শিশুর ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে করণীয়গুলো জানেন কি?

শিশুর ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে করণীয়গুলো জানেন কি?

শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছেন মা বাবা

আজকের শিশুরাই আগামী দিনের জাতির ভবিষ্যৎ। তারা শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যে, শিক্ষায়, চিন্তায়-চেতনায় ও মননে যত সমৃদ্ধ হবে জাতির ভবিষ্যৎ তত শক্তিশালী হবে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিশুদের সার্বিক পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। বেঁচে থাকার তাগিদে বহু দরিদ্র শিশু তাদের বিকাশের অধিকার, জীবনযাত্রার মান ভোগ ও বিনোদনের অধিকার ইত্যাদি নানা অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে যার ফলে শিশুর ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত হচ্ছে না। অনেক সময় অভিভাবকরা অভাবের তাড়নায় তাদের শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ করছেন। আবার ছিন্নমূল শিশুরা পেটের তাগিদে নিজেরাই টোকাই হচ্ছে, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে নানা অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে। শিশুদের এহেন অবস্থা থেকে রক্ষার আইন আছে, সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সনদ ও প্রতিশ্রুতি আছে কিন্তু এগুলো প্রতিপালিত হচ্ছে না। জাতির কর্ণধার, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের তাই এই দিকটায় বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের দেশের এক শ্রেণীর তথাকথিত বুদ্ধিজীবী শিশুদেরকে নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার বিষয় উপেক্ষা করছেন। যার ফলে শিশুদের কিছু অস্বাভাবিক আচরণও পরিলক্ষিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের পথ শিশুদের বয়স ৩ থেকে ১৮ বছর এবং এদের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। তাদের অধিকাংশই পরিবারের ভাঙনের ফলে পথ শিশু হয়ে উঠেছে এবং এই শিশুরা প্রায় সবাই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। এদের অনেকেই যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তারা পথে ঘাটে অনিরাপদ অবস্থায় থাকে। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক শিশু।

Sale • Baby Care, HOME CARE, Bath Time

    এই বিরাট অংশের মধ্যে প্রায় ৬ লাখ শিশু ছিন্নমূল অর্থাৎ পথশিশু যার মধ্যে ৫৩% ছেলে এবং ৪৭% মেয়ে। এরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে না। এদের বাড়িঘর নেই। অনেকের বাবা মা নেই। বিরাট অংশের এই শিশুরা রাস্তায় জীবনযাপন করতে গিয়ে নানা রকম কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলছে। কখনও কখনও নিজেকে জড়িয়ে ফেলছে নানারকম অপরাধজনক কাজেও। কেউ কেউ নেশাগ্রস্ত হচ্ছে। এদেরকে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা রকম রাজনৈতিক কর্মকান্ডেও। তাই শিশুর ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত এদেরকে এই সকল কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখতে হবে।

    শিশু অধিকার আইনে বলা হয়েছে, কোন শিশু যদি বিশেষ পরিস্থিতিতে যেমন মা বাবার মৃত্যুর কারণে অথবা মা বাবা ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণে কিংবা মা বাবার কাছ থেকে হারিয়ে যাবার ফলে পারিবারিক পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে সেই শিশুর অধিকার রক্ষার জন্য সরকার বিশেষ ব্যবস্থা নেবে। এক্ষেত্রে সরকার পারিবারিক সুযোগ সুবিধার বিকল্প ব্যবস্থা নেবে অথবা প্রয়োজনবোধে কোন প্রতিষ্ঠানকে এই দায়িত্ব দেবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এরা যেন আমাদের সমাজের উচ্ছিষ্ট এবং এদের নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই। আদমশুমারিতে এদের হিসাবও থাকে না। এরা দেশের নাগরিক হিসেবে পায় না কোন সুযোগ সুবিধাও। তাই এসব শিশু বড় হয় অযত্নে অবহেলায়।

    অযত্নে, অবহেলা, অশিক্ষা ও অপুষ্টির শিকার এ দেশের হাজার হাজার শিশু। চরম দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত পরিবারের জন্ম নেওয়া এসব শিশুর ভবিষ্যৎ অন্ধকার। প্রাথমিক শিক্ষার গন্ডি পেরুনোর আগেই ঝরে পড়ছে বেশিরভাগ শিশুর শিক্ষা জীবন। হত দরিদ্র পরিবারের বাবা মার সাথে দিন মজুরীর কাজে সংযুক্ত হচ্ছে এরা। আবার কোন হোটেল, রেঁস্তোরা, বেকারী, গৃহস্তের বাড়ি, কলে কারখানায় যোগ দিচ্ছে শিশুরা। রিকশা, ঠেলা ও ভ্যান চালিয়েও সংসারের হাল ধরছে তারা। কেউবা গৃহস্থের বাড়ির গরু ছাগল চড়ানোর কাজে ব্যস্ত। বাল্য বিবাহ, কুসংস্কার এদের আকড়ে ধরে রেখেছে বহুকাল থেকে।

    যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় তাদের ঘরে জন্ম নেওয়া শিশু অপুষ্টি, অনাদর আর অবহেলায় বেড়ে উঠছে। এমন বহু পরিবার রয়েছে যারা জন্মের পর যখন কিছুটা বুঝতে শিখে ঠিক তখনই তারা সংসারে আয় রোজগারের জন্য বিভিন্ন কাজে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

