যারা রূপচর্চা করতে ভালোবাসেন, তাদের কাছে ফেইস মাস্ক একটি পছন্দের স্কিনকেয়ার আইটেম। বিভিন্ন স্কিন টাইপ ও কনসার্নের জন্য মার্কেটে আলাদা আলাদা ফেইস মাস্ক অ্যাভেইলেবল, সেটা আমরা সবাই জানি। কত ধরনের ফেইস মাস্ক যে আমরা ইউজ করেছি! আচ্ছা, ‘মাল্টি মাস্কিং’ এই কথাটার সাথে কি আপনি পরিচিত? কোরিয়ান বিউটি ট্রেন্ড যারা ফলো করেন, তাদের কাছে এই টার্মটি নতুন কিছু নয়।
অনেক সময় এমন হয় যে হঠাৎ করেই আমাদের স্কিনের একেকটা এরিয়াতে ডিফারেন্ট টাইপের প্রবলেম দেখা যায়। যেমন- গালের এরিয়াতে একনে, নাকে ব্ল্যাকহেডস আবার কপাল ও চিন এরিয়াতে অয়েলিনেস! বলুন তো, এমন হলে তখন কি একটা স্কিন প্রবলেমের জন্য ফর্মুলেটেড ফেইস মাস্ক পুরো ফেইসে অ্যাপ্লাই করবেন? কখনোই না! বরং এক্ষেত্রে আপনারা ট্রাই করতে পারেন মাল্টি মাস্কিং মেথড, যা এখনকার ভাইরাল স্কিনকেয়ার ট্রেন্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম। আজ আমরা জানবো মাল্টি মাস্কিং কী এবং কীভাবে এই মাস্কিং করতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
মাল্টি মাস্কিং কী?
যারা মাল্টি মাস্কিং সম্পর্কে জানেন না, তাদের জন্য লেখার শুরুতেই জানিয়ে দিচ্ছি এটা দিয়ে ঠিক কী বোঝানো হয়। খুব সহজ করে বলতে গেলে মাল্টি মাস্কিং হলো ফেইসের একেকটা এরিয়ার প্রবলেম বুঝে সে অনুযায়ী সেসব এরিয়াতে আলাদা আলাদা ফেইস মাস্ক একই সময়ে অ্যাপ্লাই করা।
ব্যাপারটা আরেকটু বুঝিয়ে বলি। ধরুন, আপনার ফেইসের কপালের অংশে একনে প্রবলেম রয়েছে। আবার আপনি আপনার নাক ও চিন এরিয়াতে ব্ল্যাকহেডসের সমস্যায় ভুগছেন। এখন এই দু’টো প্রবলেম একসাথে সল্ভ করার জন্য আপনি শুধু কপালের অংশে ব্রণের সমস্যা কমাতে ক্যাপাবল এমন একটা ফেইস মাস্ক অ্যাপ্লাই করবেন। একইসাথে আপনার নাক ও চিন এরিয়াতে ব্ল্যাকহেডস রিমুভ করবে, এমন ফেইসমাস্ক অ্যাপ্লাই করবেন। মেইনলি এভাবেই মাল্টি মাস্কিং করতে হয়।
এই মেথড কেন এত জনপ্রিয়?
স্কিনকেয়ারের প্র্যাকটিসগুলোর মধ্যে এটি ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কেন জানেন? কারণ এই মাস্কিং মেথড ফলো করলে স্কিনের বিভিন্ন রকম প্রবলেম একসাথে সল্ভ করা পসিবল হয়৷ এতে করে যেমন সময় বাঁচে, তেমনিভাবে কিন্তু অল্প ইফোর্টে স্কিন ভালো রাখাও সম্ভব। তাই বলা যেতে পারে, আমাদের বিজি লাইফে স্কিনের বিভিন্ন প্রবলেমস দূর করে হেলদি ও গ্লোয়িং স্কিন পাওয়ার ইজি সল্যুশন হচ্ছে এই মাল্টি মাস্কিং।
মাল্টি মাস্কিং কীভাবে করবেন?
এখন নিশ্চয়ই সবাই জানতে চাইবেন এর প্রসেস সম্পর্কে। স্কিনের স্পেসিফিক প্রবলেমের জন্য আলাদা আলাদা মাস্ক একই সাথে অ্যাপ্লাই করতে হবে। চলুন আর দেরি না করে জেনে আসা যাক মাল্টি মাস্কিং মেথডের স্টেপগুলো সম্পর্কে।
১) আগে বুঝে নিন আপনার স্কিন টাইপ ও কনসার্ন
শুরুতেই নিজের স্কিন টাইপ ও কনসার্ন আইডেন্টিফাই করে সে অনুযায়ী ফেইস মাস্ক বাছাই করে ফেলুন। কেননা যে ফেইস মাস্ক ড্রাই স্কিনের জন্য কাজ করে, সেটা কিন্তু কখনোই অয়েলি স্কিনের জন্য কাজ করবে না বা এতে আপনি ভালো ফলাফল পাবেন না।
আবার যে মাস্ক ব্যবহার করে আপনি স্কিনের ওপেন পোরস এর ভিজিবিলিটি কমাতে পারবেন, সেটা দিয়ে কিন্তু আবার হাইপার পিগমেন্টেশনের প্রবলেম সল্ভ করা পসিবল হবে না। এ কারণেই আগে নিজের স্কিন টাইপ কী সেটা বুঝুন। তারপর স্কিনের কোন এরিয়াতে কী প্রবলেম আছে সেটা আইডেন্টিফাই করে সেই প্রবলেমগুলোকে টার্গেট করে যে ফেইস মাস্ক মার্কেটে অ্যাভেইলেবল রয়েছে, সেগুলো পারচেজ করুন।
কোন মাস্ক ইউজ করবেন?
আপনাদের সুবিধার জন্য কোন স্কিন টাইপের জন্য কেমন ফেইস মাস্ক সবচেয়ে ভালো কাজ করে সেটা মেনশন করে দিচ্ছি।
- ড্রাই স্কিনের জন্য নারিশিং বা ময়েশ্চারাইজিং ফেইস মাস্ক
- অয়েলি স্কিনের জন্য ক্লে মাস্ক, অ্যাকটিভেটেড চারকোল মাস্ক কিংবা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড রয়েছে এমন মাস্ক
- ডিহাইড্রেটেড স্কিনের জন্য হায়ালুরোনিক অ্যাসিডযুক্ত ফেইস মাস্ক
- ডিপ ক্লিনিংয়ের জন্য ডিটক্স ফেইস মাস্ক
- গ্লোয়ি ও ব্রাইট স্কিনের জন্য উপটান
২) স্কিন ভালোভাবে ক্লিন করে নিন
মাল্টি মাস্কিং করার আগে পরামর্শ থাকবে ফেইস প্রোপারলি ক্লিন করে নেওয়ার। তাই নিজেদের পছন্দের যেকোনো ফেইস ওয়াশ বা ক্লেনজার দিয়ে ফেইস ভালোভাবে ক্লিন করে নিন। এবার মাস্কিংয়ের পালা! বলে রাখা ভালো, ফেইস মাস্ক অ্যাপ্লাই করার জন্য পারফেক্ট টাইম হচ্ছে রাত। অথবা ছুটির দিনে শাওয়ারের আগেও ফেইস মাস্ক অ্যাপ্লাই করা যেতে পারে।
৩) এবার অ্যাপ্লাই করুন ডিফারেন্ট মাস্ক
মাল্টি মাস্কিং করার সময় যে মাস্কগুলো আগেই বাছাই করেছেন, সেগুলো একটা একটা করে ফেইসের নির্দিষ্ট এরিয়াতে অ্যাপ্লাই করে নিন। এক্ষেত্রে যখন প্রতিটা মাস্ক অ্যাপ্লাই করবেন, তখন পরিমাণে অল্প করে নিন। এতে মাস্কের অপচয় হবে না। মাস্ক অ্যাপ্লাই করার পর ১০ মিনিট কিংবা ফেইস মাস্কের প্যাকেটে লেখা নিয়ম অনুযায়ী অপেক্ষা করুন, যাতে মাস্কগুলো ভালোমতো শুকিয়ে যেতে পারে বা স্কিনে অ্যাবসর্ব হতে পারে। তারপর পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিন। তবে তখন আর কোনো ক্লেনজার ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।
৪) এবার টোনিং ও ময়েশ্চারাইজিং করে নিন
মুখ ধোয়ার পর কটন প্যাড বা আঙুলের সাহায্যে টোনার ব্যবহার করুন, এতে ফেইসের ওপেন পোরস বন্ধ হয়ে যাবে। সাথে স্কিনের পি এইচ লেভেলও ব্যালেন্স হবে। সবশেষে রেগুলার স্কিনকেয়ারে যে ময়েশ্চারাইজার ইনক্লুড করেছেন, সেটা পুরো ফেইসে অ্যাপ্লাই করুন।
বোনাস টিপস
- প্রতিদিন মাল্টি মাস্কিং করা যাবে না, বরং সপ্তাহে এক থেকে দু’বার এই প্রসেস ফলো করুন
- যেকোনো মাস্ক প্রথমবার অ্যাপ্লাইয়ের আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নিন
- সবসময় অথেনটিক ফেইস মাস্ক ইউজ করুন
আশা করি সবাই মাল্টি মাস্কিংয়ের কনসেপ্ট ও প্রসেস ভালোমতো বুঝতে পেরেছেন৷ স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টের জন্য আমার ভরসার জায়গা সাজগোজ। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