অনেকের কাছেই স্কিনের হেলথ চুলের হেলথ এমনকি নিজের হেলথও খুব একটা চিন্তাউদ্রেককারী কিছু নয়! এই দলেরই এক প্রাক্তন সদস্য হিসেবে আমি জানি আমার কাছে বিষয়টা কেমন ছিল। থাকতাম অতি বিখ্যাত এক পাবলিক ইউনিভার্সিটির হলে, সপ্তাহের প্রতিটা দিন ক্লাস, ল্যাব, টিউশনি , পার্টটাইম জব, প্রজেক্ট… সব মিলিয়ে হুলুস্থুল এক অবস্থা!! এর মধ্যেই দেখতাম ছুটির দিনগুলোতে কিছু হলবাসী চুলে একটু মেথি আমলকী বেঁটে মাখতো বা একটু উপটান দিত… দেখে মনে মনে হাসতাম!
“হাহ… এতকিছু ঘষে কি হবে? বুড়ো বয়সে তো কিছুই থাকবে না!! এইসময়টায় কাজ করে না কেন এরা??’
[picture]
দিনে একবার সম্ভব হলে হ্যান্ডওয়াশ দিয়েই মুখ ধুয়ে ফেলা আমি কখনই এসব নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলাম না। চুলে তেল দেয়াও মনে হত খুবি হাস্যকর আর মেয়েলি (!) একটা কাজ!
কিন্তু, এরপর শুরু হল সমস্যা… হলে আজেবাজে খাবার আর ক্যান্টিনের ভাজাভুজি হেনতেন সব পাপ একবারে চেপে বসলো মাথায়… সাথে পড়াশোনার স্ট্রেস তো আছেই! ধীরে ধীরে দেখলাম চিরুনিতে যেন সকালে বেশ অনেকগুলো চুল!
এরপর একদিন রুমে চুল আঁচড়ে বেডে বসেছি… হলের খালা ঘর ক্লিন করতে এসে কিছুক্ষণ পর বললেন-
“আপা তো টাক হয়ে যাবেন কয়দিন পর!” ঘুরে খালার দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি ঘর মুছে ৫০০-৬০০ চুলের বিশাল দলা বানিয়ে আমার দিকে চেয়ে হাসছেন! চুপসে গেলাম সেদিন!!!
এরপর একদিন শ্যাম্পু করতে গেলাম। শ্যাম্পু ধোঁয়ার সময় পানি উপচে বাথরুমের বাইরে চলে গেল! কেন? এতো চুল সেদিন আমার মাথা থেকে ঝরেছে যে ড্রেন ক্লগ হয়ে পানি বেরোতে পারে নি আর!! আর পারি নি সেদিন। বাথরুমে বসে ড্রেন ক্লিন করতে করতে কিছুক্ষণ কাঁদলাম, আসন্ন টাক মাথার কথা ভেবে!!
সেদিন রাতে অনেক্ষণ চুল আঁচড়ে অনেকদিন পর নিজের তালুর অবস্থা থেকে আরেকদফা কান্না পেল… সিঁথি প্রায় এক ইঞ্চি চওড়া হয়েছে আর তালু পুরো ফাঁকা। সাথে মাথায় হাত দিলেই ঝরঝর করে পড়ছে খুশকি!
কনফিডেন্স আর মাথার চুলের কি রিলেশন? সেটাইতো আজকের লেখার টপিক ছিল রাইট?
লাইফের এই পয়েন্টে এসে আমি বুঝলাম আসলে চুলের এই দশা হলে কনফিডেন্স-এর ‘ক’ ও থাকবে না… শুরু হল একটু চুলটা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বাইরে যাওয়া… যার রেজাল্ট আরও বেশি করে হেয়ারফল… এরপর ঘরের ভেতরে ঘোমটা দিয়ে হাঁটাহাঁটি যেন ফাঁকা তালু দেখে কেউ কমেন্ট না করে!!
তারপর একদিন, মাথায় সপ্তাহে একদিন নিয়ম করে প্যারাসুট কোকোনাট অয়েল দিয়ে মেহেদি দিয়ে শ্যাম্পু করা এক আপুকে আস্ক করেই ফেললাম- “আপু, চুলতো বিড়ালের লেজের চেয়েও বাজে দেখাচ্ছে… কি করব??”
আপু আমার মতন নাক উঁচু মানুষ নন… আমি যেমন তার তেল দেয়া, উপটান দেয়া দেখে হাসতাম তিনি আমার ফাঁকা তালু দেখে হাসেন নি কিন্তু!!
বরং আমাকে খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কিভাবে বাজে ফুড হ্যাবিট আর চর্চার অভাবে নিজের মাথা নিজেই খালি করেছি আমি!
কিন্তু ততদিনে আমার অবস্থা ভয়ঙ্কর। কোমর সমান চুল লেয়ার কেটে কাঁধে নিয়ে এলাম! যদি একটু ফুলে থাকলে বেশি চুল মনে হয়!!
এরপর, শুরু হল আপুর কথা মতন ডেইলি সিজনাল ফল, সালাদ, বাদাম আর অন্তত একটা ডিম সেদ্ধ খাওয়ার পালা… প্রথমে কষ্ট হল প্রচুর। হলে থেকে কি এতকিছু করা যায়?? তাও অভ্যাসগুলো মেনটেন করলাম।
সাথে সাথে আপুর দেখাদেখি বৃহস্পতিবার ক্লাস থেকে ফিরে খুব ভালো ভাবে মাথায় প্যারাসুট কোকোনাট অয়েল ম্যাসাজ করতাম। প্রথম প্রথম ৪-৫ দিন এতো বেশি চুল পড়ল মনে হচ্ছিল এই শেষ! এরপর আর একটা চুলও থাকবে না মাথায়!!!
