ত্বকের যত্নে টোনারের স্টেপ নিয়ে আমরা সবাই অনেক কনফিউজ থাকি, তাই না? অনেকই বলে থাকেন যে টোনার ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আসলেই কি ত্বকের যত্নে টোনার ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই? চলুন জেনে নেই, টোনার নিয়ে বিস্তারিত।
ত্বকের যত্নে টোনার কেন প্রয়োজন?
টোনারের মূল কাজ হচ্ছে ত্বকের পিএইচ (pH) কে ব্যালেন্স করা। কিন্তু কী এই pH? pH বা পটেনশিয়াল অফ হাইড্রোজেন (Potential of Hydrogen) ত্বকের অ্যাসিডিক বা অ্যালকালাইনের মাপকাঠিকে বলা হয়। অ্যাসিডিক মানে হচ্ছে অম্লীয় এবং অ্যালকালাইন মানে হচ্ছে ক্ষারীয়। ০-১৪ পর্যন্ত মাপের স্কেল দ্বারা এটি পরিমাপ করা হয়। মানুষের ত্বকে সেবামের পিএইচ সাধারণত ৪.৫ থেকে ৫.৫ পর্যন্ত থাকে, যা স্কেল অনুযায়ী অ্যাসিডিক। এই ন্যাচারাল স্কিন অ্যাসিডিটি ত্বককে ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে এবং এই পিএইচের ব্যালেন্সের উপর নির্ভর করে আমাদের ত্বকের সুস্থতা।
ত্বকে পিএইচ লেভেল কীভাবে বাড়ে কিংবা কমে?
আমরা যখন ক্লেঞ্জার দিয়ে ত্বক ক্লিন করি তখন আমাদের ত্বক সেই ন্যাচারাল পিএইচ থেকে উপরে চলে যায়। ধরুন আপনি ক্লেঞ্জার ইউজ করার পর আপনার ত্বকের পিএইচ ৮ হয়ে গেল তাহলে আপনার ত্বক চলে গেল অ্যালকালাইন পর্যায়ে। অ্যালকালাইনের ফলে ত্বকে হতে পারে ড্রাইনেস, সেনসিটিভিটি, রেডনেস ও বয়সের আগেই রিংকেল পড়ে যাবার মত সমস্যা। আবার ধরুন আপনি এমন কোনো ক্লে মাস্ক ইউজ করলেন যার পর স্কিনের পিএইচ ৩.৫ হয়ে গেল, তাহলে আপনার ত্বক চলে গেল এসিডিক পর্যায়ে। আর ত্বক এসিডিক হবার ফলে ত্বকে হতে পারে পিম্পল, রেডনেস, ইনফ্লেমেশনের মত সমস্যা।
পিএইচ কীভাবে ব্যালেন্সড থাকে?
একটা কথা আমরা সবাই জানি যে, আমাদের ত্বকের নিজ থেকে রিপেয়ার করার ক্ষমতা আছে। আমাদের ত্বকে ক্লেঞ্জার বা ক্লে মাস্ক ইউজ করার পর যখন ত্বকের পিএইচ বেড়ে বা কমে যায় তখন এমন নয় যে সে পিএইচ আবার আগের জায়গায় (৪.৫ থেকে ৫.৫) ফিরে আসবে না। আমাদের ত্বকের পিএইচ নিজে নিজে নরমাল লেভেলে ফিরে আসবে ঠিক কিন্তু অনেকটা সময় লাগবে। এই সময়টা হতে পারে ১ থেকে ১.৫ ঘণ্টা এবং আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সময়টা আরও বাড়তে থাকবে। কিন্তু আমরা ক্লেঞ্জার বা ক্লে মাস্ক ইউজ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার ইউজ করে ফেলি। ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার যখন তৈরি করা হয় তখন সেটা কিন্তু নরমাল পিএইচ (৪.৫ থেকে ৫.৫) এর জন্য বানানো হয়। যখন আমাদের ত্বক অ্যালকালাইন বা এসিডিক থাকা অবস্থায় সেই ক্রিম ব্যবহার করছি, তখন সেই প্রোডাক্ট থেকে কোনোভাবেই উপযুক্ত রেজাল্ট পাওয়া সম্ভব হয়না।
এখন কী করবেন ভাবছেন?
ত্বক তো আমাদের ক্লিন করতেই হবে, তাই না? ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে ত্বকে দেখা দিবে নানা ধরনের সমস্যা। তাই ত্বককে অবশ্যই পরিষ্কার রাখতে হবে। আর ত্বকের যে পিএইচ আনব্যালেন্স হয় সেটাকে ঠিক করার দায়িত্ব ছেড়ে দিন টোনারের উপর। টোনার ব্যবহারের ফলে আমাদের ত্বকের পিএইচ চলে আসে ন্যাচারাল ব্যাল্যান্সে, যা ৪.৫ থেকে ৫.৫ পর্যন্ত থাকে।
টোনার ত্বকের মূল কাজ পিএইচ ব্যালেন্স ছাড়াও অনেক কাজ করে থাকে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
টোনার ত্বকের যত্নে আরও যা যা করে থাকে
১. টোনার ত্বকের থার্ড স্টেপ ক্লেঞ্জিং এর কাজ করে থাকে। হ্যাঁ ঠিক পড়েছেন! ডাবল ক্লেঞ্জিং এর পর যদি আমাদের ত্বকে কোনো মেকআপ/ডার্ট থেকে থাকে তাহলে টোনার সেটা ক্লিন করে নেয়।
২. ত্বকের যত্নে আমরা যে সিরাম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করি সেগুলো যাতে স্কিনে খুব ভালভাবে ত্বকে মিশে যেতে পারে, সেজন্য টোনার আমাদের ত্বককে তৈরি করে।
৩. ত্বকের অতিরিক্ত সেবাম কন্ট্রোল করে, ফলে পোরসের আকৃতি তুলনামূলক ছোট দেখায়।
৪. অনেক সময় বেশী মেকআপ কিংবা বাহিরে ঘোরাঘুরির ফলে ত্বকে রেডনেস বা ইরিটেশন ফিল হয়। ত্বকে এমন সমস্যা সমাধানের জন্য টোনার খুব কার্যকরী একটা স্টেপ। কেননা টোনার ত্বককে সুদিং ইফেক্ট দেয়, যা ত্বকের ইরিটেশন কমাতে সাহায্য করে।
৫. উপাদান ভেদে বিভিন্ন টোনার ত্বকে বিভিন্ন কাজ করে থাকে। যেমন- ড্রাইনেস কমানো, পিম্পল কিংবা ডিহাইড্রেশান সমস্যা কমানো সহ বিভিন্ন কিছু।
টোনার কি কোনভাবে স্কিপ করা যায় না?
ত্বকের যত্নে টোনার স্কিপ করতে পারেন যদি আপনার ব্যবহার করা ক্লেঞ্জারটা পিএইচ ব্যালেন্স হয়। বাজারে এখন অনেক ধরনের ক্লেঞ্জার পাওয়া যায় যেগুলোর পিএইচ ব্যাল্যান্স (৫.৫) থাকে। কিন্তু পিএইচ ব্যাল্যান্স ক্লেঞ্জারগুলোর দাম একটু বেশীই হয়ে থাকে যা, সবাই এফোর্ট করতে পারেনা। তাই যদি আপনি পিএইচ ব্যালেন্সযুক্ত ক্লেঞ্জার ব্যবহার করে থাকেন তাহলে টোনার স্কিপ করতে পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত টোনারের বাকী উপকারিতাগুলো আপনি পাবেন না।
ত্বকের ধরন অনুযায়ী টোনার বাছাই
বাজারে ত্বকের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন টোনার পাওয়া যায়। সাধারণত যে টোনারগুলো হাইড্রেটিং ফর্মুলা যুক্ত সেগুলো নরমাল টু ড্রাই স্কিনের জন্য। আর যে টোনারগুলো টি-ট্রি, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, গ্রিন-টি বেইজড সেগুলো মূলত অয়েলি এবং একনে-প্রোন স্কিনের জন্য ভাল কাজ করে। যদি আপনি টোনারের জন্য খুব বেশী টাকা খরচ করতে না চান তাহলে একটি পিউর রোজ ওয়াটারকে টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
টোনার কখন ব্যবহার করতে হয়?
স্কিন কেয়ারের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে ক্লেঞ্জিং। এরপর পরই টোনার ব্যবহার করতে হয়। টোনার আপনি দুইভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।
১. একটা কটন প্যাডে টোনার নিয়ে ব্যবহার করা যায়।
২. একদম ক্লিন হাতে টোনার নিয়ে স্কিনে ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে হাত যেন একদম ক্লিন থাকে। অন্যথায় হাত থেকে ডার্ট/ জীবাণু ফেইসে লেগে ত্বকে অনেক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
বাজারে এখন স্প্রে বোতল যুক্ত টোনার পাওয়া যায়। সেগুলো ব্যাবহার করা আরও সহজ। ক্লেঞ্জিং করার পর ২-৩ বার স্প্রে করে নিলেই হয়ে যায় পিএইচ ব্যাল্যান্স। টোনার এপ্লাইয়ের ৩০-৪০ সেকেন্ডের পর স্কিন কেয়ারের পরবর্তী ধাপ, যেমন- সিরাম ও ময়েশ্চারাইজার এপ্লাই করে নিতে হবে।
এইতো জেনে নিলেন ত্বকের যত্নে টোনার ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি, ত্বকের যত্নে সেকেন্ড স্টেপ টোনার নিয়ে সব রকম কনফিউশন দূর করতে পেরেছি।
স্কিন ও হেয়ার কেয়ারের জন্য অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে আপনারা সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ ভিজিট করতে পারেন, যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত। আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, সুন্দর থাকবেন।