    সমাজ থেকে লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত হচ্ছে অনেক শিশু। শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার হচ্ছে শিশুদের উপর। মেয়ে শিশুরা ধর্ষিত হচ্ছে। নানান দেশে পাচার করা হচ্ছে শিশুদের। অপহরণ করে বিশাল পরিমাণ টাকা দাবি করা হচ্ছে শিশুর পরিবারের কাছে। অনেক সময় দেখা যায় দাবিকৃত টাকা দেওয়া হচ্ছে কিন্তু শিশুকে আর তার পরিবার ফেরত পাচ্ছে না। আমরা তার প্রতিবাদ করতে পারছি না। কারণ তার কোন প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। যদিও কোন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে তাও মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে টাকার কাছে। কিন্তু আজকের এই শিশু যে আগামীর ভবিষ্যৎ তা আগেই ঝরে যাচ্ছে কিছু মানুষরূপী পশুদের জন্য।

    শিশুর ভবিষ্যৎ নিরাপদ করতে করণীয়

    শিশুদের জন্য চাই ভালোবাসা মমতা

    প্রত্যেক বাবা মা-ই চান সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, তারপরও নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসের শিকার হতে হয় অনেক শিশু সন্তানকেই। এমন পরিস্থিতি এড়াতে চাই স্নেহ, মমতা, উদারতা।

    নির্যাতনের শিকার শিশুদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলা

    শারীরিক হোক, মানসিক হোক বা যৌন নির্যাতন হোক যে কোন ধরনের নির্যাতনের শিকার শিশুদের মনোবল একদম ভেঙ্গে পড়ে। তাই শিশুকে যেমন ভয়মুক্ত করতে হবে, তেমনই সাহায্য করতে হবে যাতে তাদের মনোবল বৃদ্ধি পায় সেই সাথে তাদের আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে হবে। শিশুদের বুঝাতে হবে যে নির্যাতনের শিকার হবার পেছনে তদের হাত নেই। আদর ভালবাসা পেলে তাদের জন্য ভয়ানক অভিজ্ঞতা ভুলে যাওয়া সহজতর হয়। তাই নির্যাতনের শিকার শিশুদের প্রতি এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে।

    শিশুর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা

    ধনী গরিব মিলিয়ে আমাদের এই সমাজ। সমাজের মানুষের প্রত্যেকের উপর প্রত্যেকের কিছু না কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। আমাদের সাধারণ মানুষকে সোচ্চার হতে হবে। শিশুর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং ছিন্নমূলদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। আপনার আমার যার যেমন সামর্থ্য আছে তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

    শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা

    গ্রামের শিশু যারা শহরে কাজের খোঁজে আসে তাদের প্রতি আমদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তাদের জন্য শিক্ষার আলোর ব্যবস্থা করতে পারলে তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ আমরা কাম্য করতে পারি, কেননা শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার। শিক্ষার আলো কোন পথ শিশুকে খারাপ পথে ধাবিত করবে না। যেসব শিশুরা বাসায় কাজ করে আমরা তাদের প্রতি একটু সহানুভূতি দেখিয়ে তাদেরকে ঘরের কাজের পাশাপাশি বাসায় তাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে পারি। এভাবে অন্তত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারি।

    শিশু অধিকার আইন বাস্তবায়ন

    আমরা যে যেখানে থাকি সেখানে এলাকা ভিত্তিক সংগঠন গড়ে তুলতে পারি, মানব বন্ধন করতে পারি শিশু অধিকার আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। সমাজের মানুষ হিসেবে গরিব শিশুদের জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারি। শিশুদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করতে পারি। যেমন শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা বিতরণ। এসব কর্মসূচী বাস্তবায়ন এর জন্য আমরা কনসার্টের আয়োজন করতে পারি।

    শিশুদের জন্য মাদক বিষয়ক ক্যাম্পেইন

    শিশুর ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে তাদেরকে মাদক এর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে বুঝাতে হবে। ক্যাম্পিং এবং কাউসিলিং এর মাধ্যমে আমরা এই বিষয়গুলো তুলে ধরতে পারি। আমাদের সামাজিক এবং নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এমন অনেক কিছুই আমরা প্রায়ই এড়িয়ে যাই কিন্তু আমরা যদি প্রত্যেকটি শিশুকে নিজেদের পরিবারের একটি অংশ হিসেবে মেনে নিতে পারি তাহলে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এর লক্ষ্যে কাজ করে যেতে পারি।

    তাই নির্যাতনের শিকার শিশুকে আর অবহেলা নয়, বরং দেশের নাগরিক হিসেবে বন্ধু ও পরম আত্মীয় হয়ে পাশে দাঁড়ান এবং তাদের সুস্থতা নিশ্চিত করুন। শিশুরা সবসময় অবহেলিত শোষিত হয় এবং আতঙ্কের শিকার হয় যে কোনো স্থানে। আপনি তাকে সাহায্য না করে এড়িয়ে যেতে পারেন না। এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আপনি সক্ষম হবেন ও সমস্যাটিকে চিহ্নিত করতে পারবেন। আপনাকে নিজেকে তৈরি করতে হবে এবং সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। শিশুর ভবিষ্যৎ নিরাপদ আপনি যতদূর সাহায্য করতে পারেন তা করতে হবে।

    ছবি – সংগৃহীত: সাটারস্টক

    4 I like it
    1 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort