দেহের যেকোনো অংশের অবাঞ্ছিত লোম দূর করার জন্য টেম্পোরারি পদ্ধতিগুলোর ভেতরে শেভিং একটি। যদিও ত্বকের জন্য প্রফেশনাল ওয়াক্সিং এর চেয়ে শেভিং কোনভাবেই বেটার নয়, তারপরেও ওয়াক্সিং এর পেইন, এক্সট্রা খরচ এসব এড়াতে অনেকেই হাত পায়ের লোম দূর করার জন্য শেভিং এর উপরেই ভরসা করেন। কিন্তু খুবই সহজ, একেবারেই পেইনলেস এবং বাজেট ফ্রেন্ডলি হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন ভুল ধারণা এবং ভুল পদ্ধতির কারণে অনেকেই স্কিনের ক্ষতি করে ফেলেন কোন না কোনভাবে বা অনেকে সাহসই করেন না শেভ করার। তাই ভাবলাম শেভিং ই যাদের জন্য লোম নির্মূলের একমাত্র উপায় অথবা যারা ভাবছেন বডি শেভিং ট্রাই করবেন, তাদের জন্য শেভ করার বেসিক নিয়ম গুলো নিয়ে কিছু লিখি।
[picture]
বডি শেভিং- সঠিক পদ্ধতিটা কি?
- ক্লিন, ড্রাই, নতুন রেজর ব্যবহার করুন
ডিসপোজেবল রেজর ব্যবহার করলে অবশ্যই প্রতি ৩ বার শেভ করার পর রেজর চেঞ্জ করবেন। ব্লেড চেঞ্জ করার অপশন থাকলে ৩ বার শেভের পর একি ভাবে ব্লেড বদলাবেন। মরিচা পড়া নোংরা রেজর কোনভাবেই স্কিনে ছোঁয়াবেন না, ত্বক নষ্ট করার সাথে সাথে টিটেনাসের রিস্ক নেবার কোন প্রয়োজন নেই।
- হাত,পা ভিজিয়ে নিন
শেভ শুরু করার আগে বডির যে অংশে শেভ করবেন তা পানিতে কয়েক মিনিট ভিজিয়ে নিতে হবে। পানি উষ্ম হলে বেটার হয়। তাপ ও আদ্রতা চুল নরম করে ক্লোজ এবং কম্ফোরটেবল শেভ নিশ্চিত করবে।
- অবশ্যই শেভিং ক্রিম ইউজ করতে হবে
যেটা প্রায় কোন মেয়েরাই করেন না। বডি শেভিং এর জন্য আলাদা শেভিং ক্রিম, ফেসিয়াল শেভিং ক্রিম যেকোনোটাই ইউজ করতে পারেন। একেবারেই শেভিং ক্রিম কালেক্ট করতে না পারলে হেয়ার কন্ডিশনার শেভিং ক্রিম হিসেবে ইউজ করতে পারেন। কিন্তু কোনভাবেই ড্রাই/ ওয়েট স্কিনে খালি রেজর চালাবেন না। এতে কাটা ছেড়া, দাগ পড়ার হার অনেক বেড়ে যাবে।
- সঠিক দিক মেনটেন করুন
অবশ্যই চুলের গ্রোথের বিপরীত দিকে রেজর চালাবেন। যেমন- পায়ের হেয়ার গ্রোথ উপর থেকে নিচে, সেক্ষেত্রে রেজর মুভ করতে হবে নিচ থেকে উপরে। এদিকে ওদিকে যেদিকে খুশি রেজার চালিয়ে অনেক ক্লোজ শেভ হবে সেটা ভাবলে ভুল করবেন। এতে শুধু হাত পা ভর্তি রেজার বার্ন আর জ্বালাপোড়াই পাবেন। একি জায়গায় ১০ বার ভুল দিকে রেজার চালিয়ে লাভ নেই। প্রপারলি হালকা প্রেশারে একবার বা দুইবার শেভ করাই যথেষ্ট।
- রেজর পানিতে ধুয়ে নিন
