সৌন্দর্য সচেতন নারীদের জন্য মুখের লোম খুবই অস্বস্তিকর। তারা যে কোন উপায়ে পরিত্রাণ পেতে চান এই পরিস্থিতি থেকে। সাধারণত ঠোঁটের উপরে আর নীচে, থুতনির কাছে লোম দেখা যায়। এখন হয়ত জানতে ইচ্ছা হচ্ছে কেন হয় এই লোম? মেডিকেলের ভাষায় অতিরিক্ত লোম হওয়ার প্রবণতাকে ‘hirsutism’ বলে। ‘hirsutism’ বংশগত হতে পারে। কিন্তু যদি জেনেটিকাল প্রবলেম না হয় তাহলে আর কি কারণ থাকতে পারে? চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে মুখের অবাঞ্ছিত লোম হওয়ার ২টি কারন আছে। testosteron বা এড্রেনাল হরমন বেশি উৎপন্ন হলে এমনটি হয়। তার মানে পুরুষালী হরমোন আপনার শরীরে বেশি আছে। মেনোপোসের সময় হরমোনের পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তন শরীরের অন্যান্য পরিবর্তন ঘটাতে পারে যেমন মুখের অতিরিক্ত লোম। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় হরমোনাল ডিজঅর্ডার বা কোন ওষুধের রিয়েকশানের কারণে হতে পারে। তাই মুখের লোম নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে আমাদের কোন হাত নেই বড়জোর শুধু সাময়িকভাবে এর থেকে পালিয়ে থাকা যায়। অনেক ধরনের উপায় আছে এসব লোম উঠানোর জন্য, কিন্তু হয়ত একটু দ্বিধায় ভোগেন মুখের জন্য কোন পদ্ধতি নিরাপদ হবে এটা ভেবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি বলবো ওয়াক্সিং এর থেকে ব্লিচিং করা ভালো। কারণ অনেকেরই দেখা যায় থ্রেড করার কয়েকদিনের মাথায় আবার ছোট্ট ছোট্ট লোম গজানো শুরু করে যা খুবই দৃষ্টি কটু। আবার অনেক সময় পরের বার লোম ওঠার সময় আর ও ঘন মোটা হয়ে ওঠে, এমনও দেখা যায় মুখে প্লাক করতে করতে ওই জায়গাটা কেমন জানি কালো হয়ে যায়। ব্লিচিং ক্রিমের ক্ষেত্রে এইসব কোন ঝামেলাই নেই উপরন্তু কারও সাহায্য ছাড়ায় ঘরে বসে সেরে নিতে পারেন অবাঞ্ছিত লোম দূরীকরণের কাজটি। অনেকে বলতে পারেন কেমিক্যাল ব্যবহার নিরাপদ নয় আমিও মানি কথাটি। আর মাসে একবার ব্লিচং করার লিমিট বজায় রাখলে সাধারণত সমস্যা হয় না। সবচেয়ে আশার কথা আজকাল মার্কেটে বিভিন্ন হারবাল ব্লিচং ক্রিম পাওয়া যাচ্ছে, যা অত্যন্ত নিরাপদে আপনার মুখের লোমের রঙ পরিবর্তন করে আপনার মুখটিকে আরও ফর্সা উজ্জ্বল করে তোলে। এবার আসুন জেনে নিই পার্লারে না গিয়ে বাসাতেই কিভাবে মুখে ব্লিচ করবেন।
সতর্কতার সাথে ব্লিচিং ক্রিম কিনুনঃ
নিজের পছন্দ অনুযায়ী ব্লিচিং ক্রিম নির্বাচন করুন। আমাদের দেশে Jolen আর Fem অনেক বেশি জনপ্রিয়। আজকাল আবার ফেম এর বিভিন্ন ফ্লেভারও পাওয়া যাচ্ছে। টারমারিক হারবাল ব্লিচ, গোল্ড ক্রিম ব্লিচ, ফেয়ারনেস ক্রিম ব্লিচ, হারবাল ব্লিচ ক্রিম। স্যাফরন আর অক্সি ব্লিচ ফেম এর নতুন এডিশন। গোল্ড ক্রিম ব্লিচ মুখে স্বর্ণালি আভা আনে, ফেয়ারনেস ক্রিম ব্লিচ মুখের ত্বক ফর্সা করে আর হারবাল ক্রিম ব্লিচ এ ১৬টি মূল্যবান হার্ব আছে যা প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্ন নিবে। অনেকেই হয়ত জানেন না ফ্যাশান হার্বসের মাংগো ব্লিচ নামের একটা ব্লিচিং ক্রিম আছে। ওইটাও ভালো। শুধু কেনার সময় খেয়াল রাখবেন যে দোকান থেকে কিনছেন সেটা যেন বিশ্বাস যোগ্য দোকান হয়।
