আজকাল অনেক পার্লারে বা জিমেই বডি ম্যাসাজের নানান রকম অফার থাকে। অনেকবারই হয়তো দেখেছেন এগুলো। কিন্তু সব সময়েই অপ্রয়োজনীয় ভেবে এড়িয়ে গিয়েছেন বডি ম্যাসাজের অফারগুলো। বাইরের দেশগুলোতে বডি ম্যাসাজের প্রচলণ দেখেও হয়তো বিলাসীতাই মনে হয়েছে আপনার। আসলেই কী বডি ম্যাসাজের কোন উপকারিতা আছে? এমন প্রশ্ন নিশ্চয়ই অনেকবারই জেগেছে মনে। চলুন জেনে নেওয়া যাক বডি ম্যাসাজের উপকারিতা সম্পর্কে।
বডি ম্যাসাজের উপকারিতা
১. শরীরের রক্ত চলাচল এবং ব্যথা দূরীকরণ
ব্যথা কমাতে বডি ম্যাসাজের জুড়ি নেই। বডি ম্যাসাজের মাধ্যমে শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং ব্যথায় আক্রান্ত স্থানের টিস্যুগুলো স্বাভাবিক হয়ে আসে ধীরে ধীরে। যার ফলে ব্যথাও কমতে থাকে বেশ দ্রুত। আর তাই পিঠ ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, পা ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে বডি ম্যাসাজ বেশ কার্যকরী একটি উপায়। বডি ম্যাসাজ শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। বিভিন্ন রকমের বডি ম্যাসাজ শরীরের বিভিন্ন স্থানের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
২. দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ কমাতে বডি ম্যাসাজ
ম্যাসাজের মাধ্যমে মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়। প্রচন্ড চাপের পরে কিছুক্ষণ আরামদায়ক ম্যাসাজ আপনাকে করে তুলবে ঝরঝরে। বডি ম্যাসাজ করালে শরীরের স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের (Stress Hormone Cortisol) মাত্রা কমে মানসিক চাপ অনেকটাই দূর হয়ে যায়।
৩. প্রয়োজন বুঝে আপনার ম্যাসাজ
শরীরে ব্যথা বা শারীরিক-মানসিক অবসাদ দূর করা যায় বডি ম্যাসাজে। এতে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রাকৃতিক তেল, এসেন্স ত্বকের জন্য উপকারী। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন প্রেসার পয়েন্টে ব্যবহৃত হয় স্টোন বা হট কমপ্রেস (Hot Compress)। এই হট কমপ্রেস একটি থলির মতো যাতে বিভিন্ন ভেষজ উপাদান থাকে যা হালকা গরম তাপে আপনার শরীরের বিভিন্ন প্রেসার পয়েন্টের ওপর চেপে ব্যবহার করা হয়। এতে আপনার শরীরের যেসব স্থানে ব্যথা বা ক্লান্তি আছে তা সম্পূর্ণ দূর হয়ে যাবে। আপনার শরীরের সব ভার বহন করে আপনার পা। আর এই পায়ের ব্যথা বা অবসাদ দূর করে সৌন্দর্য বর্ধনে করতে পারেন হাত পায়ের ম্যাসাজ। এই ম্যাসাজে বিশেষ ধরনের প্যাক ব্যবহার করা হয় যা আপনার ত্বককে কোমল ও মসৃণ করে তোলে।
৪. নিশ্চিন্তে ভালো ঘুমানোর জন্য
সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন ভালো ঘুম। কিন্তু অনেকেরই ঘুমে সমস্যা হয়। এপাশ ওপাশ করেও রাতে ভালো ঘুম হতে চায় না অধিকাংশ মানুষেরই। যাদের এ ধরনের সমস্যা আছে তারা বডি ম্যাসাজ করিয়ে নিন মাঝেমাঝে। বডি ম্যাসাজ করালে গভীর ঘুম হয়। ম্যাসাজ শরীরের ডেলটা ওয়েভস (Delta Waves) বাড়িয়ে দেয় যা ঘুমে সহায়তা করে থাকে।
কখন ম্যাসাজ করবেন না
১. হার্টের সমস্যা থাকলে।
২. যে কোন অপারেশনের পরে।
৩. গর্ভাবস্থার প্রথম পাঁচ মাস।
৪. শরীরের কোন অংশ ভেঙ্গে গেলে।
৫. হাঁপানির সমস্যা থাকলে।
বাড়িতে ম্যাসাজ করার চটজলদি উপায়
১. ম্যাসাজের জন্য ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ যুক্ত তেল, অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। ইচ্ছা হলে এতে চন্দনের তেল কিংবা ল্যাভেন্ডার অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন। গরমকালে পাউডার ম্যাসাজ করান। অ্যারোমা অয়েলও ম্যাসাজের জন্য খুবই উপযোগী। আলো বাতাসযুক্ত ঠান্ডা পরিবেশ ম্যাসাজ নেওয়ার জন্য উপযুক্ত।
২. যে কোন ব্যথার জন্য তিলের তেল, রসুন, আদা, নিমপাতা, হলুদ, গোলমরিচ গরম করে ঠান্ডা করে ছেঁকে রাখতে হবে। কাঁধ, হাঁটু এসব ব্যথায় হালকা ম্যাসাজ করে লাগালে আরাম পাওয়া যায়। কর্পুর গুঁড়ো করে পুদিনা পাতার সঙ্গে মিশিয়ে হালকা করে কপালে ম্যাসাজ করে লাগালে মাথাব্যথা, মাইগ্রেনে আরাম পাওয়া যায়।
৩. অনেক হাঁটাহাঁটির পর পায়ের ব্যথা কমানোর জন্য অল্প গরম পানিতে দু’ফোঁটা চন্দনের তেল, এক চিমটি লবণ মিশিয়ে পা ডুবিয়ে রাখুন। পানি থেকে পা তুলে মুছে তেল কিংবা ময়েশ্চারাইজার হালকা করে ম্যাসাজ করুন। দেখবেন শরীরের ক্লান্তি অনেকটা কমে গেছে।
মনে রাখবেন ম্যাসাজটা হচ্ছে আরামের জন্য। তার বদলে যদি বেদনা অনুভূত হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দিতে হবে এবং ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। তেল দিয়ে ম্যাসাজ আরামের জন্য হলে ঠিক আছে, কিন্তু যদি আর্থ্রাইটিস (Arthritis) থাকে তাহলে ম্যাসাজ চলবে না। আমরা অনেক সময় সেলুনে গিয়ে চুল কাটার পর ম্যাসাজ করাই। আঙ্গুল বা হাত দিয়ে মৃদু আঘাত বা মাথা-পিঠ ঠুকে দেয়া পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু ঘাড় ধরে নাড়ানো-চড়ানো কিংবা ঘাড় মটকানো একেবারেই উচিত নয়। বিশেষত ঘাড়ে যদি ব্যথা থাকে তখন তো একেবারেই নয়। কেননা এতে স্পাইনাল কর্ডে (Spinal Cord) চাপ পড়ে প্যারালাইসিস (Paralysis) পর্যন্ত হতে পারে।
আসা করি বডি ম্যাসাজের উপকারিতা সম্পর্কে এই আর্তিকেলটা আপনাদের ভালো লাগবে।
ছবি – সংগৃহীত: জেন-স্পা.কম