ম্যাচিউর স্কিনে বিভিন্ন ধরনের কনসার্ন দেখা দেয়, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মেলাজমা বা মেছতা। বিশেষ করে এশিয়ান নারীদের মধ্যে ৩০-৪৫ বছরে হাইপারপিগমেন্টেশন, মেছতা এই ধরনের স্কিন প্রবলেম একটু বেশিই দেখা দেয়। মেছতা কেন হয়, এটি পুরোপুরি দূর করা আসলেই সম্ভব কিনা; এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক!
মেলানিন প্রোডাকশন কেন বেড়ে যায়?
আমাদের স্কিন, হেয়ার, আই কালার নির্ধারণ করার জন্য দু’ধরনের মেলানিন আছে। Eumelanin এক ধরনের ব্রাউন-ব্ল্যাক পিগমেন্ট যার কারণে আমাদের স্কিনটোন, আই ও হেয়ার কালারে ভ্যারিয়েশন (ডার্ক ব্রাউন টু ব্ল্যাক) দেখা যায়। আর Pheomelanin রেডিশ-ইয়োলো পিগমেন্ট প্রোভাইড করে যা লাইট শেইডের স্কিনটোন, হেয়ার ও আই কালারের জন্য দায়ী। এশিয়ান, আফ্রিকানদের স্কিনে Eumelanin এর আধিক্য থাকে।
আমাদের স্কিনের এপিডার্মিস লেয়ারে থাকে মেলানোসাইট সেল। এই সেল থেকেই মেলানিন প্রোডাকশন হয়। মেলানিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া মানে স্কিন ডার্ক হয়ে যাওয়া। মেলানিন ত্বকের রং নির্ধারণ করে এবং মেলানিনকে কন্ট্রোল করে টাইরোসিনেজ এনজাইম। এই টাইরোসিনেজ এনজাইম সূর্যের UV রশ্মির সংস্পর্শে আসলে মেলানিন প্রোডাকশন বাড়িয়ে দেয়; যা থেকে পরবর্তীতে মেছতা, হাইপারপিগমেন্টশন, ফ্রিকেলস এই সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে নজরে আসে। এক কথায়, UV রশ্মি মেলানোসাইট কোষগুলোকে ট্রিগার করে Eumelanin এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ককেশীয়দের (যাদের স্কিনটোন লাইট) থেকে এশিয়ান, আফ্রিকানদের মেছতা, পিগমেন্টেশন এই ধরনের স্কিন প্রবলেম একটু বেশি দেখা যায়।
আর কী কী কারণে মেছতা দেখা দেয়?
- অতিরিক্ত স্ট্রেস
- থাইরয়েড প্রবলেম
- হরমোনাল ইমব্যালেন্স
- প্রেগনেন্সি, মেনোপজ
- হার্মফুল কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট ইউজ করা ইত্যাদি
পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে মেছতা বেশি দেখা দেয় কেন?
প্রেগনেন্সি, জন্ম নিয়ন্ত্রণের পিল খাওয়া এসব কারণে নারীদের হরমোনাল ফ্ল্যাকচুয়েশন বেশি হয়। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন অর্থাৎ ফিমেল সেক্স হরমোনগুলো মেলানিনের ওভার প্রোডাকশন স্টিমুলেট করে। এই হরমোনের লেভেল আপ ডাউন করলে স্কিন প্রবলেমগুলো ট্রিগার হয়। যার কারণে পুরুষদের থেকে নারীদের মধ্যে মেছতা, হাইপারপিগমেন্টেশন বেশি দেখা যায়।
মেলাজমা বা মেছতা পুরোপুরি দূর করা যায়?
