জন্মগত ত্রুটি নির্নয়, প্রতিরোধ এবং সমাধান যেকোন প্রেগনেন্সিতে চিকিৎসকের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সাধারণত প্রতি ১০০ জন নবজাতকের মধ্যে তিন জনের বড় ধরনের জন্মগত ত্রুটি থাকতে পারে। আজ আপনাদের জন্মগত ত্রুটির প্রকারভেদ ও নির্ণয় নিয়ে জানাচ্ছি। আগামীতে জন্মগত ত্রুটি | কারণ ও প্রতিকার (পর্ব ২) নিয়ে আপনাদের জানাবো…
সমস্যার প্রকারভেদ অনুযায়ী জন্মগত ত্রুটিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় –
(১) Structural প্রতিবন্ধকতা।
(২) Functional প্রতিবন্ধকতা।
Structural প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন অংগপ্রত্যংগ গঠনগত সমস্যা, যেমন –
(১) হাত-পায়ের গঠনগত ত্রুটি
এ ত্রুটি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, যেমন polydactyly, syndactyly, aplasia or dysplasia of limbs; নিচে ছবিতে syndactyly ত্রুটি দেখানো হল –
(২) কার্ডিয়াক সমস্যা
কার্ডিয়াক সমস্যার মধ্যে রয়েছে হার্টের ভালব এর সমস্যা কিংবা পর্দায় ছিদ্র থাকা। ছবিতে হেলদি হার্টের ভালব ও সমস্যাযুক্ত হার্টের ভালব দেখানো হল –
(৩) নার্ভের বিভিন্ন ধরনের আ্যবনরমালিটি
নার্ভের বিভিন্ন ধরনের আ্যবনরমালিটির মধ্যে আছে anencephali(মাথার খুলি অসম্পুর্ন থাকা), microcephali, spina bifida, hydrocephali( ব্রেনের ভিতর তরল পদার্থ জমা হয়) ইত্যাদি।
Functional প্রতিবন্ধকতারও রয়েছে বিভিন্ন প্রকারভেদ, যেমন-
(১) ক্রোমোজোমাল
ক্রোমোজোমাল প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে down syndrome ও থ্যালাসেমিয়া (thalassaemia)।
(২) মেটাবলিক
মেটাবলিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে hypothyroidism ও phenylketonuria; ছবিতে hypothyroidism দেখানো হল –
[picture]
কখন সমস্যাগুলো বোঝা যায়?
সাধারণত একেকটি সমস্যা একেক সময়ে বোঝা যায়। কিছুকিছু সমস্যা জন্মের পর পরই দেখা যায়, যেমন, হাত পায়ের আঙুল কম বা বেশি থাকা, তালু কিংবা ঠোট ফাটা, অসম্পূর্ণ মাথার খুলি ইত্যাদি। কিছু সমস্যা শিশুর বাড়ন্ত অবস্থায় অথবা পরিণত বয়সে ধরা পড়ে, যেমন- কার্ডিয়াক বা রেনাল অ্যাবনরমালিটি, শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ জনিত অসুবিধা, জীনগত বা ক্রোমোজোমাল প্রবলেম (থ্যালাসেমিয়া,হিমোফিলিয়া)।
জন্মের আগেই ডায়াগনোসিস সম্ভব?
কনসিভের আগেই হিস্ট্রির মাধ্যমে রিস্ক নির্নয় এবং প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে “হাই- রিস্ক” মা তারা, যাদের-
- আগে এক বা একাধিক ত্রুটি সম্পন্ন বাচ্চা রয়েছে।
- আন-কনট্রল্ড ডায়াবেটিস, হাইপো/ হাইপার থাইরয়েডিজম বা এপিলেপসিতে আক্রান্ত।
- বিভিন্ন ধরনের অষুধ খাচ্ছেন, যা বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর।
- এ্যালকোহোল বা ধুমপানে আসক্ত।
- মায়ের বয়স ৩৫ এর বেশি, ইত্যাদি।
এছাড়া আধুনিক ডায়াগনোসিস ব্যবস্থা আছে যা থেকে জন্মের পূর্বে কিছু সমস্যা নির্ণয় করা যায়।
- হাই রেজুল্যুশন আল্ট্রাসোনোগ্রামের মাধ্যমে ভ্রুণের প্রথম তিন মাসেই নার্ভাস সিস্টেমের অনেক আ্যাবনরমালিটি বা রিস্ক বোঝা যায়, যেমন- Anencephali, increase nuchal thickness etc.
২০ থেকে ২৪ সপ্তাহের আল্ট্রাসোনোগ্রামে বাচ্চার কার্ডিয়াক, রেনাল,হাড়/অস্থি,পরিপাকতন্ত্রসহ অন্যান্য বেশিরভাগ ত্রুটি বোঝা যায়। তাই যেকোন প্রেগন্যান্ট মায়েদের এসময়ে একটি আ্যানোম্যালি স্ক্যানিং দেয়া হয়।
- ক্রোমোজোম এবং জীনগত সমস্যা সনাক্ত করতে রক্তের বায়্যোক্যামিক্যাল টেস্ট এবং আ্যামনিওটিক ফ্লুইড আ্যানালাইসিস, CVS(chorionic villus analysis)করা হয়। এসব টেস্ট এখন বাংলাদেশেই করা সম্ভব।
লিখেছেন – ডা: নুসরাত জাহান
সহযোগী অধ্যাপক (অবস-গাইনী)
ডেলটা মেডিকেল কলেজ, মিরপুর, ঢাকা।