প্রোডাক্টের সাথে পরিচিতিঃ
কিছু কিছু ব্লিচিং ক্রিমের বড় মোড়কের ভেতর আরও ছোট ১টি প্যাকেট আর ২টি প্লাস্টিকের বোতল আছে। একটি প্যাকেটে প্রি-ব্লিচ ক্রিম যা প্রোটেকশন দিবে, প্লাস্টিকের বোতলের অ্যাকটিভেটর আর ব্লিচিং ক্রিম গায়ের রঙ ফর্সা করবে। আবার কিছু প্যাকেটে প্রি-ব্লিচ ক্রিম দেয়া থাকেনা।
ব্লিচিং এর জন্য নিজেকে তৈরী করে নিনঃ
পেছনের চুল গুলোকে রাবার দিয়ে আর সামনের চুল গুলোকে হেয়ার ব্যান্ড দিয়ে ভালো ভাবে আটকে নিন। ক্লিনজিং লোশন দিয়ে ভালো ভাবে মুখ পরিষ্কার করুন। কিন্তু মনে রাখবেন ফেস ওয়াশ বা সাবান ব্যবহার করবেন না। তারপর মুখে প্রি-ব্লিচ ক্রিম লাগিয়ে নিন।
ব্লিচিং ক্রিমের মিশ্রণ তৈরি করুনঃ
একটি চীনা মাটির পাত্র নিন। প্যাকেটের মধ্যে দেয়া স্পাচুলা দিয়ে পরিমাণ মত ক্রিম আর অ্যাকটিভেটর নিন। তারপর ক্রিম আর অ্যাকটিভেটর ২ মিনিট ধরে ভালো ভাবে মেশান।
মিশ্রণের ব্যবহারঃ
ঐ স্পাচুলা বা ব্রাশের সাহায্যে মিশ্রণ মুখে লাগান। তবে যেখানে লোম মোটা বেশি হয় যেমন ঠোঁটের উপরে ক্রিম আগে লাগান। তারপর আস্তে আস্তে পুরো মুখে আর গলায় লাগিয়ে নিন। চোখের আশপাশ আর ভ্রুতে যেন না লাগে সেটা খেয়াল রাখবেন। হালকা চুলকানি হতে পারে সেটা খুবই স্বাভাবিক। লাগানোর পর ৭ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর একটু খানি উঠিয়ে দেখুন লোমের রঙ পরিবর্তন হয়েছে কিনা। না হলে আরও ৩মিনিট অপেক্ষা করুন। কিন্তু কোন ভাবেই যেন ১০ মিনিটের বেশি না হয়।
অপেক্ষার পালা শেষঃ
১০মিনিট পর ঠাণ্ডা পানিতে কটন প্যাড ভিজিয়ে মুখ আর গলার পুরো মিশ্রণ তুলে ফেলুন। এরপর ভাল কোন moisturizing ক্রিম লাগিয়ে নিন। দেখুন তো কেমন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে চেহারাটা।
সতর্কতাঃ
০১ ব্লিচিং ক্রিম কেনার সময় অবশ্যই মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেখবেন।
০২ পুরো মুখে লাগানোর আগে কানের গোড়ায় অল্প করে লাগিয়ে দেখবেন কোন ধরণের অস্বস্তি হচ্ছে কিনা।
০৩ মাসে এক বারের বেশি ব্লিচ করবেন না।
০৪ ব্লিচ করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুখে সাবান বা ফেস ওয়াস ব্যবহার করবেন না।
উপরে দেয়া তথ্য অনুযায়ী ব্লিচ করলে আপনি নিরাপদে পেতে পারেন মসৃণ দীপ্তিময় মুখমণ্ডল। তবে যদি অতিরিক্ত লোম গজাতে থাকে তাহলে আমি বলবো অতিসত্বর ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারণ এই অতিরিক্ত লোম গজানোর প্রবণতা শারীরিক অসুস্থতার কারনেও হতে পারে। তাই আগে জানতে হবে মুখে অবাঞ্ছিত লোম হওয়ার কারণ তারপর এর থেকে পরিত্রানের উপায় খুঁজতে হবে।
লিখেছেনঃ রোজেন
মডেলঃ মারওয়া বিনতে শ্রেয়া