কিছুদিন আগে বডি শপ ড্রপস অফ ইয়ুথ বাউন্সি স্লিপিং প্যাকের রিভিউ লিখেছিলাম। সেখানে বলেছিলাম এই রেঞ্জের আরেকটি প্রোডাক্টের কথা, “দি বডি শপ ওয়ান্ডারব্লার”। আগেই বলে রাখি এটা স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট নয়। এটা একটা প্রাইমার। যারা জানেন না তাদের জন্য খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে বলতে হয় প্রাইমার হচ্ছে সিলিকন বেসড ক্রিম বা জেল ফর্মুলা যা মেকআপ-এর আগে ত্বকের উপর ব্যবহার করলে আপনি পাবেন স্মুথ পোরলেস স্কিন, যার উপরে আপনার মেকআপ খুব ভালোভাবে বসে যাবে। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় মেকআপ-এর স্থায়িত্ব খুবই কম যা আমাদের অনেক পাঠকদের কাছেই চিন্তার বিষয়। প্রাইমার আপনাকে দেবে সারাদিন মেকআপ ফ্রেশ রাখার সুপারপাওয়ার। প্রাইমার সম্পর্কে আরও জানতে চাইলে ‘সাজগোজ’ ওয়েবসাইটে গিয়ে তাতে থাকা আরও প্রাইমার ও প্রাইমারের রিভিউ সঙ্ক্রান্ত পোস্ট দেখে নিতে পারেন।
এবারে আসা যাক আমার হাতের প্রোডাক্টের কথায়, “দি বডি শপ ওয়ান্ডারব্লার” আমার জন্য একটা অ্যাডভেঞ্চার। আপনাদের সাথে কি কখনও এমনটা হয় যে আপনারা অনেক রিসার্চ করে রিভিউ পরে একটা প্রোডাক্ট কেনেন, তারপর সেই প্রোডাক্ট আপনার উপর যে কাজ দেখায় তার সাথে আপনার পড়া রিভিউর কোন মিলই থাকে না? আমার সাথে এমনটা প্রায়ই হয়। আমি স্লিপিং মাস্কের সাথে যখন ওয়ান্ডারব্লারটা কিনি তখন রিভিউ পড়ে এটাকে তেমন আহামরি কিছু মনে হয় নি। তারপরও এটা কিনে ফেলার পিছনে মেইন কারণ ছিল কৌতূহল। আমার মেকআপ প্রেমী পাঠকরা বুঝতে পারবেন আমার ফিলিংস!
এই ওয়ান্ডারব্লার বিশুদ্ধ বাংলায় বলতে গেলে আমাকে চমৎকৃত করেছে। কেন? আসুন নিচে বিস্তারিত দেখি-
দি বডি শপের ক্লেইম (প্রোডাক্টের প্যাকেজিং থেকে নেয়া)-
বডি শপ বলতে চায় যে তাদের এই প্রাইমারটি ত্বকে বারো ঘণ্টা পর্যন্ত আর্দতা দেবে। আপনার ত্বকের দাগ ছোপ আর রোমকূপ লুকিয়ে ফেলে আপনাকে দেবে দারুণ মসৃণ ত্বক আর মেকাপের জন্য পারফেক্ট বেস। এতে থাকা Edelweiss stem cells ত্বককে রাখবে মসৃণ আর স্নিগ্ধ।
কোথায় পাবেন?
