আমাদের অনেকেরই স্কিনে লালচে পিম্পলের মতো দেখা যায়। কখনো কখনো এই পিম্পলে বেশ ব্যথা হয়। কিন্তু আমরা বুঝতে পারি না এমনটি কেন হচ্ছে। এই সমস্যাকে বলা হয় ব্লকড হেয়ার ফলিকল। এটি কী, কেন হয়, কীভাবে প্রিভেন্ট করা যায় এমনই কিছু তথ্য নিয়ে আজ জানাবো আপনাদের।
ব্লকড হেয়ার ফলিকল কী?
হেয়ার ফলিকল পোরসের মতো দেখতে একটি স্ট্রাকচার যা হেয়ার রুট ও স্ট্র্যান্ডের আশেপাশে হয়ে থাকে। স্কিনের টপ টু লেয়ারে হেয়ার ফলিকল এক্সিস্ট করে। আমাদের ফেইস, বডি ও হেডের সকল হেয়ার গ্রো করে এই হেয়ার ফলিকল থেকেই। ব্লকড হেয়ার ফলিকল বাম্পসের মতো দেখতে ছোট ছোট পিম্পল, যেগুলো স্কিনের নিচে ফর্ম করে। এগুলো অনেক সময় লাল রঙের হয়, তখন বেশ ব্যথা করে। ব্লকড হেয়ার ফলিকল স্কিনের একটি ইনফ্ল্যামেটরি কন্ডিশন। যেখানে হেয়ার ফলিকল সোয়েট, এক্সেস অয়েল ইত্যাদির কারণে ব্লক হয়ে যায়। যার কারণে ব্রেকআউট বা পিম্পল দেখা যায়। এই স্কিন কন্ডিশনকে মেডিকেল টার্মিনোলজিতে Hydradenitis Superlativeও বলা হয়। এটির আরও একটি নাম হচ্ছে Acne Inversa।
এই সমস্যাটি স্কিনের সেইসব পার্টে দেখা যায় যেখানে দুটি পার্ট ঘষা লাগে এবং সোয়েট প্রোডিউস হয়। এমন জায়গাগুলো হচ্ছে – আর্মপিটস, ব্রেস্টের নিচে, ইনার থাই ও groin (কুঁচকি) ও বাটকস। শুরুতে সাধারণত এটি পিম্পলের মতো একটি স্ট্রাকচারে থাকে এবং ধীরে ধীরে সিস্টের মতো আকৃতি ধারণ করে।
এই সমস্যা কেন হয়?
অনেকেই ভাবেন, প্রোপার হাইজিন মেনটেইন না করলে হেয়ার ফলিকল ব্লকড হয়ে যায়। এই ধারণা সঠিক নয়। এটা কিন্তু ছোঁয়াচেও নয়। হেয়ার ফলিকল ব্লকড হওয়ার পেছনে যে কারণগুলো দায়ী-
১) পিউবার্টি বা মেন্সট্রুয়েশনের কারণে যখন হরমোনাল চেঞ্জ হয় তখন সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড অ্যাকটিভ হয়ে যায়। এই কারণে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের হেয়ার ফলিকল ব্লক হওয়ার চান্স ৩ গুণ বেড়ে যায়।
২) জেনেটিক্স এই সমস্যা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আপনার বাবা বা মা যদি এই সমস্যায় ভোগেন, তাহলে আপনিও ভবিষ্যতে এতে আক্রান্ত হতে পারেন। গড়ে ৩ জন ব্যক্তির মধ্যে ১ জন এই সমস্যায় ভোগেন।
৩) বেশিরভাগ সময় এই সমস্যা দেখা দেয় ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে। ইয়াং এইজে এটি ডেভেলপ হওয়ার পর যদি না সারে, তখন এর কন্ডিশন দিন দিন খারাপ হতে পারে।
এছাড়া ওবেসিটি, স্মোকিং, এক্সেস হিট এক্সপোজার, সোয়েটিং ইত্যাদি কারণেও ব্লকড হেয়ার ফলিকলস এর প্রবলেম দেখা দিতে পারে।
সমাধানের কোনো উপায় আছে কি?
ব্লকড হেয়ার ফলিকল এর সমস্যা দেখা দিলে প্যানিকড না হয়ে ঘরোয়া কিছু টিপস ফলো করতে হবে। যেমন-
১) ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। এতে স্কিন ব্রিথ করতে পারে।
২) এই এরিয়াগুলো অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সোপ দিয়ে ওয়াশ করে নিন।
৩) পিম্পল স্কুইজ বা পপ করা যাবে না।
৪) ব্যথা কমানোর জন্য গরম পানি ব্যবহার করুন।
৫) চেষ্টা করুন শুষ্ক ও ঠান্ডা জায়গায় থাকতে, এতে ঘাম কম হবে।
৬) যে এরিয়ায় এই প্রবলেম দেখা দিয়েছে সেখানে ওয়্যাক্স করা যাবে না। এতে স্কিন ইরিটেটেড হয়ে যাবে। যদি শেইভ করতে চান, তাহলে অবশ্যই সেই এরিয়াটুকু অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সোপ দিয়ে ওয়াশ করে নিতে হবে।
৭) অ্যালকোহল, প্যারাবেন, বেকিং সোডা, ফ্রেগ্রেন্স ও হার্শ ইনগ্রেডিয়েন্টযুক্ত কোনো ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করা যাবে না।
কীভাবে প্রিভেন্ট করা যায়?