আপু বলল- “তোর তো চুলের গোঁড়া নরম হয়ে গেছে, তাই একটু আধটু চুল পড়বে! হতাশ হোস না তো!!”
ঠিকই বলেছিলেন তিনি! ৬ নাম্বার সপ্তাহ থেকে চুল পড়া যেন একটু কমলো আর বাথরুমে তেমন চুল পড়েও থাকত না! কিন্তু আমার তালু?? যেমন ফাঁকা তেমন ফাঁকাই রয়ে গেল।
আপুকে গিয়ে আবার ধরলাম- “আপু টাকে তো চুল গজালো না!!!”
আপু তখন আমাকে ধমকই দিলেন, জানেন?? বললেন- “জীবনে মাথায় তেল ছোঁয়াস নি, এতো সহজ চুল গজানো?? তেল ঘষতে থাক। ভুলেও যেন বাদ না পড়ে, সপ্তাহে একদিন তেল দেয়ার অভ্যাস হয়ে গেছে এবার থেকে ২ দিন করে তেল দিবি।”
কি যে কষ্ট হল সপ্তাহে দুইদিন তেল দিতে!! তেল দিতে ইচ্ছা হত না আবার দিয়ে ফেললে কষ্ট করে ধুতে ইচ্ছা হত না। এমন হাল! কিন্তু মাথার খালি তালুর দিকে চেয়ে আবার হুঁশ ফিরে আসত!
এভাবে কতদিন পার হল জানেন? প্রায় দেড় বছর! প্রতি সপ্তাহ দুইবার করে প্যারাসুট কোকোনাট অয়েল ম্যাসাজ করে আর মাথার ফাঁকা তালু মানুষের চোখের আড়ালে কিভাবে রাখা যায় তার ফন্দি করে!
এরপর একদিন শুনলাম ক্লাসমেটের মুখ থেকে খসে পড়া অমৃত-
“আরে! তোর চুলগুলোতো বেশ ঘন হয়েছে!!! কি মাখিস? বলনা আমাকেও!!”
বিশ্বাস করুন, ওইদিন যেন আমার সমস্ত হারানো কনফিডেন্স একবারে ফেরত চলে এল!! রুমে গিয়ে আয়নায় ভালো করে তালুটা দেখলাম… ১ ইঞ্চি ফাঁকা স্ক্যাল্প তেমন আর বোঝা যায় না! খুব ছোট ছোট চুলে স্ক্যাল্প যেন হালকা একটু ভরে যাচ্ছে!
সেদিন থেকে চুল ফাঁপানোর চিন্তা বাদ। হলের খালার এক কমেন্ট-এ যেমন আমার সব কনফিডেন্স উড়ে গিয়েছিল ক্লাসমেট-এর এক কথায় যেন পুরোটাই ফিরে এল।
অবাক লাগছে?? আনবিলিভেবল মনে হচ্ছে?? আমারও মনে হয়েছিল। কিন্তু জানি না আপনাদের কেমন লাগে কিন্তু চুলের বেহাল দশায় আমার টিটকিরি মার্কা হাসি আর নিজের উদ্যম দুইই গায়েব যে হবে, এ তো আমার চিন্তারও বাইরে ছিল!!
ঐ ঘটনার প্রায় দুই বছর পর এখন আমার চুল আবার কোমরের কাছাকাছি চলে এসেছে। আর ঐ ‘লেয়ার’ কাটের পর হেয়ার কাট দিয়ে চুল ঘন করার ভূত আমার ঘাড়ে আর চাপে নি!
দুই বছরে কি করেছি জানেন?? জাস্ট সপ্তাহে ২ বার প্যারাসুট কোকোনাট অয়েল দিয়ে স্ক্যাল্প ১০-১৫ মিনিট ম্যাসাজ করেছি, পরদিন শ্যাম্পু করেছি… That’s it!!! এরচেয়ে বেশি কিছু করার সময় আমার আজ পর্যন্ত হয় নি। আশা করছি কোনও না কোনও দিন হবে! কিন্তু কেউ যদি আমার মতো মানসিকতার থেকে থাকেন যাদের ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মূল্য’ বোঝার সেন্স টুকু নেই, তাদের বলছি…
এখনও সময় আছে… ভাবছেন ‘কিছুই লাগে না?’ ‘কিছুই দরকার নেই?’?? ভুল ভাবছেন। কাউকে নিজের কেয়ার নিতে দেখে হাসছেন? ভাবছেন আপনাকে পাতলা চুলের দুঃখ ছুঁতেও পারবে না?? আবারও ভুল ভাবছেন।
খুব বেশি কিন্তু কেয়ারের দরকার যে হয় না নিজের শখের চুলের হেলথ-টা ঠিক রাখতে সেটাতো বুঝতেই পাড়লেন… তাই আমার মতো তালু খালি হয়ে যাবার অপেক্ষা করবেন? নাকি এখনই একটু কেয়ার নেবেন??
বিশ্বাস করুন, ফ্লোর ভর্তি মাথার চুল ছড়িয়ে থাকতে দেখার চেয়ে সপ্তাহে জাস্ট দুটো দিন একটু প্যারাসুট কোকোনাট অয়েল মাখা অনেক অনেক ইজি… trust me!!
ছবি-