আমরা অনেকেই অহেতুক দুশ্চিন্তা করি। অতিরিক্ত কল্পনা, অতিরিক্ত টেনশন এবং অহেতুক উদ্বেগে ভুগি। অতিচিন্তা ও ভাবুক এই শব্দ দুটি কিন্তু এক নয়। আমরা যারা আমাদের এই অহেতুক দুশ্চিন্তা করার সমস্যাটিকে সাধারণ ভাবুক হয়ে যাওয়া ভাবছি, তারা কিন্তু অনেক বড় ভুল করছি। শৈল্পিক মনের মানুষেরা যখন তখন ভাবুক হয়ে যেতে পারেন, যখন তখন কল্পনার সাগরে ডুব দিতে পারেন। কিন্তু যারা সবসময়েই চিন্তাযুক্ত থাকেন তাদের সমস্যাটা একদমই আলাদা। সাধারণত কল্পনাবিলাসী মন মানসিকতার মানুষেরা কল্পনাপ্রবণ হয়ে থাকেন।
তারা তাদের ভাবনা বিলাসী মনে কল্পনার রঙ মিশিয়ে ও কবিত্বতা দিয়ে স্বপ্নের জগত তৈরি করে নেন। কারণ তারা শিল্পী মনের অধিকারী হয়ে থাকেন। কিন্তু যারা সারাক্ষণই অতি ক্ষুদ্র ব্যাপার থেকে শুরু করে অতি বৃহৎ ব্যাপার পর্যন্ত সকল ব্যাপারেই অহেতুক চিন্তা করেন, তাদের বেশির ভাগই নানা রকম মানসিক ও শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। প্রায় সময়ই চিন্তামগ্ন থাকার কারণে তারা ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। কেননা ঘুমের মধ্যেও তাদের মস্তিষ্ক চিন্তামগ্ন থাকে। মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায় না। তখন মানুষ ব্রেইন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন।
অকারণ চিন্তা, অহেতুক কল্পনা যারা করেন এটা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। অহেতুক দুশ্চিন্তা হওয়ার কারণে তারা কাজে মন বসাতে পারেন না, ফলে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই সমস্যাটিকে বাড়তে না দিয়ে এর প্রতিকার করা অতীব জরুরী। আপনিও যদি এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেই কেনো আপনারা অতি মাত্রায় দুশ্চিন্তায় ভুগছেন এবং কী এর প্রতিকার।
অহেতুক দুশ্চিন্তা হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
অহেতুক দুশ্চিন্তা হওয়ার কারণ
নানা কারণেই এমন হতে পারে। তেমনি কিছু কারণ নিয়ে আমরা আজকে আলোচনা করবো। চলুন তাহলে জেনে নেই অহেতুক দুশ্চিন্তা হওয়ার কিছু কারণ সম্পর্কে।
- আপনার অতিপ্রিয় কিংবা কাছের কারো সাথে মনোমালিন্য হলে আপনি সারাক্ষণই সেটা নিয়ে ভাবতে থাকেন। আশেপাশের অন্যান্যরা আপনাকে নিয়ে কী ভাবছে সেটা নিয়েও আপনি দুশ্চিন্তা করেন।
- ঝগড়া কিংবা তর্কে হেরে গেলে আপনি সেটা নিয়ে অতিরিক্ত আত্মগ্লানিতে ভোগেন। রাতভর চিন্তা করতে থাকেন যে কী করলে বা কী বললে আপনি তর্কে কিংবা ঝগড়াটিতে জিতে যেতেন।
- আপনি সারাক্ষণই এটা নিয়ে আতঙ্কিত থাকেন যে হয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসে পড়েছে।
- আশেপাশের কেউ কিছু বললে আপনি সেটার নেপথ্যের কারণ খুঁজতে থাকেন এবং এতে আপনার দুশ্চিন্তা বাড়ে।
- আপনার সহকর্মী, বন্ধু কিংবা অন্যান্যদের চেয়ে আপনি কীভাবে বেশি ভালো করবেন সেটা নিয়েও আপনার চিন্তা আসে।
- যদি, কিন্তু, অথচ এর মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে জর্জরিত হয়ে যান আপনি।
- জীবনে যা কিছু ভুল করেছেন তা বারবার মনে করে পীড়ায় ভুগতে থাকেন।
- অতীতের ভুলত্রুটির কথা আপনি কখনোই ভুলতে পারেন না যা আপনার দুশ্চিন্তার এক অন্যতম কারণ।
কীভাবে চিন্তামুক্ত হবেন?