সম্পূর্ণভাবে ব্লকড হেয়ার ফলিকল এলিমিনেট করা পসিবল নয়। তবে কিছু কাজ করা যেতে পারে। যেমন-
১) স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
ব্লকড হেয়ার ফলিকল প্রিভেন্ট করার জন্য কোনো স্পেশাল ডায়েট নেই। তবে হ্যাঁ, কিছু খাবার খেলে এবং কিছু বাদ দিলে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই দূরে থাকা সম্ভব। ইনফ্ল্যামেশন কমাতে হেলদি ওমেগা থ্রি যুক্ত খাবার যেমন- স্যালমন, টুনা, ম্যাকারেল ও সার্ডিন মাছ, বাদাম ও শস্যবীজ বেশ হেল্পফুল হতে পারে। দুধ ও চীজ ইনসুলিন লেভেল বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে হরমোন ফ্ল্যাকচুয়েট হয়ে হেয়ার ফলিকল ব্লকড হতে পারে। আনহেলদি ফুড, লো ফাইবার ফুড, প্রসেসড প্রোডাক্ট খাওয়া একদম কমিয়ে দিতে হবে।
২) ধূমপান না করা
একবার যদি ব্লকড হেয়ার ফলিকলের সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে স্মোকিং এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই অভ্যাস দূর করার চেষ্টা করুন।
৩) শেভ না করা
এই প্রবলেম দেখা দিলে যদি রেজর দিয়ে শেভ করা হয় তাহলে রেডনেস, পেইন ও সোয়েলিং আরও বেড়ে যেতে পারে। ওয়্যাক্সিংও স্কিনে ইরিটেশন তৈরি করতে পারে। যদি হেয়ার রিমুভ করতেই হয় তাহলে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
৪) ঢিলেঢালা পোশাক পরুন
পোশাক পরার পর যদি স্কিনে আরামবোধ না হয় তাহলে ইরিটেশন হবে। সেই সাথে টাইট পোশাকের কারণে ব্লাড ফ্লোতেও প্রবলেম হতে পারে। যেসব ফেব্রিকে সোয়েট ট্র্যাপ হয়ে থাকে সেগুলোর কারণে ক্লগড এর সমস্যা বেশি হয়।
৫) ঘাম যেন কম হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন
হিটের কারণে সোয়েট বেশি হয়। এই দুটোর কারণেও সমস্যাটি আরও বেড়ে যেতে পারে। তাই দিনে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৬) স্ট্রেস কমাতে এক্সারসাইজ করুন
এই কন্ডিশনকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে স্ট্রেস। তাই স্ট্রেস লিভিং অ্যাক্টিভিটিজ যেমন- এক্সারসাইজ, মেডিটেশন ও ইয়োগা হেল্পফুল হতে পারে। ব্যায়াম করার পর ঘেমে যাওয়ার কারণে আউটফিট একদম ভিজে যায়। তাই যত দ্রুত সম্ভব পোশাক বদলে ফেলুন।
৭) পরিচ্ছন্ন থাকুন
হেয়ার ফলিকলে যদি ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে তাহলে ফলিকল ক্লগড হয়ে যেতে পারে। এ থেকে ইনফেকশনও হতে পারে। এটি প্রিভেন্ট করার জন্য দিনে অন্তত দুইবার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সোপ ব্যবহার করুন। অবশ্যই পরিষ্কার কাপড় ও তোয়ালে ব্যবহার করবেন। নিজের ব্যবহারের তোয়ালে ও পোশাক কারও সাথে শেয়ার করবেন না। বেনজয়েল পার অক্সাইড যুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম ও জেল ব্যবহার করতে পারেন।
ব্লকড হেয়ার ফলিকল কি ছোঁয়াচে?
না। এটি ছোঁয়াচে নয়। এই সমস্যায় ভুগছেন এমন কারও সংস্পর্শে আসলে এই কন্ডিশন দেখা দিবে এমনটি নয়।
আশা করি ব্লকড হেয়ার ফলিকল নিয়ে আর কোনো কনফিউশন নেই। এই প্রবলেম যারা ফেইস করছেন, তারা উপরের পরামর্শগুলো ফলো করলে উপকার পাবেন। যদি এতেও সমাধান না পান, তাহলে অবশ্যই ডার্মাটোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করে নিবেন। সেই সাথে ব্যবহার করতে হবে অথেনটিক প্রোডাক্টস। অথেনটিক স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপ প্রোডাক্টস পাবেন সাজগোজে। সাজগোজের কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।
ছবিঃ সাজগোজ, হেলথলাইন, সাটারস্টক