রক্তে চিনির পরিমাণ কতটুকু ঘরে বসে কিভাবে জানবেন?

কিভাবে জানবেন রক্তে চিনির পরিমাণ কতটুকু?

Glucometer

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বাসায় থাকতে বলা হচ্ছে বার বার। এই সময়ে বাইরে যেয়ে ব্লাড সুগার পরিমাপ করাটাও নিরাপদ নয়। কিন্তু বাসায় বসে কিভাবে জানবো রক্তে চিনির পরিমাণ কতটুকু, সেটাই ভাবছেন তো? অনেকেই ভাবেন একমাত্র ডায়বেটিস হলে রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যায় আর তখনই ব্লাড সুগার চেক করতে হয়! কিন্তু এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক না। বিভিন্ন কারণে, বিভিন্ন বয়সে মানুষের শরীরে রক্তের গ্লুকোজ বা চিনির পরিমাণ কম বেশি হতে পারে। এর সাথে সাথে আপনি হয়তো বুঝতেও পারবেন না আপনার নার্ভ সিস্টেম, শরীরের কোষ এবং বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। তাই ডায়বেটিস রোগী ছাড়াও আমাদের সবারই রক্তে চিনির পরিমাণ কতটুকু সেটা চেক করা উচিত এবং এটা নিয়ন্ত্রণে কী কী করা যেতে পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। কথায় আছে না “স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল”! সুস্থ থাকার জন্য একটু সচেতন তো থাকতেই হবে। বাসায় বসে খুব সহজে কিভাবে ব্লাড সুগার পরিমাপ করবেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই চলুন!

রক্তে চিনির পরিমাণ মাপার উপায়

গ্লুকোমিটার

তৎক্ষণাৎ ব্লাড সুগার পরিমাপ করার জন্য গ্লুকোমিটার ব্যবহার করা হয়। যাদের বাসায় ডায়বেটিস পেশেন্ট আছে, তাদের কাছে এই ইকুইপমেন্টটি খুবই পরিচিত। খুব সহজে বাসায় বসেই ব্যথাহীন পদ্ধতিতে রক্তে চিনির পরিমাণ পরিমাপ করা যায়। মাত্র এক ফোঁটা রক্তই ব্লাড সুগার নির্ণয়ের জন্য পর্যাপ্ত। বার বার হাসপাতালে যাওয়ার চাইতে একটি গ্লুকোমিটার কেনা অনেক বেশি সুবিধাজনক ও সাশ্রয়ী। আকারে ছোট হওয়ায় ব্যাগে ক্যারি করাও যায়। বাইরে বেড়াতে গেলে বা যেখানে আশেপাশে ল্যাবরেটরি নেই, সেখানে গ্লুকোমিটারই একমাত্র ভরসা।

গ্লুকোমিটার কাদের জন্য?

শুধু যে ডায়বেটিস রোগীরাই রক্ত পরীক্ষা করবেন, এমনটি নয়। তারা তো অবশ্যই করবেন, সেই সাথে আমাদের সবারই এই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ঝুঁকি এড়ানোর জন্য নিয়ম করে রক্তে চিনির পরিমাণ মাপা উচিত। আমাদের এখনকার লাইফস্টাইল, অফিসে দীর্ঘ সময় বসে থাকা, জাঙ্ক ফুডের প্রতি আসক্তি, ব্যায়াম না করা এগুলোর জন্য অল্প বয়সে ব্লাড সুগার বেড়ে যায়। অনেকের আবার উল্টোটা হয় মানে ব্লাড সুগার কমে যায়। তাই সবারই চেক করা উচিত যে রক্তে চিনির পরিমাণ ঠিক আছে কি না!

কিভাবে বুঝবেন আপনার রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়ছে বা কমছে?