আপনার যদি মনে হয় আপনি একাই এই সমস্যায় ভুগছেন তাহলে সেটা আপনার ভুল ধারণা। সারা পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষেরই এই সমস্যা রয়েছে। তাই ভয় না পেয়ে চেষ্টা করুন নিজেকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখার। চলুন জেনে নেই কীভাবে আপনি চিন্তামুক্ত হবেন।
১) সমস্যার সমাধান খুঁজুন
সমস্যার কথা চিন্তা না করে এর সমাধানের পথ খুঁজুন। তাহলে আপনার সমস্যার সমাধানও হবে এবং আপনিও চিন্তামুক্ত হবেন।
২) বুঝেশুনে চিন্তা করুন
যেটা আপনার বশে নেই সেটা নিয়ে চিন্তা করতে যাবেন না। নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করুন যে, যা আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে তা কখনোই আপনার হবে না। এতে আপনার চিন্তার পাহাড় নিজে নিজেই কমে যাবে।
৩) নিজেকে চিনুন ও জানুন
কোন পরিস্থিতিতে আপনার অবস্থা কেমন হবে সেটা আপনি নিজেই ভালো করে বুঝবেন। নিজের সমস্যা জানতে পারলে আপনি আগেভাগেই সতর্ক হয়ে যাবেন এবং ভবিষ্যতে আপনাকে পীড়া দেয় এমন কাজ আপনি আর করবেন না।
৪) ধ্যান
নিজেকে চিন্তামুক্ত রাখার জন্য ধ্যানের বিকল্প নেই। যুগযুগ ধরে বিভিন্ন ডাক্তার ও মনিষীরা ধ্যান কিংবা যোগাসনের মাধ্যমে চিন্তা দূর করার কথা বলে থাকেন। রোজ নিয়ম করে ২০-৩০ মিনিট মেডিটেশন কিংবা যোগাসন করলে খুব সহজেই আপনি চিন্তামুক্ত হতে পারেন।
৫) ছিঁড়ে ফেলুন চিন্তার জাল
যখনই মনে হবে যে আপনি চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়ছেন তখন ব্যস্ত হয়ে যান। এমন কোনো কাজ করুন যেটাতে আপনি আপনার সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারবেন। গান শুনুন, সিনেমা দেখুন, ছবি আঁকুন, বই পড়ুন কিংবা গাছ লাগান। দেখবেন, দুশ্চিন্তা কখন আপনাকে ছেড়ে পালিয়েছে আপনি টেরও পাবেন না।
৬) কথা বলুন
মনে কথা জমিয়ে রাখা দুশ্চিন্তা সৃষ্টির অন্যতম একটি কারণ। যখনই মনে হবে, মনে কথা জমে যাচ্ছে তখনই সব কথা খুলে বলুন কাছের মানুষটিকে। কোনো সমস্যা মনে হলে তার মতামত নিন। এতে আপনার নিজেকে যথেষ্ট ভারমুক্ত মনে হবে।
দুশ্চিন্তা কখনোই আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। যখনই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন তখন নিজেকে অন্যমনস্ক করে ফেলুন। যা আপনার বশে নেই সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করা অনর্থক। পেছনে না তাকিয়ে সামনে এগিয়ে যান। ‘যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে’ এই চিন্তাটি আপনাকে অনেকটা ভারমুক্ত করবে। এভাবে আপনার দুশ্চিন্তা, পেরেশানি ও ভার বোধবুদ্ধির ছাঁকনিতে ছেঁকে ফেলুন এবং নিজেকে রাখুন চিন্তামুক্ত। ভালো থাকুন নিজের জন্য ও আপনদের জন্য।
ছবিঃ সাটারস্টক