌবন গ্রন্থিও বলা হয়ে থাকে। কারণ এই গ্রন্থিটি সক্রিয় থাকলে দেহে জরা ও ব্যাধি সহজে আক্রমণ করতে পারে না। যৌবনকে অটুট রাখতে আসনটি অদ্বিতীয়। আমাদের দেহে হৃৎপিণ্ড মস্তিষ্কের নীচে থাকায় মাধ্যাকর্ষণকে কাটিয়ে হৃৎপিণ্ডকে মস্তিষ্কে রক্ত পাঠাতে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। সর্বাঙ্গাসন অবস্থায় মস্তিষ্ক হৃৎপিণ্ডের নিচে চলে আসে। ফলে হৃৎপিণ্ড মস্তিষ্কে রক্ত পাঠাতে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় না, কিছুক্ষণ এই পরিশ্রম থেকে রেহাই পায়। এতে তার কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া আসনটি জঠরাগ্নি বৃদ্ধি করে, কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করে এবং প্লীহা, যকৃৎ, মূত্রাশয় প্রভৃতিকে সক্রিয় রাখে। টনসিলের দোষ কোনদিন হয় না। সর্বাঙ্গাসন অভ্যাসকারীদের কোন স্ত্রী-ব্যাধি হতে পারে না, এমনকি স্থানচ্যুত জরায়ু ঠিক জায়গায় ফিরে আসে।
কার্যপদ্ধতি
সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। পা দু’টো জোড়া থাকবে এবং পায়ের আঙুলগুলো উপর দিকে থাকবে। হাত দু’টো পাঁজরের দু’পাশে মাটিতে রাখুন। এখন হাতের উপর ভর দিয়ে পা দু’টো জোড়া ও সোজা অবস্থায় যতদূর পারেন উপরে তুলুন। এবার হাত দু’টো কনুইয়ের কাছ থেকে ভেঙে কোমরের দু’পাশে ধরুন এবং কনুইয়ের উপরে জোর দিয়ে কোমর ও পা সোজা অবস্থায় উপরে তুলে নিয়ে আসুন। পায়ের বুড়ো আঙুল ঠিক মাথা বরাবর উপরে থাকবে, কাঁধ থেকে পা পর্যন্ত দেহটি ঠিক ৯০ ডিগ্রীতে থাকবে। কনুইয়ের উপর জোর রেখে হাত দিয়ে দেহটি উপর দিকে ঠেলে রাখুন। চিবুক খানা বুক ও কণ্ঠনালীর সংযোগ স্থলে লেগে থাকবে। কনুই থেকে হাতের উপরাংশ, কাঁধ, ঘাড় ও মাথার পেছন দিকটা শুধু মাটিতে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এই অবস্থায় থাকুন। এরপর কনুইয়ের উপর জোর রেখে আস্তে আস্তে পা নামিয়ে আনুন এবং প্রয়োজনমত শবাসনে বিশ্রাম নিন। আসনটি প্রথম প্রথম ২/৩ বার করুন। তবে ভালো ভাবে অভ্যস্ত হয়ে গেলে একবারে মিনিট খানেক সময় নিয়ে আসনটি অভ্যাস করলে আর একাধিকবার করার দরকার হয় না।
সতর্কতা
হৃদরোগীদের এবং বার-তের বছরের কম বয়সের ছেলেমেয়েদের আসনটি করা উচিত নয়।
২. পবনমুক্তাসন
পেটের আবদ্ধ বায়ুকে মুক্ত করে দেয় বলেই এই আসনটির নাম পবন-মুক্তাসন (Pavana-muktasana)।
উপকারিতা
যাদের পেটে বায়ু জমে তাদের আসনটি অবশ্যই করা উচিত। এ আসন অভ্যাস রাখলে কোনদিন পেট ফাঁপা রোগ হয় না। এছাড়াও আসনটি অজীর্ণ, কোষ্ঠবদ্ধতা, অম্ল প্রভৃতি পেটের যাবতীয় রোগ দূর করে, জঠরাগ্নি উদ্দীপ্ত করে, পেট, তলপেট ও নিতম্বের স্নায়ুজাল ও পেশী সবল ও সক্রিয় রাখে। পেট ও বস্তিপ্রদেশের অপ্রয়োজনীয় মেদ কমিয়ে দেহকে সুঠাম ও সুন্দর করতে সাহায্য করে। আসনটি প্যানক্রিয়াস গ্রন্থিকে সবল ও সক্রিয় রাখে। ফলে ডায়াবেটিক রোগ হতে পারে না।
কার্যপদ্ধতি
সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার ডান পা উঁচু করে হাঁটু ভেঙে দু’হাত দিয়ে ঐ হাঁটু ধরে ডান বুকে চেপে ধরুন। ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ ঐ অবস্থায় রাখুন। তারপর হাত আলগা করে ডান পা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিন। এবার বাঁ পা ঐ একই ভাবে নিয়ে এসে বাঁ বুকের উপর চেপে ধরুন এবং একই সময় পরে বাঁ পা ফিরিয়ে নিন। তারপর দু’হাঁটু একসঙ্গে নিয়ে এসে বুকের উপর চেপে ধরুন। প্রতিটি ভঙ্গিমা ৩/৪ বার করে অভ্যাস করুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। প্রথম অভ্যাসের সময় উরু ও হাঁটু যদি পেট ও বুকের সঙ্গে না লাগে তবে পেট ও উরুর মাঝে একটি পাতলা নরম বালিশ দিতে হবে। কেননা আসল উদ্দেশ্য হলো, উরু দিয়ে পেটের উপর চাপ দেয়া। আসনটি অভ্যাসের পর শবাসনে বিশ্রাম নিন।
সতর্কতা
যাদের প্লীহা, যকৃৎ অস্বাভাবিক বড় বা যাদের কোন ধরনের হৃদরোগ আছে, তাদের রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত সাবধানে আসনটি যতটুকু সহজভাবে হয় ততটুকু করা বাঞ্ছনীয়। জোর করে পেটের উপর অত্যধিক চাপ দেওয়া ঐ অবস্থায় কখনোই উচিত নয়।
এই তো জানা হয়ে গেলো সর্বাঙ্গাসন ও পবনমুক্তাসন কিভাবে করবেন, এদের উপকারিতা ও সতর্কতা নিয়ে সব বিস্তারিত। এখন থেকে সুস্থ থাকতে আসনগুলোতে নিয়মিত হবেন, আশা করি।
ছবিঃ সংগৃহীত – সাটারস্টক