এই স্কিন প্রবলেম কি রাতারাতি আপনার ত্বকে ভিজিবল হয়েছে? না! হালকা স্পট থেকে ধীরে ধীরে এগুলো বাড়তে থাকে। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই একদিনে সমাধান পাওয়া সম্ভব না! পার্মানেন্টলি মেলাজমা বা মেছতা রিমুভ করতে ডার্মাটোলজিস্টরা অ্যাডভান্স টেকনোলজি ব্যবহার করেন, যেমন- microdermabrasion, chemical peel, micro needling ইত্যাদি। কয়েকটি সেশনে ট্রিটমেন্ট করা হয়। এগুলো বেশ সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল, সবার পক্ষে এফোর্ট করাও পসিবল হয় না।
একদম ইনিশিয়াল স্টেজে যদি আপনি প্রোপারলি স্কিনকেয়ার করেন, তাহলে এই স্কিন প্রবলেম আপনি অনেকটাই প্রিভেন্ট করতে পারবেন। কিছু অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট স্কিনের আপার লেয়ার বা এপিডার্মিস লেয়ারে থাকা ইনিশিয়াল মেলাজমা ও ডার্ক স্পটস লাইট করতে হেল্প করে এবং স্কিনটোন ব্রাইট করে। তবে কোনো প্রোডাক্ট ম্যাজিকের মতো দীর্ঘদিনের মেছতা রাতারাতি কমিয়ে আনবে, এমনটা আশা না করাই ভালো।
মেছতা কমাতে কোন ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো ইফেক্টিভ?
হাইড্রোকুইনন
সঠিক ফর্মুলেশনে হাইড্রোকুইনন এর ব্যবহার মেছতা, কালো দাগ দূর করে। তবে ডার্মাটোলজিস্টের রেকমেন্ডেশন ছাড়া এই উপাদানটি ইউজ করা উচিত নয়। বেশ কিছু সাইড ইফেক্ট থাকার কারণে অনেক দেশেই এটি ব্যান করা হয়েছে।
নিয়াসিনামাইড
ভিটামিন বি৩ বা নিয়াসিনামাইড স্কিন সারফেস থেকে ডার্ক স্পটস, পিগমেন্টেশন ফেইড করতে দারুণ ইফেক্টিভ। এক্সেস সেবাম প্রোডাকশন কন্ট্রোল করা, স্কিনটোন ব্রাইট করা, ওপেন পোরস এর ভিজিবিলিটি কমানো- এমন অনেক বেনিফিটস দেয় এই উপাদানটি।
ভিটামিন সি
মেলানিন প্রোডাকশনের জন্য দায়ী এনজাইমকে প্রিভেন্ট করে এবং কোলাজেন প্রোডাকশন বুস্ট করে ভিটামিন সি। ডার্ক স্পটস কমিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে ভিটামিন সি দারুণ কার্যকরী। কোলাজেন সিন্থেসিস প্রোমোট হলে ফ্রিকেলস, মেছতার ভিজিবিলিটি বেশ কমে আসে।
আলফা আরবুটিন
আলফা আরবুটিন টাইরোসিনেজ এনজাইমের কার্যক্রমকে বাধা দেয়, যার কারণে মেলানিন প্রোডাকশন কন্ট্রোলে থাকে। হাইপারপিগমেন্টেশন, স্পটস, মেছতা প্রিভেন্ট করতে এর জুড়ি নেই। ব্রাইটেনিংয়ের জন্যও এটি বেশ পপুলার।
এছাড়াও কজিক অ্যাসিড, রেটিনল এগুলোও বেশ ইফেক্টিভ। তবে রাইট পারসেন্টেজে ইউজ করতে হবে এবং ডে টাইমে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
হাইপারপিগমেন্টেশন, মেলাজমা, ফ্রিকেলস, এইজ স্পটস প্রিভেন্ট করতে অবশ্যই প্রোপার সান প্রোটেকশন নিতে হবে। মেলাজমা বা মেছতা পুরোপুরি দূর করা যায় কিনা, এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। প্রথম থেকেই যদি সচেতন থাকেন, তাহলে কিন্তু এই ধরনের স্কিন প্রবলেম অনেকটাই প্রিভেন্ট করা যায়। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, ইস্টার্ন মল্লিকা, বসুন্ধরা সিটি, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), সীমান্ত সম্ভার, চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাটারস্টক, সাজগোজ