শারীরিক কিছু উপসর্গ দেখে বুঝতে পারবেন যে আপনার রক্তে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়েছে বা কমেছে। আর নিয়ম করে যদি এই সিম্পল টেস্টটা বাসায় করে নেন, তাহলে আগে থেকেই সাবধান থাকতে পারবেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই গ্লুকোমিটার আপনাকে দেখিয়ে দেবে রক্তের সুগারের মাত্রা। তারপরও শরীরের কয়েকটা সিম্পটম বা উপসর্গ সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো।

রক্তে চিনির পরিমাণ কমে গেলে যে সমস্যাগুলো হয়-

১) মাথা ঘোরা ও মাথা ব্যথা

২) হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া

৩) ক্লান্তি ও বিভ্রান্তির অনুভূতি

৪) হটাত শরীর ঘেমে যাওয়া ইত্যাদি

রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে গেলে যে সমস্যাগুলো হয়-

১) ঘন ঘন প্রস্রাব

২) ক্ষত সারতে সময় লাগা

৩) মুখের ভেতর শুকিয়ে যাওয়া

৪) কিছুক্ষণ পর পর খিদে পাওয়া

৫) রেস্ট নিলেও ক্লান্তি অনুভব করা

৬) কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি।

ব্লাড গ্লুকোজ লেভেল - shajgoj.com

এসব লক্ষণ কখনোই অবহেলা করা ঠিক না। অবশ্যই রক্তে সুগারের মাত্রা টেস্ট করিয়ে নিতে হবে। কোনো সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও ওষুধের দ্বারা রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করার মাত্রা কতটুকু কন্ট্রোল হলো, সেটাও বোঝা যাবে এই টেস্টের মাধ্যমে।

গ্লুকোমিটার ব্যবহার করার পদ্ধতি

প্রথমে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে গ্লুকোমিটার চালু করতে হবে। গ্লুকোমিটারে স্ট্রিপ প্রবেশ করিয়ে নিন। আঙুলের ডগাটি তুলা দিয়ে মুছে নিতে হবে। আঙুলের ডগায় ল্যানসেট (Lancet) বা জীবাণুমুক্ত সূচ দিয়ে ফুটিয়ে নিন। রক্তের ফোঁটা বের হয়ে আসলে এটি স্ট্রিপের সাদা অংশে স্থাপন করতে হবে। কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করতে হবে। রক্তশর্করা বা রক্তে চিনির পরিমাণ গ্লুকোমিটারের ডিজিটাল স্ক্রিনে ফুটে উঠবে। ব্যস, এভাবে খুব সহজেই জেনে নিতে পারেন ব্লাড সুগারের মাত্রা।

গ্লুকোমিটার ব্যবহারের সাধারণ ভুল কোনগুলো?

গ্লুকোমিটারের সাহায্যে রক্তে চিনির মাত্রা পরিমাপের আগে অবশ্যই হাত ধুয়ে নিতে হবে। হাত না ধুলে মাত্রা ভুল আসতে পারে। মনে রাখবেন, খাওয়ার পর এটা মাপার আগে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। অনেকেই খাওয়ার তিরিশ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পরেই মাপতে শুরু করেন, কিন্তু এতে ঠিক রেজাল্ট আসে না। আবার, সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করার জন্য ও অনেকদিনের পুরানো স্ট্রিপ ব্যবহারের কারণে ফলাফল ভুল আসতে পারে। অনেক সময় চেপে রক্ত বের করলে রক্তের চাইতে ইন্টারস্টিশল ফ্লুইড (Interstitial fluid) বেশি বেরিয়ে আসতে পারে। তাই এদিকেও খেয়াল রাখবেন। রক্ত নেওয়ার সময় আঙ্গুলের শেষ মাথায় ফোঁটা করতে হবে যাতে ব্যথা না লাগে। কারণ এখানে স্নায়ু কম থাকে।

তাহলে জানা হয়ে গেল, রক্তে চিনির পরিমাণ কতটুকু সেটা পরিমাপ করার সহজ উপায় সম্পর্কে। আমাদের ব্যস্ত জীবনে সুস্থ থাকার জন্য বেশ কার্যকরী একটি ইকুইপমেন্ট এটি। অনেকেই স্ট্রিপ কোডিং বিহীন, খুব সহজে ব্যবহার করা যায়, তাড়াতাড়ি নির্ভুল রেজাল্ট দেবে এমন একটি গ্লুকোমিটার খোঁজেন। প্রয়োজনীয় এই জিনিসটি আপনি এখন সাজগোজে পেয়ে যাবেন। তাই এই ক্রাইসিসের সময়ে ঘরে বসেই ব্লাড সুগার মাপুন, বাসায় থাকুন, নিরাপদে থাকুন!

SHOP AT SHAJGOJ

     

    ছবি- সংগৃহীত: ওয়েলদি.কম

    8 I like it
    2 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort