ছোটবেলা থেকেই আমরা সকলেই শুনে এসেছি, মিষ্টিজাতীয় ও ভাজাপোড়া খাবার দাঁত ও মাড়ির জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব খাবার অতিরিক্ত খেলে হতে পারে দাঁতের ক্ষয়সহ বিভিন্ন রকম মাড়ির অসুস্থতা। তাই যারা দাঁত নিয়ে সচেতন, তারা সাধারণত এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। তবে আপনারা কি জানেন? এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো দাঁত ও মাড়ির সুস্থতার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। আজকের ফিচারে আপনাদের জানাবো এমন কিছু খাবার সম্পর্কে যেগুলো সবার হাতের নাগালেই রয়েছে এবং আপনার ওরাল হেলথের জন্য দারুণ উপকারী।
দাঁত ও মাড়ির সুস্থতার জন্য উপকারী পাঁচটি খাবার
ঝকঝকে সুন্দর দাঁত কে না চান? দাঁত ও মাড়ির সুস্থতার জন্য তো আমরা কত কিছুই ব্যবহার করি। বিভিন্ন টুথপেস্ট থেকে শুরু করে দামি মাউথওয়াশ- এমনকি অনেকে দাঁত সুন্দর রাখতে সার্জারিও করতে পিছপা হচ্ছেন না। অথচ যদি কিছু খাবার প্রতিদিন নিয়ম করে খাওয়া যায়, তাহলে সহজেই অল্প খরচেই দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখা সম্ভব। চলুন জেনে নেই এমন পাঁচটি খাবার সম্পর্কে।
কচকচে সবজি
আমাদের সার্বিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে শাকসবজি কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ সেটা তো নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে যেকোনো কচকচে সবজি দাঁতে থাকা ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং দাঁত সুরক্ষিত রাখে।যেমনঃ প্রতিদিন যদি গাজর, ব্রকলি, মরিচ ইত্যাদি খাবার, খাদ্যতালিকায় যোগ করা যায় তাহলে দেখবেন আপনারা কোনো প্রোডাক্ট বা ট্রিটমেন্ট ছাড়াই দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখতে পারবেন। তাই প্রতিদিন এই সবজিগুলো খাওয়ার চেষ্টা করুন।
দুধের তৈরি খাবার
দুধ যে সুষম খাদ্য হিসেবে পরিচিত তা নিশ্চয়ই জানেন। দুধ, দই, পনির ও দুধের তৈরি অন্যান্য খাবার দাঁতের অ্যানামেল মজবুত করতে সাহায্য করে। কারণ এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন। এই ক্যালসিয়াম আমাদের দেহের হাড় ও দাঁতে জমা থাকে এবং তা দাঁত ও হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিতে দাঁতের ক্ষয় থেকে শুরু করে দাঁত পড়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। তাই দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায় প্রতিদিন রাখতে পারেন দুধ বা দুধের তৈরি খাবার।
বাদাম
সুন্দর ত্বক ও মজবুত চুল পেতে বাদামের উপকারিতা অনেক। চিনি-লবণ মুক্ত, আঁশ ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ একটি খাবার হচ্ছে বাদাম। এটি আমাদের দাঁতের অ্যানামেলকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও বাদাম চিবানো লালার নিঃসরণ বাড়ায়, যা দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। তাই দাঁত ও মাড়ির সুস্থতার জন্য বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। নিজের পছন্দের যেকোনো বাদাম এক মুঠো খেতে পারেন, আবার মিক্সড বাদামও খেতে পারেন।
পেঁয়াজ ও রসুন
যে দুটো উপকরণ ছাড়া রান্না করা বেশ কঠিন সেগুলো হলো পেঁয়াজ ও রসুন। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না যে, পেঁয়াজ ও রসুন আমাদের দাঁতের জন্যও বেশ উপকারী। পেঁয়াজ ও রসুন দুটোই মুখের ব্যাকটেরিয়ার কারণে হওয়া মাড়ির প্রদাহ, দাঁতের ক্ষয়, ক্যাভিটি ইত্যাদি দূর করতে সহায়তা করে।
সবুজ শাক-সবজি
নানা রকম সবুজ শাক, যেমন- লেটুস, পালং শাক ইত্যাদিতে আছে ফোলাট যা দাঁতের অ্যানামেল শক্ত করে এবং সেই সাথে মাড়ির রোগ ও প্রদাহ কমায়। অন্যান্য ফোলাট ধরনের খাবারের মধ্যে রয়েছে ডাল, অ্যাসপারাগাস ও কালো মটর ইত্যাদি। তাই প্রতিদিনের খাবারে সবুজ শাক-সবজি রাখা উচিত, দাঁত ও মাড়ির সুস্থতার সহজ সমাধান হিসেবে।
এই ছিলো দাঁত ও মাড়ির সুস্থতার জন্য উপকারী খাবার নিয়ে আজকের আলোচনা। আশা করি আজকের এই আলোচনা আপনাদের দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায় সহায়ক হবে। মনে রাখবেন, আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা কেমন তার উপরেই কিন্তু আপনার দাঁত ও মাড়ির সুস্থতা অনেকটা নির্ভর করছে। তাই অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার বর্জন করুন এবং দাঁতের জন্য ভালো এমন খাবারগুলো বেশি বেশি খান।
লিখেছেনঃ নূরী শাহারীন
ছবিঃ সাটারস্টক, সাজগোজ