গরমটা এবার কোনভাবেই কমতে চাইছে না। আর শুধু গরমই না বাইরে কেমন যেন একটা ভ্যাঁপসা ভাব। ঘাম, ধুলা ময়লা মিলে একটা চরম অস্বস্তিকর অবস্থা। এমন আবহাওয়ায় আমার ত্বক খুবই ঝামেলা করে। কোনদিন মুখে একগাদা র্যাশ আবার কোনদিন শুষ্ক টান টান ভাব। আর ট্যান পড়ে এবার আমার মুখের ত্বক গলা থেকে এক দুই শেড গাঢ় হয়ে গেছে। তাই এবার নেট ঘেঁটে সিদ্ধান্ত নিলাম তৈলাক্ত ত্বকের জন্য হালকা জেল ক্রিম টাইপের কিছু কিনি যাতে স্কিনের ডাল, কালচে ভাবটাও একটু কমে। তারপর রিসার্চ করে দ্যা বডি শপের একদম নতুন প্রোডাক্ট ভিট সি গ্লো বুস্টিং ময়েশচারাইজার কিনে নিলাম। প্রায় একমাস ধরে রেগুলার ইউজ করার পর আপনাদের আমার অভিজ্ঞতা জানাতে আজকের এই রিভিউ।
[picture]
কাদের জন্য?
আমি নিজের কথাই বলি, আমার ত্বক তৈলাক্ত। এর আগে তাই বডি শপেরই সি উইড ম্যাটিফাইং ডে ক্রিম ব্যবহার করতাম। কিন্তু স্কিন ম্যাট করা ছাড়া ত্বকে ডালনেস কমাতে বা ব্রাইটনেস বাড়াতে এটা তেমন কাজ করেনি। তাই এমন কোন ডে ক্রিমের খোঁজ যদি আপনি করেন যা তৈলাক্ত ত্বকের জন্য হালকা হওয়ার সাথে সাথে স্কিন একটু ব্রাইট করে তুলবে তাহলে এই নতুন ভিট সি গ্লো বুস্টিং ময়েশচারাইজার ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এটা আমার মতে নরমাল আর অয়েলি স্কিনে সব সিজনে ভালো স্যুট করবে। কিন্তু এটা জেল বেসড হওয়ায় ড্রাই স্কিনের জন্য খুব বেশি হালকা হয়ে যাবে। নিচের ছবিতে দেখে নিন প্রোডাক্টের টেক্সচার।
দেখছেন? হালকা আর প্রায় স্বচ্ছ জেল বেসড ফর্মুলা। অয়েলি স্কিনের জন্য এই গরমে পারফেক্ট!
আমার অভিজ্ঞতা
এতক্ষণে তো বুঝেই গেছেন, অয়েলি স্কিনের জন্য এটা স্যুটেবল হালকা জেল ক্রিম যা এই গরমে খুবই আরামদায়ক। এবার অল্প কথায় আমার পুরো এক্সপেরিয়েন্স জানিয়ে দেই। এই ক্রিমের নাম থেকেই বুঝতে পারছেন যে এটা ভিটামিন সি-যুক্ত একটি ময়েশচারাইজার। ভিটামিন সি ত্বকের মরা কোষ আর ডালনেস দূর করে, ত্বকের দাগ ছোপ কমায়। একচুয়ালি ভিটামিন সি নিরাপদভাবে ত্বকের কালচে ভাব দূর করা আর জেদি ব্রণের দাগ বা পিগমেনটেশন দূর করার খুব অল্প কটি উপায়ের মধ্যে একটা। সুতরাং আপনি যদি ট্যান কাটাতে বা দাগ দূর করতে চান তবে ভিটামিন সি-যুক্ত স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করলেই বেস্ট রেজাল্ট পাবেন। সম্পূর্ণ নিরাপদে!
এই ক্রিমটা ৪৯ গ্রামের জারে করে আসে। এটার রঙ খুব হালকা হলুদ। ক্রিমটায় খুবই ফ্রেস একটা কমলার সাইট্রাসি ঘ্রাণ। আমি প্রথম যেদিন এটা মেখে রাতে ঘুমাই পরদিন সকালে উঠে ত্বকে বেশ লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখি। বলবো না এটা একদিনেই একদম জাদুর মতো কাজ করেছে। কিন্তু আমার নাকের পাশে তেল অনেক কম ছিল সেদিন (অন্য দিনের তুলনায়)। আর স্কিন দেখে মনেই হচ্ছিল না যে আমি খুব টায়ার্ড।
এরপর দীর্ঘ একমাসের মতো এটা ইউজ করার পরো আমি কোন সাইড ইফেক্ট দেখিনি। বরং সেদিন আমার এক ক্লোজ ফ্রেন্ড বলল- ‘অন্য সময় গরমে তো তোর মুখে অনেক দাগ হয়, এবারে তেমন দাগ নাই। স্কিনের সমস্যা ঠিক হয়ে গেছে নাকি?’ শুনে তো আমি খুশিতে ডগমগ! এরপরই ডিসিশন নিই এই ভিট সি গ্লো বুস্টিং ময়েশচারাইজারের উপরে ডিটেইলড রিভিউ লেখার। নিশ্চয়ই আমার ব্রণের দাগ কমেছে! যা অন্য মানুষের চোখে ধরা পড়ছে। সুতরাং আমি বলতে পারি এটা আমার স্কিনে কাজ করেছে। আর আমি এই প্রোডাক্ট সবসময় নাইট ক্রিম হিসেবেই ইউজ করেছি। দিনে অন্য সময় ব্যবহার করা হয়নি। একমাসে ক্রিমের জারের তিনভাগের একভাগ খালি হয়েছে। সুতরাং ৪৯ গ্রাম ক্রিম আমি প্রায় ৪-৫ মাস ব্যবহার করতে পারব। সো দামের তুলনায় পরিমাণ নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই।
এই প্রোডাক্টের যা আমার ভালো লেগেছে
– একই দামের অন্যান্য ক্রিম ত্বকে শুধু একটু আর্দ্রতাই দেয়। যা জনসন বেবি লোশন মাখলেও পাওয়া যায়। আপনি যদি চান একটু বেশি invest করে ব্রাইটেনিং কোন হালকা ফর্মুলার নাইট ক্রিম কিনবেন তবে ভিট সি গ্লো বুস্টিং ময়েশচারাইজার পারফেক্ট চয়েস।
– ত্বকের ডালনেস কমায়, জেদি ব্রণের দাগ হালকা করে।
– ত্বক অয়েলি করে না, কোন সাইড ইফেক্ট নেই (আমার ত্বকে কিছু দেখিনি)
– ৪৯ গ্রামের জারে অনেকদিন চলে যায়।
– আমার ক্ষেত্রে ১ মাসে চোখে পড়ার মতো ফল দেখিয়েছে, যারা ব্লিচ টাইপের ক্রিম ব্যবহারে অভ্যস্ত তাদের কাছে এই রেজাল্ট খুব স্লো মনে হতে পারে কিন্তু আমি নিরাপদ রূপচর্চাকেই বেশি প্রাধান্য দেই। এক সপ্তাহে ফর্সা হওয়া আমার উদ্দেশ্য না আর আমি এটা কাউকে সাজেসটও করি না।
এই প্রোডাক্টের যা আমার ভালো লাগেনি
– অনেকের কাছে দাম বেশি মনে হতে পারে। এটা প্রোডাক্ট হিসেবে একটু দামি।
– আমি আজকাল জারের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে ক্রিম বের করা পছন্দ করি না। এটা জারে থাকায় আমাকে আলাদা স্প্যাচুলা ব্যবহার করতে হয়।
– ড্রাই স্কিনে আমার মনে হয় শুধু গরমেই এই ক্রিমটা ব্যবহার করা যাবে। অন্য সিজনে ড্রাই স্কিনের জন্য আরও ভারী কিছু যেমন বডি শপ ভিটামিন ই ক্রিম বা অয়েল সিরাম টাইপের কিছুর দরকার হবে।
আমার রেটিং
৯/১০, প্রোডাক্টের সাথে স্প্যাচুলা দিলে অথবা টিউব প্যাকেজিং হলে আরও ভালো হত। আমি এই জার শেষ হবার পর আবারো এটাই কিনব (যদি আরও ভালো কিছুর খোঁজ না পাই, আর পেলে আপনাদেরও জানিয়ে দেব, রিভিউ দিয়ে……)
কোথায় পাবেন?
আমি এই প্রোডাক্টটা নিজে ট্রাই করে “Sapphire” থেকে কিনেছি। এই শপটা হচ্ছে যমুনা ফিউচার পার্কে। আপনি হোম ডেলিভারি নিতে চাইলে নিজেই অর্ডার করতে পারেন এখানে অথবা আপনার পরিচিত সোর্স থেকেও UK থেকেও আনিয়ে নিতে পারেন।
দাম- আমি কিনেছি ২২০০ টাকা দিয়ে।
লিখেছেন – মীম তাবাসসুম
ছবি – মেকাপএ্যালে.কম