রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি সৌন্দর্য চর্চায়ও নারিকেলের দুধ বেশ কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। প্রাকৃতিক ফ্যাটি এসিড, মিনারেলস এবং নিউট্রিয়েস সমৃদ্ধ এই নারিকেল দুধ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করার পাশাপাশি চুলের সৌন্দর্য রক্ষায়ও সমানভাবে কার্যকর। তাই বিভিন্ন স্কিন ও হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টের উপাদানে নারিকেলের দুধের ব্যবহার বেশ লক্ষণীয়। নারিকেলের দুধ বাসায় বসে খুব সহজেই বানিয়ে নিতে পারেন অথবা বিভিন্ন সুপার শপে কিনতে পাবেন, দাম ১৫০-৪৫০ টাকার মধ্যে। তবে ঘরে বসে সহজেই এটি বানানোর একটি পদ্ধতি আপনাদের জন্য দেয়া হল।
নারিকেলের দুধ বানানোর পদ্ধতি
একটি হিট প্রুফ বাটিতে এক কাপ নারিকেল কুঁচি এবং দেড় কাপ গরম পানি নিয়ে চামচ দিয়ে কিছুক্ষণ মিশিয়ে ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দিন এবং ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে দুধ আলাদা করে নিন। এবার এটি ফ্রিজে রেখে দিন।
ত্বক ও চুলের যত্নে
– নারিকেলের দুধ প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। শ্যাম্পুর সাথে সমপরিমাণ নারিকেলের দুধ মিশিয়ে চুল পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুলের ময়লা দূর হওয়ার সাথে সাথে চুল নরম এবং সিল্কি হবে। এছাড়াও শ্যাম্পু করার পর নারিকেলের দুধের সাথে মধু মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে চুল ভালো মতো ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের ফ্রিজি ভাব দূর করে যার ফলে চুল ঝরঝরে থাকে এবং চুল পড়াও কমে।
– নারিকেলের দুধ স্ক্যাল্প থেকে শুরু করে চুলে আগা পর্যন্ত পর্যাপ্ত ময়েশ্চার সরবরাহ করে যার ফলে চুল নরম ও সুন্দর থাকে। ফ্রেশ নারিকেলের দুধ নিয়ে স্ক্যাল্পে ৪-৫ মিনিট হালকা ভাবে ম্যাসাজ করে ২০ মিনিট রেখে চুল শ্যাম্পু করে ফেলুন। এটি চুলের আগা ফাটা এবং রুক্ষতা দূর করতে বেশ কার্যকর।
[picture]
– হাত পায়ের শুষ্কতা দূর করে ত্বক নরম ও মসৃণ করতে গোসলের পানিতে এক কাপ গোলাপ ফুলের পাপড়ি, আধা কাপ গোলাপ জল এবং এক কাপ নারিকেলের দুধ মিশিয়ে সেই পানি গোসলের সময় ব্যবহার করুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের ময়েশ্চার ঠিক থাকবে এবং ত্বক উজ্জ্বল হবে। এছাড়াও যাদের ত্বক খুব বেশি শুষ্ক তারা শুধু নারিকেলের দুধ কিছুক্ষণ মুখে ম্যাসাজ করে রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিমিষেই ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়ে মসৃণ ও সুন্দর হবে।
– ত্বকের রোদে পোড়া দাগ দূর করতে নারিকেলের দুধ ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে নারিকেলের দুধের সাথে মধু মিশিয়ে দাগের মধ্যে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এছাড়াও বাইরে থেকে এসে রোদে পোড়া জায়গায় নারিকেলের দুধ ম্যাসাজ করতে পারেন। এর ফলে দাগ দূর হয়ে ত্বকে উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে।
– অকালেই চুল পাকা নিয়ে যারা বিপাকে রয়েছেন তারা এই প্যাকটি লাগিয়ে দেখতে পারেন। নারিকেল তেল, আমলা পেস্ট এবং নারিকেলের দুধ সমান পরিমাণে নিয়ে ভালো মতো মিশিয়ে এটি চুলের গোড়ায় ভালো মতো ম্যাসাজ করে সারা চুলে লাগিয়ে ৩০-৪০ মিনিট রাখুন। এরপর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে অকালে চুল পাকা রোধ করে এবং চুল ঠিক মতো বাড়তে সাহায্য করে।
– ত্বকের বিভিন্ন রোগ যেমন একজিমা, ডার্মাটাটাইটিস ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে নারিকেল দুধ খুব কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। এতে থাকা প্রাকৃতিক ফ্যাটি এসিড ত্বকের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং শুষ্ক ত্বকের ময়েশ্চার বজায় রাখে।
– ত্বকের ইলাস্টিসিটি ইম্প্রুভ করতে এবং বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন ত্বকের সমস্যা দূর করতে নারিকেলের দুধ ব্যবহার করুন। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং কপার এই নিউট্রিয়েন্টসগুলো শরীর ও ত্বকের বার্ধক্যের প্রক্রিয়াকে ধীর করে। যার ফলে নারিকেলের দুধ খাবারে বা ত্বকের যত্নে ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের রিংকেল, দাগ এবং ফাইন লাইন্স প্রতিরোধ করা সম্ভব।
– নারিকেলের দুধ খুব ভালো মেকাপ রিমুভার হিসেবে কাজ করে। ১ চামচ নারিকেলের দুধের সাথে ২ চামচ কাঁচা দুধ মিশিয়ে তুলার সাহায্যে চোখ এবং মুখে হালকা ম্যাসাজ করে মেকাপ তুলুন। এরপর ফেইস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
লিখেছেন- নাহার
ছবি- হ্যান্ডসফ্রমদ্যরিভার ডট কম