প্রতি ২-৩ শেভ স্ট্রোকের পর পানিতে রেজার একবার ধুয়ে নিতে হবে। এতে হেয়ার মিস হয়ে যাওয়ার চান্স কমবে।
- শেভের পড়ে
অবশ্যই ভালোভাবে পানি দিয়ে হাত পা ধুয়ে নেবেন। টাওয়েল দিয়ে হাত পা মুছে নিয়ে একটু আদ্র থাকতে থাকতেই ভালোভাবে বডি লোশন মেখে নেবেন।
- প্রপার এক্সফলিয়েশন
শেভ ৩-৪ দিনে একবার করাই যথেষ্ট এভারেজে। এর মাঝে অবশ্যই বডি স্ক্রাব করতে হবে, যাতে ডেড সেল প্রপারলি সরে গিয়ে হেয়ার গ্রোথের যায়গা হয়। ডেড সেল বিল্ড আপ হচ্ছে পেইনফুল ইনগ্রোথের মুল একটা কারণ। তাই কোনভাবেই এই ভুলটা করবেন না।
এখন আসি আমাদের মধ্যে প্রচলিত শেভিং বিষয়ক কিছু মিথের ব্যাপারে-
- শেভ করলে ছেলেদের মতো হেয়ার গ্রোথ হবে-
একেবারেই ভুল ধারণা। হেয়ার গ্রোথ একটা হরমোনাল বিষয়। শেভ করলে গ্রোথ বাড়বেও না , কমবেও না। যেটা ছিল সেটাই থাকবে। কিন্তু, ওয়াক্স করলে যেমন চুল গোঁড়া থেকে উঠে আসে, আবার নতুন গজানো চুল গুলোর আগা পাতলা হওয়ায় সেগুলো ফিল করা যায় না তেমন, শেভিং এ সেটা হয় না। এক্ষেত্রে চুলের শ্যাফট কাটা পড়ে এবং সেই অংশটাই বেড়ে বাইরে চলে আসে, যে কারণে মনে হয় চুল মোটা হয়ে গেছে। হেয়ার শ্যাফটের থিকনেস হেয়ার এন্ড এর চেয়ে বেশি হওয়ার ব্যাপারটা সম্পর্কে যারা একেবারেই অজ্ঞ, তারাই “শেভ করলেই ছেলেদের মতো হেয়ার গ্রোথ হয়” এসব আজগুবি থিওরিতে বিশ্বাস করেন।
- শেভ করলে হাত পা কালো হয়ে যাবে
বরং বলা উচিৎ, শেভ করতে না জেনে উলটো পাল্টা নিয়মে শেভ করলে স্কিনের ক্ষতি হবে। শেভের সাথে “কালো” হওয়ার সম্পর্ক নেই, কিন্তু একই স্কিনের উপরে ১০ বার রেজর চালিয়ে রেজর বার্ন করে ফেলা, কোন দিন এক্সফলিয়েট না করা, ২ বছর ধরে একি ভোঁতা রেজর দিয়ে শেভ করার ট্রাই করা – এসবের সাথেই বার্নড আনইভেন স্কিন টোন, ইনগ্রোন হেয়ারের ছোপ ছোপ দাগ বা ইনফেকশন, কাঁটা ছেড়া দাগ ইত্যাদির সম্পর্ক আছে। তাই ওয়াক্স এর বদলে নিজের ইচ্ছায় শেভ করার ডিসিশন নিলে খুব ভালোভাবে শেভিং এর নিয়ম কানুন জেনে তারপরেই স্কিনে রেজর ছোঁয়াবেন।
নিয়মিত ওয়াক্স করার সময় সুযোগ বা সামর্থ্য না থাকলে অবাঞ্ছিত লোম দূর করায় শেভিং-ই একমাত্র প্রাকটিকাল সলিউশন। তারপরেও আমি পারসনালি ওয়াক্স করাটাই বেস্ট মনে করি। কিন্তু যারা শেভ করবেন বলেই ডিসাইড করেছেন আশা করি আজকের লেখায় তাদের হেল্প হবে। প্রপার শেভিং-এর উপরে আরও প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাবেন।
ছবি- এমবিসি.নেট, দিবিউটিবাজ, উইকিহাউ.কম