আমি ওয়ান্ডারব্লার বডি শপের বাউন্সি স্লিপিং মাস্কের সাথেই ‘শপ.সাজগোজ.কম (যমুনা ফিউচার পার্ক) থেকে নিয়েছি। রাইফেল স্কয়ারেও এদের শপ আছে। আপনারা চাইলে তাদের ওয়েবসাইট থেকেও অর্ডার করে আনিয়ে নিতে পারেন।
দাম-
৩০ মিলি-এর দাম ২৬৬০/- টাকা।
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
টিউবের গায়ে লেখা মেথড থেকে, এটা ব্যবহারের সিস্টেম অন্য সব প্রাইমারের মতই। আপনি ভালোভাবে ধোয়া মুখে পছন্দের ময়েশচারাইজার লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবেন। যদি আপনার ত্বক তৈলাক্ত হয় তবে ক্রিমের দরকার নেই। অল্প একটু খানি মটরদানার সমান প্রাইমার নিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে নিন। ৫-৭ মিনিট অপেক্ষা করুন। প্রাইমারকে ত্বকে বসে যেতে দিন। তারপর আপনার মেকাপ শুরু করুন।
আমার অভিজ্ঞতা
এই প্রোডাক্ট টা স্ট্যান্ডার্ড টিউবে আসে আর প্যাকেজিং কোয়ালিটি খুব ভালো। আমি বডি শপ ওয়েবসাইট থেকে জানতে পারলাম যে এটা ‘অপটিকাল ব্লার’ মেথডে আপনার মেকাপের নিচে কাজ করে। এর মানে হচ্ছে এই প্রাইমারে থাকা পারটিকেল আপনার ত্বকের উপরে পড়া আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে আপনার ত্বকের খুঁত গুলো সবার চোখের আড়ালে রাখে। একই কারণে এর ব্যবহারে আপনার মেকাপ করা অবস্থায় ছবিও খুব ভালো আসবে। টেক্সচারের দিক থেকে দেখলে এটা বেস থিক একটা ক্রিম। যেকারণে এটা টিউব থেকে বের করে ব্যবহার করা বেস ইজি। নিজেই দেখে নিন।
প্রাইমারটা ভালোভাবে মুখে লাগালে এটা একদম স্কিনের সাথে মিশে যায় আর একদম কোন হেভি ফিলিং দেয় না। প্রাইমার টা লাগানোর ১০ মিনিট পর আমি মেকআপ যা করার করি। কিন্তু প্রাইমারটা স্কিন এতোটাই স্মুথ করে আর পোর গুলোকে পুরোপুরি ভ্যানিস করে দেয় যে মাঝে মাঝে এর উপরে কিছু না লাগিয়ে বাইরে চলে যাওয়া যায়। কেউ বুঝতেও পারে না যে আমি স্কিনে কিছু লাগিয়েছি আবার স্কিনে থাকে ব্রাইটনেস আর স্মুথনেস।
ওয়ান্ডারব্লার লাগানোর আগে পরে
উপরে দেখতে পাচ্ছেন, ছবিতে কতটা স্মুথ লাগছে স্কিন? ওয়ান্ডারব্লার এভাবেই স্কিনে ভিজুয়ালি একটা দারুণ স্মুথনেস এনে দেয় যাতে ত্বকের নানা খুঁত, দাগ ছোপ একেবারেই ঢাকা পড়ে যায়। এই প্রাইমার আমার মুখে হেভি ফাউনডেসন নরমাল টাইম থেকে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা একদম ফ্রেশ রাখে। টি জোনে তেলও কম ওঠে। সুতরাং সবকিছু মিলিয়ে আমি ওয়ান্ডারব্লার প্রাইমার নিয়ে বেশ খুশি। এটা আমার তৈলাক্ত ত্বকে বেশ ভালো কাজ দিয়েছে। সুতরাং আপনারা যদি কেউ দেশেই ভালো ব্র্যান্ডের প্রাইমারের সন্ধান চান তবে তাকে আমি একবার এটা ট্রাই করার সাজেশন দেব।
এই প্রোডাক্টের যে দিকগুলো আমার ভাল লেগেছে
- এটা দিয়ে তারপর মেকআপ করলে খুবই সুন্দর ছবি আসে।
- ত্বকের দাগ ছোপগুলো বেশ ভালোভাবে হাইড করে ফেলে।
- স্কিনের পোর-গুলো একদম মিশিয়ে দেয়।
- ত্বকে মেকআপ অক্সিডাইজ হয়ে ত্বক কালো দেখায় না।
- মেকআপ আমার স্কিনে ৪-৫ ঘণ্টা এই গরমেও একদম ফ্রেশ থাকে, গলে যায় না।
এই প্রোডাক্টের যে দিকগুলো আমার ভালো লাগে নি
- এটা একটু থিক। আমি একটু হালকা, লিকুইড টাইপ প্রাইমার ব্যবহারে অভ্যস্ত ছিলাম।
- পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখতে হয়। সাধারনত পাম্প বোতলে প্রোডাক্ট থাকলে সবার পরিমাণ ঠিক রাখায় সুবিধা হয়। এক পাম্পে যতটুকু বের হয় তাতেই হয়ে যায়। কিন্তু এটা টিউবে থাকে বলে শুরুতে সঠিক পরিমাণ বুঝতে একটু সময় লাগবে।
ছবি- পিন্টারেস্ট.কম